প্রথমত, বিবর্তনবাদ অনুযায়ী অতি ক্ষুদ্র একটি অণুজীব থেকে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে (!) পুরো উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিবর্তিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিবর্তনবাদীদের দাবি অনুযায়ী বিবর্তন একটি উদ্দেশ্যহীন, বুদ্ধিমত্তাহীন, এলোমেলো, অন্ধ, ও চলমান প্রক্রিয়া – সামনে-পেছনে কোনো কিছু দেখেও না। এর সহজ-সরল অর্থ হচ্ছে: যে কোনো প্রাণী/উদ্ভিদ থেকে যে কোনো সময় অন্য যে কোনো প্রাণী/উদ্ভিদ বিবর্তিত হতে পারে, এতে কোনো ধরা-বাধা নিয়ম নেই। {নোট: বিবর্তনবাদীরা এখন এসে মাইনকা চিপায় পড়ে যদি বলে, "থুক্কু! যে কোনো প্রাণী/উদ্ভিদ থেকে অন্য যে কোনো প্রাণী/উদ্ভিদ বিবর্তিত হতে পারে না! আমাদের ইচ্ছা বা সাজানো প্লট অনুযায়ীই কেবলমাত্র বিবর্তন হয়," সেক্ষেত্রে প্রমাণ হবে যে বিবর্তনবাদীরা নিজেরাই আসলে বিবর্তনে বিশ্বাস করে না।}
এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পয়েন্ট মাথায় রেখে এবার দেখা যাক বিবর্তনবাদী গুরুরা নির্বোধদের জন্য কীভাবে ফাঁদ পেতেছেন:
- বিবর্তনবাদী গুরুরা যদি দাবি করতেন যে বড় কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে বিবর্তন শুরু হয়েছে তাহলে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে সবাই প্রশ্ন করত: এত বড় প্রাণী বা উদ্ভিদ এলো কোথা থেকে? বড় প্রাণী বা উদ্ভিত থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব উল্টোদিকে বিবর্তিত হলো কীভাবে? এই প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক জবাব বিবর্তনবাদী গুরুরা কখনোই দিতে পারতেন না। এজন্য তারা দাবি করেছেন এই বলে যে বিবর্তন শুরু হয়েছে অতি ক্ষুদ্র একটি [কাল্পনিক] অণুজীব থেকে। [কাল্পনিক] অণুজীবটি যেহেতু অত্যন্ত ক্ষুদ্র সেহেতু নির্বোধরা ধরে নিয়েছে যে প্রকৃতিতে ক্ষুদ্র একটি অণুজীবের এমনি এমনি উদ্ভব (!) হতে পারে! এভাবে বড় কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে বিবর্তন শুরু না করে ক্ষুদ্র একটি অণুজীব থেকে বিবর্তন শুরুর কথা বলে নির্বোধদের জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে। অথচ বিবর্তনবাদ অনুযায়ী বড় কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে বিবর্তন শুরু হতে কোনোই সমস্যা থাকার কথা নয়।
- বিবর্তনবাদী গুরুরা লক্ষ্য করেছেন যে বর্তমানে এক প্রাণী থেকে ভিন্ন কোনো প্রাণী বিবর্তিত হচ্ছে না, এমনকি এই ধরণের বিবর্তনের কোনো লক্ষণও নেই। এজন্য তারা দাবি করেছেন যে আধুনিক যুগের সকল প্রকার প্রাণী ও উদ্ভিদ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়েছে! তারা একদিকে বিবর্তনকে একটি "চলমান প্রক্রিয়া" বলে দাবি করছেন অন্যদিকে আবার বলা হচ্ছে সবগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়েছে! সব কিছুকে তারা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে [মানে অন্ধকারে] নিয়ে যেয়ে জাস্টিফাই করছেন – যা যে কোনো ভণ্ডপীরকে লজ্জায় ফেলে দেবে! নির্বোধদের জন্য ফাঁদ লক্ষণীয়।
