somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কি কানাডা'র নতুন অভিবাসী হয়ে আসছেন? তাহলে এ লেখাটি আপনারই জন্যে - পর্ব ৩

১০ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব]

মোবাইল ফোন সমাচার:
বাংলাদেশ থেকে টরন্টো আসার আগে একটা আই ফোন ফোর-এস নিয়ে এসেছিলাম সাথে করে। এটা যে এখানে ভয়ঙ্করভাবে কাজে দেবে, তা কল্পনাও করিনি। কারণ বাংলাদেশের মতোই এখানে মোবাইল এবং ইন্টারনেট দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য।

কানাডায় বেশ কয়েকটি মোবাইল কম্পানী রয়েছে - রজার্স, ফাইডো, বেল, উইণ্ড, মোবিলিসিটি, চ্যাটআর ইত্যাদি। এক-এক কোম্পানীর এক এক রকম প্ল্যান। অনেক চিন্তা-ভাবনা আর গবেষণা করে নিয়ে নিলাম চ্যাট-আর এর মাসিক ৩৫ ডলারের প্রি-পেইড কানেকশন। এই কানেকশনটি নেবার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করলাম:
১. আমি যে এলাকায় থাকি এবং পুরো টরন্টোতে আমি যেসব এলাকায় চলাচল করি বা করবো, সেসব জায়গায় চ্যাট-আর ভাইরা তাদের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো রেখেছেন কিনা।
২. এটা প্রি-পেইড কানেকশন, সুতরাং মাসের যে তারিখেই কার্ড ভরবেন, পরের মাসের ঠিক ওই তারিখেই আবার রিচার্জ করতে হবে। কার্ড রিচার্জ না করলে লাইন বন্ধ। ভেরি সিম্পল।
৩. পুরো কানাডার যেকোন প্রভিন্সে ইনকামিং-আউটগোয়িং কল+টেক্সট সবকিছুই আনলিমিটেড, অর্থা
কোন টাকা কাটবেনা।
৪. আমেরিকায় টেক্স ফ্রি
৫. কানাডার বাইরে কল করতে গেলে টাকা কাটবে। সুতরাং কোন অবস্থাতেই আমি ভুলেও এই লাইন দিয়ে কানাডার বাইরে কল করবোনা।
৬. কানাডার বাইরে থেকে কেউ আমাকে কল/টেক্সট করলে সেটা আবার ফ্রি।

চ্যাট-আর এর ৩৫ টাকার প্রি-পেইড কানেকশন নিলাম মনট্রিয়াল থেকে। কিন্তু অনুরোধ করায় আমাকে তারা টরন্টোর একটা নম্বর দিয়ে দিল। কানেকশন নিতে ৬৩.২৪ ডলার খরচ হয়েছিল। কারণ মূল কানেকশন নেবার সময় ভ্যাট রয়েছে। আমার আই ফোন ফোর-এস-এ চ্যাট-আর-এর বড় সিমটাকে কেটে ছোট করতে আবার ১০ টাকা ... থুক্কু... ১০ ডলার লেগেছিল। মাস শেষে ফিউচার শপ থেকে ৩৫ ডলারের রিফিল ভ্যাটসহ ৩৯.৫৫ ডলার লেগেছে। সব মিলিয়ে চ্যাট-আর নিয়ে আমি হ্যাপি।


এখন চিন্তায় পড়ে গেলাম, বাংলাদেশে তাহলে কল করবো কিভাবে। কারণ সবাইতো আর আমার মতো স্কাইপ ব্যবহার করেনা। সুতরাং
বাংলা ট্র্যাকার] -এ একটা অ্যাকাউন্ট করে ফেললাম। RBC ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া ফ্রি ফ্রি ১০০০ টাকা লিমিটের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ২০ টাকা খরচ করে বাংলা ট্র্যাকার থেকে প্রায় ৫৫০ মিনিট কিনে নিলাম। এখন মনের সুখে প্রতিদিন বাংলাদেশে আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে নিয়মিত কথা বলি। বাংলাট্র্যাকারে সময় শেষ হয়ে গেলে নিজের মোবাইল ফোন দিয়েই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রিফিল করার ব্যবস্থা আছে। আর প্রথমবার কানেকশন নিলে ১ ঘন্টা সময় বেশি দেয় তারা এবং যার রেফারেন্সে বাংলাট্র্যাকার নিবেন, তাকে আধ ঘন্টা সময় বোনাস হিসেবে দেবে। সুতরাং প্রথমবার বাংলাট্র্যাকারের কানেকশন নিলে আমার নম্বরটি অবশ্যই দিয়ে দেবেন ওদেরকে রেফারেন্স হিসেবে।

যে সব ওষুধ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসলাম:

