কিশোর পাশাকে মনে পড়ে? হু, সেই তিন গোয়েন্দার কিশোর পাশা। সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া তুমুল জনপ্রিয় এই সিরিজটি শুরু করেছিলেন রকিব হাসান। তিন গোয়েন্দার বইগুলিতে প্রায়শই কিশোর পাশাকে তুলনা করা হতো, "এরকুল পোয়রো" নামে অচেনা এক গোয়েন্দার সাথে।এই অচেনা গোয়েন্দার সৃষ্টা হলেন অগাথা ক্রিস্টি - দ্য কুইন অফ ক্রাইম। গিনেস রেকর্ডস এর মতে যার বিক্রয়কৃত বইয়ের সংখ্যা ৪০০,০০,০০,০০০ (চারশ কোটি), যেগুলো আবার অনুবাদিত হয়েছে ১০৩টি ভাষায় (দুটোই বিশ্ব রেকর্ড)।
অগাথা ক্রিস্টি গল্পের একেবারে শেষ দৃশ্যে এসে রহস্যর সমাধান করতেন। তার গল্পের এই আকর্ষণী ক্ষমতার জন্যই পাঠক ভালোবেসেছে তার নাটক আর বইগুলোকে। পরবর্তীতে যার বেশিরভাগই চলচিত্ররূপে সিলভার স্ক্রীনে ফিরে এসেছে। আজ তেমনই চারটি মুভির কথা বলবো।
Murder on the Orient Express
Directed by Sidney Lumet
Release: 1974
IMDb Rating: 7.3
ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ছিলো বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভিন্ন পেশার কিছু মাণুষ। আর ছিলো বিখ্যাত বেলজিয়ান ডিটেক্টিভ পোয়রো। সেই ট্রেনে রাতের বেলা খুন হয়ে গেলো এক ধনী অ্যামেরিকান। ট্রেনের বগিতে বসেই তদন্তে নামলো পোয়রো। সন্দেহ হলো প্রত্যেককেই। কিন্তু তাদের একজনেরও যে স্ট্রং কোনো মোটিভ নেই। তাহলে কি বাইরের কেউ খুনটা করেছে?
বেলজিয়ান লোকটাকে দেখলে একদমই ভালো লাগবে না। খাটো, ডিমের মতো মাথা, ঝাড়ুর মতো খাড়া গোঁফ, ঘড়ঘড়ে কন্ঠস্বর, বিরক্তিকর পার্সোনালিটি। ধুর, এ আবার কোনো গোয়েন্দা হলো নাকি ! প্রথম দর্শনে তাকে স্রেফ একটা গর্দভ বলে মনে হয়। সযতনে এমনই অনাকর্ষণীয়ভাবে অগাথা সৃষ্টি করেছেন তার সব চে বিখ্যাত চরিত্র এরকুল পোয়রোকে। কিন্তু পোয়রোর এই ডিমের মতো মাথা নীচেই লুকিয়ে আছে ক্ষুরধার এক মস্তিষ্ক। না কোনো সূত্র তার চোখ এড়িয়ে যায়, আর না কোনো তথ্য তার মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে। মুভিটি পরিচালনা করেছেন সদ্যপ্রয়াত জিনিয়াস ডিরেক্টর সিডনি লুমেট (12 Angry Men)। অনসাম্বল কাস্টের এই মুভির বিভিন্ন চরিত্রে আছেন শন কনোরী (Dr. No), ঈংগ্রীড বার্গম্যান (Casablanca), অ্যান্হনি পারকিন্স (Psycho) আর অ্যালবার্ট ফিনি (Tom Jones)।
ডাউনলোড লিন্ক (মেগাআপলোড লিন্ক, ৮১০ মেগা)
And Then There Were None
Directed by René Clair
Release: 1945
IMDb Rating: 7.8
দশজন মাণুষ আটকা পড়েছে এক নির্জন দ্বীপে। যাদের প্রত্যেকের অতীতে লুকিয়ে আছে নিষ্পাপ মাণুষের রক্তের দাগ। এর পর শুরু হলো একের পর এক মৃত্যু। কিন্তু খুনী কে?