- যদি দাবি করা হতো যে একটি প্রজাতি থেকে হঠাৎ করে কিংবা খুব অল্প সময়ে ভিন্ন একটি প্রজাতি বিবর্তিত হতে পারে [যেমন: মাছ থেকে হঠাৎ করে পাখি, তালগাছ থেকে হঠাৎ করে আমগাছ, বানর থেকে হঠাৎ করে মানুষ, ইত্যাদি] তাহলে ব্যাপারগুলো সবার কাছে হাস্যকর মনে হতো বিধায় কেউ বিশ্বাস করত না। এজন্য বিবর্তনবাদী গুরুরা বিবর্তনকে “অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া” বলে দাবি করেছেন [তা বাস্তবে সম্ভব হোক বা না হোক] - যা সাধারণ মানুষ দেখতে পান না! শুধুমাত্র বিবর্তনবাদী গুরুরাই তাদের 'তৃতীয় নেত্র' দ্বারা দেখতে পান! এক্ষেত্রেও ভণ্ডপীরদের সাথে বিবর্তনবাদী গুরুদের মিল চোখে পড়ার মতো। আর নির্বোধদের জন্য সূক্ষ্ম ফাঁদও লক্ষণীয়।
- বিবর্তনবাদী গুরুরা অনেক চিন্তাভাবনা করে বিবর্তনের প্লট সাজিয়েছেন। যেমন তাদের দাবি অনুযায়ী সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী (সাপ, টিকটিকি, কুমির, ইত্যাদি) থেকে ধাপে ধাপে বিবর্তিত হতে হতে একদিন পাখি হয়ে আকাশে উড়তে শিখেছে! অর্থাৎ পাখির নিকটতম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে সরীসৃপ [কোন সরীসৃপ? একটি নাকি একাধিক?]। যার ফলে কিছু নির্বোধ কোনো প্রমাণ বা প্রশ্ন ছাড়াই তা বিশ্বাস করেছে। কেনো? কারণ সরীসৃপের সাথে পাখির "মিল" সবচেয়ে বেশী – যদিও উভয়েই ডিম দেয়া ছাড়া তেমন কোনো মিল নাই তথাপি না থাকার বেশী আরকি! কিন্তু যদি বলা হতো যে বাঘ কিংবা হাতি কিংবা তালগাছ থেকে বিবর্তিত হতে হতে একদিন পাখি হয়ে আকাশে উড়তে শিখেছে – সেক্ষেত্রে কি কেউ বিশ্বাস করত? মোটেও না। অথচ বিবর্তনবাদ অনুযায়ী এই ধরণের বিবর্তনে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
- মানুষের সাথে বানর জাতীয় প্রজাতির যেহেতু সবচেয়ে বেশী "মিল" আছে সেহেতু বিবর্তনবাদী গুরুরা দাবি করেছেন এই বলে যে বানর জাতীয় প্রাইমেট(স?) থেকে ধাপে ধাপে মানুষের বিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের নিকটতম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে বানর জাতীয় প্রাইমেটস। এভাবে মানুষ আর বানরের মধ্যে "মিল" দেখিয়ে নির্বোধদের জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে। কিন্তু যদি বলা হতো যে বাইন মাছ কিংবা ছাগল কিংবা কলাগাছ থেকে ধাপে ধাপে মানুষের বিবর্তন হয়েছে – অর্থাৎ মানুষের নিকটতম পূর্ব-পুরুষ বাইন মাছ বা ছাগল বা কলাগাছ - সেক্ষেত্রে বিবর্তনবাদী গুরুদের দাবিকে স্রেফ হাস্যকর বলে সবাই উড়িয়ে দিত। অথচ বিবর্তনবাদ অনুযায়ী এই ধরণের বিবর্তনেও কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিবর্তনবাদ অনুযায়ী কোনো ধরণের বিবর্তনেই কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়! কেউ যদি দাবি করে যে বাংলা বিবর্তনবাদীরা আসলে ছাগল বা ভেড়া জাতীয় প্রাইমেটস থেকে বিবর্তিত হয়েছে – অর্থাৎ বাংলা বিবর্তনবাদীদের নিকটতম পূর্ব-পুরুষ আসলে ছাগল বা ভেড়া জাতীয় প্রাইমেটস – সেক্ষেত্রে এই দাবিকে যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমাণ করার জন্য কোনো বিবর্তনবাদীই স্বনামে এগিয়ে আসবে না।
এমনও তো হতে পারে যে: কিছু বিবর্তনবাদী বানর জাতীয় প্রাইমেটস থেকে বিবর্তিত হয়েছে; কিছু বিবর্তনবাদী ছাগল জাতীয় প্রাইমেটস থেকে বিবর্তিত হয়েছে; কিছু বিবর্তনবাদী তালগাছ থেকে বিবর্তিত হয়েছে; কিছু বিবর্তনবাদী ইঁদুর থেকে বিবর্তিত হয়েছে; ইত্যাদি। অর্থাৎ কিছু বিবর্তনবাদীর নিকটতম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে বানর জাতীয় প্রাইমেটস; কিছু বিবর্তনবাদীর নিকটতম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে ছাগল জাতীয় প্রাইমেটস; কিছু বিবর্তনবাদীর নিকটতম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে তালগাছ; কিছু বিবর্তনবাদীর নিকটতম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে ইঁদুর; ইত্যাদি। কেউ কেউ আগে বিবর্তিত হয়েছে, কেউ কেউ পরে। কেনো নয়? এতে সমস্যা কোথায়? বিবর্তনবাদীদের সবার নিকটতম পূর্ব-পুরুষ এক হতে হবে কেনো? এটা কে নির্ধারণ করেছে? নিকটতম পূর্ব-পুরুষ আলাদা আলাদা হওয়া কি বিবর্তন বিরোধী? বিবর্তনবাদকে ডিফেন্ড করে অনেকদিন ধরে লেখালেখি করছে এমন কেউ স্বনামে এসে এখানে দ্বিমত পোষণ করে দেখাক তো। পাঠকদেরকে আগেই বলে রাখি, মাল্টি/ছুপা নিকে আবল-তাবল বকা ছাড়া আমার কথাগুলোর সাথে পরিচিত কোনো বিবর্তনবাদীই দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না।
বিবর্তনবাদী গুরুরা নির্বোধদের জন্য [প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের নামে] কীভাবে ফাঁদ পেতে রেখেছেন তা মাত্র পাঁচটি উদাহরণের সাহায্যে দেখানো হলো। এ-রকম আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া সম্ভব। তবে যুক্তিবাদী পাঠক ইতোমধ্যে ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন নিশ্চয়।
পাঠক! এই যখন বাস্তবতা তখন দাস মনোবৃত্তির কিছু বাংলাভাষী বিবর্তনবাদ দিয়ে ধর্ম ও সৃষ্টি তত্ত্বকে বাতিল করে দিয়ে একদিকে নিজেদেরকে যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক বলে বুক চাপড়াচ্ছে অন্যদিকে আবার মুসলিমদেরকে 'বিজ্ঞান-বিরোধী' ট্যাগ দিয়ে বিভিন্নভাবে উপহাস-বিদ্রূপ আর হেয় করছে। ব্যাপারটা পুরাই মগের মুল্লুক আরকি।
এবার কিছু বিনোদন দেখুন:
উপরে দু-জন বিবর্তনবাদী নির্বোধকে দেখছেন। এক নির্বোধ বিবর্তন দিয়ে প্রাণীজগত থেকে ঈশ্বরের হাতকে কেটে ফেলতে চাইছে! আরেক নির্বোধ বলেছে বিবর্তন মহা জগতে ঈশ্বর ও আল্লাহর অস্তিত্ব মিথ্যা/নাই করে দিয়েছে! ধর্মবাদীদেরকে চরম সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে! হা-হা-হা! তারা কিন্তু বিজ্ঞানের নামেই এগুলো বলছে, মনে রাখবেন।
এবার বাংলা বিবর্তনবাদীদের বেনামী তালগাছবাদী পীরবাবা [চরম পিছলা, মিথ্যাবাদী, ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী, বিবর্তনবাদী গুরুদের অন্ধ মুরিদ, যুক্তি'র য-ও বুঝে না] কী বলে দেখুন-
পাঠক! কোন বৈজ্ঞানিক জার্নালে বলা হয়েছে যে বিবর্তন প্রচলিত সব বড় ধর্মগুলোকে বাতিল করে দিয়েছে? কীভাবেই বা দিয়েছে? বিবর্তনবাদী মোল্লাদেরকে অনেক আগেই বৈজ্ঞানিক জার্নাল থেকে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। অথচ এই মিথ্যাবাদী কোনো প্রমাণ না দিয়ে একই বুলি বারংবার আউড়িয়ে তার নাস্তিক মুরিদদের বিশ্বাসকে সতেজ রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই মিথ্যাবাদীকে বৈজ্ঞানিক জার্নাল থেকে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো। প্রমাণ দেখাতে না পারলে তার মিথ্যাচারের জন্য পাঠকদের কাছে ক্ষমা চাইবে কি-না – সেটা বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের।