somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী বিখ্যাত রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনা: নরমাংস ভক্ষণ করে বেঁচে থাকার এক অত্যাশ্চর্য আর লোমহর্ষক কাহিনী- শেষ পর্ব

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব: এখানে Click This Link

দ্বিতীয় পর্ব: এখানে Click This Link

২১ অক্টোবর রাতে একটি ছেলে ফিউজিলাজের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ করেই সে একদম অক্ষত ও ব্যাটারি ঠিক আছে এমন একটি ট্র্যানজিস্টার রেডিও পেয়ে গেল। পরদিন ২২ অক্টোবর রোববার সকাল সাতটার দিকে ট্র্যানজিস্টারটা নিয়ে বাইরে এলো ছেলেরা। খবর শোনার জন্য টিউন করল। কিন্তু খবর শুনে প্রচন্ড ধাক্কা খেল। ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে হারিয়ে যাওয়া উরুগুয়ের বিমান ফেয়ারচাইল্ডের অনুসন্ধান কাজ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সবাই হতাশায় মুষড়ে পড়ল। কিন্তু একজন উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখাল। সে বলল, 'এখন আমরা অপেক্ষা করার উদ্বেগ থেকে মুক্ত হলাম। এখন নিজেরাই এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করব।'



বিধ্বস্ত হওয়ার আটদিনের মাথায় সব খাবার ফুরিয়ে গেল। খাবার শেষ হবার পর টুথপেস্ট খেলো ওরা। টুথপেস্ট শেষ হবার পর খাবারের চিন্তায় পাগল হয়ে উঠল সবাই। ইতোমধ্যে প্রতিদিনের খাবার পানির চাহিদা পূরণ করার এক অভিনব পদ্ধতি বের করে ফেলেছে ওরা। প্লেনে অ্যালুমিনিয়ামের কোন অভাব ছিল না। অ্যালুমিনিয়ামের পাত সূর্যের তাপে গরম করে তাতে তুষার ফেললেই পানি হয়ে যায়। তা বিভিন্ন বোতল বা পাত্রে সংরক্ষণ করে দৈনিক চাহিদার পানির অভাব দূর করে ফেলল ছেলেরা। প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে গগলস বানিয়ে ব্যবহার করায় অন্ধত্বের হাত থেকেও বেঁচে গেল ওরা। কিন্তু খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার পর সত্যিকার দুশ্চিন্তা দেখা দিল। আশেপাশে শুধু বরফ আর পাহাড়ের পাথুরে চূড়া ছাড়া আর কিছুই নেই। শৈবাল, গাছের শেকড় বা ঘাস বিচালির কোন চিহ্নই চোখে পড়ে না। সুস্বাস্থ্যের অধিকারি রাগবি খেলোয়াড় ছেলেরা কঠোর প্রতিকূলতার মাঝে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ল। সবার চোখই গর্তে বসে গেছে। অনেকেই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে, সে জায়গা দখল করেছে জীবনের প্রতি তীব্র অনীহা আর উদাসীনতা। কোন অবস্থাতেই যখন খাবারের ব্যবস্থা করা গেল না, তখন মেডিক্যালের ছাত্র রবার্তো কানেজা বিকল্প খাবারের ভয়াবহ অথচ যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবটা উত্থাপন করল। অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে কথাটা বলে গেল কানেজা। তার প্রস্তাবের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিও ছিল। প্রস্তাবে কারও ওপর জোর করল না সে। তবে বুঝিয়ে বলল যে, অবস্থাদৃষ্টে খাদ্যের অভাবে সবাইকে প্রোটিনের ঘাটতি ও অপুষ্টিতে মারা যেতে হবে। বসন্তকালের আগে বরফ গলবে না। আর বরফ না গললে শক্তসমর্থ কেউ হেঁটে গিয়ে লোকালয় থেকে অন্যদের জন্য সাহায্যও পাঠাতে পারবে না। সমাধিস্থলে দশটি মৃতদেহ রয়েছে। জীবিতদের তিন আত্মীয়ের মৃতদেহ বাদ দিলেও আরও সাতটি মৃতদেহ থাকে। এই সাতটি দেহ জীবিত ছাব্বিশজনকে এক মাসের বেশী সময় ধরে প্রোটিন যোগাতে পারবে। সুতরাং সিদ্ধান্ত যার যার কাছে। মৃতদের মাংস খেয়ে জীবন রক্ষা করবে নাকি জীবনের আশা ত্যাগ করবে?

