লাইফে ফার্স্ট মুভি'র রিভিউ লিখতে বসলাম। গত কয়েকদিন ধরে যা পাচ্ছি, তাই দেখছি। সস্তার মধ্যে একটা প্রজেক্টর আর সাউণ্ড সিস্টেম দিয়ে ছোট একটা হোম থিয়েটারের মতো বানিয়েছি। এবার হিন্দী, বাংলা, ইরানী, কোরিয়ান, ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ কোন কিছুই বাদ দিবনা বলে ঠিক করেছি।
ঠিক কোন ধরণের মুভি এখন দেখতে ভালো লাগে? এখন বলতে আমার এই বয়সের কথা বলছি। আমার মনে হয় মুভি দেখার জন্যে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। এক এক বয়সে এক এক ফ্লেভারের মুভি ভালো লাগবে বলেই আমি মনে করি। এই মুহূর্তে আমি ক্ষুধার্থ হয়ে থাকি ভালো কোন প্লটের মুভির জন্যে। সেটা আণ্ডার রেটেড হলে হোক। অবশ্য এখন আণ্ডার রেটেড মুভিগুলোকেই আমি খুঁজে খুঁজে বের করি।
আমি হরর মুভি দেখিনা। হাসির মুভিও আজকাল আমাকে তেমন টানেনা। তবে যে ধরণের মুভি আমি সাধারণত: খুঁজে বেড়াই তার মধ্যে অন্যতম হলো সাসপেন্স এবং থ্রিলার মুভি। আজকে কয়েকটি হিন্দী মুভির সম্পর্কে আমার কিছু অভিমত ব্যক্ত করার উদ্দেশ্যেই এই লেখার অবতারণা। এই লেখাটিকে ঠিক রিভিউ নাম দেওয়া যায় কিনা, জানিনা। তবে হ্যাঁ, যে মুভি'র কথাগুলো আজকে বলবো, সেগুলো আমার মনে দাগ কেটেছে এবং সেই মুভিগুলো দেখার পর আমি পুরো মুভিটার ব্যাপারে পরবর্তীতে ভেবেছি, ক্রিটিক্যালি থিন্ক করেছি।
কেউ ভালো মুভির সাজেশন দিলেই আমি এখন আর দেখতে বসে যাইনা। কারণ সময়ের দাম আছে। আগে সেই মুভিটা সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর নেই। ট্রেইলার দেখি। কারণ এর আগে শাহরুখ খান অভিনীত মাই নেম ইজ খান, রাইস, বাদলাপুর, চুপ চুপকে, তালভার, পা, পিকু, আমির খান অভিনীত তালাশ, কার্তিক কলিং কার্তিক, লাখনাউ সেন্ট্রাল, কসমিক সেক্স, রাংদে বাসান্তী, Aiyaary - এরকম অনেকগুলো মুভি দেখে সিম্পলি সময় নষ্ট করেছি। আগেই বলে রাখি, আজকে যা লিখছি, সেগুলো আমার একান্তই ব্যক্তি অভিমত। আর আমার এখানে উল্লেখিত মুভিগুলো অনেকেই আগে দেখে থাকতে পারেন, কারও ভালো লাগতে না-ও পারে। আমার লেগেছে বলেই লিখতে বসেছি।
ইণ্ডিয়ান মুভির ক্ষেত্রে একটি কথা এই বেলা না বললেই নয়। একটা উদাহরণ টেনেই বলি। থাগস অব ইণ্ডিয়া। যারা দেখেছেন, কেমন লেগেছে তা জানিনা, কিন্তু এই মুভিটার অল্প একটু দেখার পরেই চরম বাথরুম চেপেছিল আমার। তাই আর বাকীটুকু দেখা হয়নি। কিন্তু এই মুভিটা আমাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো যে, ব্রিটিশরা ইণ্ডিয়ানদেরকে টানা দুইশো বছর শাষণ এবং শোষণ করে নিল। বেচারা ইন্ডিয়ানরা এই ক্ষোভের আগুনে পুড়তে পুড়তে তাদের পোড়া আর শেষ হয়না। তাই কিছু করতে না পেরে ইণ্ডিয়ান কিছু ডিরেক্টর এমন হাস্যকর কিছু মুভি বানান