জাতী খুব মিস করে, মিডিয়া তাকে ভুলে যেতে পাবে আমার হৃদয়ে একজন স্বপ্নপুরুষ :
ক'জন মহান মানুষ পদত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থান করতে পারেন?
২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা হন। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হবার আশঙ্কা এবং তার নির্বাচনী প্রস্তাব ইয়াজউদ্দিন প্রত্যাখান করে, তিনি তিনজন উপদেষ্টার সাথে একযোগে পদত্যাগ করেন।
#মুজিবনগর_সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত হয় নাই, ততকালীর পাকিস্তান সরকারে কোন বাঙ্গালি কর্মচারীই লিখিত অণুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি অস্বীকৃত জানা। দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক সকরার ডিসি আকবর আলী খান পাকি সরকরাএর হুঙ্কারে তোয়াক্কা করেন নাই, তিনি নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করেন, এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেবার আদেশ প্রদান করেন
এটি ছিল যুগান্তকারী এবং বিপ্লবী আকবর আলী খানের মহান দেশপ্রেমের সেরা নমুনা।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেবার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান। আগরতলায় যাওয়ার পর সহযোগীদের নিয়ে তিনি একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করি যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা এবং একই সঙ্গে উদ্বাস্তু শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল সেই শরণার্থীদের সহায়তা করা।
প্রথমদিকে তাদের প্রচেষ্টা ছিল স্বনির্ভর। এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হবার পর মে মাসে তিনি যোগাযোগ শুরু করেন। জুলাই মাসে (১৯৭১) তাকে সরকারে যোগ দেবার জন্য কলকাতায় যেতে বলা হয় এবং সেখানে তিনি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি বা উপসচিব হিসাবে পদস্থ হন। আগস্ট মাসে তাকেঁ উপসচিব হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলী করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ অবধি তিনি এই পদেই চাকুরি করেছেন।
পাকিস্তান সরকরা ডিসি হয়ে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও খাদ্যের অর্থ যোগনের আদেশ দিলেন "রাষ্ট্রদ্রোহী" মামলায় ডিসি আকবর আলী খান গ্রেফতার হন এবং ১৪ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
যুদ্ধের পরে-
জাতির জনক #বঙ্গবন্ধু #শেখ_মুজিবর রহমান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কে রাজাকার আর কে নয় তা নিয়ে রেষারেষি দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিলে তিনি এর দায়িত্ব আকবর আলি খানকে হস্তান্তর করেন। রাজাকারদের জন্য তখন একটি আইন প্রচলিত থাকায় এবং সে আইনের অধীনে এ তদন্ত সম্ভব নয় বলে খান নির্দেশানুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন পরিবেশন করে তার অসন্তোষের কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তার নোটসহ তদন্ত প্রতিবেদন তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে গেলে তিনি বিষয়টি অণুধাবন করেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলার পরামর্শ দেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, যখনই যা আমার কাছে পছন্দ বা আইনসিদ্ধ মনে হয়নি আমি লিখিত নোট দিয়েছি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা বলছে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা গৃহীত হতে বাধ্য।
জীবনের সুচনা:
আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পুরো স্কুল জীবন পার করেন নবীনগর হাই স্কুলে। তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে আই. এস. সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। সরকারী চাকুরীতে যোগদানের পূর্বে তিনি কিছু সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭০ সালে হবিগঞ্জ মহুকুমার এস. ডি. ও. হিসেবে পদস্থ হন। তিনি তার এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচন পরিচালনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান
যুদ্ধ শুরুর আগের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সমর্থন দেন। পাকাস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অণুপ্রাণিত করেন। যোগান দেবার সিদ্ধান্ত নেন। মুজিবনগর সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারীই লিখিত অণুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে আকবর আলী খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেবার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেবার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান। আগরতলায় যাওয়ার পর সহযোগীদের নিয়ে তিনি একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করি যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা এবং একই সঙ্গে উদ্বাস্তু শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল সেই শরণার্থীদের সহায়তা করা। প্রথমদিকে তাদের প্রচেষ্টা ছিল স্বনির্ভর। এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হবার পর মে মাসে তিনি যোগাযোগ শুরু করেন। জুলাই মাসে (১৯৭১) তাকে সরকারে যোগ দেবার জন্য কলকাতায় যেতে বলা হয় এবং সেখানে তিনি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি বা উপসচিব হিসাবে পদস্থ হন। আগস্ট মাসে তাকেঁ উপসচিব হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলী করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ অবধি তিনি এই পদেই চাকুরি করেছেন।
পরবর্তী জীবন
১৯৭১-এর ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সচিবালয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি সেখানে ছয় মাস চাকরি করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান থেকে ফেরত ব্যক্তিদের চাকরি পেতে সহায়তা করেন। পরে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগ দানের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও শেখ মুজিবর রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃত জানান। তাকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেয়া হয়। কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হবার আগে তিনি অল্প সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বৃত্তির জন্য তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়এ যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স এবং পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফেরত আসার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারো প্রশাসনের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে যোগ দেবার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি সাভারের বিপিএটিসি-তে মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। অত:পর ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।
তিনি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে অর্থমন্ত্রী পদে যোগ দেন। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। তার সময়ে তিনি বিসিসিএল ব্যাংকের পূণর্গঠন এবং বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণের কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে তিনি ১৯৯৩ এ সরকারের সচিব হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় রাচস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হিসাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বদলী হন। ২০০১ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিকল্প এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর পদে যোগদান করেন। বিশ্ব ব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।
রচনাবলি:
আলি আকবর খানের গ্রন্থ ‘হিস্টোরি অফ বাংলাদেশ” বা বাংলাদেশের ইতিহাস’ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত। বইটিতে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক উত্থান ও পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি দেশে ইসলাম ধর্মের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি অর্থনীতিবিষয়ক বই, পরার্থপরতার অর্থনীতি যাতে তিনি সরস ও প্রাঞ্জল ভাষায় অর্থনীতির জটিল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন।
তাঁর গ্রন্থ Some Aspects of Peasant Behaviour in Bengal : A Neo-classical Analysis ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর Discovery of Bangladesh বইটি। সর্বশেষ গ্রন্থ ’’জীবনানন্দ দাশের কবিতা’’ প্রথমা কর্তক প্রকাশিত হয় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের বই মেলায়। এর বিষয় বস্তু বনলতা সেন সহ কবি জীবনানন্দ দাশের অনেকগুলো কবিতার আলোচনা। বর্তমানে তিনি “জনপ্রশাসন” বিষয়ের ওপর একটি গ্রন্থ রচরা করছেন এটি ২০১৪-এর শেষভাগে ইউনিভার্সিটি প্রেস লি. কর্তৃক প্রকাশিত হতে পারে
শেখ মিজান
সহযেবগিতা নিয়েছি: গ্লেবাগল ইকোনমিক্স, ইউকিপিড়িয়া এবং তার পুস্তক থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:২৫