আজ আমরা আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে অতি দ্রুত গুগল এডসেন্স এর একাউন্ট পাবেন। “গুগল এডসেন্স একাউন্ট পাচ্ছি না”, “অনেক অ্যাপ্লাই করেছি তাও হচ্ছে না” এমন কথা প্রতিনিয়তই শুনতে হয়। তখন তাদের কথা শুনে যতুটুকু বুঝতে পারা যায় যে তারা এমন এমন কিছু ছোট বিষয় বাদ দিয়ে অ্যাপ্লাই করেছে যা না করলে গুগল কখনই এডসেন্স একাউন্ট দেবে না। আজ সেই বিষয় নিয়েই আপনাদের সামনে আলোচনা করবো।
যেভাবে গুগল এডসেন্স একাউন্ট পাবেন
গুগল এডসেন্স একাউন্ট পাওয়া কোন কষ্টের কিছু না, আবার কোন জাদু মন্ত্র ও না। তবে তার জন্য আপনাকে সঠিক পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে আগাতে হবে। সেক্ষেত্রে এডসেন্স একাউন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। নিচে এই বিষয় গুলো ধাপে ধাপে আপনাদের জন্য বর্ণনা করা হলো।
ব্যবহার করুন .com, .org, .net, .info ডোমেইন
অনেকেই মনে করেন ফ্রি ডোমেইন দিয়ে গুগল এডসেন্স পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দ্রুত এডসেন্স পাওয়ার জন্য টপ-লেভেল ডোমেইন আপনাকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। একসময়ে শুধুমাত্র ব্লগস্পট এ সাইট করে আবেদন করলেই এডসেন্স পাওয়া যেতে কিন্তু এখন আর সেটা হয় না। তাই যদি দ্রুত গুগল এডসেন্স একাউন্ট পেতে চান তাহলে টপ লেভেল ডোমেইন হিসাবে .com, .org, .net, .info এক্সটেনশন ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
CMS হিসাবে WordPress ব্যবহার করুন
আমারা জানি ওয়ার্ডপ্রেস এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি সিএমএস। কারণ হিসাবে ওয়ার্ডপ্রেস এ রয়েছে সহজলভ্যতা, কোডিং ছাড়াই একটি সুন্দর ওয়েবসাইট করার উপায়, সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব সাইট স্ট্রাকচার সহ অনেক কিছু। যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে ওয়েবসাইট বানান তাহলে আপনি অনেক প্লাগিন পাবেন যা দিয়ে সহজেই আপনার ওয়েবসাইটকে সাজাতে পারবেন। তাছাড়া ওয়েবসাইট এর কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের কোন তুলনা হয় না। এডসেন্স একাউন্ট পাওয়ার পূর্বশর্ত যেহেতু একটি ভালো এবং সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব ওয়েবসাইট তাই ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
নতুন Gmail একাউন্ট দিয়ে এডসেন্সের আবেদন করুন
যখন আপনি গুগল এডসেন্স এর একাউন্ট এর জন্য আবেদন করবেন তখন একদম নতুন একটি গুগল একাউন্ট ব্যবহার করুন এবং তা অবশ্যই মোবাইল ভেরিফাইড করে নিবেন। গুগল এডসেন্স এর জন্য আলাদা ইমেইল ব্যবহার করা উচিত। এতে করে আপনার ইনবক্সে অনাকাঙ্ক্ষিত ইমেইল এর মাঝে গুগল এডসেন্স এর গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে।
গুগলের সার্ভিস গুলো ব্যবহার করুন
আপনার একাউন্টের জন্য এবং ওয়েবসাইট এর জন্য গুগলের সম্ভব সকল সার্ভিস ব্যবহার করুন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গুগল প্লাস একাউন্ট কমপ্লিট করা। আপনি যে ইমেইল দিয়ে গুগল এডসেন্স আবেদন করবেন সেই ইমেইল এ আপনার গুগল প্লাস একাউন্ট এর প্রোফাইল ১০০% কমপ্লিট করার চেষ্টা করুন। এতে করে গুগলের কাছে আপনার পরিচয় বিশ্বাসযোগ্য হবে। এবং সেই সাথে গুগল অথর ভেরিফিকেশন করে ফেলুন আপনার ওয়েবসাইট এর। এছাড়া আপনার ওয়েবসাইট এ যোগ করুন গুগল ওয়েবমাস্টার টুলস, গুগল এনালাইটিক্স সার্ভিস। যেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট ও অথোরিটি সাইট হিসাবে গণ্য হবে।
১৫টির বেশি কনটেন্ট লিখুন
কনটেন্ট হলো একটি ওয়েবসাইট এর প্রাণ। সেই সাথে বিজ্ঞাপনদাতাদের আয়ের প্রধান উৎস। তাই যদি আপনাকে গুগল এডসেন্স এর একাউন্ট কোন ঝামেলা ছাড়া পেতে চান তাহলে অবশ্যই সর্বনিম্ন ১৫টি আর্টিকেল দিয়ে ওয়েবসাইট শুরু করতে হবে। এবং প্রতিটি কনটেন্ট মিনিমাম ৫০০ ওয়ার্ড হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়।
আগে আপনার ওয়েবসাইট সম্পূর্ণরূপে ইনডেক্স করুন গুগলে
এই অংশে আমারা অনেকেই ভুল করে থাকি। আমরা মনে করি প্রথম দিনেই ২০টা কনটেন্ট দিয়ে পরের দিনেই গুগলে আবেদন করি। যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ গুগলে আপনার ওয়েবসাইট যদি ইনডেক্স করা না থাকে তাহলে বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার ওয়েবসাইট এ কখনই এড দিতে চাইবে না। আর যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা আগ্রহী না সেখানে গুগল আপনাকে এডসেন্স একাউন্ট দিতেও আগ্রহী হয়ে উঠবে না। তাই ১৫-৩০ দিন ধরে আপনি আপনার সকল কনটেন্ট পাবলিশ করুন, এরপর আরো ৭-১০ দিন সময় দিন সকল পেজ গুলো ইনডেক্স হতে, তারপর গুগলে এডসেন্স এর জন্য আবেদন করুন।
ন্যূনতম ভিজিটর না পেলে আবেদন করবেন না
ট্রাফিক বা ভিজিটর হলো আয়ের প্রধান উৎস। যদি ভালো কনটেন্ট এ আপনার ওয়েবসাইট পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু কোন ভিজিটর না থাকে তাহলে আপনার সেই কনটেন্ট এর কোন মূল্য নেই। ভিজিটর ছাড়া গুগল থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপনদাতারা সবাই অনাগ্রহ প্রকাশ করবে আপনার ওয়েবসাইট এ বিজ্ঞাপন দিতে। তাই ন্যূনতম ২০ জন ভিজিটর প্রতিদিন ওয়েবসাইট এ ভিজিট করে এমন সময়ে গুগল এডসেন্স এর জন্য আপনি আবেদন করতে পারেন । সেই ভিজিটর যদি সার্চ ইঞ্জিন থেকে আসে তাহলে তো বড়ই ভালো, আর যদি সেই ভিজিটর সোশ্যাল, রেফারাল হয়েও আসে তাও সমস্যা হবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে ট্রাফিক এর কোয়ালিটির উপর।
সঠিক ভাবে অনপেজ অপটিমাইজেশন করুন
সার্চ ইঞ্জিন গুলো সব সময় অনপেজ অপটিমাইজেশনকে পছন্দ করে। কারণ একটি ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব হয় তখন যখন তাকে সঠিক ভাবে অনপেজ অপটিমাইজেশন করা হয়। তাই আপনাকে সদা চেস্টা রাখতে হবে আপনার ওয়েবসাইট এ যেন পূর্ণাঙ্গ অনপেজ অপটিমাইজেশন করা হয়।
কিছু প্রয়োজনীয় পেজ তৈরি করা
গুগল এডসেন্স এর জন্য এই অংশটুকু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত গুগল একাউন্ট পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই Conact Us, About Us, Privacy and Policy, DMCA পেজ তৈরি করতে হবে। কারণ আপনার ওয়েবসাইট যদি এই পেজ গুলো না থাকে তাহলে কেউ চাইলেইন আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ বা আপনার সম্পর্কে জানতে পারবে না। আর যদি কোন ধরনের প্রাইভেস ও পলিসি না থাকে তাহলে যেকেউ আপনার ওয়েবসাইট এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাই আপনাকে গুগল এডসেন্স পেতে হলে অবশ্যই এই পেজ গুলো বানাতে হবে।
এসইও এর ট্যাকনিকাল দিকগুলো বাদ দেয়া যাবে না
ওয়েবসাইট এর অথোরিটি আরো বেশি মজবুদ করতে তৈরি করুন sitemap.xml, robots.txt ফাইল। এই ফাইলগুলো আপনার ওয়েবসাইটকে দ্রুত ইনডেক্স এর সহায়তা করবে এবং সার্চ বটকে কন্ট্রোল করবে। এছাড়া ওয়েবসাইটকে যে যে স্থানে ইন্টার্নাল লিংকিং প্রয়োজন সেখানে ইন্টার্নাল লিংকিং করুন। পাশাপাশি কপিরাইট মুক্ত ইমেইজ ব্যবহার করুন এবং ওয়েবসাইট যথা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন। মিনিমাল কালার ব্যবহার করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ গুগল এডসেন্স এর জন্য।
বোনাস টিপসঃ বিজনেস নিশ নিয়ে ওয়েবসাইট বানান
যদি আপনি অতিদ্রুত এবং কোন ঝামেলা ছাড়াই গুগল এডসেন্স একাউন্ট পেতে চান তাহলে আপনি একটি ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে ওয়েবসাইট খুলে ফেলুন। কারণ আপনি হয়তো জানেন কীওয়ার্ড রিসার্চ এর মাধ্যমে আমারা লাভজনক কীওয়ার্ড খুঁজে থাকি। সেখানে আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে যে কীওয়ার্ড এ বেশি CPC (Cost Per Click) থাকে সেই কীওয়ার্ডটি নিয়ে কাজ করা। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন যে সকল কীওয়ার্ড এর সাথে ব্যবসায়িক বিষয় জড়িতে আছে সে সকল কীওয়ার্ডের CPC অনেক বেশি হয়। যেমন “Free Mobile Phone Ringtone” কীওয়ার্ডে CPC থাকে $০.০১ থেকে সর্বোচ্চ $১.০০ কিন্তু “buy iphone 5 32 GB” কীওয়ার্ড এ CPC হয় $১.০০-১০ ডলার বা তার ও বেশি। এর কারণ হলো, ফ্রি রিংটোন কীওয়ার্ডের সাথে তেমন কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই বিধায় সেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা অনেক কম। কিন্তু buy iphone 5 এর সাথে খুব ভালো করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জড়িতে আছে। কারণ যারা এই কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করে তাদের মধ্যে ৬০-৭০ ভাগ মানুষ আই ফোন কেনার জন্যই সার্চ করে। তাই সেখানে বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। আর বেশি বিজ্ঞাপনদাতা থাকার কারণে যখন তারা দেখে নতুন কোন ওয়েবসাইট তাদের টার্গেটেড কীওয়ার্ড এ ওয়েবসাইট খুলেছে তারা তখন সেই ওয়েবসাইটও বিজ্ঞাপন দিতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। এই কারণেই যখন আপনি কোন বিজনেস রিলেটেড ওয়েবসাইট খুলবেন তখন দেখবেন খুব সহজেই এবং দ্রুতই আপনি এডসেন্স একাউন্ট পেয়ে গিয়েছেন। কারণ আপনি বিজ্ঞাপন দাতাদেরকে সুযোগ করে দিলেন তাদের পণ্যের মার্কেটিং করে দেয়ার জন্য।
তো এই ছিলো আজকের গুগল এডসেন্স একাউন্ট কিভাবে পাবেন তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিয়ে আমাদের ব্লগ টিউটোরিয়াল। আশা করি যারা অনেক চেষ্টা করেও এডসেন্স একাউন্ট পাচ্ছেন না তারা উপরের টিপস অনুসারে শুরু করে দিবেন নতুন ওয়েবসাইট এর কাজ। আশা করছি দ্রুতই আপনি এডসেন্স একাউন্ট পেয়ে যাবে।
আর হ্যাঁ, আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করেই আগামী টিউটোরিয়ালে গুগল এডসেন্স এর উপর লেখা প্রকাশ করা হবে। তাই কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন!! ভালো থাকুন সবাই আর সাথেই থাকুন ওয়েবকোড ইনস্টিটিউ এর।
পূর্বে প্রকাশিতঃ ওয়েবকোড ইনস্টিটিউট ব্লগ
লেখকঃ সজীব রহমান
ফলো করুন ওয়েবকোড ইনস্টিটিউট ’কে সর্বক্ষণ
ওয়েবকোড ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষণ ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিশেষ আয়োজন করছে সবসময়। তাই নিয়মিত আমাদের ফলো করুন এবং আপডেট থাকুন।
আমাদের প্রশিক্ষণ সমুহঃ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন , ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট আমাদের ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/WebCodeInstitute
আমাদের ফেসবুক গ্রুপঃ Click This Link
আমাদের ওয়েবসাইটঃ http://webcodeinstitute.com
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইলো ওয়েবকোড ইনস্টিটিউট এর পক্ষ থেকে।