পর্ব ১৩
কানাডা’র নতুন বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদের জন্যে ধারাবাহিকভাবে লেখা ১-১৩ সিরিজটির আজকের পর্বে আমরা কানাডায় প্রফেশনাল/ ভলান্টিয়ার জব ইন্টারভিউ -এর রিয়েলটাইম বাকী প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
১. কেন আপনি আমাদের সাথে কাজ করতে চান?
ফ্রেণ্ডলি এনভায়রনমেন্ট, শেখার অনেক সুযোগ, অভিজ্ঞ মানুষদের সাথে কাজ করার সুযোগ, পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো -এ কথাগুলো উল্লেখ করুন। বিনয়ের সাথে বলুন যে, এই লাইনেই আপনি নিজের ক্যারিয়ার করার জন্যে বদ্ধ পরিকর এবং আপনি তাই এই ফিল্ডেই নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে চান। সুতরাং আপনি এই নামী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার সুযোগটি পেতে আগ্রহী।
২. আমাদের অর্গানাইজেশন সম্পর্কে কি জানেন?
ইন্টারভিউ বোর্ডে যাবার আগে চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, প্রোগ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানুন। যদি চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানের এমন কোন প্রোগ্রাম নতুন বা আনকমন বলে মনে হয়, সেটি সম্পর্কে জানুন এবং ইন্টারভিউ বোর্ডে তা বলুন।
৩. কেন আপনি এই কাজটির জন্যে নিজেকে যোগ্য মনে করেন?
যে জবের ইন্টারভিউ আপনি দেবেন, সেই জবের রেসপনসিবিলিটিগুলো আপনার জানা থাকতে হবে। প্রশ্নকর্তাকে বলুন যে, আপনার পূর্ব জব অভিজ্ঞতা থেকে আপনি আত্মবিশ্বাসী যে, আপনি এই জবের কাজগুলো নির্দিষ্ট ডেডলাইনের মধ্যে সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করতে পারদর্শী। "I am confident that I can perform the tasks" – এ ধরনের কথাগুলো প্রশ্নকর্তাকে বলুন। কখনোই বলবেননা যে, আপনি নতুন বা আপনি শিক্ষানবীস। বরং বলুন যে, আপনি কাজ জানেন এবং আরও শিখতে চান।
৪. নিজের দুর্বলতাগুলো বলুন:
নিজের দুর্বলতা শোনা বা বলা - এ দু'টি কাজই সবাই আমরা অপছন্দ করি। আবার জব ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজের ব্যাপারে এমন কোন নেগেটিভ কথা বলা যাবেনা যা হিতে বিপরীত হতে পারে। সুতরাং আপনি বলতে পারেন:
“I agree that I am not perfect. I also have some blind spots and I am still working on it. আমার নিজের একটি দুর্বলতা এই মুহূর্তে যেটি মনে পড়ছে, তা হলো কলেজ জীবনে যে কোন পরীক্ষার আগে আমি বেশ নার্ভাস হয়ে যেতাম। This is the biggest thing I am working on/ improve on. নার্ভাসনেসের কারণে আমার পরীক্ষার আগের রাতে ঘুম পর্যন্ত আসতোনা। বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে নিলাম এবং এর সঠিক কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করলাম। আমি দেখলাম যে, পরীক্ষার আগের রাতে আমার যথার্থ প্রস্তুতির অভাবের কারণেই আমি নার্ভাস বোধ করতাম। এরপর থেকে আমি যেকোন পরীক্ষার আগে পরীক্ষা বিষয়ক যথাযথ প্রস্তুতির পাশাপাশি রাতের ডিনার দ্রুত †সরে বিছনায় যেতে দেরী করতামনা। এবং আমি দেখলাম যে, এই পদ্ধতিতে আমি কম নার্ভাস বোধ করি এবং আমার পরীক্ষাগুলো-ও এখন ভালো হয়।”
উপরের উদাহরণে আমি সাপ-ও মারলাম আবার লাঠিও ভাঙ্গেনি। অর্থাৎ এমন কোন দুর্বলতার কথা বলতে হবে যেটি পরবর্তীতে আমি কাটিয়ে উঠছি এবং এখন সেটি আর আমার মধ্যে আগের মতো নেই।
৫. আপনার জীবনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ভুলের কথা বলুন:
এমন কোন ভুল স্বীকার করা যাবেনা যেটিতে কারও ভয়ঙ্কর কোন ক্ষতি হয়েছে বা যার ফলাফল শুভ হয়নি। যেমন, একবার এক নার্স তার জব ইন্টারভিউ বোর্ডে উপরিউক্ত প্রশ্নের উত্তরে বললেন যে, তার নিজের ভুলের কারণে এক রোগীর প্রায় মৃত্যু হতে চলেছিল। প্রশ্নকর্তা এতে অসন্তুষ্ট হন এবং সেই নার্সের সেই জবটি হয়নি। সুতরাং আপনি বলতে পারেন:
”আমি একটি অফিসে কাজ করতাম। একবার এক সহকর্মী আমার কাছে জনাব ফরিদের ফোন নম্বর চাইলেন। আমি তাকে ভুলবশত: জনাব ফরিদের নম্বরের পরিবর্তে জনাব রাকিবের নম্বর দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য আমি নিজের ভুল বুঝতে পারি এবং সাথে সাথেই সেই সহকর্মীকে জনাব ফরিদের নম্বরটি দেই। এই ঘটনা থেকে আমি শিখেছি যে, কোন কাজে তাড়াহুড়া করা যাবেনা এবং সঠিক মানুষের কাছে সঠিক তথ্যটি উপস্থাপন করতে হবে।”
৬. নিজের সমালোচনা করুন:
এই প্রশ্নের উত্তরেও নিজের বদনাম করা যাবেনা। বরং খুব সুন্দরভাবে নিজের ভুলকে সঠিক বলে প্রমাণিত করতে হবে। আপনি বলতে পারেন:
”আমি খুব বেশি ডিটেইলড ওরিয়েন্টেড এবং পারফেক্টশনিস্ট। অর্থাৎ কোন কাজ ধরলে সেটি সুনিপুণভাবে শেষ করতে আমার অনেক সময়ের প্রয়োজন। এ জন্যে দেখা যায় যে, আমি প্রায় সময়ই কাজটি শেষ করার/ জমা দেবার ডেডলাইনের কাছাকাছি চলে যাই। যেমন, আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম, তখন আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবার ডেডলাইনের কাছাকাছি গিয়ে আমি সেটি জমা দিতাম। কারণ আমি ডিটেইলড ওরিয়েন্টেড এবং পারফেক্টশনিস্ট বলে আমার সেই অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে প্রচুর সময় লাগতো। পরবর্তীতে আমি নিজের এই সমস্যাটি দূর করার জন্যে যেকোন কাজ জমা দেবার/ শেষ করার ডেডলাইনের অনেক আগে থেকেই সঠিক প্ল্যানিং করি এবং কাজটিকে ছোটছোট ভাগে ভাগ করে তাদের জন্যে অগ্রিম ডেডলাইন বানাই। এভাবে পরবর্তীতে দেখতে পেলাম যে, নির্দিষ্ট ডেডলাইনের অনেক আগেই আমার কাজগুলো শেষ হচ্ছে। এ থেকে আমি শিখলাম কিভাবে নিজের কাজগুলো অর্গানাইজড ভাবে করে ডেডলাইন মিট করা যায়।”
৭. সর্বশেষ কোন আর্টিকেলটি আপনি পড়েছেন?
আপনার পঠিত যেকোন একটি আর্টিকেলের নাম, লেখক এবং কি বিষয়ে সেই আর্টিকেলটি রচিত, তার কিছু অংশ বলুন। আপনার উত্তর যেন কোনভাবেই আর্টিফিশিয়াল বলে মনে না হয়। বরং উত্তরগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলুন।
৮. পাঁচ বছর পর আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
সবারই ইচ্ছা থাকে নিজেকে বস্ লেভেল-এ দেখার। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে তা সরাসরি বলাটা ঠিক নয়। তাই আপনি বলুন যে, আপনি কাজ শিখতে ইচ্ছুক। আপনার সহকর্মীদের সাথে টীম ওয়ার্ক করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যে আপনি আগ্রহী। যেকোন কাজের ডেডলাইন মিট করতে আপনি পারদর্শী। আপনি কখনো কোন কঠিন কাজ সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র নন। এবং এসকল গুণ-ই আপনাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শীখরে।
৯. আণ্ডার প্রেশারে আপনি কিভাবে কাজ করতে পারেন?
সরাসরি উদাহরণ দিন। এভাবে বলুন:
আপনি এর আগে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, সেখানে সুপারভাইজার আপনি ও আপনার সহকর্মীদেরকে একটি টাস্ক/কাজ ১ মাসের পরিবর্তে ৭ দিনে করে দিতে বললেন। সহকর্মীদের অনেকেই মন খারাপ করলেন, ভয় পেলেন, দমে গেলেন, নিরুৎসাহিত হলেন। কিন্তু আপনি দ্যা হিরো! আপনি এমন একজন মানুষ যিনি লিডারশীপ নিলেন। সহকর্মীদেরকে বোঝালেন যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন করলেই এই কাজটি সপ্তাহখানেকের মাঝে উঠে আসবে। সুতরাং নিরাশ হবার কিছু নেই। সবাইকে উৎসাহ যোগালেন আপনি এবং এই আপনি-ই নতুন করে কাজের প্ল্যান করলেন। দিন-রাত খেটে, অফিস সময়ের বাইরেও সময় দিয়ে ১ সপ্তাহে কাজটি তুলে দিলেন আপনার সুপারভাইজারকে।
যদিও আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর সুপারভাইজাররা এমনই হয়। তারা মানুষকে মানুষ মনে করেনা। সুযোগ পেলে একই বেতনে আপনাকে অমানুষিক খাটনি খাটিয়ে নেবে। আর ক্রেডিট নেবে নিজে। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডেতো আর এসব সত্যি কথা ফাঁস করা যাবেনা। জব ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনি ভালো মানুষ সেজে থাকবেন এবং উপরের বুলিগুলো আওড়াবেন। কথায় বলে, ”জীবনে ভালো কুকুর, ভালো বউ আর কর্মক্ষেত্রে ভালো সুপারভাইজার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!”
পরের পর্বে বাকী প্রশ্নগুলো নিয়ে আসছি। সবাইকে শুভেচ্ছা।
পর্ব ১৫
(ছবিসূত্র: ইন্টারনেট)
লক্ষ্য করুন:
*কানাডা'র ইমিগ্রেশন বিষয়ক আপনার সুনির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে [email protected] -এই ইমেইল-এ প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিন।
*কানাডা'র নতুন অভিবাসী/ ইমিগ্র্যান্ট বিষয়ক কোন প্রশ্ন থাকলে [email protected] -এই ইমেইল-এপ্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিন।
*ফেসবুক পেজেও আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নটি করতে পারেন: Facebook page: Click This Link
Email: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১২