প্রথম পর্বতে আলোচনা করেছিলাম হেলথ কার্ড/ হেলথ ইনস্যুরেন্স এবং মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স নিয়ে। হেলথ কার্ড হতে তিন মাসের মতো সময় লেগে যায়। তাই বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে করে নিয়ে এলাম। টরন্টো এয়ারপোর্টে যদিও ওষুধের কথা কিছু জিজ্ঞেস করেনি, তারপরেও সাবধানতার জন্যে আমার পরিচিত এক ডাক্তার ভাইয়ের থেকে প্রেসক্রিপশন এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট সাথে নিয়ে এসেছিলাম। প্রেসক্রিপশন এবং সার্টিফিকেট হাত ব্যাগে এবং ওষুধগুলো বড় লাগেজের ভেতর চালান করে দিয়েছিলাম।

যেসব ওষুধ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এলাম:
১. প্যারাসিটামল/নাপা
২. পেইন কিলার - ডাইক্লোফেনাক
৩. রেনিটিড/পেন্টো-প্রাজল
৪. ডেসলোরাটিডিন - ঠাণ্ডা/হাঁচি-কাশির জন্য
৫. লেক্সোটানিল - ঘুমের ওষুধ
৬. অ্যান্টিবায়োটিক যেমন: সিপ্রোফ্লক্সাসিন, মক্সাক্ল্যাভ, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, লেভোফ্লক্সাসিন, সেফরাডিন, সেফথ্রি ট্যাবলেট ইত্যাদি প্রয়োজনমতো এনেছি। এছাড়া জনৈক বন্ধুর জন্য ডায়াবেটিসের ওষুধ, ব্লাড প্রেসারের ওষুধ ইত্যাদিও চান্সে নিয়ে এসেছি।

কানাডায় জব:
প্রতিমাসে বাড়ি-ভাড়া আর খাবার খরচসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ যোগানোর জন্যে কানাডায় একটা জব অত্যাবশ্যক। কারণ বসে থাকলে বাংলাদেশ থেকে জমিয়ে আনা টাকা ফুরাতে সময় লাগবেনা। কিন্তু প্রফেশনাল জব পাওয়াটা এখানে ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ প্রফেশনাল জব-এ তিনটি বিষয় প্রয়োজন:
১. কানাডিয়ান কোন ডিগ্রী
২. কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এবং
৩. রেফারেন্স

'অড-জব' সম্পর্কে বাংলাদেশে থাকতে শুনেছিলাম। এখানে 'অড-জব' পেতে গেলেও কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এবং রেফারেন্স লাগবে। অর্থা
আপনি যদি কোন রেস্টুরেন্টে, গ্যাস স্টেশনে ইত্যাদি জায়গায় কাজ করতে যান, তাহলে অন্ত:ত পক্ষে পরিচিত কেউ থাকতে হবে যিনি আপনাকে কাজটা শেখাতে এবং পাইয়ে দিতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করবে। ভ্যগ্য ভালো থাকলে আপনি মাসখানেকের ভেতরেই সেই 'অড-জব' পেতে পারেন। আর ভাগ্য প্রসন্ন না হলে দুই-তিন মাস লেগে যেতে পারে। যেকোন 'অড-জব'-এ ঘন্টায় সাধারণত ৮-১০ ডলার করে দেয়।

যারা নতুন আসছেন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দেশ থেকে করে আসতে পারেননি, তাদের জন্যে আমার পরামর্শ হলো, টরন্টোতে নামার পরপরই 'সিকিউরিটি ট্রেনিং' করে ফেলুন। এটা 'মিনিস্ট্রি বেসিক কোর্স' বলেও পরিচিত। আমার পরিচিত অনেকেই এখানে ট্রেনিং নিয়েছেন এবং তাদের ভাষ্য মতে, এখানে ট্রেনিং নেবার পর পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলে ইন্টারকন, জি-ফোর ইত্যাদি জায়গায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী পাওয়া সম্ভব। সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে তখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, শপিং মল ইত্যাদি জায়গায় কাজ করতে পারা যায়।

এই সিকিউরিটি ট্রেনিং কোর্স করতে ১৯৭.৭৬ ডলার ব্যাংক ড্রাফট লাগবে। সকাল অথবা বিকালের শিফটে ট্রেনিং নেয়া যাবে। লাইসেন্সিং পরীক্ষা এবং আনুষঙ্গিক আরও প্রায় ১০০ ডলারের মতো খরচ আছে।

ইন্টারকনের ঠিকানা:
৪০ শেফার্ড স্ট্রিট, থার্ড ফ্লোর, টরন্টো
ফোন: ৪‌১৬ ২২৯ ৬৮১১



গত পর্বগুলোতে অনেক সম্মানিত ব্লগার আমাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। আগামী পর্বে তাদের সে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করার ইচ্ছে আছে। সবাইকে শুভেচ্ছা।

Facebook page: Click This Link
Email: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৫৩
৩৯টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×