জয়ের পরপরই স্মৃতির পাতা হাতড়াতে থাকলাম।মনে করার চেষ্টা করলাম শেষ কবে আমি কেঁদেছিলাম।মনে পড়লো, ৯৭ এ যখন শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে আকরাম খানেরা আমাদের অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায় শিশু বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন, তখন চোখের পানি আটকাতে পারিনি।সারা রাত শাহবাগের মোড়ে, চারুকলায় গান গেয়েছি, নৃত্য করেছি।আর অবাক হয়ে দেখেছি এই জাতীর এক হতে সময় লাগেনা।শুধু একটি উপলক্ষ প্রয়োজন।সে হোক মুক্তির সংগ্রাম বা বিজয় মিছিল।আজ ওসব কিছু করার বাসনা অবদমন করতে পারলেও চোখ দুটোকে কথা শোনাতে পারছিলামনা।অসাধারন এক বিজয় গাঁথা।এই জয় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের।আর অনিশ্চয়তার দোলচালে আজকে আরেকবার জয় হলো ক্রিকেটের।
ফিল্ডিং
আমার দৃষ্টিতে আজকের সেরা ডিপার্টমেন্ট ফিল্ডিং।সত্যি বলতে কি এরকম জান বাজি রাখা ফিল্ডিং বহুদিন দেখিনি বাংলাদেশের।প্রত্যেকের কমিটমেন্ট ছিলো চোখে পড়ার মতো।মুশিটা উইকেটের পেছনে কেন যেন এখনও উন্নতি করছেনা।আজকেও একটা স্ট্যাম্পিং মিস।ওকে একটু ধমকে দিতে হবে।শফির ক্যাচটা আর নাঈমের রান আউটটা বহুদিন মনে থাকবে।
ব্যাটিং
ব্যাটিং এ নাফিস আউট হবার পর সত্যিই লাইন আপটা খুব ছোট মনে হচ্ছিলো।তামিমের অনুপস্থিতিটা নাফিস অনেকটাই পুষিয়ে দিয়েছিলো গত ম্যাচে, কিন্তু ও আউট হবার পর অন্ধকার দেখছিলাম।রকিবুল, জুনায়েদ সিদ্দিকী এদের উপর কোন ভরসা করতে পারিনা।সাকিব ব্যাটিং এর হাল না ধরলে আজকে যে কি হতো সে আর বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা।মুশিকে যখনই সেট মনে হলো, নিজের দোষে রান আউট হলো।এই জায়গাটিতে বাংলাদেশকে আরও জোর দিতে হবে।রানিং বিটউইন দ্যা উইকেট আজকে খুব খারাপ দেখেছি।রিয়াদের যে কি সমস্যা যাচ্ছে বোঝা মুশকিল।ওকে ওর মতো করে খুঁজে পাচ্ছিনা।একটু শেকী।
বোলিং
সাকিবের বোলিং পরিচালনা ছিলো অসাধারন।গ্যাম্বলিং এ ও জিতে গেছে।অন্যরকম হলে এই আমরাই কিন্তু তাকে দোষ দিতাম।কারন গত ম্যাচের দুই উইকেট পাওয়া রিয়াদ আজকেও ভালো বল করেছে কিন্তু মাত্র দুই ওভার করেছে।শ্লগে রুবেল বা শফি প্রহৃত হলে এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতো।
পাওয়ার প্লে
আবারও আমরা পাওয়ার প্লে নিয়ে আমাদের অদূরদর্শীতা প্রমান করলাম।সাকিবের ১০০ হয়ে যাবার পর ও যখন ক্লান্ত যে কোন মূহুর্তে আউট হবার সম্ভাবনা, সেই সময় পাওয়ার প্লে টা ইউটিলাইজ না করে টেইলএন্ডারদরে জন্য রেখে দেয়ার পরিণতি কি করুণ হতে পারে, আজকের বাজে ফিনিশিং তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।আমরা অন্তত বিশটি রান কম করেছি।
ক্যাপ্টেন্সী
সাকিবের ওভার অল ক্যাপ্টেন্সী ছিলো অসাধারন।ব্যাটিং, বোলিং, দল পরিচালনা, সব মিলিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া যাকে বলে।
[সাক্ষাতকারে সাকিব]
অন্যান্য:
পরবর্তী ম্যাচে ভাষ্যকার শামিম আবালটারে বয়কট করা যায়না? সাকিব যখন ব্যাটিংয়ে, একটা এলবির আবেদনের প্রেক্ষিতে শাইম্মা যেভাবে ক্লোজ বলে চেচিয়ে উঠে বিষয়টা মরিসনের মাথায় ঢুকিয়ে দিলো, প্রথমে চুপ থাকা মরিসন সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ ত্যানা প্যাচাইলো। ।মরিসন ব্যাটাও কট্টর ন্যাশনালিষ্ট।
সব শেষে সাক্ষাতকারের সময় ভেটরির এমন কান্না কান্না কন্ঠ আমি কোনদিন শুনি নাই।নাকি আমারই ভুল কে জানে।
অসামান্য একটি দিন আজ।প্রথম সব কিছুর আনন্দই আলাদা।
সবাইকে অসামান্য এই বিজয়ের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
[ল্যাপ অব অনারের পর]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৩