somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস_ তখন বিকেল বেলা

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
: এই নাও।
একটা ১০ টাকার নোট হাতে গুজে দিল রাকিব।
হাতে গুজানো টাকাটার দিকে তাকিয়ে রইল সায়মা। এমন সুন্দর করে কেউ কখনো সায়মাকে টাকা দেয়নি। অনেকবার চাওয়ার পরেও কেউ টাকা দেয়না। তাহলে এই লোকটা কেন দিল? সায়মা বিষয়টা বোঝার জন্য সময় নিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবে। কিন্তু আপাতত টাকাটা ফেরত দেয়া বেশ বোকামো হবে বলে মনে হল সায়মার। নাহ্ ! অন্তত এখন টাকাটা ফেরত দেওয়ার চিন্তা না করাই ভাল। আগে কিছু খেতে হবে। কলা-রুটি খাবার মত আশপাশে কোন দোকান আছে কিনা সেটা দেখার জন্য মাথাটা তুলল সায়মা। রাকিব ভালভাবে লক্ষ করল সায়মাকে। অবাক দৃষ্টিতে কিছু একটা খুঁজছে সে।
: খাবে?
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সুচক ইঙ্গিত বোঝালো সায়মা। সূর্য্যরে টকটকে লাল রোদ এসে পড়ছিল সায়মার চোখে। চোখ দুটো তাই বুজে বুজে আসছিল। রাকিব বুঝতে পারল মেয়েটাকে কিছু খাওয়ানো প্রয়োজন তা না হলে যখন তখন অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
: এই রিকশা যাবে?
মেয়েটাকে নিয়ে একটা রিকশায় উঠে পড়ল রাকিব। গিয়ে থামল মৌচাক মোড়ে। স্বাদ হোটেলের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে বসল। সায়মার চোখ-মুখ বুজে আসছে। খুব তারাহুরো করে করে ভাত নিলো রাকিব। সায়মাকে খাইয়ে দিল। সায়মা কিছুটা ভাত মুখে নিয়েই বমি করে দিল। রাকিব বুঝতে পারল, মেয়েটা সারাদিন না খাওয়ার ফলে এমন হচ্ছে। বেসিনে নিয়ে গিয়ে মুখটা ধুইয়ে দিল। তারপর টেবিলে থাকা গ্লাসের পানির মধ্যে আধফালি লেবু মিশিয়ে খেতে দিল সায়মাকে। না এখন আর কিছুতেই ভারি খাবার খাওয়ানো ঠিক হবেনা। হোটেল থেকে নিচে নেমে দুই প্যাকেট জুস নিল রাকিব। একটা জুস খেতে দিল সায়মাকে। সায়মা জুসটা শেষ করে ফেলল নিমেশেই।
: এখন কি একটু ভাল লাগছে?
মাথা নাড়ল সায়মা। রাকিবের মুখে হাসি ফুঁটেছে।
: আমিতো ভাবলাম তুমি বুঝি এখনই ঘুমিয়ে পড়বে।
কোন কথা বললনা সায়মা। হাতের মুষ্ঠির দিকে তাকাল। ১০ টাকার নোটটা এখনো শক্ত করে বাঁধা সেখানে। না, খাওয়া যখন হয়েই গেল তখন কি হবে এই টাকাটা দিয়ে। মুষ্ঠি খুলে টাকাটা রাকিবের হাতে দিতে চাইল।
: সেকি, এটা আমাকে দিচ্ছ কেন?
: লাগবেনা।
: লাগবে, পরে কোন এক সময় কাজে লাগবে। তাছাড়া তুমিতো জুস খেয়েছো অন্য কিছু খাওনি।
সায়মা আর কোন কথা বললনা। ভাল করে হেঁটে সামনের দিকে যাবার চেষ্ঠা করল। কিন্তু বুঝতে পারল সামনে এগুনো তার পক্ষে সম্ভব না। রাকিব লক্ষ করল সায়মা পরে যেতে পারে। সায়মার ডান হাতটা শক্ত করে ধরল।
: কোথায় যাও? তুমিতো অসুস্থ্য যেতে পারবেনা।
কিছু বলতে যাচ্ছিল সায়মা। কিন্তু পারলনা। চোখদুটো বন্ধ হয়ে এল। অন্ধকার, আর কিচ্ছু নেই।



২.
আবছা আবছা আলো এসে পড়ছে সায়মার চোখে। চোখ খোলার চেষ্টা করছে সে। কানে আসছে কিছু অস্পস্ট কথাবার্তা। মাথাটা ঝিম ঝিম লাগছে। আর একটু ঘুমাতে পারলে ভাল হত। এরকম আরামদায়ক বিছানায় কখনো ঘুমাতে পারবে তা সায়মার চিন্তায়ও ছিলনা। ঘরটাও বেশ পরিপাটি। কিভাবে এখানে এসেছে, কেন এসেছে তা এখন ভাবতে ইচ্ছে করছেনা সায়মার। আর একটু ঘুমিয়ে নেই। কিন্তু এত চিৎকার-চ্যাচামেচি কেন? কে কথা বলছে?

: কোত্থেকে একটা মেয়েকে পেলি বাসায় নিয়ে তুললি। আরে বাবা এখানে তো তোর বাবা কোন হোটেল খুলে বসেননি।
: মা, মেয়েটা অসুস্থ্য। রাস্তায় পরেছিল।
: এরকম হাজার হাজার মেয়ে রাস্তায় পরে আছে। সবাইকে বাসায় নিয়ে আসবি?
: এখানে সবার কথা আসছে কেন? একটা শিশু অসুস্থ্য হয়ে রাস্তায় পরে আছে আর আমি তাকে দেখেও ফেলে রাখব?
: না ফেলে রাখবিনা, বাসায় নিয়ে আসবি। যা না আরো কোথায় কোথায় এরকম বাচ্চা মেয়ে অসুস্থ্যতায় কাতরাচ্ছে তাদের বাসায় নিয়ে আয়।
: মা, মেয়েটা সুস্থ্য হলেই ওকে দিয়ে আসব।
: আমি জানিতো তুই এই কথাটাই বলবি। আমি যে কতদিন ধরে বলছি একটা কাজের মেয়ের কথা, সেটা তোর মনেই নেই।
: মা তুমি নিশ্চই এই মেয়েটাকে কাজের মেয়ে হিসেবে চিন্তা করছোনা?
: প্যান প্যান করিসনাতো। কাজ করে খেলে অন্তত খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। আর কাজ না করলে কে দেখবে এরকম নাম ঠিকানাহীন একটা মেয়েকে?
: ওর নাম সায়মা...

সায়মা অস্পস্টভাবে শুনতে পেল কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু উঠে গিয়ে দেখবে তেমন কোন শক্তি নেই শরীরে। চোখদুটো আলতো করে বুজে রইল সায়মা। এরপর আর কোন শব্দ সায়মার কানে পৌছায়নি। গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে যায় সায়মা।

চলবে...

_তখন বিকেল বেলা_
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×