গল্পঃ রুদ্রা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১.
রুদ্রা আমার বন্ধু কোন কাকতালীয় ঘটনা দিয়ে ওর সাথে আমার পরিচয় ঘটেনি,খুব সামান্য একটা ঘটনা দিয়ে ওর সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল। একটা জাতীয় দৈনিকে বন্ধু বিষয় নিয়ে আমার একটা ম্যাসেজ ছাপা হয়েছিলো আর সেখানে আমার ফোন নাম্বার দেওয়া ছিলো। রুদ্রা সেই ফোন নাম্বারটা পেয়েই আমায় ফোন করেছিলো। এভাবেই পরিচয় তারপর বন্ধুত্ব।
ওর বন্ধু হবার শর্ত ছিলো আমরা শুধু বন্ধুই থাকবো এরচেয়ে বেশি কিছু নয়,আর ও আমাকে বলেছিল আপনি কি গান পছন্দ করেন ? আমি বললাম হ্যাঁ। গান গাইতে পারেন,যদি গান গাইতে না পারেন তাহলে তো আপনি আমার বন্ধু হতে পারবেন না। আমি ওর বন্ধুত্ব পাওয়ার লোভে সেদিন মিথ্যে করে বললাম হ্যাঁ গাইতে পারি। আর আমার শর্ত ছিলো বন্ধুত্ব সম্পর্কের মাঝে কখনোও সরি বলা যাবেনা। আমার অদ্ভুত এ শর্ত মেনে নিয়েই রুদ্রা আমার বন্ধু হয়েছিলো।
তারপর বেশ ক’দ্দিন পর ও যখন বুঝতে পারলো আসলে আমি বাথরুম সিঙ্গার ছাড়া আর বেশি কিছু নই,তখন ওর প্রথমে একটু রাগ হলেও কি মনে করে যেন আমাকে বাদ দিলো না। আমি ছাড়াও ওর আরও বেশ ক’জন বন্ধু ছিলো।
ওর আর আমার মাঝে ছিলে বিস্তর তফাৎ ও ছিলো সুন্দরী শিক্ষিতা,স্মার্ট আর আমার মাঝে সুন্দরের ছিটেফোঁটাও নেই স্মার্টনেস বলতে যা বোঝায় তা কখনোই আমার মাঝে ছিলনা। এরকম একটা গবেট মার্কা ছেলে যে ওর বন্ধু সেটা শুনে ওর আশেপাশের বন্ধুরা বেশ ক্ষেপাতো ওর রাগ হতো কিন্তু কখনো আমাকে সে কথা বলতো না।
ও ছিলো চঞ্চল টাইপের আর আমি ছিলাম শান্ত টাইপের তবুও কিভাবে যেন ও আর আমি একসময় ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। সকাল দুপুর আমার শত ব্যস্ততা থাকা স্বত্বেও আমি ওর সাথে কথা বলতাম দেখা করতাম রুদ্রা কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমার সাথে দেখা করতো আমি রাগ করে বলতাম এসব কি? ক্লাস ফাকি দিচ্ছিস কেন,রুদ্রা হেসে বলতো আজ ক্লাসের চেয়ে তোর সাথে দেখা করা জরুরী। আমার ব্যস্ততার কারনে ওর সাথে আমার ফোনেই বেশি কথা হতো এমনও রাত গেছে ফজরের আযান হচ্ছে তবুও আমাদের কথা শেষ হতো না। রুদ্রার ফ্যামিলির লোকদের কাছে আমি ছিলাম দু’ চক্ষের বিষ আমার মতো চালচুলো হীন একটা গবেট ছেলে কে মেয়ের বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে তাদের আপত্তি ছিলো। তাছাড়া ওর কিছু বন্ধু ছিলো যারা আমাকে একদম সহ্য করতে পারতো না, তবে আমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম এর কারণটা।
রুদ্রা পছন্দ করতো আমি যখন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ওর সাথে কথা বলতাম। আমার জোছনা রাতের সেই কবিতা বলা আমার গলা ছেড়ে গান গাইবার ব্যার্থ প্রয়াস আর সেই সাথে কখনোও বা প্রচন্ড ঝগড়া ও আমার সব কিছুই উপভোগ করতো। এভাবে আমার সব অস্তিত্ব আমার সব ইচ্ছের ঘুড়িরা ওর মনের আকাশে উড়ছিলো ওর কথায় আমি একবার কষ্ট পেয়ে খুব কেদেঁছিলাম আর আমার সে কান্না দেখে ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো আর আমাকে বলেছিলো কখনো ছেড়ে যাবেনা। এরপর থেকে আমার যদি কখনো মন খারাপ হতো তো কিভাবে আমার মন ভাল হবে সে চেষ্টা চালাতো। আমার জীবনটা তো এমনিতেই ছন্নছাড়া কিন্তু এই ছন্নছাড়া জীবনটাকে সাজাতে ও আমাকে ভীষন ভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছিল।
একদিন বিকালে আমার কাজ ছিলোনা আমি বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরছিলাম, পি.ডি.বি’র বিল্ডিংটা পাশ কাটাতেই মোবাইলের রিং বেজে উঠল,রুদ্রা’র কল। বাইসাইকেলের ব্রেক কষে দাড়ালাম, ফোন রিসিভ করলাম। ও পাশ থেকে ওর ঝাঁঝালো কন্ঠ
-তুই এখন কোথায়?
-আছি আশেপাশে
-তুই সকালে এলি না কেন?
-কাজ ছিলো
-এখন কি করছিস
-বাইসাইকেলে ঘুরছি
-আমাকে সাথে নিবি
-না
-কেন
-সবাই কেমন ভাবে তাকায় আর তোর বাসার কেউ জানতে পারলে কি হবে ভেবে দেখেছিস?
-কেউ জানবে না,দোস্ত কতদিন সাইকেলে ঘুরি না,প্লিজ আয়
-না আমি পারব না
-পারবিনা মানে
-তোকে আসতেই হবে
অগ্যতা কি আর করা বাসার গেট পেরিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে আমার বাইসাইকেলে এসে বসলো রুদ্রা তারপর একটানা বেল নেড়ে আমাদের অদূর ভ্রমন। সেদিন বাসায় গিয়ে ও আমার জন্য অনেক বকা শুনেছিলো।
ঈদের আগের দিন একটা বিষয় নিয়ে রুদ্রার সাথে আমার প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছিলো,কথা কাটাকাটি’র এক পর্যায়ে ও আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন্ করে দেবে বললো। আমি তো পুরোপুরি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন পৃথিবীতে নিজেকে আমার অসহায় মনে হচ্ছিল।
ঈদের দিন ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে সারাদিন ঘুমিয়ে ছিলাম আমার নিজের জীবনের প্রতি কেমন একটা ঘৃণা জন্মে গিয়েছিলো কিন্তু একটা বিষয় আমি কিছুতেই নিজের মনকে বোঝাতে পারছিলাম না। আমি তো ওকে ভালোবাসতাম না ওর সাথে তো আমার প্রেম জাতীয় কোন সম্পর্ক ছিলনা কেন তবে আমি আমার নিজের মনকে বোঝাতে পারছিলাম না সেটা আমি নিজেই জানিনা। আমি নিজেই নিজেকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছিলাম। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমি একসময় সর্বনাশের চুরান্ত পর্যায়ে চলে যেতাম।
একদিন হঠাৎ করে রুদ্রা আমার বাসায় এসে হাজির তারপর সে অনেক কথা ও আবারও আমাকে ওর নিজ হাতে উঠিয়ে নিলো বন্ধুত্বের পথে আবারও আমরা বন্ধুত্বের অবগাহনে ভাসলাম। ওর আচরণে আমি খানিকটা অস্বাভাবিকতা
লক্ষ করলাম। এরপর ওর দেখা খুব একটা দেখা পেতাম না জিজ্ঞাসা করলেই বলতো সামনে পরীক্ষা তাই ব্যাস্ত এভাবেই নানা রকম অজুহাতে আমাকে এড়িয়ে চলতো। আমি জানতাম ওর এক বন্ধুর সাথে ওর প্রনয় ছিলো ও ছেলেটিকে ভীষণ ভালবাসত । আমাকে বলতো যদি কোনদিন আমরা পালিয়ে যাই আমাদের কে তুই থাকার জায়গা দিবি,আমি বলতাম হ্যাঁ। ভাবতাম ভলোবাসার মানুষটির সাথে বোধহয় ঝগরা করেছে তাই এমন করে।
২.
একদিন লাইব্রেরী থেকে বের হবার সময় ওর সাথে আমার দেখা। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হতবাক ওর চোখমুখ কেমন শুকনো চুলগুলো এলোমেলো চোখের নিচে কালি পড়েছে। ভাবলাম সামনে পরীক্ষা তাই রাতজেগে পড়ালেখা করে এই হাল।
তবুও আমি প্রশ্ন করলাম কিরে তোর এই অবস্থা কেন ? আমার কথার কোন উত্তর দিলো না আমার খবর নিলো পাশের কফি শপে বসলাম আমার দু’হাত চেপে ধরে বলল রুদ্র আমাকে একটা কথা দিবি ?
আমি বললাম কি কথা
-আমাকে ছেড়ে তুই কখনো যাবিনা তো
-ধুর পাগল তোকে ছাড়বো কেন ?
আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষন কাঁদল তারপর বলল আমি অনেক বদলে গেছি রে তোর সেই বন্ধু আর বন্ধু নেই। আমি তোকে ছেড়ে অনেক দুর এগিয়ে গেছি।
আমি বললাম এগিয়ে গেছিস মানে ?
