somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছা পুরনের গোলাপী সাগরে নীল রঙের অশ্রু

০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুরের আকাশ আলো করে দিয়ে সে এসেছিল আমার জীবনের ক্লান্ত দিনগুলোর কোন এক নিরব মুহূর্তে । আমি এমনিতেই আনমনা হয়ে থাকি অধিকাংশ সময় । বলা বাহুল্য যে সেই মাহেন্দ্রক্ষনেও আমি ডুব সাতার দিচ্ছিলাম আমার কল্পনায় আঁকা গোলাপী রঙের সমুদ্রে । দীর্ঘক্ষন পাশাপাশি বসে থাকার পরও তাকে খেয়াল করে দেখার সময় হয়নি আমার । এভাবেই বয়ে যাচ্ছিল নিস্তরঙ্গ সময়ের স্রোতস্বিনী নদীর অববাহিকা । হঠাৎ কী হয়ে গেল আমার, যে আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম তার নীল চোখের তারায় অশ্রুবিন্দু রুপে । নিজেকে সামলানো খুব কষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেদিন । জানি না কখনও স্বপ্ন দেখে কেউ সুরেশ্বর হয়েছে কিনা, তবে আমি তার নীল চোখের তারায় যে আলোর সন্ধান সেদিন পেয়েছিলাম তার উৎস এই পৃথিবীতে নয় । প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে তাকিয়েছিলাম আমি অপলক দৃষ্টিতে । তারপর কেটে গিয়েছিল ক্ষুদ্র কয়েকটা সময়ের পল । হারিয়ে গিয়েছিলাম নিজের অজান্তেই জীবনের অর্থবহ কোন মেঠোপথের কিনার ধরে । তখনও জানতাম না আমার পরিনতি এই রকম হবে ।

নিদারুন অস্বস্তি নিয়ে আমি একটা একটা করে সময়ের সুতা ছিড়ে যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম আসলে নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি । আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে উদাসীন হয়ে উদ্দেশ্যহীন হাটা আর মনের সরোবরে উদ্দেশ্যহীন ডুব সাতার দেওয়া এক কথা নয় তা আমি ভালই উপলব্ধি করতে পারছিলাম । যদিও সময়ের সাথে সাথে আমাকে আরও গভীর থেকে গভীরতর যন্ত্রনার অনুভুতি দিয়ে যাচ্ছিল তবুও কী এক অস্থির অবসাদে ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে টেনে আরও গভীর সাগরে নিয়ে যাচ্ছিলাম । যেন ধ্বংসেই আমার প্রকৃত জীবন লুকিয়ে আছে । আমি বারবার ফিরে ফিরে দেখছিলাম আমার নিজের প্রতিবিম্ব ওই সঙ্কির্ন সরোবরের ঘোলা জলে । তবুও যেই জলের উৎস দুঃখের মত নীল রঙা অশ্রু সাগরে, সেই সরোবরে ডুবতেও আমার কোন আপত্তি ছিল না ।

জানি না আমাকে কেউ কোনদিন দোষি সাব্যাস্ত করে কাঠগড়ায় দাড় করানোর চেষ্টা করবে কিনা । তবে আমি নিজের বিবেচনায় কখনও অপরাধের সীমানা স্পর্শ করিনি । হাঁটা পথে আর কী চাঁদে যাওয়া যায় বলো? মায়াবী চন্দ্রিমা সর্বদায় অসীম উচ্ছাসে আমাকে ডুবিয়ে রাখতো তার অশ্রু দিয়ে । কখনও আমার মনে হয়নি যে এই অশ্রুর উৎস কোনদিন শেষ হয়ে যাবে । কারন আমি ডুব সাতার দিয়ে দেখেছিলাম সেই অতলান্ত গহ্বরের শুরুটা । যেখানে ক্রমাগত ঝরছিল স্বাধীনতার অশ্রু । আমি কখনও ভাবিনি মুক্ত বিহঙ্গ কখনও সেচ্ছায় নিজেকে খাঁচায় বন্দি করতে পারে । তবে কি আমার উপলব্ধি ভুল ছিল? নাকি শৃঙ্খলিত স্বাধীনতা-ই প্রকৃত স্বাধীনতা?

