এই মুহূর্তে আন্দোলনে নামার জন্য যে কয়টা ইস্যু পাবলিক গুরুত্ব দিয়া বিবেচনা করতেছে তার একটা টিপাইমুখ বাঁধ। এর বিরুদ্ধে লেটেস্ট যে প্রতিবাদ কর্মসূচীটা আসছে সেটা একটা অনলাইন পিটিশন। বলা হচ্ছে এতে এক লাখ সই দিলেই জাতিসংঘ এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে। পাবলিকের মাথায় কাঠালভাঙার যত উপায় আছে তার মধ্যে সবচেয়ে লেটেস্টও এইটারে মনে হইলো। স্ল্যাকটিভিজম বা ইন্টারনেট পিটিশনের মাধ্যমে একটা ইস্যুতে জনমত জানানো যায় বটে, কিন্তু সেটার গ্রহণযোগ্যতা অন্তত জাতিসংঘে নাই কারণ সেখানকার জনগনের (মানে সাইনদাতাদের) পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নাই, তাই জাতিসংঘ সেটা গ্রহণ করে না। আলোচ্য ওয়েবসাইটে গেলে দেখবেন কোনো ইহুদি যেন যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে না পারে এমন পিটিশনও দিছে লোকে। মোটের উপর জাতিসংঘের এমন কোনো ক্ষমতাই নাই, থাকলে তারা ইসরায়েলের অবৈধ বসতিস্থাপনের বিরুদ্ধেই তো হস্তক্ষেপ করতে পারতো। কিংবা আমেরিকারে ঠেকাইতে পারতো ইরাকে মানবাধিকারলংঘন থেকে।
জাতিসংঘে কথা হয় G2G লেভেলে, মানে সরকার টু সরকার লেভেলে। বাংলাদেশ সরকারই কেবল আর্জি জানাতে পারে। মনে নাই ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার জন্য একজন প্রবাসী বাংলাদেশী আবেদন করেছিলেন। পরে বাংলাদেশ সরকার যখন উদ্যোগ নিলো সেটা সফল হয়েছিলো।
তো না জাইনা পাবলিক যারা এতে সই করতেছেন তার যেসব ঝুঁকি নিতেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটা তুলে দিলাম:
১. এইটার একটা ফিশিং স্ক্যাম হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আপনার আই্ডি হয় হ্যাক হবে নয়তো আপনার ইউজার প্রোফাইলের তথ্যাদি বিক্রি করে মোটামুটি বড় অংকের টাকা কামাবে এর নেপথ্যে থাকা লোকজন। এই টাইপের স্ক্যামের ব্যাপারে নিচের সাইটে তথ্য পাবেন প্রচুর: Click This Link
ভোট দেয়ার পরেই ওরা আপনাকে ফেসবুকে শেয়ার দিতে বলে।ওখানে ক্লিক করলেই আপনার প্রোফাইল যাবতীয় বিষয়ের ওপর ওরা একসেস চাইবে। মজার ব্যাপার হলো যারা এলাউ করেছেন তারা তো গেছেন। কারন ওদের এপ্লিকেশন এর DOM আনুযায়ী আমি একসেস দিলে উনারা চাইলে আপনার প্রোফাইল থেকে স্টাটাস, ভিডিও এবং ছবি পোষ্ট করতে পারবে এবং আপনার যাবতীয় তথ্য তারা নিতে পারবে(পাসয়ার্ড এবং নন পাব্লিক ইনফো বাদে)।
২. এই পিটিশনটার নাম বদলাইয়া যাইতে পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করো বা গোলাম আযমের মুক্তি চাই নামে। তারপর সেটা দেওয়া হবে যুক্তরাজ্য আর ইউএস সরকারের ওয়েবসাইটে। পিটিশনের গ্রহণযোগ্যতা এই দুইটা জায়গাতেই কিছুটা আছে।
উইকিতে একটা ইন্টেরেস্টিং তথ্যে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। "The website makes revenue in part by providing list building services (access to its users' email addresses) to partner organizations."
