মডেল: আমার পুত্র "প্রিয়"।
DSLR এর বেসিক ৩ টা জিনিস হইলো
১) শাটার স্পিড (Shutter Speed)
২) এপ্যার্চার (Aperture)
৩) আইএসও (ISO)
এই তিন প্যারামিটারের পারফেক্ট কম্বিনেশন করতে পারলেই মনমত ছবি তোলা সম্ভব। অল্পবিস্তর যদ্দুর জানলাম, তা শেয়ার করি। ভুল হইলে, শুধরে দেওয়ার মত অনেক বন্ধু আমার ফেসবুকে আছেন, এই ভরশায়।
১) শাটার স্পিড: ক্যামেরার লেন্সের সামনে আলো ঢুকার জন্য একটা ছিদ্র থাকে। ছিদ্রটা সবসময় বন্ধ থাকে। ছবি তোলার সময় কিছুক্ষণের জন্য ছিদ্রটা খুলে দেওয়া হয়। আলো যেন লেন্সের পিছনে থাকা সেন্সরে (আগেকার দিনের ফিল্মে) গিয়ে পড়তে পারে। কতক্ষণের জন্য এই আলো ঢুকতে দেওয়া হবে, এরে বলে শাটার স্পিড।
- আমি যদি চাই দ্রুতগামী কোন মানুষ, পাখী, গাড়ীর ছবি তুলবো। এমন ভাবে তুলবো যেন তা স্পষ্ট উঠে। সহজ করে বলতে গেলে, একটা ঘুরতে থাকা ফ্যানের ছবি এমন ভাবে তুলতে চাই যেন ফ্যানটা যতই ঘুরুক, ছবিতে প্রতিটা পাখা স্পষ্ট বুঝা যায়। তখন শাটার স্পিডি দিবো ১/৪০০০ বা আরো বেশী যদি সম্ভব হয় তা। তারমানে এক সেকেন্ডের চার হাজার ভাগের একভাগ সময়ে গিয়েই ছবিতটা তুলে আনবে। ফ্যানটা নিশ্চয়ই এত দ্রুত ঘরছে না। অতএব ছবিটা একেবারে স্থির আসবে। কিন্তু আমি যদি ফ্যানটা ঘুরছে এমনটা যেন বুঝা যায়, এই ছবি তুলতে চাই। তাহলে শাটার স্পিড কমায়ে দিতে হবে। ১/১০০ বা ১ সেকেন্ড বা ২ সেকেন্ড বা ৩০ সেকেন্ড যা খুশি।
- রাতের রাস্তায় গাড়ীর আলোর মুভমেন্ট যদি তুলতে চাই। তাহলে শাটার স্পিড বাড়ায়ে ১ সেকেন্ড, ৫ সেকেন্ড ইত্যাদি করে দিলে অনেক মজার একটা ছবি পাওয়া যায়। আলোর একটা তুলির আঁচরের মত করে লম্বা লম্বা দাগ পাওয়া যায়। কারন গাড়ীরা ফ্রেমে ঢুকার পর ১, বা ৫, বা যতক্ষণ শাটার স্পিড দেওয়া অতক্ষণ পর্যন্ত ফ্রেমের যে জায়গায় গাড়ীটা যাবে; এতদূর পর্যন্ত আলোর একটা তুলির দাগের মত থাকে।
- শাটার স্পিড যত কম দিবো, আলো তত কম সময়ের জন্য সেন্সরে ঢুকবে। তাই কম আলোতে কম শাটার স্পিডে কাজ করতে গেলে এপ্যার্চার ও আইএসও'ও বাড়িয়ে দিতে হবে। না হয় অন্ধকার ছবি আসবে। সহজ কথায় বলতে গেলে, আলো কম হলে শাটার স্পিডও কম রাখতে হবে।
২) এপ্যার্চার: এপ্যার্চার হইলো ল্যান্সে আলো ঢুকার ছিদ্রটা কত বড় আমি রাখবো তা। একে ইংরেজী f দিয়ে লেখা হয়। এপ্যার্চার ভেল্যু যা থাকে, তা আসলে ১/এপ্যার্চার ভেল্যু হিসাবে ধরতে হবে। তারমানে ১.৮ এপ্যার্চার মানে ১/১.৮ = ০.৫৫। ২২ এপ্যার্চার মানে ১/২২ = ০.০৪৫। অর্থাৎ এপ্যার্চার ভেল্যু কম মানে ছিদ্রটা অত বড়। এপ্যার্চার ভেল্যু একেবারে বেশী মানে, ছিদ্রটা একেবারেই ছোট।
- এপ্যার্চার ভেল্যু যত কম, যার ছবি তুলবো (সাবজেক্ট) তাকে ফোকাস করলে, তার আশেপাশে সব ব্লার (ঝাপসা) হয়ে যাবে। এখন যদি কারো ছবি তুলতে চাই, এমন ভাবে যে, শুধু তারেই দেখা যাবে স্পষ্ট, আশেপাশে সব ঝাপসা হয়ে যাবে। তখন এপ্যার্চার ভেল্যু দিবো ১.৮ বা আরো কম, যদি লেন্সে সাপোর্ট করে।
- পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে ছবি তুলতে চাইলে, যদি চাই যার ছবি তুলবো, পিছনে তার পাহারটার ছবিটাও স্পষ্ট আসুক চাই। অর্থাৎ সাবজেক্টের সাথে তার আশেপাশের সব কিছু সহ চাই, তখন এপ্যার্চার বাড়ায়ে দিতে হবে।
- এপ্যার্চার কম মানে, লেন্সের ছিদ্র বড়। তারমানে বেশী লাইট ঢুকবে। তাই কম লাইটে এপ্যার্চার বেশী দিতে হবে। বেশী লাইটে এপার্চার কমায়ে দিতে হবে।
৩) আইএসও: আইএসও মানে প্রথমে ভাবছিলাম, Image Sensor Optimization। আসলে তা না, আইএসও হইলো International Organization of Standardization এর সেট করে দেওয়া ভেল্যু। ছবি তোলার সেন্সরের সেন্সিটিভিটির একটা ইনডেক্স। আইএসও ভেল্যু যত কম, তারমানে সেন্সরের সেন্সিটিভিটিও কম। অর্থাৎ আলো বেশী লাগবে।
- লাইট যত বেশী থাকবে, আইএসও তত কমায়ে দিতে হবে। লাইট যত কম থাকবে, আইএসও তত বাড়ায়ে দিতে হবে।
- আইএসও প্রয়োজনের চেয়ে বেশী বাড়ায়ে দিলে আবার বিপদ, ছবিতে নয়েজ চলে আসে। অর্থাৎ ছবিতে উল্টাপাল্টা স্পট, বার্ণ ইত্যাদি চলে আসবে।
শাটার স্পিড, এপ্যার্চার, আইএসও এর পারফেক্ট সমন্বয়েই আসলে যেমনটা চাই, এমনই একটা ছবি তোলা সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫১