আইল্যান্ড হপিং
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পরদিন সকালে আকাশ মেঘলা, অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল । খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হোটেলের জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিলাম । নীচের সুইমিং পুলে বৃষ্টির ফোটা কখন বন্ধ হয় তা অধীর আগ্রহে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম । ভাগ্য তত ভাল ছিল না তবুও রেডি হয়ে নীচে নাস্তা খেতে এলাম । নাস্তা খেতে খেতে ভাবছিলাম যদি বৃষ্টি থেমে যায় । মুসা সময়মত চলে এলো । আবহাওয়া আরো খারাপের দিকে, বাতাসের বেগ ও বেশী । আইল্যান্ড হপিং এর বোট গতকালই ভাড়া করা হয়েছে । একটা বোট চার ঘন্টার জন্য ভাড়া করতে ৩৫০ রিংগিত লেগেছে।
সাগরের ঢেউগুলো বেশ বড় তবে মুসা অভয় দিয়ে বলল কোন সমস্যা হবে না । কে শোনে কার কথা। এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই হয়তবা বেরসিক ক্যামেরাম্যান আমাদের পরিবারের আলাদা আলাদা ভাবে ছবি তুলে নিল ।
যাক অবশেষে বোটে উঠলাম । হালকা বৃষ্টি বাতাস এবং সাগরের ঢেউ। বোটের ভ্রমনকারী আমরা চারজন । বোটম্যান ইব্রাহিম এই দ্বীপের ছেলে । বেশ সুঠাম, বলল কোন সমস্যা নেই । তবে আমাদের ভাবগতিক দেখে বলল ঠিক আছে একটা দ্বীপ দেখে এসো । বাকী না হই নাই দেখলে ।
অবশেষে রওয়ানা হলাম । গাইড আমাদের ভাবগতিক দেখে বলল, ঠিক আছে একটা দ্বীপে আগে চল, পরে ভাল লাগলে অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখা হবে । এই প্যাকেজে চারঘন্টায় তিনটা দ্বীপ দেখা এবং সাগরের পাড়ে ঈগল পাখিদের সিকার বা ঈগল ফিডিং দেখার ব্যবস্থা রয়েছে । স্পীডবোর্ট ঢেউ এর বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছে । হালকা বৃষ্টি, বড় ঢেউ এবং স্পিড বোর্টের ছিটকে আসা পানিতে সবাই বিরক্ত ও আতংকিত । আমি কেন তাদের এই ভ্রমনে আনলাম এই নিয়ে আমাকে দোষারোপ চলছে । কিছুদুর চলতে বৃষ্টি থেমে গেল, সূর্যের মুখ দেখলাম । আহ কি শান্তি । ঢেউ না কমলেও এখন একটু হাসি দেখছি সবার মুখে ।
প্রথমে প্রেগন্যাট মেইডেন দ্বীপে এলাম । এটাকে দেখে মনে হয় একজন প্রেগনেট মহিলা শুয়ে আছে । বহু পর্যটক স্পিডবোর্টে করে আমাদের কাছে দিয়ে যাওয়া আসা করছে । বৃষ্টি ঢেউ তাদের কাছে কোন ব্যাপারই না । আসার পথে অনেক খাড়া ছোট ছোট পাযুরে দ্বীপ দেখলাম । দ্বীপ গুলোর গা মাঝে মাঝে সবুজে ছাওয়া কখনো পাথর বেরিয়ে এসেছে । নীচে মাঝে মাঝে এক চিলতে বিচ কখনো গুহা ও দেখা যায় । আধাঘন্টা বোট রাইড শেষে দ্বীপের জেটিতে এসে বোট লাগল । আমাদের আগে বহু লোকজন এখানে এসে গেছে, কারও যাবার প্রস্ততি চলছে । অনেক লম্বা সিমেন্টের ঢালাই করা জেটি পেরিয়ে মূল দ্বীপে যেতে হয় ।
এই দ্বীপের আশ্চর্য দিক হলো এটার মাঝখানে একটা বিশাল গভীর মিষ্টি পানির লেক আছে । সাগরের লোনা পানি এবং এই লেকের মাঝে দ্বীপের পাতলা পাযুরে দেয়ালই একমাত্র বাধা । অপূর্ব সৃষ্টির এই নিদর্শন । জেটি শেষ হতেই একটু বিশ্রামের জায়গা এবং ওয়াকওয়ে । দ্বীপের বানরগুলো একদিকে ঘোরাঘুরি করে । একটু এগিয়ে গেলে পাথরের সিড়ি । ধাপে ধাপে উপরে উঠে গেছে, মাঝে মাঝে বসার জন্য সেড বানানো আছে । তার পাশে টয়লেট । পয়সার বিনিময়ে টয়লেট ব্যবহারের সুব্যবস্থা আছে । বেশ কিছুক্ষন চলার পর নীচের দিকে নামতে থাকলাম ।
সামনেই বিশাল লেক । গভীর সবুজ পানি, সতর্কবানী লিখা অনেক সাইন বোর্ড । সাঁতার না জানলে যেন পানির কাছে কেউ না আসে এ ব্যাপারে কড়া সতর্কতা রয়েছে । লেকের পানিতে ভাসমান পাটাতন দিয়ে জেটির মত বানানো । অজস্ত্র পর্যটক, কেউ বসে পানিতে পা ডুবিয়ে গল্প করছে, কেউ কৃত্রিমভাবে এই পাটাতনের মাঝে বানানো পুলে বাচ্চাসহ খেলছে । কেউবা বোট চালাচ্ছে । এখানে দুটো শপে ড্রাইভিং গিয়ার । সুইমিং জ্যাকেট, লাইফ জ্যাকেট এবং প্যাডেল বোট ভাড়া পাওয়া যায় । সোলার চার্জার সহ বোটও অনেক আছে । ঘন্টায় ৩০ থেকে ৫০ রিংগিত ভাড়ায় লেকটার আরো গভীরে দুজন মিলে ঘুরে আসা যায় । ঘন্টা খানেক সময় এরই মধ্যে কেটে গেল । সূর্যের আলোর তেজ বেশ এবং বদ্ধ এলাকা বলে এখানে অনেক গরম ।
এবার ফেরার পালা আবার উঠছি সিড়ি বেয়ে । তারপর পাহাড়ের ওপারে যাওয়ার জন্য আবার নামছি । এরমাঝে হঠাৎ মেঘ ডেকে বৃষ্টি শুরু হলো । কি প্রচন্ড বৃষ্টি সাথে বজ্রপাত । সবার মুখ সাদা হয়ে গেলো আরেকবার । এতক্ষণ যে মজা পাচ্ছিল তা নিমেষে হাওয়া । ফেরত যাত্রার দুর্ভাবনায় সবাই অস্থির । বিশ্রাম এলাকায় বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য ঢুকে পড়লাম । কাপড় চোপড় কিছুটা ভিজে গেছে ।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন