somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাবুল হোসেনের সাথে হুমায়ুন আহমেদের একান্ত আড্ডা (অপ্রকাশিত সাক্ষাতকার)

০১ লা আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে নিজের ঘরে পা দেয়ার পরে ছোট ভাইবোনদের হুমায়ুন বিষয়ক জল্পনা কল্পনা, মুখরোচক আলোচনায় এতক্ষণ ভুলে ব্যথাটা নতুন করে জেগে উঠে হাবুলের। হুমায়ুনের মৃত্যুতে যেখানে সবাই হুমায়ুনের সাথে স্মৃতিচারণ নিয়ে মেতে রয়েছে, তখন তার ভাণ্ডার একদম খালি। তার সহকর্মীদের কেউ হুমায়ুনের সাথে এক বিকালে চা খাওয়ার গল্প লিখছে, কেউ হুমায়ুনের বাসায় বসে দেওয়া আড্ডার কথা লিখছে, সাহিত্যিক কাম সাংবাদিকরা যেখানে হুমায়ুনের মুখ থেকে বুলি বের করে নিজের কৌতুককে জাতে উঠাচ্ছে, সে তখন কিছুই লিখতে পারছে না। তার পত্রিকাতেই অধুনা ইস্মার্ট পোলাপান গুলো কী সুন্দর করে পাবলিক ডিমান্ড বুঝে হুমায়ুনের লাশ নিয়ে রাজনীতি ফেঁদে দিলো, আর যার সেই ভাষা নাই সে অন্তত ক্যামেরায় বেকায়দা মুহূর্ত ধারণ করে ষড়যন্ত্রে প্রাণ দিলো, অথচ নিজের স্থূলকায় দেহ নিয়ে হাবুল না পারলো ভিড় সরিয়ে একটা দুর্লভ ছবি ধারণ করতে,না পারলো কোন মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন করতে। খোমাখাতায় ফলো করে বুঝার চেষ্টা করেছিল পাবলিক কী শুনতে চায়, আর সেই মত কিছু মুখরোচক সংবাদ যে সে পরিবেশন করেনি তা নয়। কিন্তু তা বরং তার জন্য ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। রামঝাড়ি জুটছে সম্পাদকের কাছে। ” আরে যেসব খবর গতকাল অন্য পত্রিকায় চলে গেছে সেটা নিয়ে আসছো তুমি আজকে দিতে!! বুঝি না এত বছর সাংবাদিকতা করেও তোমার মাঝে স্মার্টনেস আসে না কেন !!” হুমায়ুনের সাহিত্য নিয়ে দুই পাতা লিখবে এমন অবস্থায়ও সে নেই। হুমায়ুনের নাটক হয়তো পরিবারের সবার চাপে পড়ে অবরে সবরে চোখ বুলিয়েছে, তবে প্রেমিকারে গিফট দেয়া ছাড়া হুমায়ুনের বইও খুব বেশি ধরে দেখা হয় নাই। অবশ্য সেটার দরকার যে আছে এমনও না। হুমায়ুনের সাহিত্য এখন পাবলিক ডিমান্ড না। বাসায় এসে খোমাখাতায় দ্রুত চোখ বুলিয়ে সেই ধারণার হালেই পানি পায় আবার। পাবলিক চায় শাওনের চামড়া ছিলা খবর। অথবা হুমায়ুন বিষয়ক নতুন কিছু। মানুষজনের টানা হেঁচড়ার বিষয়গুলো নিয়ে একটা প্যাটার্নে ফেলবার চেষ্টা করে হাবুল। মাথাটা তার বরাবরই মোটা। সেই কারণেই সেই ছোট বেলায় বন্ধুরা তার পিতৃপ্রদত্ত বাবুল নাটিকে বদলে হাবা বাবুল কিংবা সংক্ষেপে হাবুল করে দিয়েছিল। এখন হোমড়া চোমড়া হয়ে বাইরের মানুষের কাছে বাবুল সাহেব হলেও পরিচিত মহলে হাবুল নামটাই সর্বজনবিদিত।
কাজগ কলম নিয়ে বসে হাবুল। নিজেরেই হঠাৎ করে হুমায়ুন আহমেদ মনে হতে শুরু করে। বিভিন্ন খবরে পাবলিক ডিমান্ডের রূপরেখা ছকে ফেলেছে। তার নতুন রিপোর্ট টা কী নিয়ে হতে পারে ঠিক প্রায়। শুধু শুরুটা করতে পারছে না। হুমায়ুন আহমেদের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকার তার হাত দিয়ে বের করতে হবে। কিন্তু সাক্ষাত ছাড়াই কীভাবে সাক্ষাতকার নেয়া যায় এই চিন্তায় হাবুলের কপালে চিন্তার রেখা দেখা যায়। তার স্থূল মেদময় পেটে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে সে ভাবতে থাকে কী করা যায়। আলোর রেখা পেয়ে যায়ও সাথে সাথেই। হুমায়ুনের সাক্ষাতকারে তার ভূত প্রীতি তাকে নতুন ফিচারের চাবি হাতে দিয়ে দেয়। আমাদের হাবুলের চোখ চকচক করে উঠে খুশিতে। হাবুলের খুশি অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ফিচার লেখার কাজ শুরু করার মিনিট পাঁচেকের মাঝে বেরসিক কারেন্ট বাগড়া দেয়। হাবুল লক্ষ্য করলো ফিচারে যে আদি ভৌতিক পরিবেশের ভাবনা মাথায় এনেছিল তার মাঝেই সে আছে। হঠাৎ করে “হুমায়ুন হুমায়ুন হুমায়ুন ” — বেশ উঁচু স্বরেই জপ করা শুরু করলো। জপের মাঝে নেশা ধরে যায়। পীরবাবার দরবারে সিদ্ধি লাভ করা ভক্তদের মতো নেশাতুর মনে হয় নিজেকে। সে লক্ষ্য করে হুমায়ুন হুমায়ুন জপে সে বেশ মজা পাচ্ছে। নিজের নামে জপ শুনলে নাকি স্বয়ং শিব ঠাকুরও চলে আসেন আর হুমায়ুনের আত্মা কোন ছাড়। হুমায়ুনের আত্মার সাথে সাক্ষাত করে সাক্ষাতকার হয়ে গেলো বলে। হুমায়ুন হুমায়ুন বলার বেগ বাড়তে থাকে হাবুলের। এক সময় তার টেবিলের অপর পাশের দেয়ালে মাথায় ক্যাপ, চোখে মোটা চশমার এক ভদ্রলোকের চেহারা ভেসে উঠে হাবুলের চোখে।
– স্যার এসেছেন – বলে সালাম করতে গিয়ে হাবুল আবিষ্কার করে অবয়বটির শুধু মাথাই আছে কিন্তু কোন পা হাত কিছুই নেই।
– ব্যাটা, হুমায়ুন হুমায়ুন বলা থামাও। যেভাবে ডাকতেছিলা, হুমায়ুন ফরীদি হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে বাদশাহ হুমায়ুন পর্যন্ত সবাই লাইন ধরে দৌড় শুরু করে দিছিলো। সদ্য মারা যাওয়ার কারণে আমি আগে আছি বলে রক্ষা। এতো ডাকের হেতু কী বলতে পারো?
হাবুল- স্যার হেতু পরে শুনবেন। আগে একটা সিগারেট খান। ঐ জিনিস তো আপনার খুব পছন্দ। বাকের ভাইয়ের সিগারেট খাওয়াটা বহুত মিস করি।
হুমায়ুন সিগারেট নিলেন। শান্তি মতো টানতে টানতে বলতে লাগলেন, আসলে আমার নাটকের চরিত্র গুলাই সিগারেট খায়। গল্পের বইয়ের চরিত্রদের কখনো ঐভাবে সিগারেট খেতে দেখেছো?
হাবুল এইবার বিপদে পড়লো। হুমায়ুনের সাথে বই নিয়ে আলাপ করলে তো তার চিচিং ফাঁক হয়ে যেতে সময় লাগবে না। তার চেয়ে হুমায়ুনের কাছ থেকে উদ্দেশ্য হাসিল হয় এমন তথ্যগুলো জেনে নেয়া যাক, যেটা তার পেশাগত কাজে আসবে।
হাবুল- তা স্যার আপনার শইলডা ভালা?
হু আ- হ্যা তা ভলো। কিন্তু তুমি ঐ রকম ঢং করে জিজ্ঞেস করলে কেন? তুমি তো আমার ফরম্যাল সাক্ষাতকার নিতে চাও তাই না।
হাবুল- সে কী স্যার আপনি দেখি জেনেও গেছেন আমি সাক্ষাতকার নিতে চাযই । কী তাজ্জব !
হু আ – জীবিত থাকতে যে শক্তিগুলো অর্জন করা নিয়ে আমার দুর্বলতা ছিলো সেগুলোকেই এক্সপ্লোর করবার চেষ্টা করছি। জেনেছ তো মনে হয় আমার বিস্ময় ছিলো সেইসব মানুষদের নিয়ে যারা অন্যের মনের কথা বুঝতে পারে। আমার কুহক কিংবা কালো যাদুকর বইয়েও কিন্তু এমন শক্তি নিয়ে আমি কিছু বলবার চেষ্টা করেছি। এই শক্তিগুলো কোথায় থাকে কীভাবে থাকে এটা বুঝতে চেয়েছি। সেটাকেই গল্পে রূপ দেবার চেষ্টা করেছি।
আবার গল্পের বইয়ের প্রসঙ্গ আসায় হাবুল একটু চাপে পরে গেলো। প্রসঙ্গ ঘুরানো দরকার। আর তার জন্যই খোমাখাতার হট টপিকগুলো মনে আওড়াতে শুরু করে হাবুল।
হাবুল– হ্যা স্যার তা বুঝেছি। আচ্ছা স্যার , স্রষ্টা এবং ধর্ম বিষয়ে আপনার অবস্থানটা কোন জায়গায়।
এই প্রশ্নের পরে হুমায়ুনকে চুপ দেখা যায়। সিগারেটে টান দিতে থাকেন উদাস হয়ে। অথচ স্ট্রাইকিং প্রশ্নগুলোর একটা করে হাবুলের মাঝে তখন চাপা উত্তেজনা। মনে প্রাণে চাইছে হুমায়ুনকে দিয়ে আস্তিকতা এবং ধর্মের পক্ষে কিছু বলিয়ে নিতে। হুমায়ুনকে জান্নাতী বানানো লোকের সংখ্যায় আবার খোমাখাতা ছেয়ে গেছে। পাবলিক ডিমান্ড। প্রিয় লেখক জান্নাতে থাকা নিয়ে পাবলিকের আগ্রহের মাত্রা দেখে হাবুলের মত হাবুও অবাক হয়। লোকজনের ভাব এমন যেন হুমায়ুন জান্নাতে গেলে পরকালে তাদের জন্য আবার বিনোদনের আধার নিয়ে হাজির হবেন। হুমায়ুনের কাশির শব্দে হাবুলের ঘোর ভাঙে।
হু আ- এসট্রে দিতে পারো।
হাবুল এ্যসট্রে এগিয়ে দেয়। হুমায়ুন তাতে সিগারেটের শেষ আধা পোড়া অংশটা গুজে দিয়ে বলতে শুরু করেন
হু আ — আসলে স্রষ্টা আছে কী নেই এই বিতর্কের চাইতেও আমার বেশি আগ্রহ হলো ভূত আছে কী নেই সেটা নিয়ে। বলতে পারো ভূত নিয়ে কিংবা অলৌকিকতা নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ। প্যারানরমাল সাইকোলজি নিয়েই তো মিসির আলীকে টেনে আনলাম। তাছাড়াও লক্ষ্য করলে দেখবে আমার বিভিন্ন গল্পে সত্য ভূত মিথ্যা ভূতেরা হানা দেয়। কিশোরদের নিয়ে তো বই ই লিখে ফেললাম একবার ভূত ভূতং ভূতৌ।
হাবুল বাঁধা দিলো কথায়।
হাবুল- স্যার তাহলে বলুন ভূত আছে কী নেই সেই বিষয়েই শুনি।
হু আ – তুমি এই যে আমার সাথে কথা বলছো আমি আছি কী নেই বলো। আছি তো তাই না ? তাহলে আমাকে তুমি ভূত বলে চালিয়েও দিতে পারো। আমার তোমার উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা বলেও চালাতে পারো।
হাবুল- তা ভৌতিক কোন ঘটনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন কী?
হু আ- হ্যা তা করা যায়। সমস্যা হলো কী ভৌতিক অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বিব্রত হই। অনেক গুলো বলেছি আগে। তো সেগুলোর কোন একটা যাদি বলে ফেলি আর আগের বর্ননার সাথে না মিলে মিসির আলীর ভক্তরা তা থেকে ক্লু নিয়ে আমাকে বিপদে ফেলে দিবে। তাই একাধিক ঘটনা বলা যাবে না। একটা ঘটনা বলতে পারি। আমরা যখন জগদ্দলে থাকতাম বিল্টু নামে একটা ছেলেকে চিনতাম। দুরন্ত ছটফটে। ওর সাথে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম। নীলাকাশ ও খুব ভালো বাসত। বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবার পরে যখন আকাশ কটকটে নীল হয় তখন সে বলতো ওটা নাকি জগতের সব কষ্টবিষকে শুষে নিয়ে নীল হয়েছে। ওর বলার পরে নীল আকাশ দেখলে কষ্ট লাগতো। আকাশকে উদার মনে হতো।
বলতে বলতে হুমায়ুন উদাস হয়ে যান।
হাবুল — স্যার আপনি তো ট্র্যাক হারিয়ে ফেলছেন। অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হচ্ছিল।
হু আ- হুম। একদিন দুপুর বেলা। চারদিকে খাঁ খাঁ। জগদ্দলে একটা পোড়া বাড়ি ছিলো। সেই বাড়ির ভিতরে কেউ যেতে চাইতো না এমনিতে। তো বিল্টু আর আমি মিলে যেতাম। তবে সেই বাড়ির দোতালার কোণার দিকে একটা ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিলো। লোকে বলতো ঐ ঘরের মাঝে কী নাকি আছে। এবং ঐখানে যে কী আছে কেউ জানে না। আমি আর বিল্টু নেমে যাই কাজে। তেমনি করে একদিন সেই ঘরের দরজা ফাঁক হয়। আর আমার আগে বিল্টু ঘরে ঢুকে পড়ে। আর ঢুকার প্রায় সাথে সাথে বিল্টু বেরিয়ে আসে। তার চেহারার মাঝে কিছু একটা ছিলো, সেই জন্যই আমি ভিতরে ঢুকার আগ্রহের চাইতে বিল্টুকে টেনে আনার প্রতি বেশি সচেতন ছিলাম। সেদিন বিল্টুকে বাড়ি পৌঁছে দেই। পরেরদিন সকালে শুনি বিল্টু নিরুদ্দেশ। কোথায় গেছে কেউ জানে না। রাতে বাথরুমে যেতে বাইরে গিয়েছিলো। তারপরে আর ফিরে আসে নি।
কথা থামিয়ে ছোট্ট নিঃশ্বাস ছাড়লেন হুমায়ুন। হাবুল বেশ উচ্ছসিত হয়ে উঠে। হুমায়ুনের অজানা কাহিনী যা কেউ জানে না, যেই গল্প হুমায়ুন কাউকে বলেননি তা এখন সে জেনে গেছে। সাক্ষাতকার পূর্ণতার জন্য আর যা যা বলা দরকার সেগুলোও মনে মনে ছকতে থাকে।
হাবুল — স্যার আপনার কবর দেয়া নিয়ে তো অনেক হৈচৈ হচ্ছে। সত্যটা কী জানতে পারি আমি আপনার কাছ থেকে।
হু আ — সব রহস্যের উত্তর সবাইকে জানতে নেই ( মুখে অপার্থিব হাসি দেখা যায়)। আমি জানি তুমি কী শুনতে চাইছো কিংবা আমাকে দিয়ে কী বলাতে চাইছো। কিন্তু সেটা হুমায়ুন রূপী তোমার সত্ত্বা যা আমার রূপ নিয়েছে তার কখনোই জানার কথা না। বরং , সূরা বাকারার গাভীর কাহিনীর মত আমার লাশকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো।
হাবুল — ইয়ে মানে স্যার ধর্ম নিয়ে আপনি কিছু বলেন না আবার সুযোগ পেয়ে ধর্মকে খোঁচা মারতেও তো ছাড়লেন না।
হুমায়ুন চুপচাপ থাকেন। তার মাঝে হিমুর ন্যায় রহস্যময় হাসি দেখা যায়। যার উত্তর হ্যা বা না যে কোনটাই হতে পারে। হুমায়ুনের এই হাসি দেখে কোনদিন হিমু না পড়া হাবুলও চট করে হিমুকে চিনে ফেলে।
হাবুল — স্যার বেলভ্যু হাসপাতালে হিমু মিসির আলী বাকের ভাই সহ সবাই যে আপনাকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলো তা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
হু আ– রামছাগল ভক্ত থাকলে এই জাতীয় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তখন হিমু মিসির আলী হুমায়ুন দ্বারা চালিত না হয়ে রামছাগল ভক্তদের দ্বারা চালিত হয় আর তারাও চালান করে। অবশ্য ব্যাপারটা অবধারিতই ছিলো। কারণ হিমু মিসির আলীকে গত দশ বছরে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। বরং ভক্তকুলের ইচ্চা অনুযায়ী তারা বিবর্তিত হয়েছে।
হাবুল– আচ্ছা স্যার চরিত্র লেখককে নিয়ন্ত্রণ করে না লেখক চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানে সোজা করে বলি, আপনার অনেক উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই বয়স্ক লোকদের সাথে অল্প বয়সী মেয়েদের অসম প্রেম। এখন প্রশ্ন হলো এই চরিত্রগুলো লিখতে গিয়ে আপনার ব্যাক্তিগত জীবন প্রভাবিত হয়েছে নাকি আপনার ব্যাক্তিগত জীবনের প্রভাবেই চরিত্রগুলো উঠে এসেছে?
হু আ– আরেকটা সিগারেট দাও।
হাবুল বুঝতে পারে হুমায়ুন কসরত করে কথা ঘুরাবার চেষ্টা করছে। শাওনের চামড়া ছিলার উপযুক্ত কিছু হুমায়ুনের থেকে বের করে নিতে পারছে না বলে একটু বিরক্তও মনে হচ্ছে তাকে। সিগারেট এগিয়ে দেয়। আর মোক্ষম অস্ত্রটাকে ঘুরিয়ে আনবার চেষ্টা করে।
হাবুল — স্যার অয়োময় নাটকে আমরা দেখতে পাই মূল চরিত্র দুইটাই (মির্জা আর কাশেম) দুই বিয়ে করে। এই দুইটার প্রভাব আপনার জীবনে প্রচুর। আপনি কী কোন ভাবে বুঝেছিলেন আপনি এদের মত দুই বিয়ে করবেন?
হু আ– পরের প্রশ্ন।
হাবুল — মানে বলতে চাইছিলাম বয়স্ক লোকের সাথে অল্প বয়সী মেয়ের বিয়ে নিয়ে। সেই হিসাবে কাশেম চরিত্রটা আপনার সাথে বেশ মিলে।
হু আ- ঠিক তাই। এমনকি কাশেমের মেয়ের চরিত্রে আমার মেয়েকেও রেখেছিলাম এই জন্যে।
হাবুল খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। আটকানো গেছে বড়শিতে।
হাবুল — স্যার তার মানে কাশেমকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে আপনি এটাও বুঝিয়ে দিলেন কাশেমের মত আপনাকেও হত্যা করা হবে তাই না স্যার। এইটা আমরাও বুঝতে পারছি এখন। আপনাকে যারা হত্যা করলো তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু এটাই সত্য।
হুমায়ুন এইবার ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তাকে বেশ বিব্রত মনে হচ্ছে। তার কড়া দৃষ্টি অনুসরণ করে হাবুল প্রসঙ্গ ঘুরানোর চেষ্টা করলেন।
হাবুল — আচ্ছা জাফর ইকবালকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হু আ– ভালো নায়ক ছিলো অল্প বয়সেই মারা গেলো বেচারা।
নিজের প্রশ্নের ভুলটা ধরতে পারে হাবুল। হুমায়ুনও যে একই সাথে রসিক ও পিছলা সেটা ভুলেই গেছিল হাবুল। হুমায়ুন আর তার ভাই নিয়ে তাদের ভক্তদের মাঝে তর্ক উসকে দেয়ার সুযোগটা বৃথা গেলো বলে হাত পা ছুড়ার দশা। হাবুল আবারও প্রসঙ্গ পালটালো।
হাবুল — আচ্ছা স্যার দেশের রাজনীতি নিয়ে আপনি কখনোই তেমন কোন অবস্থান নেন নি। কিন্তু ভক্ত হিসাবে জানতে চাই আপনি আসলে ঠিক কোন দলকে পছন্দ করতেন।
হু আ– জাতীয় পার্টি। কারন তার চেয়ারম্যান আমার মত দুই বিয়ে করেছে। ( হুমায়ুনের মুখে ব্যাঙ্গের হাসি )।
হাবুল বুঝতে পারলো যে শাওনের বিরুদ্ধে লাগার ব্যাপারটা হুমায়ুনের সামনে বলা ঠিক হয় নাই। তারপর থেকেই হুমায়ুন বিগড়ে গেছেন পুরো। কথা ঘুরিয়ে টিপিক্যাল প্রশ্ন করে আলোচনা জমানোর শেষ চেষ্টা করলো আরেকটা।
হাবুল — স্যার ভালোবাসা বিষয়ে আপনি কী মনে করেন সেটা যদি একটু বলতেন।
হুমায়ুন চশমা এবং ক্যাপ দুই খুলে ফেললেন। তারপরে গম্ভীরভাবে বললেন
হু আ– ভালোবাসা হইতাসে গিয়া একটা শরমের ব্যাপার। তবে শরমের ব্যাপার হইলেও এইটার দরকার আছে।
এই মুহূর্তে এইজাতীয় জোকসের জন্য হাবুল প্রস্তুত ছিলো না। শুনে সে বেশ দুলে দুলে হাসতে লাগলো। আর তার হাতের ধাক্কায় চায়ের কাপ মাটিতে পড়ে ভেঙে গেলো। কাপ ভাঙার শব্দের হুড়মুড় করে ঘুম ভাঙে হাবুলের। রাতে ঘুমানোর আগে চা খেয়ে কাপটা রেখে দিয়েছিলো মাথার কাছে। তার ঘুমের মাঝে সঞ্চালিত শরীরের ধাক্কায় তার কুরবানি ঘটেছে। তা ঘটুক। ফুরফুরে মেজাজে হুমায়ুনের অপ্রকাশিত সাক্ষাতকার কাটছাটের উপর মনযোগ দেয় হাবুল সাহেব। আজকের মধ্যেই পত্রিকায় হুমায়ুনের অপ্রকাশিত সাক্ষাতকার খালাস করবে স্বপ্নের সাথে মনের মাধুরী মিশিয়ে। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তার কম্পিউটারটিকে অন করে।
( হুমায়ুন মৃত্যু পরবর্তী প্রিন্ট মিডিয়া তে সাম্বাদিকদের হাম্বা রব তোলা নিয়ে বিরক্ত হয়ে এই পোস্ট লিখা। সাংবাদিকদের অতি উৎসাহ সেই সাথে পাবলিকের অতিরিক্ত আগ্রহ দুইয়ের ভারে মানুষের লাইফের কোন কিছুই আর পারসোনাল থাকছে না। ব্যাপার গুলো নিয়ে নোংরামির অবসান হোক এই প্রত্যাশাই করি। সেই সাথে প্রত্যাশা করি সংবাদিকতার নামে ‘হাম্বাদিকতা’ বন্ধ হোক। প্রাইভেসি বলে ব্যাক্তিক পারিবারিক জীবনে যে শব্দটা আছে সেটা যাতে আমরা সাধারণ মানুষরা একটু বুঝতে চেষ্টা করি। সেই সাথে হাবুলের মতো তেলবাজ সাংবাদিকেরা প্রতিহত হোক সাধারণ মানুষদের দ্বারা — এটাই হোক আমাদের চাওয়া। )
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কেন দাবী করলো না এনসিপি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৫


বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে আওয়ামী লীগ দলটি এখন ফুটবলের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ না পুনর্বাসন ইস্যুতে বড়ো ছোটো সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। নবগঠিত রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মিস্টার মাওলা"

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০৯


বিটিভিতে খুব সম্ভবত আগে একটি বাংলা ছবি প্রচার করা হতো , নাম 'মিস্টার মাওলা'। নায়ক রাজ রাজ্জাক, অভিনিত ছবির সার-সংক্ষেপ কিছুটা এমন: গ্রামের বোকাসোকা, নির্বোধ ছেলে মাওলা‌। মাকে হারিয়ে শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখন বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ কেন উন্নত দেশ হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও (সম্ভবত) হতে পারবে না…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:২২


১. সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে গুটিকয়েক যে কয়েকটি দেশ বিশ্বে স্বাধীনতা লাভ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালে এত রক্তের বিনিময়ে যে দেশ তৈরি হয়েছিল, তার সরকারে যারা ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সুনিতা উইলিয়ামস: মহাকাশ অনুসন্ধানে অনুপ্রেরণার যাত্রা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:২৪





সুনিতা উইলিয়ামস কে? যদিও তুমি তোমার পাঠ্যপুস্তকে সুনিতা উইলিয়ামসের কথা শুনেছো, তবুও তুমি হয়তো ভাবছো যে সে কে ?

বিখ্যাত নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামসের ক্যারিয়ার ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেরা, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইলন মাস্ক , এসময়ের নায়ক

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১০




সুনিতা উইলিয়ামদের ফিরিয়ে আনার আসল নায়ক!

৯ মাস! হ্যাঁ, পুরো ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়াম। একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×