প্রথম পর্বের লিংক এখানে
দুই
শ্রাবণী জীবনে তার নিজের অজান্তে একধরনের পরিবর্তন শুরু হলো।ক্লাস পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে মাঝেমধ্যে তুষারের সাথে দেখা হতে থাকলো। সুযোগ পেলে তারা আড্ডা দেয়।কখনো চায়ের দোকানে এক কোনায় বসে বিকেলে চা নাস্তা খায়।তারপর একটু হাঁটাহাঁটি করতে করতে গল্প করে।
তবে তুষার সাধারণত বিকাল বা সন্ধ্যার সময় ছাড়া আসেনা।হাঁটতে বের হলেও যেদিকে তার বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত লোকজন আড্ডা দেয় সেদিকে যায় না।হয়ত সে মানুষের সামনে পড়তে চায় না।তবে ক্যাম্পাসে তো পরিচিত লোকের কমতি নেই।শ্রাবণী লক্ষ্য করে তাদের দিকে পরিচিত রা কেমন কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।তার বেশ বিরক্ত লাগে।এখানে কত বন্ধু বান্ধব হরহামেশাই আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের দিকে এভাবে তাকানোর কি আছে?
শ্রাবণী এই বিষয়টি নিয়ে তার হলের বান্ধবীদের সাথে কোনো আলোচনা করেনি কারণ ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগত রাখতেই সে পছন্দ করে।হলে এমন অনেকে আছে যারা তুষারের সহপাঠী আর শ্রাবণীর ব্যাচমেট বা বন্ধু।তাদের বিষয়টি আর সাধারণ থাকল না যখন এই চেনা মানুষগুলো তাকে বিশেষভাবে দেখতে শুরু করল।হয়ত সে হলের ক্যানটিনে নাস্তা করতে গিয়েছে তুষারের সহপাঠীদের মধ্যে কোনো মেয়েকে দেখা গেল তার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ আবার আসেপাশের বান্ধবীদের কিছু বলছে আর সবাই ঘুরে ঘুরে তাকে দেখছে।
শ্রাবণী খুবই বিরক্ত হতে থাকল এসব দেখে।এই ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত কত নতুন সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে,কত সম্পর্ক ভাঙছে কই কখনো লোকের এত আগ্রহ বা কৌতূহল হতে দেখেনি সে।মানুষ এমনিতেই জেনে যায় একসময় কিন্ত চেনা একজন মানুষকে এভাবে ঘুরে ঘুরে দেখা যতটা আজব ততটাই বিরক্তিকর। তার মধ্যে কিছুটা আত্মদ্বন্দ দেখা দেয়।হয়ত সে কিছুটা মোটা বলেই লোকে এমন করছে।তুষারের মত ছোটখাট পাতলা ছেলের সাথে আসলেই তো তাকে তেমন মানায় না।তাই তুষার যখন মাঝেমধ্যে তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে আসত কিংবা তার সহপাঠীদের আড্ডার মধ্যে শ্রাবণীকে ডেকে নিত তখন ভেতরে ভেতরে সে কিছুটা কুঁকড়ে যেত।তুষারের মেয়ে সহপাঠীরা তাকে যেন চোখ দিয়ে স্ক্যান করে,তাই মুখে হাসি বজায় রাখলেও সে এদের সামনে খুবই অস্বস্তি বোধ করে।
দেখতে দেখতে বিষয়টি আর হালকা পর্যায়ে থাকল না।এমন ঘুরাঘুরি করা নিয়ে শ্রাবণীর মনটাও কেমন করতে লাগল।সে খুব সিরিয়াস টাইপ মেয়ে।জীবন নিয়ে সে খুব ভাবে এবং তার নির্দিষ্ট কিছু প্লান আছে।হালফ্যাশনের ইচ্ছা হলে থাকলাম ইচ্ছা না হলে ভেঙে দিলাম টাইপ সম্পর্ক তার পছন্দ নয়।তাই সে একদিন তুষারকে খুব ভালমত বললো সে জীবনে কি চায়।সেই সাথে এটাও বলল যে তার বাসায় এই ব্যাপারটা কখনোই মেনে নেবে না।সে খুব আদরের সন্তান।সবাই চায় সে ভাল কিছু করুক তার সুন্দর একটি জীবন হোক।তবু্ও যদি কখনো উপযুক্ত হয়ে তাদের সামনে যাওয়া যায় তখন বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে।তুষার তখন বলল-'দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত। কিভাবে তাদের মানানো যায়।'
শ্রাবণী চিন্তামুক্ত না হলেও কিছুটা আস্বস্ত হলো।তখন সন্ধ্যা লেগে গেছে। আশেপাশে কেউ নেই দেখে তুষার হঠাৎ করে খুব সাহসী একটা কাজ করে ফেলল। দুহাতে শ্রাবণীর মুখটা তুলে ধরে দু ঠোঁটে চুম্বন করল।এটাই ছিল তাদের প্রথম অন্তরঙ্গ স্পর্শ। শ্রাবণীর পুরো শরীর ঝিমঝিম করতে লাগলো।মনে হতে লাগল তার হাত পা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে।সে তুষারের ভেতরের কম্পনটাও টের পাচ্ছিল।হলে ফিরে সে নিস্তেজ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল এবং ভাবল--'কালকেই তুষারকে বলে দিতে হবে সে এই সম্পর্ক রাখতে পারবে না।'
(চলবে---)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৩৪