এমন ভয়াবহ, অমানবিক আর নিষ্ঠুরতম প্রস্তাব শুনে আঁতকে উঠল ছেলেরা। অবিশ্বাসে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল সবার। মৃত বন্ধু আর স্বজনদের মাংস খাওয়া! এ যে অকল্পনীয়!! যারা একসময় ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যাদের সাথে হেসেখেলে জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে; যারা একসময় প্রাণাধিক প্রিয় ছিল, যাদের সাহচর্যে জীবনের মধুরতম সময়গুলো কেটেছে- তাদের শরীরকে ছিঁড়েখু্ঁড়ে, কুপিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে, দুই চোয়ালের নিষ্পেষণে দলিতমথিত করে গলাধঃকরণ করা!!! এর চেয়ে ভয়ঙ্কর, এর চেয়ে নিষ্ঠুরতম, এর চেয়ে জঘন্য, এর চেয়ে অমানবিক কাজ আর কী হতে পারে? এমন অকল্পনীয় আর অমানবিক প্রস্তাব কিভাবে দিতে পারল রবার্তো কানেজা? তার কি মৃত বন্ধু আর আত্মীয়দের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই? এমন অবলীলায় প্রস্তাবটা কিভাবে উত্থাপন করল সে?

প্রস্তাব শুনে হতাশায় মুষড়ে পড়ল সবাই। কিন্তু জীবন বাঁচানোর আর কোন উপায় খুঁজে বের করতে পারল না তারা। অগত্যা কানেজার প্রস্তাবটা নিয়ে ভাবতে শুরু করল মনে মনে।



অবশেষে নানা যুক্তিতর্কের পর নিরুপায় হয়ে, একান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য আত্মীয়দের দেহগুলো বাদ দিয়ে মৃত বন্ধুদের মাংস খাওয়াই স্থির করল ওরা। যেহেতু মৃতদেহগুলো কারো কোন কাজেই আসবে না এবং জীবিতদের জীবন বাঁচানোর কাজে লাগবে, তাই ওরা আশা করল ঈশ্বর ওদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু জ্বালানী ছাড়া এত মাংস রান্না করে খাওয়ার কোন উপায় নেই। এ সমস্যারও সমাধান করল রবার্তো কানেজা। উরুগুয়ে থাকতে ক্যাম্পিং করতে গেলে সঙ্গে শুকনো গরুর মাংস নিয়ে যেত; স্থানীয়ভাবে একে চারকুই বলা হয়। কাঁচা মাংস রোদে শুকিয়ে চারকুই বানানো হয়। খুবই প্রোটিন ও খনিজসমৃদ্ধ এবং কোনরকম রিফ্রিজারেশনের প্রয়োজন হয় না বলে এটা কাউবয়দের নিকট খুবই প্রিয় খাদ্য। তাই মৃত বন্ধুদের মাংস থেকে ব্যাপকভাবে চারকুই তৈরী করার কাজ শুরু করে দিল কানেজা। মৃতদেহগুলো সমাধিস্থল থেকে বের করে এনে ফেয়ারচাইল্ডের ভেতর থেকে পাওয়া স্টীলের কুড়ালের সাহায্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কেটে কেটে আলাদা করার ব্যবস্থ করল সে। ক্ষত-বিক্ষত পচন ধরা জায়গাগুলো আলাদা করে ফেলে দিয়ে অন্যান্য মাংসল অংশ থেকে ব্লেড দিয়ে ছোট্ট করে পাতলা পাতলা টুকরো করা হল। হার্ট, লিভার, কিডনি, ব্রেনসহ মানবদেহের খাবার উপযুক্ত সবটাই কাজে লাগাল কানেজা। টুকরোগুলোকে সে অ্যালুমিনিয়ামের পাতের উপর বিছিয়ে রোদে দিল। তার উপর অন্য পাত দিয়ে সূর্যকিরণ প্রতিবিম্বিত করে তাপ বৃদ্ধির ব্যবস্থাও করল। প্রথম প্রথম কানেজা একাই মাংস কাটার কাজ করে যেতে লাগল। তারপর আস্তে আস্তে ব্যাপারটা সবার চোখ সওয়া হয়ে যাবার পর প্রায় সবাই বন্ধুদের দেহগুলো কসাইদের মত কাটা ও শুকানোর কাজ শুরু করল।