গোলাপী সাগরের ধারে বসে বসে আমি এখন নিঃসঙ্গ সুর্যাস্ত দেখি । জানি আমার মত দুর্ভাগা মানুষের কপালে চিরদিন অশ্রুও থাকে না । সুখ তো আরও অনেক পরের কথা । গোধুলীর মায়াবি আলোকে বসে বসে হিসেব করে দেখি আমি কিভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম নিজের জমানো রক্তের সাগরে । মনকে যতই বোঝাই ততই অস্থিরতা বাড়ে । কখনও কি আমার নিজের একটা অশ্রু নদী হবে না? কখনও কি কেউ আমার রক্তঝরা সাগরের ক্ষত গুলিতে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দেবে না? মনকে প্রবোধ দিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি । অস্তমিত সুর্যের আলোতে আজ মনে হচ্ছে যে আমার জীবনের সুর্যটাও যদি এই রকম ভাবে ডুবে যেত এখনই । তাহলে কি সে খেয়াল করে দেখতো? নাকি আমার মতই আনমনা হয়ে তার দৃষ্টি এড়িয়ে যেত অনন্ত রক্তস্রোতের ক্রমবিনাশমান ফল্গুধারা । একদিন যখন শুকিয়ে যেত রক্ত সমুদ্রের হালকা গোলাপী আভা তখনও কি তা বোধোদয় হতো না? সে তো আমার মত স্বার্থপর ছিল না কোনদিনও ।

আমার সুরের আকাশে এখন মেঘ জমেছে । গতকাল রাত্রেও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল সেই গোলাপী রঙের সমুদ্রে । আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম নীল রঙের অশ্রু বৃষ্টি কিভাবে মিশে যাচ্ছিল গোলাপী রঙের রক্ত সাগরে । আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি । তখন পুর্নিমার চাঁদ পরিপুর্ন হয়ে আসবে । আকাশটাকে বিধৌত করে দিয়ে যাবে রঙ্গীলা সুরের মায়াজালে । সেদিনই আমি নিজেকে সঁপে দেব আমার নিজ হাতে গড়া রক্তের সমুদ্রে তলে । পচিশ বছর পূর্বের এই দিনটাতেই আমি এসেছিলাম এই রঙ্গভুমিতে । আজ আমার চুড়ান্ত ইচ্ছা পুরনের দিন । ইচ্ছা-মৃত্যুর দিন ।

স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোবো
পাহাড় হয়ে মেঘের বেশে,
স্বপ্ন ছিল সাগর হবো
বনের পরে নদীর শেষে ।

স্বপ্নগুলো নিজের হাতে
ডুবিয়ে দিলাম জলের পরে,
অশ্রু ভেজা কষ্টগুলো
রইলো শুধু মনের ঘরে ।

ইচ্ছে আমার সপ্ত সুরে
বইছে এখন ঘুর্নি জলে,
পিচকারিতে মৃত্যু নিয়ে
থাকবো আমি সাগর তলে ।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আহত আততায়ী

লিখেছেন রাজীব নুর, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩০



সভ্য নগরের মানুষ যেনবা বনমানুষ।
মানুষকে মানে না মানুষ;
আর মানুষের হানাহানি দেখে হাসে বনের মানুষ।

পথে না বেরোলে জানতামই না-
কতটা রপ্ত করেছি আমরা অবজ্ঞা অবহেলা ও পরচর্চা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ টাকার চাল ইতিহাসের সেরা দাম (এখন ৮৫), এই দামে ওনাদের চোখে পানি আসেনা৷

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

আমার বাবা সরকারি চাকরী করছে, একাই বিশাল যৌথ ফ্যামিলি চালাইসে৷ যার ফলে প্রচুর ঋণ হইসে৷ কিন্তু কোনোদিন চুরি করেন নাই৷ গ্রামীন ব্যাংক থেকে বাবা ১০ হাজার টাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ওয়ান ম্যান আর্মি!!!!!

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

ইন্টারিম সরকারে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এর চমক দিয়ে যাচ্ছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। ভঙ্গুর, মেরুদন্ডহীন শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু, গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া একটি দেশের দায়িত্ব কাঁধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

পেপ্যাল লোগোটি বিবিসি ওয়েব পেইজ থেকে সংগৃহিত।

ভূমিকা

বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখন এক অনস্বীকার্য শক্তি। আপওয়ার্ক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় সার্কাস দল!!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

আওয়ামিলীগ আমলে আওয়ামি মন্ত্রী এম্পিরা বিনোদনবঞ্চিত :( এই দেশের জনগনকে বিনোদিত করত তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের দ্বারা। এখন এই স্থান একছত্রভাবে দখল করেছে বিএনপি !! দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×