পড়ন্ত বিকেলে ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে আনমনা হয়ে হাটছিলাম । হঠাৎ করে পেছন থেকে কে যেন পিঠের উপরে জোরে একটা থাবড়া দিল । চমকে উঠে ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু উজ্জ্বল । অনেক দিন পরে দেখা ওর সাথে । সেই ফার্ষ্ট ইয়ার থেকে ওর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা । হলে সীট পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সে আমার রুমমেট ছিল । প্রথম দিকের সেই দিন গুলোর কথা কখনও কি ভুলতে পারব আমরা । ক্যাম্পাসের গাছ থেকে আম চুরি করে খাওয়া, মাঝ রাত্রে টিচারদের বাসার সামনের গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে আনা । অথবা দু'জনে মিলে বিকেল বেলায় গ্রামের পথে হাটতে বের হয়ে চলে যাওয়া বহুদুর..... পথ হারিয়ে ফেলে হলে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাওয়া, তারপর অন্ধকারের মধ্যে বাঁশঝাড়ের কাছে এসে ভয় দেখানোর জন্য দৌড়ে পালানোর উত্তেজনার কথা । নাহ্! সেই সব স্মৃতি কখনও ভুলে যাওয়া সম্ভব না । বহুদিন পরে আজ আবার উজ্জ্বলের দেখা পেয়ে আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম । চিৎকার দিয়ে ওকে জাপটে ধরে বলে উঠলাম 'দোস্তরে, কই ছিলি এতদিন' । কত কথা জমে আছে মনের মধ্যে, তোকে সঅব বলব । তার আগে চল কোথাও বসি । হেটে হেটে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে গিয়ে বসলাম দু'জনে । তারপর দোস্ত, বল কই থাকিস এখন..। উজ্জ্বল আমার কথা এড়িয়ে গিয়ে জানতে চাইল, 'বাদ দে তো, আমার কথা, আগে বল তোর কি অবস্থা' । মাষ্টার্স ফাইনাল কবে তোদের? আমি বললাম দোস্তরে, আর বলিস না, আমাদের ডিপার্টমেন্ট তো গদাই লষ্করি চালে চলে, আরও ৬-৭ মাস লাগবে মনে হয় । তোরা তো শেষ করে চলেই গেলি, আমাদের ছেড়ে । জানিস, ক্যাম্পাসে বড় একা একা লাগে এখন । আমাদের ব্যাচের হাতে গোনা কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের শুধু পরীক্ষা বাকি আছে । বাকি সবাই চলে গেছে । হঠাৎ দেখি উজ্জ্বলের চোখে পানি । বললাম, কিরে দোস্ত, কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে তোর? উজ্জ্বল কোন কথা না বলে উঠে দাড়াল । তারপর বলল, আজ আর সময় নেইরে দোস্ত, আর একদিন এসে তোর সাথে অনেকক্ষন গল্প করব । আমি অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম তার আগেই আমার মোবাইল ফোনের কর্কশ এলার্ম আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিল । ..... তারপর নিজের অজান্তেই আমার চোখ দুটো ভিজে গেল ।
উজ্জ্বল অনেকদিন আমার রুমমেট ছিল । গতমাসের ২৭ তারিখে সুইসাইড করে মারা গেছে ...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৪৫