দিনে দুবার চারকুল পরিবেশন করা হত। কিন্তু কয়েকদিনেই এই খাবারে অরুচি ধরে গেল ছেলেদের। এই খাবারে কোন স্বাদ ছিল না। শুধুমাত্র জীবনধারণের তাগিদে শুকনো মাংসের শক্ত টুকরোগুলো পানির সাথে পেটে চালান করে দিত ওরা। তবে ওদের শরীরে ক্রমেই শক্তি ফিরে আসছিল। কিন্তু বরফ গলে গিয়ে অভিযান চালানোর সময় পর্যন্ত এই খাবারেও চলবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। এর মধ্যেই আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। হিমবাহের চাপে ফিউজিলাজে তুষার ঢুকে পড়ায় তার নিচে চাপা পড়ে আরও সাতজন যাত্রীর প্রাণপাখি অসীমের পানে উড়াল দিল। এই সাতজনকে হারিয়ে ছেলেরা আরও ভেঙে পড়ল। তবে সাতটি প্রাণ ঝরে গেলেও জীবিতদের জন্য তা কিছুটা উপকারীই হল। আরও কয়েকদিন বেঁচে থাকার উপকরণ জোগাড় হল।

নভেম্বরের শেষের দিকে অ্যান্ডেজের আবহাওয়া ক্রমশ ভালো হতে লাগল। বরফ গলতে শুরু করল। ছেলেদের মনে আশার আলো জ্বলে উঠল। এর মধ্যে ইচাভারেন নামে আরও একটি ছেলে মারা গেল। ইচাভারেনের মৃত্যু ওদের মধ্যে বিরাট এক আলোড়ন সৃষ্টি করল। যত বিপজ্জনকই হোক, অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিল ওরা। অভিযানের জন্য দলের মধ্যে শারীরিকভাবে সবচেয়ে ফিট ও শক্তসমর্থ তিনজনকে বাছাই করা হল। নান্দো প্যারাডো, রবার্তো কানেজা ও ভিজিনটিন। এই তিনজনকে অভিযানের জন্য তৈরী করা শুরু হল। দুসপ্তাহ তাদেরকে বেশী করে খাওয়ানো হল। দিনের বেলা বিশেষ ব্যায়াম করল, আর স্লিপিং ব্যাগ তৈরী করে রাতে তারা খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে প্র্যাকটিস করল। কাছাকাছি ছোটখাট অভিযান চালিয়ে নিজেদেরকে ঝালাই করে নিল ওরা। তাদের চারিদিকে বেষ্টন করে থাকা পর্বত আর গিরিশৃঙ্গের নকশা মনে মনে গেঁথে নিল। যদি সভ্যজগতে পৌঁছুতে পারে তবে উদ্ধারকারি দল নিয়ে যেন ফিরে আসতে পারে।



