somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লংকাউই থেকে পেনাং

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রাতে বেশ বৃষ্টি ছিল । সকালে হালকা বৃষ্টি হলেও বোঝা যাচ্ছিল রোদ আসবে । ঠিক আটটার সময় আমাদের ড্রাইভার মুসা তার গাড়ী নিয়ে হাজির । হোটেলের নাস্তা খেয়ে আমরাও রেডি ফেরার জন্য । লংকাউই জেটিতে আসতে ৪০ মিনিট সময় লাগল । পৌনে ৯ টার ফেরীর টিকেট শেষ, পরবর্তী ফেরী ১০টায় । মুসা ভাড়া ৫০ রিগিত নিল । গত ০২ দিন সে আমাদের সংগে ছিল বিদায় জানালাম তাকে । কাউন্টার থেকে ফেরীর টিকেট করলাম, ‘‘ফেরীর নাম এক্সপ্রেস বাহাগিয়া” বেশ বড় ফেরী ০৩ তালা । জেটি এলাকা পরিচ্ছন্ন । আসার দিন বৃষ্টির কারনে মেজাজ খারাপ থাকায় জেটি ভাল লাগেনি ।

বিশাল মার্কেট জেটি কমপ্লেক্সের ভিতর, সবজায়গায় বাণিজ্য । অত্যাধুনিক সব দোকান পাট হালকা কিছু কেনাকাটা হলো । এখানে কাটলারিজ সেট বেশ সুন্দর ও সস্তা । এই দ্বীপে এগুলো তৈরী হয় । দুইটা ফ্যাক্টরী আছে । জেটি থেকে থাইল্যান্ড ও সিংগাপুর গামী জাহাজ ও ছাড়ে । তাদের জন্য আলাদা ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা আছে । আমরাও চেকপয়েন্ট পার হয়ে ফেরীতে এলাম । মালপত্র সব স্তুপকরে মাঝামাঝি জায়গায় রাখার ব্যবস্থা, জায়গা ছোট, মালপত্র বেশী । ফেরী যাত্রীতে ভরা । এসিও আরামদায়ক সিট কিছুটা স্বস্থি এলো । মালাক্কা প্রণালীতে সুর্যের আলো ঝিকমিক করছে । একপাশে ঈগল স্কোয়ার এর বিশাল ডানা মেলা ঈগল আমাদের বিদায় জানানোর জন্য স্থির হয়ে আছে ।



মালাক্কা প্রণালীতে অনেক ছোট ছোট পাত্থরে দ্বীপ, সবুজ গাছপালাও আছে সেই পাত্থরে ছোট দ্বীপগুলোতে । ফেরী সময়মত ছাড়ল, আজ সাগর শান্ত । আমাদের গন্তব্য কুয়ালা কেদাহ, কেদাহ প্রদেশের জেটি, সাগরের উত্তাল ডেউ নেই তবে মজার দুলুনি আছে । সকাল বেলা বলে ঘুম ঘুম ভাব । প্রায় ০২ ঘন্টার উপর মালাক্কা প্রণালী দিয়ে ফেরী তরতর করে চলছে । উপরে আকাশে সকালের সূর্য । পানিতে আলোর ঝিকমিক এবং মাঝে মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। মালাক্কা প্রনালীতে জাহাজ মাছ ধরার নৌকা ওসেন লাইনার সবই দেখা যায় । সবচেয়ে মজার ব্যাপার অনেক মানুষের কোলাহল ও অবস্থান ।

পাশেই এক পরিবার ছোট্র যমজ বাচ্চা নিয়ে উঠেছে । বাচ্চারা কাঁদলেই মা দুধ খাওয়াচ্ছে । মালয়, চাইনিজ, ভারতীয়, ইউরোপীয় মোটামুটি সব ধরনের মানুষ ফেরীতে আছে । বিশালদেহী আফ্রিকা কিংবা আমেরিকান এক জন ছোট খাট থাই কিংবা ভিয়েতনামী বান্ধবীকে নিয়ে এসেছে । বান্ধবী লম্বাতে তার অর্ধেক । চিনা এক পরিবার তাদের ছেলেকে মোবাইলে বিভিন্ন ব্যবহার শেখাচ্ছে । কেউ ঘুমে কাত হয়ে আছে । দেখতে দেখতে দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল । কুয়ালা কেদাহ জেটি দেখা যাচ্ছে । সময়মত জেটিতে ভিড়লো আমাদের ফেরী ।

মোবাইলে আমাদের ড্রাইভার মোহাম্মদকে ডাকলাম । ৫ মিনিটের মধ্যে হাজির হয়ে গেল । সকালে তাকে আমাদের ফেরীর সময়টা জানিয়ে দিয়েছিলাম । আমরা তিন দিন লংকাউইতে ছিলাম, আর মোহাম্মদ তার বাড়ী পেরাক প্রদেশের রাজধানী ইপোহতে তার দাদীর কাছে ছিল । আমাদের জানালো গতরাতে সে কুয়ালা কেদাহর হোটেলে ছিল । সকালে উঠে ড্রাইভ করার চেয়ে এখানে থাকা তার কাছে নিরাপদ মনে হয়েছিল । কেদাহ প্রদেশের রাস্তা ছেড়ে আবার নর্থ সাউথ হাই-ওয়েতে এলাম ।


এবারের গন্তব্য পেনাং প্রদেশের জর্জ টাউন শহর । আজকে কেবল যাত্রা শুরু হলো তাই বেশ ঝরঝরে লাগছিল । দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলছি । কেদাহ প্রদেশের সমতল ভুমিতে ছাষাবাদ হয় । ধানের ক্ষেত রাবার বাগান ও কিছু কিছু জায়গায় আম গাছের বাগান । ফাঁকে ফাঁকে ফার্মহাউস, ট্রাক্টর, দুরে বহুদুরে ছোট গ্রাম দেখা যায় । হাইওয়ের আশেপাশে আমাদের দেশের মত মানুষজন নেই । হাইওয়েতে আজ ট্রাফিক বেশ হালকা । খোস মেজাজে আমরা চলছি পেনাং এর পথে ।


[কেদাহ পার হয়ে পেনাং প্রদেশে কিছুক্ষণ চলার পর বাটারওয়ার্থ শহরের দিকে মূল হাইওয়ে থেকে এক্সিট নিলাম, পেনাং শহরটা মূলত বন্দর শহর । চীনাদের যাতায়াত বেশ চোখে পড়ে । এই শহরে চীনা ডমিনেটেড, তাদের পুরানো বহু বাড়ীঘর দেখলাম । নতুন করে অনেক ঘরবাড়ী তৈরী হচ্ছে । মুহাম্মদ পথের ব্যাপারে কিছুটা ভুল করল তারপর সে ঠিকই ফেরীঘাটে চলে এলো ।


ফেরীঘাটে ঢুকতেই টোলপ্লাজা । টোল দিয়ে দোতলা বেশ বড় ফেরীর নীচতলায় আমাদের গাড়ী ঠাই পেল । আমি ছাড়া পরিবারের অন্যান্যরা প্রথম বারের মত ফেরীতে উঠেছে তাই বাকবাকুম অবস্থা । গাড়ী থেকে নেমে দোতালায় উঠলাম । আমাদের দেশের আরিচা-নগরবাড়ী ফেরীর মত খাবারের ব্যবস্থা নেই । ছোট্র একটা দোকান, এখানে বিস্কুট, চিপস, স্যান্ডুইচ বিক্রি হচ্ছে । ক্রেতা ভালই, দোকানী একজন মহিলা । দুরে জর্জ টাউনের ঘাট দেখা যাচ্ছে। বামে বিখ্যাত সেই পেনাং ব্রীজ । জর্জটাউনে ব্রিজের উপর দিয়েও আসা যায়, আবার ফেরীও আছে । আমরা ফেরীতে গিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে ফেরার প্লান করলাম । গাড়ীতে করে বন্দর এলাকা ছাড়িয়ে শহরে চক্কর দিলাম ।

আগষ্ট ২০১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×