১ লক্ষ সাইন হলেই জাতিসংঘে ভারতের কাজে হস্তক্ষেপ করবে এমন তথ্য কে কোথায় পেল? এমন যদি হতোই তাহলে মানুষ সকল অপরাধ এই ১ লক্ষ সাইনের মাধ্যমে রুখে দিতো। change.org সাইটের একটি পিটিশনের ফলে জাতিসংঘ কাজ শুরু করে দিবে এমন বুদ্ধি মাথায় আসে কিভাবে! জাতিসংঘের কর্মকর্তারা কি নিয়মিত সাইটটি ভিজিট করে নাকি? জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কি এতোই সোজা? তারচেয়ে বড় কথা গত কয়েক দশকের ইতিহাসে জাতিসংঘে কোন ভালো কাজটাতে হস্তক্ষেপ করেছে?
এটা নিয়ে প্রতিবাদ করলেই কিছু লোক change.org এর সাফল্যের লিস্ট ধরায় দেয়। এদের সাফল্য গুলা হলো:
# Bank of America Drops Proposed Debit Card Fee
ব্যাংক অব আমেরিকা যে ক্রেডিট কার্ডের ফি কমাইলো। এইটা গ্রাহকদের একটা ওপেন জরিপের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্তটা নিছে। এইখানে ইন্টারনেট পিটিশনের ভুমিকা বুঝলাম না। বরং ব্লগে লেখালেখি করে তারা ব্যাপারটারে একটা ইস্যু বানাইছিলো এমন খবর পাওয়া যায়।
# JC Penny Compensates Workers' Families, Leads Fire Safety Program
জেসি পেনির ফ্যাক্টরিতে আগুন লাইগা শ্রমিক মারা গেছে, তার জন্য যে ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হইছিলো। কোম্পানি তেমন প্রতিশ্রুতি একবার দিলেও তারা সেটা থেকে সরে আসছে।
#Grand Canyon Plastic Bottle Ban to Move Forward, Despite Coca Cola’s Opposition
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে লোকজন কোকের প্লাস্টিক বোতল ফালাইয়া জায়গাটা নোংরা করতেছে, এইটা বন্ধের পিটিশন! বাহ!!
#Kelley Williams-Bolar Granted Clemency by Ohio Gov. John Kasich
বাচ্চাদের একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্যে কেলি উইলিয়ামস নামে এক মহিলা নিজের ঠিকানার জায়গায় বাপের ঠিকানা ব্যবহার করছে। এইটা যুক্তরাষ্ট্রে একটা অপরাধ। এই তথ্য গোপনের অপরাধে তারে তিনদিনের জেল দেওয়া হইছিলো যেটা গভর্নর ক্ষমা করছে।
#ইরাকযুদ্ধ ফেরত এক লোক সামনের উঠানের গাছে দুই ছেলের খুশী করতে একটা ঘর বানাইছে, যেইটারে ট্রি হাউজ বলে। এটা নিয়ে এক প্রতিবেশী কমপ্লেইন করায় কাউন্টি অফিস থেকে সরানোর নোটিশ পাইছে, সেই নোটিশ প্রত্যাহার করা একটা বিশাল বিজয়, তাই না!
লোকজন ভারত-পাকিস্তান করতে করতে ভুইলা গেছে যে কর্পোরেট দালাল বইলাও একটা জিনিস আছে, যারা অনলাইনে টাকা আয় করনের লিংক দিয়া পাবলিকরে ভুদাই বানায়।
আমি বরং বলি এক লাখ সইদাতার বদলে এক লাখ মানুষের একটা মিছিল করা হোক। টিপাইমুখ অভিমুখে না পারি, সংসদ অভিমুখে গিয়াও, অন্তত সংসদ ভবনের রাস্তায় দাড়াইয়া আমরা এই বাঁধ বন্ধ করার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাইয়া আসতে পারি।অনলাইন একটিভিজমের বাস্তব প্রয়োগ এখন পর্যন্ত যা দেখছি তাতে আমি আশাবাদী না সেটা সম্ভব বলে। ১৪০০ মানুষের হম্বিতম্বি রাস্তায় যখন ১৪ জনে অনুদিত হয়, তখন হতাশ হইতেই হয় বৈকি।
ডিসক্লেইমার: সম্পূর্ন লেখা অমি রহমান পিয়াল, অরিত্র আহমেদ ও ব্লগার ক্যামেরাম্যানের ফেসবুক কমেন্ট/পোস্ট হতে নেয়া।