-আমি নেশায় আসক্ত হয়ে গেছি সন্ধ্যে হলেই আমার হাত পায়ে খিচুনি দেখা দেয় সারারাত আমি ঘুমুতে পারিনা তারপর সারাদিন ঘুমাই।
এসব কথা শুনে আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া আমি ওর ব্যাগ থেকে পেলাম ঘুমের ট্যাবলেট সূচ সিরিঞ্জ ইত্যাদি।আমি কান্নাজড়ানো কন্ঠে অনেক অনুরোধ করলাম সব ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার জন্য কিন্তু তখনও আমি বুঝতে পারিনি যে ও আমার ভাবনার চেয়েও অনেক দুর এগিয়ে গেছে।
ওর মাকে আমি একদিন বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে তারিয়ে দিয়েছিলো আমার কোন কথাই শুনেনি আমি একদিন ওর কলেজে ওর বন্ধুদেরকেও বললাম ওরা আমার কথা’র কোন গুরুত্বই দেয়নি। আমি ওকে অনেক বোঝালাম কিন্তু কে শোনে কার কথা। পরে একদিন জানলাম ও নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছে। শেষে এমনি এক শ্রাবণ দিনে আমি আবারও বোকার মতো কাঁদলাম আর নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হলো।
আমার পরীক্ষা চলে এলো কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারলাম না অযত্নে অবহেলায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। একদিন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ওকে দেখতে গেলাম ওর মা আমাকে বলল আমার জন্যই নাকি রুদ্রা’র এই অবস্থা
আমিই নাকি ওকে নেশার জগতে ঠেলে দিয়েছি কথাগুলো আমার মনকে আরও কষ্ট দিলো ওকে এক পলক দেখলাম তাও আবার অনেক অনুনয় বিনয়ের পর ও আমকে বলল কেন এসেছিস ? তোর মুখ আমি দেখতে চাই না।
আমি খুব কষ্ট পেয়ে চলে এসেছিলাম আমার ফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে আমি গ্রামের বাড়ি চলে এলাম।
প্রায় মাস খানেক রুদ্রা’র মা আমাকে খবর দিলো আমি আবারও অসুস্থ শরীর নিয়ে হাজির হলাম। রুদ্রা আমার হাতটা ধরে বলল রুদ্র আমি বাচঁতে চাই, তুই বাচাঁতে পারিস জানিস আমার কোন বন্ধু নেই তুই আমার বন্ধু হয়ে থাক’না। আমি যে কি বলবো।
আমি শেষ বারের মতো ওর মা’র কাছে গেলাম বললাম আমাকে কিছুদিন সময় দিন আমি দেখি কি করতে পারি। পরদিন থেকে আমি ওর সাথে আবারও সঙ্গ দিতে শুরু করলাম ওকে নিয়ে চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি আব্দুল্লাহ পুর
তারপর ওর কাছ থেকে শুনলাম ও কিভাবে নেশার এ জগতে এলো,ওর ভালবাসা’র মানুষ ওকে এ পথে এনেছে আর ওর বন্ধুরা মনে করতো আমিও ওর এ কাজে জড়িত তাই ওরা আমার সাথে এমন ব্যাবহার করতো। রুদ্রা ছিলো ভালো স্টুডেন্ট এবং সবার সাথে মিশতো যে ছেলেটা ওকে ভালবাসতো সে আসলে ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাছাড়া রুদ্রাও ছিলো আমার মতো বন্ধু পাগল তাই সহজে সবাইকে বিশ্বাস করতো তাই এমনটা হয়েছে নেশা মানুষকে শুধু নষ্ট করে দেয় ভালো করতে পারেনা।
এখন ওর পাশে নেই কেউ আমি ওকে বোঝালাম আর কখনও এমন করবি না ও কথা দিলো কখনও এমন করবে না।
কাল ঈদ আমরা সবাই ছাদে দাড়িয়ে,আকাশে ছোট্ট চাদঁটা উঠে গেছে সেই কখন রুদ্রা আমার সামনে দাড়িয়ে বলল একটা সত্যি কথা বলবি আমি বললাম বল?
-তুই আমাকে ভালোবাসিস
আমি একটু হতবাক হলাম তবুও মনের জমানো কথা চেপে বললাম না
-তুই মিথ্যে বলছিস
-হ্যাঁ
-কেন
-আমরাতো শুধু বন্ধু তাই না আর শর্তে তো তাই বলা ছিলো
-শর্ত উঠিয়ে নিলাম এখন বল আমাকে ভালোবাসিস
-হ্যাঁ
-এতদিন বলিস নি কেন ?
আমি আকাশের চাদঁটার দিকে তাকালাম আমি কি সত্যিই রুদ্রাকে ভালোবাসি। চাদটা কেমন যেন বলে উঠলো হ্যাঁ।
-ঃ সমাপ্ত ঃ-
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ভারতীয় পতাকার অবমাননা
বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।
কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।
ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং
ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ
চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।
সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন