somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রিপ টু টোবারমোরী - পর্ব ২

১২ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব ১ এর পর view this link
টোবারমোরী'র মূল আকর্ষণ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকে অনেক জায়গার নাম বললেও আমি কিন্তু বিশেষভাবে বলতে চাই একটি জায়গার নাম। আর সেটি হলো জর্জিয়ান বে সাগরের ওপর দিয়ে নৌকো করে 'ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড' view this link ঘুরে আসা। কানাডা'র ওন্টারিও প্রভিন্সের উত্তরে অবস্থিত টোবারমোরী থেকে মাত্র ৬.৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি জনমানবহীন দ্বীপ। ঘন বনে ঘেরা এই দ্বীপটিতে একটি বাতিঘর, বিশাল এক গুহা ছাড়াও ঘন বনের ভেতর দিয়ে পায়ে হাঁটা ট্রেইল রয়েছে। ফ্যাদম ফাইভ ন্যাশনাল মেরিন পার্কের অন্তর্ভূক্ত ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এ যেতে হলে নৌকা বা লঞ্চ ছাড়া গতি নেই। আনুমানিক ৬০ বছর আগে এখানকার বাতিঘরে সরকারী এক কর্মচারী বাস করতেন। তখন টোবারমোরী'র মূল ভূখণ্ড থেকে এই দ্বীপটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে কোন মানুষ এখানে আর থাকেনা এবং সোলার পাওয়ার দিয়েই দ্বীপটির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড -এর নামকরণটি একটু বিচিত্র। এই দ্বীপে বড় বড় দু'টি পাথরের চাঁই প্রাকৃতিকভাবেই ফুলদানির মত আকার ধারণ করায় এই দ্বীপটিকে সবাই 'ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড' নামেই ডাকে।

টোবারমোরী থেকে ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডের উদ্দেশ্যে দিনের বেলায় নির্দিষ্ট সময় পর পর বোট/লঞ্চ ছাড়ে। দুই ধরণের সার্ভিস এরা দিয়ে থাকে। এক. টোবারমোরী থেকে আপনাকে সরাসরি ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডে পৌঁছে দেবে এবং পরবর্তীতে বোটের নির্দিষ্ট সময়ে আপনি আবার টোবারমোরী ফেরত আসবেন। এই ট্যুরটি Drop Off Tour নামে পরিচিত এবং দাম প্রায় ৪০ ডলার। অপর ট্যুরটি Stay Aboard Tour, যেটিতে আপনি নৌকা/ লঞ্চ থেকে না নেমে শুধু ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডের চারপাশ থেকে ঘুরে আসবেন। এটি প্রায় ৩০ ডলার দাম। উল্লেখ্য যে, ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডে প্রবেশের জন্যে অতিরিক্ত জনপ্রতি প্রায় ৫ ডলার করে দিতে হবে যেটি নৌকার টিকেট কাটার সাথেই রেখে দেবে।

টোবারমোরী থেকে ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডের উদ্দেশ্যে প্রথম নৌকা/ লঞ্চটি ছাড়ে সকাল ৯.৩০ এবং ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড থেকে শেষ বোট ছেড়ে আসে বিকাল ৪.৩০ মিনিটে। অর্থাৎ কেউ যদি বিকাল ৪.৩০ এর বোট না ধরতে পারে, তাহলে তাকে রাতের বেলায় ওই জনমানবহীন নির্জন দ্বীপেই থেকে যেতে হবে। ব্যাপারটা একটু ভয়ঙ্কর বটে। কারণ ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডে যাবার পর আমরা নিজের চোখেই বড় বড় সাপ দেখেছিলাম। অন্যান্য জীবজন্তু কি আছে না আছে, সেটা অবশ্য আর জানা হয়নি। তবে ইমার্জেন্সি একটি ফোন নম্বর দেওয়া আছে যেখানে বিপদ আপদে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু একবার ভেবে দেখুনতো যদি কোন কারণে ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ডে যাবার পর শেষ বোট মিস হয়ে গেল আর আপনার ফোনটির নেটওয়ার্ক-ও ঠিক মতো কাজ করছেনা?! অথবা ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে?! ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!

