আমি ক্যাম্পাসে অনেক রোমান্টিক কাপলকে হাটতে দেখেছি … কখনো দেখেছি হাতের কনিষ্ঠ আংগুলের মধ্যেই তাদের ছোয়া সীমাবদ্ধ ছিল, কখনো দেখেছি বৃষ্টির দিনে একজন ভিজে অপরকে ছাতার নিচে জায়গা করে দেওয়া … আবার কখনো প্রভোষ্ট অফিসের নিচে খানিকটা আপত্তিকর অবস্থায় তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তবে যদি আমাকে মার্কিং করতে বলেন তবে ফার্স্ট পজিশনে রাখব আজকের রাতে সোয়া দশটার দিকের একটা ঘটনাকে।
রাতে কারেন্ট নাই … হলের সামনে মাঠে বসে আছি। তো লালকমলের (লেক) দিক থেকে দেখছি একটা টর্চ লাইট নিয়ে কেউ আমাদের হলের দিকে এগিয়ে আসছে। বিরক্তিকর যেটা ছিল সেটা হল, ওনার টর্চের আলোটা আমাদের অনেকেরই চোখে লাগছিল। যেহেতু পুরো ক্যাম্পাস অন্ধকার, ঐ আলোটুকুই একদম কাটার মত বিধছিল চোখে। একবার মনে করলাম একবার একটা ব্যাড টোন দিব নাকি … এতবড় মাঠের মধ্যে কেউ টের পাবেনা কে কি বলল। কিন্তু কাছে আসবার পর খেয়াল করলাম টর্চ ধারী ব্যাক্তিটার বয়েস আনুমানিক সত্তরের কাছাকাছি, খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছেন উনি । অবাক করে দিয়ে লোকটা আমাদের পাশ কাটিয়ে লেডিস হলের দিকে চলে গেল । যাই হোক, ফোনে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছিলাম, সেদিকেই মনে মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষন পর আবার ঐ লাইট টা দেখা মিলল … মানে লেডিস হলের ঐদিক দিয়ে আসতেছে আমাদের মাঠের দিকে । কিছুক্ষন পর বুঝলাম ঐ বয়ষ্ক ব্যাক্তিটির সাথে আরেকজন আছে … একজন বয়ষ্কা মহিলা। আমি শহীদ মিনারের কাছেই ছিলাম … আর রাত হবার কারনে তাদের কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। একান্ত পারিবারিক আলোচনা করছিল ওনারা… দুটো বুড়ি গল্প যেমন গল্প করে আর কি আঞ্চলিক ভাষায়।
সম্ভবত ঐলোকটির স্ত্রী উনি, কাজ করে লেডিস হলে। রাতে ঐ মহিলা একা আসতে পারবেন না বলে লোকটি টর্চ নিয়ে এসেছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে যেতে। হেটে যাচ্ছিল আমাদের হলের সামনের রাস্তা দিয়েই … যতটুকু আলোতে দেখা যাচ্ছিল, পাশাপাশি হাটার কোন তাড়না ছিলনা ওনাদের মধ্যে। দিব্যি হেটে যাচ্ছেন রাস্তার দুপাশ ধরে… সুন্দর করে একে অপরের কথার রেস্পন্স করছেন। পান চাবানোর কারনে দুজনের কথার মাঝেই একটু আড়ষ্টতা পাওয়া যাচ্ছিল। সত্যিই সম্পর্ক যে একটা ঈশ্বর প্রদত্ত ব্যাপার এটা বিশ্বাস করতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকেনা এগুলো দেখলে। যেখানে কোন কোন ঘর ৬/৭ মাসও টিকে না, বন্ধুত্ত্ব পুরোনো হয়ে যাচ্ছে .. একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে, মানুষ নতুনত্ত্ব খুজছে, শহর বদলে যাচ্ছে, রাজনীতি বদলে যাচ্ছে। আবার সেই বদলের স্রোতকে উপেক্ষা করে কেউ কেউ ৬০/৭০ বছর দিব্যি একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দিচ্ছে।সত্যিই বিশ্বাস করতেই হয় যে কিছু ব্যাপার আছে পৃথিবীতে যেগুলা লৌকিকতার বেশ উর্ধে !!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৭