ডিসেম্বরের ১২ তারিখে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হল। পনের দিনের খাবার, এক বোতল পানি ও এক বোতল মদ নিয়ে যাত্রা শুরু করল তিনজন। ভোর চারটেয় পশ্চিমদিকে যাত্রা করল ওরা। কিন্তু মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যেই ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ল। বুঝতে পারল ওদের প্রথমদিনের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক তৃতীয়াংশ পাড়ি দিতে পেরেছে। পর্বতারোহণের কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া এই বিশাল অ্যান্ডেজ পাড়ি দেয়া যে আত্মহত্যারই নামান্তর তা ওরা বেশ বুঝতে পারল। দ্বিতীয় দিনেও প্রথম দিনেরই পুনরাবৃত্তি হল। অবস্থা দেখে তিনজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিল, কেউ আহত হলে তাকে ফেলেই বাকিরা এগিয়ে যাবে। ওদিকে ফিউজিলাজের পাশে দাঁডিয়ে থাকা বাকিরা এই তিনজনের অগ্রগতির নমুনা দেখে যারপরনাই হতাশ হল। এদিকে প্যারাডো অনেক কসরত করে পর্বতের চূড়ায় উঠে অ্যান্ডেজের বিশাল বিস্তৃতি দেখে বুঝতে পারল কো-পাইলট লাগুরারা মরার সময় প্রলাপ বকে ওদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে গেছেন। তারা মনে করেছিল অ্যান্ডেজের মাত্র মাইল দশেক ভেতরে আছে ওরা, কিন্তু ওদের এই ভুল ধারণা অচিরেই ভেঙে গেল। ধারণার চেয়ে অনেক বেশী পথ পাড়ি দিতে হবে, আর তার জন্য আরও বেশী খাবার প্রয়োজন হবে; তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভিজিনটিনকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হল। ভিজিনটিনের খাবার ওরা দুজন ভাগ করে নিয়ে রওনা হল। ভিজিনটিন মাত্র আধঘন্টায় ওদের কষ্ট করে ওঠা তিনদিনের পথ তরতর করে নেমে এল। নেমে এসে বাকিদেরকে দুঃসংবাদ শোনাল যে, ওদের অনুমানের চেয়ে অনেক বেশী পথ পাড়ি দিতে হবে। সময় লাগবে অনেক বেশী। সবচেয়ে বড় কথা- ওরা দুজন আদৌ লোকালয়ে পৌঁছুতে পারবে কিনা তাতেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এসব শুনে বাকিরা হতাশায় একেবারে মুষড়ে পড়ল। তাদের আশার নিভু নিভু প্রদীপটাও যেন এক ফুঁয়ে নিভে গেল।




দিন গড়িয়ে সপ্তাহ, সপ্তাহ গড়িয়ে কেটে গেল দুই মাস। ছেলেদের মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই ওদের আশা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সবাই আশা ছেড়ে দিলেও দুই অভিযাত্রী তখনো নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস হারায়নি। সতেরোই ডিসেম্বরে তারা দুজন ঠান্ডা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা আর চরম প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে অবশেষে সভ্যতার কাছাকাছি এসে পৌঁছুতে সক্ষম হল। একটি খালি খাবারের কৌটা দেখতে পেল ওরা। পরিত্যক্ত একটা খাবারের কৌটা দুজনের মনেই আশা ও উত্তেজনার স্রোত বইয়ে দিল। ওরা বুঝতে পারল, সভ্যতার কাছাকাছি এসে পড়েছে। ডিসেম্বরের বিশ তারিখে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় ভেঙে পড়া দুই অভিযাত্রী শরীরকে কোনমতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এক জঙ্গলের কাছে পৌঁছুল। দেখল সেখানে কিছু গরু চরছে। কিন্তু কোন মানুষের দেখা পেল না। আরও কিছুদূর হামাগুড়ি দিয়ে চলার পর সামনে একটা খরস্রোতা নদী দেখতে পেল ওরা। আর এক পা-ও যেন চলতে পারছিল না দুজন। বাধ্য হয়ে ওখানেই শুয়ে পড়ল। দিন গড়িয়ে গেল। সন্ধ্যার দিকে একজন অশ্বারোহীকে দূর থেকে নদীর ওপারে দেখতে পেল ওরা। নিজেদের হাতে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের রড নাড়তে নাড়তে চিৎকার করে অশ্বারোহীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইল, কিন্তু গলায় তেমন জোর না থাকায় আর নদীর কলকল শব্দে তাদের চিৎকার চাপা পড়ে গেল। তবে মনে হল লোকটা তাদের দেখতে পেয়েছে। তারপর দেখল অশ্বারোহী ফিরে চলে যাচ্ছে।

অশ্বারোহী লোকটা ছিল গরুর পালের মালিক। সে ছেলে দুটোকে দেখার পর নিজের ক্যাম্পে ফিরে গিয়ে নিজের ছেলেদের কাছে আগন্তুক দুজনের ব্যাপারটা জানিয়ে আলোচনা করল। আলোচনা শেষে আগন্তুকদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিল সে। তার নাম ছিল ক্যাটালান। সে প্রথমে মনে করেছিল ওরা দুজন জেলভাঙা আসামি বা কোন সন্ত্রাসী দলের সদস্য হবে হয়ত। তাই আর এগিয়ে যায়নি। বিমান দুর্ঘটনার কথা তার জানা ছিল। কিন্তু দুমাসের বেশী অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর ওরা দুজন বিমানের জীবিত যাত্রী হতে পারে এবং বিশাল পর্বত ডিঙিয়ে এখান পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে এটা তার কাছে স্রেফ অবিশ্বাস্য ছিল। কিন্তু তারপরও ছেলেদের সাথে পরামর্শ করে পরদিন সকালে ক্যাটালান চারটে পাঁউরুটি ও চার টুকরো পনির নিয়ে নদীর পারে এসে পৌঁছুল। নদীর একেবারে কিনারায় পৌঁছে খাদ্যগুলো ওদের দিকে ছুড়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে খাবারগুলোর উপর হামলে পড়ল দুজন। চেটেপুটে খাওয়ার পর ক্যাটালানের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসল ওরা। তারপর প্যারাডো পকেট থেকে কাগজ আর লিপস্টিক বের করে "এস ও এস" লিখে কাগজটা পাথরে মুড়ে নদীর এপারে ছুড়ে মারল। ক্যাটালান কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে পড়ল। পড়ার পর বুঝতে পারল ওরা বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছে। তাই আরও বিস্তারিত জানতে চেয়ে একটা পেন্সিলসহ কাগজটা আবার ওদের দিকে ছুড়ে মারল সে। প্যারাডো তাতে সংক্ষেপে বিমান দুর্ঘটনার কথা আর ওদের দুজনের টানা দশদিন হেঁটে পর্বত ডিঙিয়ে আসার কথা লিখে সাহায্য চাইল। অবিশ্বাসে চোখ বড় বড় হয়ে গেল ক্যাটালানের। তারপর আর দেরী না করে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল সে। তিরিশ মাইল দূরের পুয়েন্টো নেগ্রো গিয়ে আরও সাহায্য আনতে হবে।

চলতে চলতেই পথে বন্ধু সারদাকে পেয়ে গেল ক্যাটালান। তাকে সব খুলে বলল সে। সারদা বিন্দুমাত্র দেরী না করে ছেলে দুজনের কাছে পৌঁছে গেল। ওদের কাছে সব শুনে ক্যাম্পে এসে ওদের দুজনের জন্য ঘোড়া নিয়ে গেল সে। তারপর ফিরতি পথে ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ঘোড়া ছোটাল। দীর্ঘ দুই মাস বারো দিন পর ডিসেম্বরের একুশ তারিখের দুপুরে ফেয়ারচাইল্ডের জীবিত কোন যাত্রী সভ্যজগতে পৌঁছুতে সক্ষম হল। ক্যাম্পে পৌঁছার পর ওখানকার কাউবয়রা স্বাগত জানাল ওদের। তারপর লাঞ্চ খেতে দিল। খেতে খেতে সবাই শুনল ওদের বিস্ময়কর অবিশ্বাস্য বেঁচে থাকার কাহিনী।

সূত্র: ইন্টারনেট ও সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই ‘আন্দেজের বন্দি’।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×