আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের ট্যাম্পা বে এলাকাতে সামার ভ্যাকেশনে এসেছি কিছুদিন হলো। কাজেই ঘরে বসে থাকাটা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। ঘোরাঘুরির জন্যে আমার প্রিয় ওয়েবসাইট ট্রিপ অ্যাডভাইজরকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানিয়ে দিল যে, 'সানকেন গার্ডেন' নামে একটি বাগান আছে যেটি আসলেই দর্শনীয় এবং সেখানে গিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে আসা যায়। গাছ-গাছালী, প্রকৃতি -এগুলো আমার সবসময়ই প্রিয়। কাজেই দেরী না করে বেরিয়ে পড়লাম সানকেন বাগান দেখার উদ্দেশ্যে। আজ রবিবার ছিল। গাার্ডেন খোলা থাকবে দুপুর বারোটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
দুপুর দেড়টা নাগাদ 1825 4th St N, St Petersburg ঠিকানায় যখন পৌঁছালাম মাথার ওপরে গনগনে সূর্য্যের প্রখর আলো। দরদর করে ঘামছি আর ভাবছি, আসাটা বোধহয় উচিত হয়নি। রিসেপশন ডেস্ক থেকে যখন ১০ ডলার দিয়ে টিকিট কাটলাম তখনও চিন্তা করছিলাম, বাসায় ফিরে যাবো কিনা। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে যখন বাগানে প্রবেশ করলাম, মুহূর্তের মধ্যে চারপাশের পরিবেশ বদলে গেল। চারিদিকের অসংখ্য গাছ আর বাগানের ঠাণ্ডা একটা শীতল আবহাওয়ায় প্রাণ যেন জুড়িয়ে গেল।
রিসেপশন ডেস্ক, যেখান থেকে বাগানে ঢোকার টিকিট কাটলাম
এই ফাঁকে ছোট্ট করে সানকেন গার্ডেনের ইতিহাস বলে ফেলি।
সময়টা ১৯৩৫ সাল। ফ্লোরিডা'র সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে টার্নার সানকেন গার্ডেন নামে একটি ব্যাক্তি মালিকানাধীন বাগান সবার জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জর্জ টার্নার নামের জনৈক ভদ্রলোক ১৯০৩ সালে প্রায় ৪ একর জমির ওপরে এই বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভদ্রলোক যদিও একজন প্লামার ছিলেন, কিন্তু তাঁর বাগানের শখও ছিল মারাত্মক। টার্নার সাহেব পুরো জায়গাটাতে একটি লেক খনন করলেন। যার ফলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে পুরো এলাকাটি প্রায় ১৫ ফুট নিচে অবস্থিত। উর্বর এ জমি বিভিন্ন ফলের গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের বাসস্থানে পরিণত হলো। মূলত: ১৯২৪ সাল থেকেই দর্শনার্থীগণ ২৫ সেন্টের বিনিময়ে এই দুর্লভ গাছগাছালীর বাগানটি দেখার সুযোগ পান।
পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে লোকাল হিস্টোরিক্যাল ল্যাণ্ডমার্ক হিসেবে এই সানকেন গার্ডেনটি পরিচিতি লাভ করে এবং ১৯৯৯ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ সিটি এই বাগানটি কিনে নেয়। চলুন তাহলে আমার কাঁচা হাতের তোলা ছবিতে বাগানের ভেতরের সৌন্দর্য্য দেখে নেয়া যাক:
এই যে দেখুন কাঠবিড়ালী:
বাগানের ভেতরে একটা এম্ফিথিয়েটার দেখলাম:
সানকেন গার্ডেনের ফ্লেমিঙ্গো পাখিগুলোর কিছু ছবি:
বিকেল চারটার দিকে যখন বাগান দর্শন শেষ হলো, পেটের মধ্যে তখন হাজারটা ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। দেরী না করে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলাম চাইনিজ ফুড খাবার আশায় পাণ্ডা এক্সপ্রেসের উদ্দেশ্যে।
সূত্র: Click This Link