যেখানে তারা দেখান যে, ব্রিটিশরা ভিলেন এবং ইণ্ডিয়ানরা গ্ল্যাডিয়েটরের মতো বিশাল হনু টাইপ বীর যারা ব্রিটিশদেরকে এক হাত দেখে নিতে পিছপা হয়না। তৎকালীন ব্রিটিশরা কিন্তু তাদের যা করার করে নিয়েছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিক্যালি কিছু করতে না পেরে কিছু ইণ্ডিয়ান ডিরেক্টর এবং প্রোডিউসার ইণ্ডিয়ানদেরকে বিশাল বীর প্রমাণ করার জন্য এধরণের গাঁজাখুরি গল্পের মুভি বানিয়ে স্বর্গীয় সুখ পান, নিজেদেরকে হাস্যকর বস্তুতে পরিণত করেন।
Raazi:
ডিরেক্টর: Meghna Gulzar
গতকাল রাতে এক বসাতে দেখলাম Raazi মুভিটা। চমৎকার প্লট। আলিয়া ভাটের অভিনয় না দেখেই আমি তাকে ললিপপ নায়িকার খাতায় ফেলেছিলাম। ভুল করেছিলাম। Raazi দেখার পর এখন আমি তার বিগ ফ্যান। এই মুভির প্রত্যেকটা চরিত্র দুর্দান্ত রকম অভিনয় করেছেন। গল্পের প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। সেহমাত (আলিয়াভাট) একজন ইন্ডিয়ান এজেন্ট থাকেন যাকে কেন্দ্র করে মুভির ঘটনা এগিয়ে যায়। গল্পের প্রতিটি সেকেণ্ডে যেন উত্তেজনা আর সাসপেন্স।
রেটিং: ৮ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: https://einthusan.tv/movie/watch/6hqv/
Kahaani:
ডিরেক্টর: Sujoy Ghosh
বিদ্যাবালানের আমি কঠিন ভক্ত ছিলাম অনেক আগে থেকেই। এই মুভিটা দেখার পর তাকে আরেকবার সালাম দিলাম। খুব মন দিয়ে না দেখলে আসলে এই মুভির ঘটনা বোঝাটা কঠিন। গল্পের কাহিনী বিদ্যা বাগচী (বিদ্যা বালান) কে ঘিরেই যিনি প্রেগন্যান্ট অবস্থায় লন্ডন থেকে ভারতে আসেন তার হারানো স্বামীকে খুঁজতে। কাহিনীর প্রতিটি পরতে পরতে সাসপেন্স। ভালো কথা, আমার অভিজ্ঞতা বলে, যে কোন মুভি'র সিকুইলি খুব একটা ভালো হয়না। যেমন কাহানী মুভিটা দেখে Kaahani 2 অনেক উৎসাহ নিয়ে দেখলাম। নট আপ টু দ্য মার্ক।
রেটিং: ৮ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
Wazir:
ডিরেক্টর: Bejoy Nambiar
হিন্দী সাসপেন্স বা থ্রিলার মুভিতে অমিতাভ বচ্চন থাকা মানেই সেই মুভি ভালো না হয়ে যায়না। Wazir সেই রকমই একটা টান টান উত্তেজনার মুভি যেখানে অমিতাভের সাথে জাভেদ আক্তারের ছেলে ফারহান আক্তারও কম যাননি।
রেটিং: ৭ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
Baby:
ডিরেক্টর: Neeraj Pandey
অক্ষয় কুমারকে আমি ফানি মুভির জন্যেই সব সময় চিনে এসেছিলাম। কিন্তু রুস্তম দেখার পর আমার ধারণা বদলালো। এরপর Baby দেখার পর আমি বুঝলাম, অক্ষয় কুমার ইজ আ বিগ শট ইন অ্যাক্টিং।
রেটিং ৮ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
Mulk:
ডিরেক্টর: Anubhav Sinha
মুভিটার প্লটটি টেরোরিজমকে নিয়ে। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটা মহল্লায় হিন্দু মুসলিমের চমৎকার সহাবস্থানের মাঝে হঠাৎ একটি মুসলিম ছেলে টেরোরিস্ট হয়ে যায় এবং ক্রাইম করে। এরপর সেই মুসলিম ফ্যামিলিটাকে কতটা দু:খ এবং দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটিই তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিটিতে। রিশি কাপুরকে আমি খুব একটা পছন্দ করতামনা। কারণ তাকে আমার বিরক্তিকর ফানি ক্যারেকটার লাগতো। তিনি বুড়া বয়সেও তার নাতির ঘরের নাতনির সাথেও নায়কের রোল প্লে করে গিয়েছেন। কিন্তু Mulk মুভিতে তিনি একটি শক্ত চরিত্রে সুন্দর অভিনয় করেছেন। Taapsee Pannu-এরও আমি বড় ফ্যান। কিন্তু এই মুভিতে তিনি আমাকে হতাশ করেছেন। বিশেষ করে শেষের দিকে লইয়ার চরিত্রে তার অভিনয় আমার কাছে দুর্বল বলে মনে হয়েছে। এই মুভিটিকে আমি রেটিং-এ ৭ দিতাম। কিন্তু Taapsee Pannu এর জন্য একে ছয় দিতে বাধ্য হচ্ছি। আরও একটি কারণে আমি এই মুভিটাকে ছয় এর ওপরে ওঠাতে পারছিনা। যেকোন সাসপেন্স বা থ্রিলার মুভি একদম শেষ হবার আগেই যদি দর্শক বুঝে যান কী হতে যাচ্ছে অথবা কাহিনী কোন দিকে মোড় নিবে, তাহলে সেই মুভির মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। Mulk এও মুভি শেষ হবার আগেই একই ঘটনা ঘটেছে।
রেটিং ৬ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
Gangs of Wasseypur:
ডিরেক্টর: Anurag Kashyap
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী'র আমি বিগ ফ্যান। ফ্যান হয়েছি অনেক আগেই। কিন্তু এই মুভিটি দেখার পর তার আমি এখন কঠিন ফ্যান। Gangs of Wasseypur এর দুইটি পার্ট। দুইটাই ফাটাফাটি। আর আমার অলটাইম ফেভারিট মনোজ বাজপায়ী'র দুর্দান্ত অভিনয় এক কথায় লা-জওয়াব! পপকর্ণ হাতে নিয়ে খুব মন দিয়ে মুভি দু'টি দেখতে হবে। তাহলেই প্রকৃত রস আহরণ করা সম্ভব।
রেটিং ৮ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক:
Click this link
Click this link
Jolly LLB:
ডিরেক্টর: Subhash Kapoor
কোর্ট কাচারীকে আমি সবসময়ই একটু ভয় পাই। লইয়ারদের কথার মারপ্যাঁচ আমার কাছে ভয়ঙ্কর বলে মনে হয়। মুন্নাভাই মুভির 'সার্কিট' খ্যাত Arshad Warsi এখানে চরম অভিনয় করেছেন। কিন্তু সবার অভিনয়কে ফেল করিয়ে দিয়েছেন যিনি, তিনি এই মুভির জাজ Sunderlal Tripathi (Saurabh Shukla). বোমান ইরানীও কম যাননি। এই মুভিটি দেখার পর অতি উৎসাহী হয়ে অক্ষয় কুমার অভিনীত Jolly llb 2 টা দেখলাম। নট আপ টু দ্য মার্ক। Sunderlal Tripathi এর দুর্দান্ত ফানি এবং একইসাথে সিরিয়াস অভিনয়ের জন্যে Jolly LLB মুভিটিকে ৮ না দিলে অন্যায় হয়ে যাবে।
রেটিং ৮ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
te3n:
ডিরেক্টর: Ribhu Dasgupta
আমার ফেভারিট অ্যাক্টর অ্যক্ট্রেস দিয়ে এই ছবি পরিপূর্ণ। Amitabh Bachchan, Nawazuddin Siddiqui, Vidya Balan আর ফেলুদাখ্যাত Sabyasachi Chakrabarty. কিন্তু সত্যি বলতে কী, এমন অনেক মুভি আছে যেগুলো মারদাঙ্গা নায়ক নায়িকা দিয়ে ভরা। কিন্তু মুভির ভেতরটা ফাঁকা। অর্থাৎ, প্লট দুর্বল অথবা অভিনয় দুর্বল। te3n মুভিটা আমাকে টাচ করেছে। এক বসাতে টান টান উত্তেজনা নিয়ে মুভিটা শেষ করেছি।
রেটিং ৮ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
রাটসাসান:
ডিরেক্টর: Ram Kumar
তামিল কমার্শিয়াল মুভিগুলোকে আমার গাঁজাখুরি বলেই মনে হতো। এ কারণেই তামিল অ্যাকশন মুভিগুলো থেকে আমি দূরেই থাকতাম। কিন্তু ২০১৮ সালে রিলিজপ্রাপ্ত রাটসাসান মুভিটির নাম মানুষের মুখে মুখে শুনছিলাম। থ্রিলার, সাসপেন্স দিয়ে ভরপুর এই ছবিটি ইংরেজি সাবটাইটেলসহ দেখলাম। সোজা বাংলায় মুভিটি আমাকে শেষ মিনিট পর্যন্ত ধরে রেখেছিল। প্রত্যেকটি চরিত্রের অভিনয় ভালো লেগেছে। শুধু ওই তামিল ভাষাটা না জানা থাকায় ইংরেজি সাবটাইটেল দেখে দেখে বুঝে নিতে হয়েছে মুভির কাহিনী। মুভিটিকে সার্বিকভাবে ১০ এ ৭ দিব। দশে আট দিতাম। এক কমালাম কারণ, মুভিটা দেখার সময় মনে হচ্ছিল ক্রাইম পেট্রোল ডায়াল হানড্রেড দেখছি।
রেটিং ৭ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক (ইংরেজি সাবটাইটেলসহ) : Click This Link
Raman Raghav 2.0:
ডিরেক্টর: অনুরাগ কাশ্যাপ
খুন আর মারামারির মুভি দেখতে আর ভালো লাগেনা। সাধারণত: থ্রিলার বা সাসপেন্স মুভি মানেই খুন। এই ছবিতেও তার ব্যতিক্রম নেই। এই মুভিটিতে দেখানো হয়েছে রামান নামের এক লোকের ঘটনা যে একটার পর একটা খুন করতে থাকে মুড়ি মুড়কির মতো। অন্যকোন অভিনেতা থাকলে এই মুভিটিকে কত দিতাম জানিনা। কিন্তু নওয়াজেশউদ্দিন সিদ্দিকী মূল চরিত্রে যে অভিনয় দেখিয়েছেন, শুধুমাত্র তার জন্যে এই মুভিটিকে ৭ আউট অব ১০ এর কম দিতে পারছিনা। ভিকি কৌশলও (পুলিশ ইন্সপেক্টর) অভিনয়ে কম যাননি। ডিরেক্টর অনুরাগ কাশ্যাপ মানেই ভালো কিছু - এটা মনে হলো আরও একবার।
রেটিং ৭ আউট অব ১০
মুভির লিঙ্ক: Click This Link
যে মুভিগুলো আমার অলটাইম ফেভারিট (৮ আউট অব ১০):
১. Drishyam; ডিরেক্টর: Nishikant Kamat
২. দাঙ্গাল; ডিরেক্টর: Nitesh Tiwari
৩. রাজনীতি; ডিরেক্টর: Prakash Jha
৪. ব্ল্যাক; ডিরেক্টর: Sanjay Leela Bhansali
৫. থ্রি ইডিয়টস; ডিরেক্টর: Rajkumar Hiran
যে হিন্দী মুভিগুলো আমাকে হতাশ করেছে:
আন্ধাধুন:
২০১৮ সালে রিলিজ পাওয়া এই থ্রিলার মুভিটির নাম শুনেছিলাম অনেকের মুখেই। 'জোর লাগাকে হাইসা' মুভিতে আয়ুশমানের অভিনয় ভালো লেগেছিল। তাই এই মুভিতে তিনি আছেন জেনে মুভিটি দেখার আগ্রহ বেড়ে গেল। আর সবচাইতে বড় কথা টাবু আছেন এই মুভিতে। এটাতো দেখতেই হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। প্রায় দুইটা ঘন্টা জলে ফেললাম। শুরুটা ভালোই ছিল। এমনকি গল্পের একটি চরিত্র প্রমোদ সিনহা খুন হওয়া পর্যন্তও বেশ থ্রিল থ্রিল অনুভব করছিলাম। কিন্তু তারপরেই সব কেমন যেন লেজে-গোবরে হয়ে গেল। শক্তিমান অভিনেত্রী টাবু হালে পানি ধরে রাখতে পারলেননা। কেমন যেন খেলো খেলো লাগলো তার অভিনয়। আর তার উপরে আছে গাঁজা-খুরি সিকোয়েন্সের সয়লাব। সাধারণত: কোন মুভিকে আমি ১০ এ ৫ দেইনা। কিন্তু এই মুভিটিকে ৫ এর উপরে কিছু দিতে কী-বোর্ড সায় দিচ্ছেনা।
এয়ার লিফট:
ইদানিং কালে অক্ষয়কুমার অভিনীত মুভিগুলো সাধারণত: দুই ধরণের। হয় কমেডি, না হয় থ্রিল অ্যাণ্ড অ্যাকশন। দুইভাবেই আমি অক্ষয়ের ফ্যান। কিন্তু সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত অক্ষয় কুমার অভিনীত 'এয়ার লিফট' মুভিটি দেখে আমি হতাশ হয়েছি। অক্ষয় তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন মুভিটিকে ধরে রাখতে। কিন্তু পরিচালক সাহেব শেষের দিকে মুভিটির থ্রিল ধরে রাখতে পারেননাই বলে মুভিটি ঝুলে গিয়েছে। এই মুভিটিকে কোনভাবেই ১০ এ ৬ এর উপরে দিতে পারছিনা।
এছাড়াও যে হিন্দী থ্রিলার/ সাসপেন্স মুভিগুলোকে একেবারে ফেলে দেওয়া যায়না:
হেট স্টোরী:
পাওলি দাম অভিনীত অ্যাডাল্ট মুভি, রেটিং ৬ আউট অব ১০। মুভিটিকে দু'টি কারণে ৬ দিলাম। এক. পাওলি দামের অভিনয় কিছু কিছু জায়গায় আপ টু দ্য মার্ক নয়। আর দ্বিতীয়ত, ঘটনায় কিছু কিছু জায়গায় অতি নাটকীয়তা দেখিয়েছে। বরং Gulshan Devaiah (মুভির নাম/ চরিত্র Siddharth Dhanrajgir) এই মুভিতে ফাটাফাটি অভিনয় করেছেন।
মাদারী:
ইরফান খানের অ্যাক্টিং-এর আমি কঠিন ভক্ত। তার জন্যেই এই মুভিটা দেখা। মুভিটিকে শুরুতে যতটা সুন্দরভাবে জমিয়েছে, কিন্তু শেষের ফিনিশিংটা ভালো হয়নি। রেটিং ৬ আউট অব ১০।
আগলী:
ইউটিউব রিভিউতে এই মুভিটার প্রশংসা শুনেছিলাম। কিন্তু দেখার পর কোনভাবেই ৬ আউট অব ১০ এর উপরে উঠতে পারলামনা। কারণ আমার হিসাবে ডিরেক্টর মুভিটিতে সাসপেন্স তৈরি করতে পারেন নাই।
নো ওয়ান কিলড জেসিকা:
এটাকে থ্রিলার মুভি নামে অনেকেই ডাকেন। থ্রিলার মুভির সাসপেন্স যদি মুভির শেষ সেকেণ্ড পর্যন্ত না থাকে, তাহলে আমার হিসাবে ৬ আউট অব ১০ এর বেশি নম্বর উঠেনা। এই মুভির গল্পের প্লট ভালো। কিন্তু জানিনা কোন এক কারণে বিদ্যা বালানের অ্যাক্টিং আমার কাছে নিষ্প্রভ বলে মনে হয়েছে। যদিও রাণী মুখার্জী তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন মুভিটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার।
হায়দার:
টাবু, শহীদ কাপুর, শ্রদ্ধা কাপুর - এই তিন জনের মধ্যে আমার প্রিয় অ্যাকট্রেস অলওয়েজ টাবু। তার পারসোনালিটি আর শক্ত অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে বার বার। 'হায়দার' মুভিটা দেখার উদ্দেশ্যও ছিল টাবু আছেন, সে জন্যে। মুভির কনসেপ্ট এবং কাহিনীর প্লট ভালো। বিশেষ করে জম্মু, কাশ্মীরের যে সিন-সিনারিও এই মুভিতে দেখানো হয়েছে, মনে হয়েছে ঘুরে আসি একবার ওখান থেকে। সব চরিত্রই এই মুভিতে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। কিন্তু মুভিটি দৈর্ঘ্যে এত বেশি লম্বা এবং ঢিলা যে, আমি ঘুমে পড়ে যাচ্ছিলাম। হয়তো আমি নিজেই টায়ার্ড ছিলাম তাই এত ঢিলা মুভি দেখতে বিরক্ত লাগছিল। এই ঝুলানো মুভিটিকে এ জন্যেই ৬ আউট অব ১০ দিচ্ছি।
ডি-ডে:
ইণ্ডিয়া-পাকিস্তান কনফ্লিক্ট নিয়ে মুভিগুলো দেখতে আমার ভালোই লাগে। মনে হয়, 'টম অ্যাণ্ড জেরি' কার্টুন দেখছি। বিশেষ করে ইণ্ডিয়ান মুভিগুলোতে পাকিস্তানকে ছোট করার জন্যে বিন্দুমাত্র কমতি থাকেনা। এরকম কনফ্লিক্ট ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানি মুভি আমি কখনো দেখিনি। দেখলে আমি শিওর যে, পাকিস্তানিরাও কম যাবেনা। ডি-ডে-ও এরকম একটি 'টম অ্যাণ্ড জেরি' মুভি। থ্রিলার এবং সাসপেন্স - এই দু'টি শব্দ অনেকেই এই মুভিটির সাথে যোগ করতে চাইবেন। কিন্তু এই কথাগুলো ডি-ডে মুভির জন্যে একশত ভাগ প্রযোজ্য নয়। এর কারণ, মুভির অনেকগুলো জায়গায় কাহিনী খাপছাড়া লেগেছে আমার কাছে। আর ভিলেনের চরিত্রে রিশি কাপুর আমাকে নিতান্তই হতাশ করেছেন। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, ডিরেক্টর এই মুভিটিকে জমাতে পারেননি। মুভিটিকে এ জন্যেই ৬.৫ আউট অব ১০ দিচ্ছি।
শ্রী:
বর্তমান থেকে ভবিষ্যত আবার ভবিষ্যত থেকে বর্তমানে আসার এমন এক প্যাঁচ এই মুভিতে দেওয়া হয়েছে যে, এই গাঁজাখুরি প্যাঁচ বুঝতে গিয়ে মুভিটি কে শেষ পর্যন্ত ৫ আউট অব ১০ এর বেশি দিতে পারছিনা।
ডেডলাইন সির্ফ ২৪ ঘান্টে:
ইরফান খানের বরাবরই আমি বিগ ফ্যান। এই মুভিতে আমার প্রিয় নায়ক ভালো অভিনয় করলেও ডিরেক্টর মুভিটিকে জমাতে পারেননি। মনে হয়েছে 'মাদারী' মুভিকে রিমেক করা হয়েছে। মুভিটিকে ৫ আউট অব ১০ দিচ্ছি।
13b:
এই মুভিটাকে হরর বলবো, নাকি সাসপেন্স বলবো, বুঝতে পারছিনা। হরর বললে খুবই নিম্ন মানের হরর বলতে হয়। আবার সাসপেন্স বা থ্রিলারটাও জমেনি ঠিক। মুভিটিকে ৫ আউট অব ১০ দিচ্ছি।
বন্ধুরা, আমার মুভি টেস্ট সম্পর্কে ছোটখাট একটা ধারণাতো পেলেন। অনুরোধ থাকবে, ভালো কোন মুভি (যে ভাষাতেই হোক না কেন) পেলে অনুগ্রহ করে কমেন্ট সেকশনে একটু দাগ দিয়ে যাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
তথ্য এবং ছবিসূত্র: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৮