somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি জীবনে কখনো জগন্নাথ হলে যাইনি কালকে গেছিলাম

২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমনিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মূল উৎসবকেন্দ্র টিএসসি। কিন্তু আজ আর এই কেন্দ্র সবার আকর্ষণ নয়। এখান থেকে ত্রিমুখী হয়ে ছুটছেন সবাই__ কোনদিকে?

আমিও পা বাড়ালাম। ডাসের সামনে গিয়ে হোঁচট খেলাম। মানুষ এবং রিকশার স্রোত তিনদিকে প্রবাহমান। কোনদিকে যাওয়া উচিত ঠিক বুঝতে পারছি না। খেয়াল করে দেখলাম একস্রোত যাচ্ছে রোকেয়া হলের দিকে অন্য এক স্রোত শামসুন্নাহার হলের দিকে। শামসুন্নাহারের গলিতে গিয়ে সেই স্রোত থেকে আবার একটা শাখাস্রোত বেরিয়ে ঢুকেছে জগন্নাথ হলে।

কাছাকাছি এই তিন হলেই চলছে সরস্বতী পূজা। পিপিলিকার মতো লোকজন গেট দিয়ে ঢুকছে আর বের হচ্ছে। তাদের বেশীরভাগই কম বয়সী তরুণ-- তরুণী। সবারই উৎসবের সাজ। কারো কারো কপাল লাল রঙে রাঙানো।

মেয়েদের হলে ঢোকা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। আর ঢুকতে দেবে কিনা সেটাও নিশ্চিত না। খামোখাই রিস্ক নেওয়ার দরকার কি? তারচেয়ে ভালো জগন্নাথ হল। রিস্ক ফ্রি জোন। আমি জগন্নাথের স্রোতে মিশে গেলাম।

শামসুন্নাহারের সামনে দিয়ে জগন্নাথ হলে ঢোকার রাস্তা দিয়ে হাঁটার কোনো দরকার নেই। ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে। লোকজনই আপনাকে জগন্নাথের ভেতর পেঁৗছে দেবে, অবশ্য তার আগে রাস্তার দু'পাশে লেইস ফিতা আর ফুচকাওয়ালাদের আহ্বান আপনাকে অগ্রাহ্য করতে হবে।

ভিতরে ঢুকেই দেখি মস্ত কারবার। ধুলো উড়িয়ে হাজার হাজার লোক এই মণ্ডপ থেকে ওই মণ্ডপে যাচ্ছে। কোন মণ্ডপ থেকে দেখা শুরু করব পূজা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াই মুশকিল। প্রথমেই ফার্মেসি অনুষদের মণ্ডপ।

সামনেই লম্বা লাইন। ভাবলাম এরা নিশ্চয়ই প্রতিমা দেখার জন্যই লাইনে। এই মণ্ডপে হয়তো বিশেষ কোনো সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে ফার্মেসির ছাত্ররা তাই অন্য মণ্ডপের চেয়ে এটায় লোকজনের চাপ একটু বেশী। এইসব সাত--পাঁচ চিন্তা করে লাইনে দাঁড়িয়ে যাব কি না ভাবছি; হঠাৎ আবিষ্কার করলাম এই লাইনের অগ্রযাত্রা চলছে একটা খাবারের হাঁড়িকে ঘিরে। সেখান থেকে খিচুড়ি বিলি হচ্ছে।

আর যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই উচ্ছ্বল তরুণ তরুণীদের ভিড়। তাদের ফাঁক গলে দেখা যায় বিভিন্ন মণ্ডপে নানান ভঙ্গিমায় বসে আছেন শ্বেত শুভ্র সরস্বতী।

ঢুকে পড়লাম ডান দিকের মণ্ডপে। এটা ইতিহাস অনুষদের। বেশ সুন্দর সাজিয়েছেন তারা সরস্বতীকে। মণ্ডপের সামনে একটা চেয়ারে বসে আড্ডা মারছেন এই অনুষদেরই মাস্টার্সের ছাত্র সুমন সাহা। আলাপ জমিয়ে তুললে তিনি জানালেন, "জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা পালনের রেওয়াজ বেশ প্রাচীন। এখানে ফি বছরই এই হলের ছাত্ররা নিজ নিজ অনুষদের প থেকে পূজার আয়োজন করে। এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে মণ্ডপ কম হয়েছে। আবার অনেক অনুষদই পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে মণ্ডপ বানিয়েছে। সব মিলিয়ে হয়েছে 28টি। এ ছাড়া হলের কর্মচারীরাও বানিয়েছেন কয়েকটি।"

"প্রতিমা কি আপনারা নিজেরাই তৈরি করেন?" জবাবে তিনি বললেন, "প্রতিমা তৈরি করার আলাদা লোক আছে। তাদের অনেকেই ঢাকার বাইরে থাকেন। অগ্রিম টাকা দিলে তারা প্রতিমা বানিয়ে দেন। আর প্রতিমা কতটুকু জমকালো হবে তার ওপর নির্ভর করে খরচ। সাধারণত 2500 থেকে 3000 টাকা দিয়েই প্রতিমা পাওয়া যায়।"

কথার ফাঁকে দেখতে পেলাম জগন্নাথের মাঠের একপাশটায় বেশ কিছু লোকের জটলা। কাছে এগিয়ে বুঝলাম ধর্মীয় এই উৎসবেরও বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে মুক্তি মেলেনি। একটা মোবাইল ফোন কোম্পানি সেখানে কু্যইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। উত্তর জানা থাকলে নগদ পুরস্কার একটি টি--শার্ট। প্রথমে ভিড়টা একটু হালকাই ছিল। শুধু শুধু তাদের প্যাচাল কে শোনে। যেই পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হলো অমনি লোকজনের ভিড় কে দেখে। জমে উঠেছে প্রতিযোগিতা। উপস্থাপক একটা করে প্রশ্ন ছুড়ে মারে হ্যান্ডমাইকে আর উপস্থিত সবাই হাত তুলে 'আমি জানি আমি জানি' চিৎকারে গরম করে তোলে আশেপাশের এলাকা। এক তরুণকে দেখা গেলো দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। উপস্থাপক কাছে ডাকতেই তিনি একটা ফিচেল হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলেন। উত্তর জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানালেন, সবাই হাত তুলেছে তাই তিনিও হাত তুলেছিলেন। প্রশ্নের উত্তরতো তিনি জানেনই না, প্রশ্নটা কি সেটাও জানেন না। সবাই খুব মজা পেল।

একজনকে বলতে শুনলাম চারুকলা আর ম্যানেজমেন্ট অনুষদের প্রতিমা উপস্থাপনা নাকি সবচেয়ে ভালো হয়েছে। আমি মনে মনে খুঁজতে লাগলাম। কিন্ত এতো মণ্ডপের ভিড়ে ওই দুটো খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। হাঁটতে থাকলাম। এক সময় না এক সময়তো খুঁজে পাওয়া যাবেই। এক মণ্ডপের বাইরে লেখা বিজ্ঞানের একটি সূত্র ঋ=সধ. কাছে গিয়ে বুঝলাম এটা পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদের।

প্রত্যেকটা মণ্ডপেই রয়েছে আয়োজনকারী অনুষদের ছাপ। অণুজীব বিজ্ঞান অনুষদের সরস্বতী হয়তো বসে রয়েছেন অণুজীববিজ্ঞানের কয়েকটি বইয়ের ওপর। অন্যদিকে ম্যানেজমেন্ট অনুষদের সরস্বতীর সামনে খোলা রয়েছে ম্যানেজমেন্টের তাত্তি্বক বিষয়ের বই। সত্যি সত্যিই বেশ সৃষ্টিশীলতা ল করা গেল ম্যানেজমেন্টের মণ্ডপে।

আইন অনুষদ আবার একটু অন্য ঢঙে সাজিয়েছে তাদের সরস্বতীকে। রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের আদল পেয়েছে তাদের মণ্ডপ। হঠাৎ করে বুদ্ধিজীবী সৃতিসৌধ কেন এখানে জানতে চাইলে আইন অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নিউটন হালদার বললেন, "পুরোটাই আমরা নিজস্ব চিন্তা থেকে করেছি। আমরা দেবী সরস্বতীর কাছে এই দিনে এটাই চাই যাতে আমাদের অনুষদ থেকে ভবিষ্যতের বুদ্ধিজীবী বেরিয়ে আসেন।" বেশ অন্যরকম চাওয়া সন্দেহ নেই!

চারদিকের এই উৎসব ভাব স্পর্শ করছে না অক্টোবর ভবনের টিভি রুমে বসে থাকা কয়েকজনকে। এত হই হট্টোগোলের মাঝেও তারা দিব্যি হিন্দি সিনেমা দেখছেন টিভিতে। সালমান খান বেশ কড়া ডায়লয় ঝাড়ছে নায়িকা যুক্তামুখীকে।

হলের পুকুরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এতণ কেন চারুকলার মণ্ডপ খুঁজে পাইনি। তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পুকুরের মাঝখানে একটা বড় পদ্মের ওপর বসে আছেন সরস্বতী। পুকুরের চারদিক থেকে নানান রংয়ের কাপড় দিয়ে টানা দেওয়া হয়েছে। সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে সরস্বতীর শুভ্র শরীর। মনে হচ্ছে এইমাত্র জল থেকে উঠে এলেন দেবী। কয়েকটা ছেলে মেয়ে আবার নৌকা নিয়ে দেবীর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে।

পুকুর পাড়েই দেখা হয়ে গেলো এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে। সে হা করে তাকিয়ে আছে পুকুরের দিকে। তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই সে পুকুরের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল, "অপূর্ব"।
আমিও তার কথার সঙ্গে উপর--নিচে মাথা ঝাঁকালাম দ্রুত।

এই লেখাটি একদিনের পুরোনো। প্রথম প্রকাশ হয় 23 জানুয়ারি এই লিংকে-

[লিংক=যঃঃঢ়://িি.িনফহবংি24.পড়স/নধহমষধ/যড়সব.ঢ়যঢ়][/লিংক]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নামাজের দায়ভার!

লিখেছেন জাদিদ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০১

'নামাজ' - শব্দটা আমার মত বেশ কিছু মানুষের জন্য বেশ বিব্রতকর। কারন একজন মুসলিম হিসাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা অনেক সময় আমরা পালন করতে পারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ": পুনর্বাসন নাকি নতুন ষড়যন্ত্র?

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬


বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অনিশ্চিত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়েছে, এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো -----------------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১০





মহাকাশে সময় কাটানো এবং পৃথিবীর অপরূপ দৃশ্য দেখা অনেকের কাছেই আজীবনের স্বপ্ন। তবে মানবদেহ শুধু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে কাজ করার জন্যই বিকশিত হয়েছে। তাই মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণে সময় কাটানোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×