খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়কে আতঙ্কগ্রস্থ করে তোলার মত ঘটনাবলী লাগাতার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গরম হিন্দুত্ব ও নরম হিন্দুত্ব, আগ্রাসী মিডিয়া প্রচার ও কেন্দ্রীয় তদন্তের বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার এর পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট, আল কায়দা, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, জামাত ই ইসলামির মত মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বা প্রতিবেশী দেশ ভিত্তিক ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এই দেশ ও রাজ্যের সাধারণ মুসলিম সমাজকে জুড়ে দেওয়ার লাগাতার প্রচেষ্টা চলছে। যুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে মুসলিম সমাজের পশ্চাদপদতা, মাদ্রাসার ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক রক্ষণশীলতা, (মুসলিম) পার্সোনাল ল বনাম ইউনিভার্সাল সিভিল কোড প্রসঙ্গ, কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার সম্বলিত ৩৭০ ধারার মত সংবেদনশীল বিষয়গুলি। ভারতের গণতন্ত্রের নিজস্ব চেহারাটাকেই প্রশ্ন করা হচ্ছে, বাদ যাচ্ছে না সাংবিধানিক বিভিন্ন অধিকার সমূহও। এমনকী বামেদের কোনও কোনও মহল থেকে এন আই এর তদন্ত প্রক্রিয়াকে সাবাসি জানিয়ে বিজেপির অ্যাজেন্ডায় প্রোক্ষে উৎসাহ জোগানো হয়ে যাচ্ছে।
এই সব উত্তেজনা ভরা কথাবার্তার মধ্যে আড়ালে থেকে যাচ্ছে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের নিদারুণ কষ্টকর জীবন যাপনের বিভিন্ন দিক। সাচার কমিটির রিপোর্ট থেকে সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত সার্ভে ভিত্তিক ‘পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের অবস্থা’ সংক্রান্ত রিপোর্ট – যে সমস্ত করুণ দিক সামনে এনেছে, তার প্রতিকার দূরে থাক, তা নিয়ে আলাপ আলোচনাও প্রায় অদৃশ্য। এরকম একটা সময়ে ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি পত্রিকার ১৫ নভেম্বর, ২০১৪ সংখ্যায় কুমার রাণা ও মানবী মজুমদার লিখলেন জরুরী একটি লেখা – ‘কালটিভেটিং কমিউনাল হেট্রেড ইন বেঙ্গল’।
মিডিয়া এই সময়ে সক্রিয়, তবে অবশ্যই নির্বাচিতভাবে সক্রিয়। কোনও কোনও খবরকে সে লাগাতার প্রচার করে যায়, কোনও কোনও খবরকে সে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়। এটা শুধু খবরকে ‘সেনসেনালাইজ’ বা চমকপ্রদ করে তোলার ব্যাপার নয়, এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সমৃদ্ধ বিশেষ উল্লেখ বা বর্জন। রাণা এবং মজুমদার আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন মিডিয়া হাউস শুধু খাগরাগড় এর পর বিশেষ উন্মোচন ছাপার প্রতিযোগিতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ইসলামিক সাহিত্য সম্পর্কে সাধারণ পাঠকের অধিকাংশের অভিজ্ঞতাহীনতাকে পাথেয় করে সাধারণ সমস্ত বইপত্রকে জেহাদী পুস্তক বলে উল্লেখ করেছে। ‘ভালো মৃত্যুর উপায়’ এর মত সহজ প্রাপ্য বই বা অনেক সাধারণ গ্রন্থাগারেই উপস্থিত ‘চেপে রাখা ইতিহাস’ এর মতো বইকে প্রচার করা হচ্ছে জেহাদী পুস্তক বলে।
মিডিয়া যদি প্রচারের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু মনে আতঙ্ক ও অন্যদের মধ্যে বিদ্বেষবাস্প ছড়ানোর কাজটা করে থাকে তবে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিভিন্ন নিরাপত্তাকাজে জড়িত সংস্থা সরাসরি সংখ্যালঘুদের আতঙ্কের কারণ হচ্ছে।
চলছে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সুপরিকল্পিত নানা মিথ্যা প্রচার।