somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুকের ভেতর মৃত নদী (পর্ব নয়)

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব

বারো
চাকরির নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে শ্রাবণী অনেকটাই হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকে।এই চাকরিটা যে তার হয়ে যাবে তা সে আগে ভাবেনি। মাস্টার্রস এর ভাইভা হওয়ার আগেই ইন্টারভিউ দিয়েছিল।একটা মাত্র পোস্টের জন্য শতাধিক প্রার্থী। পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিজের সিনিয়র কিছু ভাইয়া আপুকে দেখে সে ভেবেছিল এই চাকরি তার হবে না।তবুও ভাগ্য পরীক্ষার জন্য চেষ্টা করা।অভিজ্ঞতার দামও তো কম না।সেই পরীক্ষায় টিকে যখন মৌখিক পরীক্ষার আমন্ত্রণ পেয়েছিল তখনও ভাবেনি চাকরিটা হবে।তবে জীবনের প্রথম ভাইভা হিসাবে তার ভাইভা হয়েছিল চমৎকার।কিন্ত তার সাবজেক্টে পোস্ট একটা!

শ্রাবণী স্বস্তির একটা নিশ্বাস ছাড়ে।বিগত দশটা মাস বড় অস্থিরতায় কেটেছে।হল ছেড়ে উঠেছিল ক্যাম্পাসের পাশেই একটা বাড়িতে।চার রুমের বাসা।প্রতিরুমে দুজন করে মোট আটজন মেয়ে থাকে।বাসার অবস্থা বেশি ভালোনা।নতুন বানানো কিন্ত বানানো হয়েছে কমার্শিয়াল কারনে।সবখানেই তার ছাপ স্পষ্ট। শ্রাবণীর হলের রুম আর সুযোগসুবিধা এর চেয়ে অনেক বেশি ভাল ছিল।তাই এখানে থাকা তার জন্য কষ্টের।রাস্তাঘাট কাঁচা,এবরোথেবড়ো করে ইট পাথর ছড়ানো।বর্ষাকালে কাদায় হাঁটা দুষ্কর হয়ে যায়।সেই সাথে ওঠে ব্যাঙ! এই একটা প্রানীকে শ্রাবণী একদম সহ্য করতে পারেনা।সে জানে এই ভয়টা অমূলক কিন্ত সেটা তার মজ্জাগত!ব্যাঙ যখন আছে তখন সাপ আসতে কতক্ষন? শ্রাবণী তাই প্রায়ই ভাবত যদি এখান থেকে মুক্তি পাওয়া যেত!

তবে তা তো হওয়ার উপায় ছিলনা।চাকরির পরীক্ষাগুলো দিতে হবে।পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে বাড়ি গিয়ে বসে থাকলে তো সেটা হবে না।অগত্যা সে বেশিরভাগ সময় এখানেই থাকত।বন্ধুবান্ধবরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।আশেপাশে আছে কেউ কেউ।শ্রাবণী মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যায়।অনেকেই তার চেয়ে ভাল বাসাতে থাকে।শ্রাবণী বললেই তারা তাকে নিয়ে নেবে। কিন্ত শ্রাবণী জানে উন্নত বাসায় ভাড়াটাও বেশি।মায়ের কাছে থেকে নিজের সুবিধার জন্য বেশি টাকা নিতে তার মন চায় না।এমনিতেই আগের খরচের সাথে আরো দুইহাজার টাকা বেশি নিতে হচ্ছে তাকে।


সেই চিঠিটা দেয়া হয়ে ওঠেনি তুষারকে।তবে চিঠির কথাগুলো সে বলেছে সময়ে অসময়ে তুষারকে।সেদিনের পর দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে।তুষার আগের মতই ফোন করেছে শ্রাবণীকে। তার মেস বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থেকেছে দেখা করার জন্য।তার সাথে শ্রাবণী কথা বলেছে অনেকটা বাধ্য হয়েই।একাকিত্ব তাকে অসহায় করে তুলেছে।তুষারের সাথে অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে।খুব সহজে সেগুলো ঝেড়ে ফেলা সম্ভব নয়।


তবে শ্রাবণীর মনটা ভেঙে গিয়েছে পুরোপুরি। সে জানে এই প্রতারণার জন্য তুষারকে সে ক্ষমা করতে পারবে না কোনোদিন। তবুও কেন সে তাকে সুযোগ দেয়?এই প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই।হয়ত নির্ভরশীলতা,হয়ত এই বড় শহরে একাকী হয়ে যাওয়ার ভয় কিংবা তার বুকে লুকিয়ে থাকা অসীম মায়া যা তুষারের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিতে চায়।তুষারের অদম্য আগ্রহ অবশ্য একটা বড় নিয়ামক।তাকে থামানো যায় না।ফোন না ধরা পর্যন্ত সে চেষ্টা করতেই থাকে,বের না হওয়া পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষা করতেই থাকে।আর ফোন ধরলে হাসি মুখে এমনভাবে কথা বলে যেন কিছুই হয়নি তাদের মধ্যে।সেই আগের মতই করে সে। ক্যাম্পাসে যেভাবে করত।যে জন্য শতবার চেষ্টা করেও সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারেনি শ্রাবণী।

প্রথম কিছুদিন শ্রাবনী ঠিক করে কথা বলতো না তুষারের সাথে।চাইছিল সম্পর্ক টা ভেঙে দিতে কিন্ত তার নিজের ভেতরে যেন পর্যাপ্ত জোর ছিলোনা।মা যদি তাকে কঠিন কসম দিত বা অন্যভাবে জোর করত তবে সে একটু বল পেত।এতদিনের চেনাজানা মানুষটা।মানুষটার জন্য তার বুকের কোথায় যেন অনেক মায়া।এই মানুষটা পারলো এমন একটা কাজ করতে?শুধু নিজের পছন্দের দিকে তাকালে হয়ত ব্যাপারটা মেনে নেয়া যায়।কিন্ত নিজের পরিবারকেও তো শ্রাবণী অনেক বেশি ভালোবাসে।সে শুধু এক বাবা মায়ের মেয়ে না।তার মামা খালা আর নানা-নানি ছোট থেকেই এতটা করেছে তারজন্য যে সে তাদেরও অবাধ্য হতে পারেনা ।তাদের অসন্মান করে বা পরিবার থেকে আলাদা হয়ে সে বাঁচবে কি করে?সে যদি জিদ করে তুষারকে বিয়ে করে তবে সব জায়গায় তার মা কে কথা শুনতে হবে।পাড়ার লোক তো বটেই আত্মীয় স্বজনরাও তাদের ছেড়ে কথা কইবে না।নিজের অপমান সহ্য করা সম্ভব কিন্ত তার মায়ের অবহেলা সে কিভাবে সইবে?

এইরকম নানামুখী চিন্তায় সে প্রায় পাগল হওয়ার জোগাড় হলো।তবে এড়িয়ে যেতে চাইলেও অনেকদিন পর তুষারের সাথে দেখা করতে হলো একটা কারনে।একটা চাকরির পরীক্ষার ডেট পড়েছে কিন্ত কাগজপত্র সব তুষারের কাছে।এভাবেই তার সাথে আবার যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে থাকলো। শ্রাবণীর ভেতরে প্রতারিত হওয়ার তুষের আগুনের মত যন্ত্রনা একটুও নেভে না।তবে সময় সবকিছু সহজ করে দেয়।একটু যেন ভুলিয়েও দেয় সবকিছু।


শ্রাবণী অবাক হয়ে লক্ষ্য করল সে আবার যেন ছেলেটিকে একটা একটু করে গ্রহণ করছে।তাকে নিয়ে ভাবছে।তবে নিজের অন্তরের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব তাকে যেন পাগল করে তুলছিল।শ্রাবণী তখন বাসায় বসে বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে।কিন্ত বই নিয়ে বসাই শুধু।ঠিকমত পড়াটা আর হয়না।তুষারের জন্য চিন্তা আর নানা হিসাব নিকাশ করতেই সময় চলে যায়।ফল যা হওয়ার তাই হলো সে বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় টিকতেই পারলো না।

পরীক্ষা তুষারও দিয়েছিল কিন্ত সেও টেকেনি।পড়াশোনা করলে তো টিকবে!পরীক্ষার ডেট পড়লেই সে বলতে থাকে আমার প্রিপারেশন ভালো না।আমার মনেহয় বিসিএস হবে না ব্যাংকের জন্য চেষ্টা করতে হবে।ব্যাংকের পরীক্ষা আসলে বলতে থাকে- নাহ ব্যাংকে হবে না বিসিএস পড়াই ভালো।এতকিছু যে হয়ে গেল সে বদলায়নি একটুও।আগের মতই নিশ্চিন্তে ঘুরেফিরে বেড়ায়।ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় যেন সে। তবে শ্রাবণীর যেকোনো কাজে খুব সাহায্য করে সে বরাবরের মতই।এপ্লাই করা থেকে শুরু করে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়া সবই সে অতি উৎসাহের সাথে করবে।

এই চাকরিটার জন্যও এপ্লাই করতে বলেছিল তুষার নিজেই।লাস্ট ডেট পেড়িয়ে যাওয়ার আগেরদিন তড়িঘড়ি করে সব কাজ শেষ করেছিল তুষার।পরীক্ষা থেকে শুরু করে ভাইভা পর্যন্ত শ্রাবণীর সঙ্গে সঙ্গে ছিল ।সে না বললে শ্রাবণী জানতেও পারতো না যে তার সাবজেক্টের উপর এমন কোনো সার্কুলার হয়েছে।এমনকি এপয়েন্টমেন্ট লেটার এনে দেয়ার কাজটাও সে করেছে।এইসব সাহায্য করে বলে তুষারের উপর খুব কৃতজ্ঞতা বোধ করে শ্রাবণী।এই পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েদের জন্য এমন সহযোগী পুরুষ খুব দরকার।এটা তুষারের একটা বড় গুন যে সে শ্রাবণীকে সবসময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেয়। সাধ্যমতো সাহায্য করে।সে বলে- ভালো করে পড় শ্রাবণী। আমার বিশ্বাস তোমার বিসিএস হবে।


শ্রাবণী কিভাবে তাকে বোঝাবে যে তার চিন্তাতেই শ্রাবণীর পড়ালেখা হচ্ছে না।ইশ! তুষার যদি একটু সিরিয়াস হতো!ও যদি কিছু একটা করত তা যত ছোটোই হোক তাহলে শুধু বাসায় জানিয়ে বিয়েটা সেরে এই এলাকাতেই নাহয় এক রুমের একটা বাসা নিত তারা।একসাথে চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারতো। বিয়ের অনুষ্ঠান নাহয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই হতো।

এই চাকরিটা হয়ে যাওয়ায় শ্রাবণী অনেকটা নিশ্চিত হলো।নিজের জিনিসপত্র কিছু কিছু গুছিয়ে সে চাকরি ক্ষেত্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো।


তেরো
নতুন চাকরিতে ঢুকলেই বোঝা যায় ছাত্রজীবনের সাথে এই জীবনের কি পার্থক্য। ছাত্রকালের স্বপ্নময় ভাবালুতা কোথায় যেন হারিয়ে যায়,তার জায়গা করে নিতে থাকে কঠিন বাস্তবতা। দায়িত্বশীল পদের দায়িত্বগুলো যে দুই কাঁধের ভীষণ ভার তা আগে থেকে বোঝা যায় না। শ্রাবণী তাই এই নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে হিমসিম খায়।তার অফিসটি একটি ছোট শহরে অবস্থিত। তা হলে কি হবে?কাজের চাপ রয়েছে বেশ।সবকিছু শিখে নিয়ে জীবনের নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হতে হতে কোথা দিয়ে একমাস পেড়িয়ে গেল তা বোঝা গেল না।শ্রাবণীকে চমকে দিয়ে মোবাইলে যখন ব্যাংকে প্রথম স্যালারি ঢুকার মেসেজ আসলো গভীর তৃপ্তিতে তখন তার মন ভরে উঠলো।


প্রথম বেতন! স্বাবলম্বিতার প্রথম সাক্ষর! সে সপ্তাহের ছুটিতে মায়ের কাছে ছুটে গেল।বাজার থেকে মায়ের জন্য একটা নতুন শাড়ি নিয়ে গেল।ইচ্ছা ছিল প্রথম বেতন মায়ের হাতে তুলে দেবে।কিন্ত তা হওয়ার নয়!হাত প্রায় খালি ছিল।তাই বাসার সবার জন্য মিষ্টি আর ছোটোখাটো উপহার কিনতেই কিছু টাকা খরচ হয়ে গেল।

শ্রাবণীকে দেখে শায়লা বেগম আনন্দের অশ্রু লুকালেন।আজ তার বড্ড আনন্দের দিন।অসীম সংগ্রাম করে আজ একটি সন্তানকে তিনি স্বাবলম্বী করে গড়ে দিয়েছেন!সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া করে তিনি ভালোমন্দ রাঁধতে বসলেন।মেয়েটি একাএকা রাঁধে।না জানি কি খায়!

মায়ের কাছ থেকে ফিরে শ্রাবণী তার সংসার সাজাতে বসলো। নিরাপত্তা আর অন্যান্য দিক বিবেচনা করে সে সরকারি কোয়ার্টারেই উঠেছে।তিন রুমের ফ্যামিলি বাসা সাথে কিচেন, ডাইনিং।অনেক পুরোনো বিল্ডিং।তিনতলায় একটা ফ্ল্যাট ফাঁকা ছিল। তার যায়গা হলো সেই ফ্ল্যাটে।বাসা পুরোনো হলেও সুবিধা হচ্ছে বাসায় বেশ কিছু সরকারি ফার্নিচার আছে।সেসব ফার্নিচারের বয়সও যে কম নয় তা দেখেই বোঝা যায়।শ্রাবণী ভাবে এই দিয়েই তার কাজ বেশ চলে যাবে।এখন যদি ফার্নিচার কিনতে হতো তাহলে অযথা অনেকগুলো টাকা নষ্ট হতো।

তাই দ্বিতীয় মাসের বেতনের পরেই শ্রাবণী ইন্সটলমেন্টে একটা ফ্রিজ কিনে ফেললো। সেইসাথে ঘরের জন্য পর্দা।হল থেকে সে নিজের রান্নার জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিল।তার সাথে আরো কিছু কিনে নিয়েছে।বাসায় তুলে দিতে এসে সিলিন্ডারসহ গ্যাসের চুলাটা কিনে দিয়েছেন শ্রাবণীর মা।অফিস রান্নাবান্না আর ঘর গোছাতেই প্রথম কয়টা মাস চলে গেল।নতুন রুটিনে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।অফিসের কাজের সময় স্নায়ু এত উত্তেজিত থাকে যে বাড়িতে ফিরে শ্রাবণী দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে যায়।আগে যেটা অকল্পনীয় ছিল।


তুষার শ্রাবণীর চাকরির ব্যাপারে খুশি।ফোনে কথা হয় প্রতিনিয়ত। তবে শ্রাবণীর কাছে অবাক লাগে এটাই যে নিজের ব্যাপারে তার সিরিয়াসনেস নেই।বাবার টাকাতেই দিব্বি চলছে।বান্ধবীর চাকরি হয়ে গেলে যে তাকেও একটা কিছু ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে তা যেন তুষারে মনে হয়না।


এদিকে প্রাথমিক ব্যস্ততা কমে গেলে শ্রাবণী বুঝতে পারে একাকিত্ব তাকে ঘিরে ধরেছে।অফিসের পর বাসায় এসে কারো সাথে কথা বলার উপায় নেই।তার আশেপাশে কলিগরা সব পরিবার নিয়ে থাকে।কিছু পুরুষ কলিগ আছে অবিবাহিত। তাদের সাথে তো আর আড্ডা দেয়া চলে না।সারাদিনের কাজের শেষে মানুষ যখন পরিবারের সাথে সময় কাটায় তখন সেখানে গিয়ে হানা দেয়াও যায়না।এমনিতেই লোকের বাড়ি বাড়ি বেড়ানো অভ্যাস শ্রাবনীর কখনো ছিলনা। তাই সে নিজের কাজগুলো করে।একাকি এঘর ওঘর ঘুরে বেড়ায়।বই পড়ে বা গান শোনে।


শ্রাবণীদের বিল্ডিংটার অবস্থান একদম প্রাচীরের এক কোনে অন্যান্য বাসা থেকে দূরে।চারদিকে নানারকম ফলের গাছ।প্রাচীরের অপরদিকে কাদের যেন পতিত জমি।সেখানে লোক বসতি নেই শুধু গাছপালা।শ্রাবণীর বেডরুম থেকে এই জায়গাটা দেখা যায়।জানালার পর্দা খুলে বিছানায় শুয়ে শ্রাবণী দিনের বেলা বৃষ্টি দেখে।রাতের তারকাখচিত আকাশটাও দেখতে ইচ্ছা হয় কিন্ত শ্রাবনী সেটার সাহস করেনা।জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে রাখে।পূর্নিমার সময় যখন চাঁদের আলোয় পৃথিবী ভেসে যায় তখন ইচ্ছা করে ঘরের আলো নিভিয়ে সবকটা জানালা খুলে দিতে।কিন্ত সে মনে মনে ভাবে বিয়ের পরে এটা করবে,এখন যদি কোনো কারনে ভয় পায়!একা থাকলে এসব শখ না করাই ভাল!ভয় তো লাগারই কথা।এতবড় বাসায় মাত্র একজন মানুষ।কিন্ত শ্রাবণী সাহসী মেয়ে।তার ইচ্ছা নেই হার মানার। এই জায়গাটা শহরের প্রান্তের দিকে হওয়ায় শহরের কোলাহলটা নেই।যা আছে তা হলো অখণ্ড নিরবতা। সন্ধ্যার পর সেই নিরবতার মধ্যে সামান্য শব্দও বড় হয়ে কানে বাজে।প্রথম প্রথম শ্রাবণী বেডরুমের দরজা বন্ধ করে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতো।পরে আর লাইট জ্বালিয়ে রাখেনা কিন্ত বেশ উজ্জ্বল ধরনের একটি ড্রীম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়।


সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে শহরের ভেতরে কোথাও উঠতে পারতো সে কিন্ত সেখানে এমন সিকিউরিটি নেই। ছোট শহরটাতে কর্মজীবী মহিলাদের থাকার মত হোস্টেলও নেই।তার চেয়ে এই ভাল।অন্তত সিকিউরিটির চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম তো হয়না।প্রথম প্রথম সে সাথে থাকার মত কাওকে খুজেছে যে বাড়ির কাজও করে দেবে সেইসাথে রাতেও থাকবে।তবে তেমন কাওকে পাওয়া যায়নি।স্থানীয়রা কাজ করতে রাজি কিন্ত রাতে থাকতে রাজি নয়।শ্রাবণীর মা চাকরিজীবী, বোন পড়ালেখা করছে, আত্মীয়দের মধ্যেও এমন কেও নেই যে তাকে সঙ্গ দিতে পারে।তাই এভাবেই শ্রাবণী নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।বাসায় টিভি নেই।ল্যাপটপে নানারকম সিনেমা বা টিভি সিরিজ দেখে দিন কাটে তার।তার সবচেয়ে ভাল লাগে গেম অফ থ্রোনস সিরিজটি।কবে যেন তার চাচাতো ভাই সিরিজের প্রথম ছয়টি সিজন তাকে দিয়ে রেখেছিল।ল্যাপটপ ঘেটে দেখতে গিয়ে প্রথম পর্ব থেকেই সিরিজটি তাকে টেনে ধরল।

একা থাকার প্রথম সময়গুলোর মন খারাপের ভাব টা ম্যাজিকের মত দূর করতে সিরিজটা খুবই কাজে লেগেছে।শ্রাবণী মনে মনে ভাবতে থাকে একটা রাউটার কিনবে।তবে আগে ফ্রিজের টাকাটা পরিশোধ করতে হবে।সময় কাটানোর জন্যেই সে একসময় একটা ডাইরি লেখা শুরু করল।

চলবে---
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৫৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দরখাস্ত - বরাবর: জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৩



বরাবর:
জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব
চিফ এক্সিকিউটিভ এডমিন
সামহোয়্যারইন ব্লগ

তারিখ: ১১-১১-২০২৪ইং

বিষয়: ব্লগার সোনাগাজী নিকের ব্লগিং ব্যানমুক্ত করার জন্য অনুরোধ।


জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব,
আপনাকে ও সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল ব্লগারদের প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময়ের স্রোতে ক্লান্ত এক পথিক তবু আশায় থাকি …

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৫


হালকা হাওয়ায় ভেসে আসে গত সময়ের এলবাম
মাঝে মাঝে থেমে যায়, আবার চলে তা অবিরাম
সময় তো এক নদীর মতো, বহমান অবিরত,
জল-কণা আর স্মৃতি বয়ে নেয় যত তার গত।

একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশঃ ইতিহাস কি বিজয়ীরাই লেখে?

লিখেছেন জাদিদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩২

"বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সমস্যা" -বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সঙ্গে ক্ষমতার একটা সম্পর্ক আছে। সে ক্ষমতায় যারা বিজয়ী হয়, তারাই ইতিহাস রচনা করে। পরাজিতরা ইতিহাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু নাম আর কেউ মুছতে পারবেনা।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০


২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনণের পরপরই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে আজ উড়ল বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি “এই কথা রিজভী কোন মুখে বলে ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১



অবাক হয়ে রিজভীর কথা শুনছিলাম উনি কি নিজেকে মহান প্রমান করার জন্য এই কথা বললেন নাকি উনি বলদ প্রকৃতির মানুষ সেটাই ভাবতেছি। উনি নিশ্চই জানেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×