গল্পটার নাম নেওয়া হয়েছে Ten Little Indians কবিতা থেকে (এটাও অগাথা ক্রিস্টির আরেক সিগ্নেচার স্টাইল। গল্পের নাম কোন ছড়া বা কবিতা থেকে নেওয়া)। এটার সাথে আমাদের বাংলা ভাষায় প্রচলিত যোগীন্দ্রনাথ সরকার'র লেখা হারাধনের দশটি ছেলে কবিতাটির বেশ মিল পাওয়া যায়।
ডাউনলোড লিন্ক (স্টেজভ্যু লিন্ক, ৫৪১ মেগা)
Witness for the Prosecution
Directed by Billy Wilder
Release: 1957
IMDb Rating: 8.4
দুঁদে আইনজীবি স্যার উইলফ্রিড রবার্টস (Charles Laughton) মহা বিপাকে পড়েছেন। তার পছন্দ হলো ক্রিমিনাল কেস। অথচ ডাক্তারের কঠিন বারণ, এই রোগাক্রান্ত শরীর কোনো ক্রিমিনাল কেস ডিল করা যাবে না। এমন সময়ে তার কাছে এলো লিওনার্ড (Tyrone Power) নামে এক ইনভেন্টর, যে জড়িয়ে গিয়েছে এক হত্যাকান্ডের সাথে। প্রতিটি সূত্র দেখলে মনে হবে সে-ই বুঝি খুনটা করেছে। তাকে বাঁচাতে পারে একমাত্র তার স্ত্রী ক্রিস্টিন (Marlene Dietrich) -এর স্বাক্ষ্য। কিন্তু স্ত্রী মহাশয়ার ভাব-গতিক খুব একটা সুবিধার না। কারণ, লিওনার্ড মরলেই যে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে সে। সব দেখে-শুনে নিজের জীবনের শেষ ক্রিমিনাল কেস লড়তে নামলেন স্যার উইলফ্রিড।
বলা হয়, এটা নাকি বিলি ওয়াইল্ডার'র নির্মিত "হিচকক" মুভি। যাদের শাদা-কালো মুভিতে অ্যালার্জী আছে, তাদের প্রত্যেককে আমি অনুরোধ করবো এই মুভিটা দেখতে। কিছু কিছু ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট মুভি আছে, যেগুলো দেখার পর আজকের রঙিন মুভিগুলোকে বর্ণহীন লাগবে।এ মন দারুণ ফানি, মিস্টিরিয়াস, ইন্ট্রিগিং মুভি আমি খুব কমই দেখেছি। সিম্পলি অসাম!
ডাউনলোড লিন্ক (স্টেজভ্যু লিন্ক, ৬৩১ মেগা)
শুভ মহরৎ
২০০৩
পরিচালক: ঋতুপর্ণ ঘোষ
সুপারস্টার পদ্মিনী চৌধুরী (শর্মিলা ঠাকুর) ২০ বছর পর কোলকাতা ফিরে এসেছেন মুভি প্রযোজনা করবেন বলে। অন্য সব সাংবাদিকের মতো মল্লিকা (নন্দিতা দাস) গিয়েছে সেই নিউজ কাভার করতে। কিন্তু ছবির মহরতের দিনই মারা পড়লো মুভির লীড অ্যাক্ট্রেস। সবাই বুঝতে পারলো মহরতটা একটুও শুভ হয়নি। ঘরে বসে গল্পোচ্ছলে পুরো কেসটা সমাধান করতে শুরু করলেন মল্লিকার রাঙা পিসি (রাখী গুলজার)।
অগাথা ক্রিস্টির আরেক বিখ্যাত চরিত্র মিস মার্পলকে খুঁজে পাওয়া যাবে এই মুভিতে। মিস মার্পল'র আইডিয়া আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছিলো যে, একসময় আমি নিজেও এমন একটা ক্যারেক্টার তৈরী করতে চেয়েছিলাম, যে সোয়েটারের উল বুনতে বুনতে রহস্যর জট খুলবে। মুভিটি নির্মিত হয়েছে, The Mirror Crack'd from Side to Side বই অবলম্বনে (বইটির নাম নেওয়া হয়েছে টেনিসন'র কবিতা থেকে)। যারা বইটি পড়েছেন, তারা বুঝতে পারবেন কি অসাধারণ সিংক্রোনাইজড একটা স্ক্রীপ্ট লিখেছেন ঋতুপর্ণ। প্রথম দিকে একটু বাধো বাধো লাগলেও, সময়ের সাথে মুভিটা জমে উঠেছে। আর একটা ব্যাপার, ক্রিস্টির লেখার একটা টিপিক্যাল টোন আছে।সে টোনটা আমি এই মুভিতে খুঁজে পেয়েছি।
ডাউনলোড লিন্ক (ইউটিউব লিন্ক) আর কোনো বেটার লিন্ক খুঁজে
পেলাম না ।ডিভিডি কিনে দেখাই বেটার।
যারা মিডিয়াফায়ার পছন্দ করেন, কমেন্ট #২০-এ শাহাদাত হুসাইন সাহেবের কমেন্টটি দেখুন।
ই-বুক ডাউনলোড লিন্ক
*গতকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) ছিলো এই মহান লেখিকার ১২১ তম জন্মদিন। এই জিনিয়াসরে সব রহস্যপ্রেমীর পক্ষ থেকে স্যালুট!
**Hickory Dickory Dock থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অগাথা ক্রিস্টির যে কয়টা লেখা পড়েছি, কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল করেছি। তার লেখা গল্পগুলোর নাম অনেক সময় বিভিন্ন কবিতা, রাইমস থেকে নেওয়া। ক্রিস্টি খুঁটি-নাটি বর্ণনা দিতে দিতে গল্প এগিয়ে নিয়ে যান, যেন পাঠক নিজেও সমাধান করার চেষ্টা করতে পারে। আবার সেই ক্রিস্টিই পাঠককে ডিসট্র্যাক্ট করার জন্য গল্পে প্রচুর চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটান।এ তো বিশদ তথ্যের খড়ের গাদায় কখন যে আপনার ক্লু এর সূচটি হারিয়ে যাবে, আপনি নিজেও টের পাবেন না।
***আমির খান'র মুভি Taare Zameen Par -এর এক অংশে অগাথা ক্রিস্টিকে ডিসলেক্টিক বলা হয় (দুঃখের ব্যপার হলো, সম্ভবত আমির'র দুই সন্তানই ডিসলেক্টিক)। বেশ কিছু ওয়েবসাইটেও একই কথা বলা হয়েছে। তবে, মজার ব্যপার হলো উইকিপিডিয়ায় ধরণের কোনো তথ্য নেই। এরকম একটা ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্ট তো বাদ পড়ার কথা না। যাই হোক বলিউডের সবচে মেধাবী মাণুষটির উপর আমার ভরসা আছে।
****রহস্যের রাণীর ব্যক্তিগত জীবনেও একটি রহস্যময় ঘটনা আছে।১ ৯২৬ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান ক্রিস্টি। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার পাত্তা পাওয়া যায়নি। শেষে প্রায় ১১ দিন পর তাকে পাওয়া যায় ইয়র্কশায়ারের এক হোটেলে। এ বিষয়ে ক্রিস্টি নিজে কোনো কথা না বললেও, ধারণা করা হয় সাময়িক অ্যামনেসিয়ার কারণে এমনটা ঘটেছিলো। সে সময় ক্রিস্টির বইয়ের সেল কিছুটা কমে এসেছিলো। তাই অনেকে এটাকে পাবলিসিটি স্টান্ট বলেও চিহ্নিত করেন।
*****বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় অগাথা ক্রিস্টির বইয়ের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। বিভিন্ন ইন্ডিয়ান বাংলা বইয়ের পাইরেটেড কপি, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রর মোবাইল লাইব্রেরী সব মিলিয়ে আমি মাত্র তিনটি বই খুঁজে পেয়েছি। তবে যারা ইংরেজী বইগুলো পড়তে চান নিউ মার্কেটে পাবেন। এছাড়া নীলক্ষেতের ম্যাগাজিন গলির একটি দোকানে, একসময় সুলভে তার কিছু নতুন বই পাওয়া যেতো। খুঁজে দেখতে পারেন। তবে একটা ব্যাপার এনশিওর করছি, ই-বুকে ক্রিস্টির বইয়ের মূল স্বাদ পাওয়া যাবে না।
******যে লিন্কগুলো দিয়েছি, সেগুলোর একটা থেকেও আমি মুভি নামাইনি। তাই, লিন্কগুলো চেক করে নামালে ভালো হবে। পোস্টের ১,২,৪ নং মুভিগুলো বেশ কয়েকবার অ্যাডাপ্ট করা হয়েছে। যে ভার্শনগুলো আমি দেখেছি, শুধু সেগুলোর কথাই পোস্টে লিখলাম। কারো অন্য কোনো সাজেশন থাকলে অবশ্যই জানাবেন।
সূচনার উপসংহার
তিন গোয়েন্দা মূলত রবার্ট আর্থার'র The Three Investigators সিরিজের উপর ভিত্তি করে লেখা (এই সিরিজটির সাথে কিন্তু মাস্টার ডিরেক্টর আলফ্রেড হিচকক'র নামও জড়িয়ে আছে। সে অন্য গল্প)। তিন গোয়েন্দার টেরর ক্যাসলের অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে নির্মিত হয়েছে মুভি। দেখে আসতে পারেন সামুর লিজেন্ডারী মুভি ব্লগার বিডি আইডল'র এই পোস্টটি
http://www.somewhereinblog.net/blog/bdidol/29074881
কঙ্কাল দ্বীপ নিয়েও মুভি নির্মিত হয়েছে। এতোকাল নেটে শুধু জার্মান ভার্শনটা অ্যাভেইলএবল ছিলো। এখন ইংলিশ ডাব করা ভার্শনটাও পাওয়া যাচ্ছে।চাইলে দেখতে পারেন ।
লাস্ট মুভি পোস্ট
(প্রায়) নতুন ৪টি কোরিয়ান মুভি
http://www.somewhereinblog.net/blog/snigdho88/29441209
শুভ রাত্রি!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