আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক রহমানই হলো খোদার এই জমিনে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্থ বান্দা। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সাত মহাদেশ তন্ন তন্ন করেও উনার দুর্নীতির কোন সন্ধান পাওয়া গেল না এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চালানো প্রোপাগান্ডা সম্ভবত বিগত সরকারের সবচেয়ে বড় লস প্রজেক্ট ছিল (এই নিয়ে পূর্বে একটি স্ট্যাটাসে বিস্তারিত আলোচনা করেছি যার লিংক কমেন্টে দেওয়া হলো)।
দ্বিতীয়ত, তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রোপাগান্ডার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো বর্বরোচিত- ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার করতে গিয়ে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে উনাকে সম্পৃক্ত করা। এই উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে শব্দ টা কেন বললাম তা আপনিও বুঝতে পারবেন কিছু বিষয় পর্যালোচনা করলে। আসুন যেসব কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক:
তারেক রহমান সাহেব যে ২০০৪ সালে সংঘঠিত ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িত এই কথাটা আমরা প্রথম জানতে পারি ২০১১ সালে যখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পঞ্চম বারের তদন্তে সম্পূরক চার্জশীটে উনার নামটা জড়ানো হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, তারেক রহমান সাহেব সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও রোষানলের শিকার হয়েছেনওয়ান ইলেভেনের সরকার দ্বারা সেই ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলেই করা তদন্তের তারেক রহমান সাহেবের নামটি আসে নি। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না!
ফলে মামলাটি যখন বিচারে চলে যায় এবং চার্জ গঠন হয়ে বিচার শুরু হয়ে ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে যায় তখন রাষ্ট্রপক্ষ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করে এবং আদালতও যথারীতি তা মঞ্জুর করে সিআইডি কে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে সিআইডির চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ (বিএনপি জোট সরকার আমলে যিনি চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন এবং এরই মধ্যে চাকুরী ফেরত পেলেও অবসরে চলে গিয়েছিলেন)। ফলে যা পারফরম্যান্স শো করার দরকার তাই তিনি করলেন।
তিনি ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের সাথে কনডেমড সেলে দেখা করেন (ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মুফতি হান্নানকে ফাঁসি দেন)। ফাঁসির আসামী জঙ্গি নেতাকে ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কারবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানিবন্দী প্রদান করতে রাজি করান । কাজও হলো, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানকে দিয়ে নেওয়া হলো দ্বিতীয় বারের মতো ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানিবন্দী (এই মামলায় আগেও হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান নিজেকে জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানিবন্দী প্রদান করেছেন কিন্তু তাতে জনাব তারেক রহমানের কোন প্রকার সম্পৃক্তার বিষয়ে কোন কিছুই বলেন নি)। দ্বিতীয় বারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জনাব তারেক রহমানকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয় এবং আবদুল কাহ্হার আখন্দ ২০১১ সালের ৩ জুলাই জনাব তারেক রহমানসহ নতুন করে ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
অবাক করার বিষয় হলো এই মামলায় ১৫ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং একমাত্র মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় বারের প্রদত্ত জবানবন্দী ব্যাতিত কেউই জনাব তারেক রহমানের কথা বলেন নি। এমনকি আলোচিত এ মামলায় ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিলেও কারো সাক্ষীতে জনাব তারেক রহমান জড়িত এমনটি প্রতিফলিত হয় নি। আরো অবাক করার মতো বিষয় হলো, মুফতি হান্নান ২০১১ সালেই তার থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নেওয়া দ্বিতীয়বার প্রদত্ত ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের দরখাস্ত করলেও তা বিবেচনায় নেওয়া হয় নি।
এক কথায় বলতে গেলে এমন একটি বর্বরোচিত ঘটনায় অভিযোগ কতটুকু দুর্বল হলে আওয়ামীলীগ তাদের প্রধান চক্ষুশূল তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়! এই মামলায় জনাব তারেক রহমানকে জড়ানোর পিছনে অসংখ্য গোঁজামিল রয়েছে। আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার স্বার্থে একটি তুলে ধরলাম। আমরা জাতীয়তাবাদীরাও প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান না করে গতানুগতিক প্রতিবাদের রাজনীতি করি। যার ফলে জনগণের মাঝে প্রকৃত সত্য জানার আগ্রহ জন্মায় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহেতুক বাহাস না করে সঠিক তথ্য তুলে ধরে প্রোপাগান্ডার বিষয় নতুন প্রজন্মকে জানার সুযোগ করে দেওয়াটা জরুরি। আমরা আশাকরি, দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-তাড়িত প্রদত্ত সাজা অনতিবিলম্বে বাতিল হবে।
-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
[email protected]