আগের পর্ব এখানে
তিন
চাইলেই যে সবকিছু করা যায়না সেটা শ্রাবণীর জীবনে প্রমানিত হলো।প্রতিদিন সে ভাবে তুষারকে না করে দেবে কিন্ত তা আর করা হয় না।তুষারের সাথে ঘুরে বেড়াতে তার ভালও লাগে আবার ভবিষ্যৎ ভেবে শংকা হয়।কোনো কোনোদিন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়।মনে হয় এ সে কি করছে?তুষারের সাথে তার কল্পনার স্বপ্নের পুরুষের কোনো মিল নেই। আবার তার বাড়িতে কি এমন কাওকে মেনে নেবে যার সাথে ওকে মানাবে না! এইসব ভেবে ভেবে সে অনেক রাতের ঘুম নষ্ট করতে থাকে।
তার খুব কাছের বন্ধু রত্না।সেই মেয়ে আবার তুষারের ক্লাসমেট।সেইদিক থেকে সে দুজনেরই বন্ধু।রত্না একদিন ক্লাসের পর দুজনকে ঘুরে বেড়াতে দেখে পাকড়াও করল।তিনজনে গল্প করে বেশ সময় কাটলো এরপর হলে ফিরে সে শ্রাবণীকে বলল-ও একটা পাগল,তুই আরেকটা। কিভাবে কিভাবে মিলে গেছে তবে তুষার কিন্ত ছেলে খারাপ না।
শ্রাবণীর হলে তুষারের অন্য যে বান্ধবীরা ছিল তারাও মাঝে মাঝে তুষারের প্রশংসা করে তার কাছে।একজন একদিন এক টেবিলে বসে খেতে খেতে বলল তুষার কিন্ত আমাদের ক্লাসে অন্য ছেলেদের মত না।সে অনেক কিছু বোঝে।
এইসব কথা শুনে তার মনে একটু একটু সাহস আসে।তার দ্বিধা যদিও পুরোপুরি কাটে না।কারন শ্রাবণীর ক্ষেত্রে এটা মোটেও লাভ এট ফার্স্ট সাইট নয়।তার দেখা এবং বোঝার অনেক কিছু বাকি আছে।কাওকে ভালবাসা তো এত সহজ নয়।তবে পরের কয়েকটি দিনে কিছু ঘটনার কারনে তার মনে একটু একটু করে ভালবাসা জমতে শুরু করল।
একদিন কিছু জিনিস কেনার জন্য শ্রাবণী বাজারে যাবে।কয়েকটি কাজ নিয়ে তুষার আর তুষারের বন্ধু কায়েসও তার সাথে গেল।কায়েস তুষারের ক্লাসমেট এবং হলমেট।প্রথম থেকেই তুষার এবং কায়েসকে একসাথে দেখে আসছে সে। শ্রাবণীর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে সে রাস্তা পার হতে বেশ আনাড়ি। বিশেষ করে বড় বড় রাস্তা পার হতে সে খুবই ভয় পায়।এমনি একটা রাস্তা ওপারে যাওয়ার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে,তখন শ্রাবণীর দ্বিধা দেখে তুষার তার হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে রাস্তা পাড় করে দিল।কায়েস বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে তা দেখল কিন্ত তুষার নির্বিকার। যেন এটা তার জন্মগত অধিকার।শ্রাবণীর মনে সেইদিন বেশ লজ্জামিশ্রিত একটু ভাললাগা তৈরি হলো।
এরপরে একদিন সন্ধ্যায় তারা দুজনে রিকশা নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে।রিকশাওয়ালা মামা তুষারের পূর্বপরিচিত। পুরোটা পথ সেই রিকশাওয়ালা এই কথা সেই কথা বলতে বলতে একসময় বলল-'মামা মায়া লাগাইছেন দেইখা ভালাই লাগতাছে।' কথাটা শ্রাবণীর খুব মনে ধরল।কি সুন্দর কথা 'মায়া লাগানো '!আসলেই তো,সব তো মায়ারই বন্ধন।আচ্ছা লোকটা তাদের ব্যাপার বুঝলো কিভাবে?সে লক্ষ্য করেছে তাদের ব্যাপারটা সবাই কিভাবে যেন বুঝে যায়।তাদের দেখে তো সুইট কাপল বলে মনে হওয়ার কথা না তবুও!
আরেকদিন কি একটা প্রসঙ্গে তুষার শ্রাবণীকে 'আমার সন্তানের মা' বলে ডেকে বসল।সেই শুরু তারপর থেকে তুষার তাকে এইভাবেই ডাকতে লাগল।এই ডাকের কারনেই তার মন বেশ দূর্বল হয়ে গেল।অনেক বার শ্রাবণী নানা কারনে সম্পর্ক ভেঙে দিতে চেয়েছে কিন্ত এই ডাকের কারনেই সে শেষ পর্যন্ত যেতে পারেনি।
তুষারের ব্যাপারটা সে জানেনা(ছেলে মানুষের মনে কি আছে তা বোঝা খুব মুশকিল) তবে এভাবেই শ্রাবণী ধীরে ধীরে সম্পর্কটায় সত্যিকার অর্থে জড়িয়ে পড়তে লাগল।
(চলবে-)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০৭