টরন্টো থেকে টোবারমোরী আসার আগেই আমরা বোটের টিকেট অনলাইনে কেটে রেখেছিলাম। মূলত: দু'টি কোম্পানীর বোট/লঞ্চ এই রুটে পর্যটকদের পরিবহন করে। একটি হলো ব্লু হিরণ, যেটিতে আমরা গিয়েছিলাম। আরেকটির নাম ব্রুস অ্যাঙ্কর। ব্লু হিরণ লঞ্চটিকে 'গ্লাস বটম' নামে ডাকা হয়। কারণ, এই লঞ্চের নিচের দিকে গ্লাস দিয়ে সাগরের তলায় দেখা যায়।

ওয়েন সাউণ্ড শহরের 'কমফোর্ট ইন' হোটেল থেকে দেড় ঘন্টা ড্রাইভ করে টোবারমোরী আসতে আসতে সকাল প্রায় ৯.৩০ বেজে গেল। পড়িমড়ি করে ব্লু হিরণের সুপ্রশস্থ লঞ্চে উঠে পড়লাম আমরা। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে একটা ভুল অবশ্য হয়েই গেল। যেহেতু মোটামুটি বিকাল পর্যন্ত আমাদের ওই দ্বীপে থাকার প্ল্যান, তাই দুপুরের খাওয়া সাথে নেওয়াটা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা বেমালুম ভুলে গেলাম। এরপর দ্বীপে নেমে ঘোরাঘুরি করে সবাই ক্লান্ত আর ক্ষুধার্থ হয়ে গেলাম অল্প সময় পরেই।


লঞ্চ ঘাট


লঞ্চ ঘাট


লঞ্চঘাট


ব্লু হিরণের টিকেট কাউন্টার


ঘাটে বাধা আমাদের ব্লু হিরণ কোম্পানীর গ্লাস বটম লঞ্চ


আমাদের লঞ্চ


লঞ্চের পেছনের দিকে


যাত্রা হলো শুরু


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড যাবার শুরুতে আমরা চলেছি কাছাকাছি একটি বাতিঘর আর ডুবন্ত জাহাজ দেখতে


ডুবন্ত জাহাজ - লেক হিউরনে এই জাহাজটি ১৮৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডুবিয়ে দেওয়া হয়


ডুবন্ত জাহাজ


ডুবন্ত জাহাজ


বাতিঘর


লঞ্চের উপরের ডেক-এ


আমাদের ব্লু হিরণ লঞ্চের নিচের কেবিন-এ


ওই দেখা যায় ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


আর অল্প সময় পরেই পৌঁছে যাব আইল্যাণ্ডে


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড থেকে দেখা জর্জিয়ান বে


ব্রুস অ্যাঙ্কর কোম্পানীর লঞ্চ


ব্রুস অ্যাঙ্কর কোম্পানীর টাগ বোট


লঞ্চ থেকে দেখা ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


লঞ্চের ড্রাইভারের রুম


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এ নামছি আমরা


ওই যে দূরে ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড - টোবারমোরী থেকে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট লেগেছে


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর স্বচ্ছ পানির পাশে


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর স্বচ্ছ পানির পাশে


এই যে ফ্লাওয়ারপট


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর ডেক


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


খুব কাছ থেকে দেখা ফ্লাওয়ারপট


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর গুহা


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর গুহা


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর গুহা


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর গুহা


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড-এর গুহায় যাবার পথে


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড এর ভেতরের পায়ে হাঁটা ট্রেইল


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড এর ভেতরের পায়ে হাঁটা ট্রেইল


ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড এর ভেতরের পায়ে হাঁটা ট্রেইল

ফ্লাওয়ারপট আইল্যাণ্ড থেকে ফিরে আমাদের গাড়ি ছুটে চললো এবার সবল বিচের উদ্দেশ্যে। অন্যান্য বিচের সাথে এই বিচের কিন্তু একটা পার্থক্য রয়েছে। এই বিচে সাগরের একদম পাশেই আপনি গাড়ি নিয়ে পার্ক করতে পারবেন।


সবল বিচ


সবল বিচ

সবল বিচের পানিতে সমুদ্রস্নান শেষে চললাম সবল ফলস দেখার উদ্দেশ্যে:









কাছাকাছি আরও একটি বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত দেখার লোভ সামলাতে পারলামনা। অতএব এবার আমাদের গাড়ি ছুটে চললো ওয়াসাগা বিচের উদ্দেশ্যে। চলুন দেখে নেই তাহলে ওয়াসাগা বিচে তোলা কিছু ছবি:














ওয়াসাগা বিচ থেকে টরন্টো যখন ফিরলাম, তখন ঘড়িতে বাজে রাত ১১ টা। শান্ত মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের নয়নাভিরাম পরিবেশ থেকে আবারও ঢুকলাম ব্যস্ত শহুরে জীবনে। কিন্তু মন পড়ে রইলো তখনও টোবারমোরী'র প্রকৃতির কোলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×