somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিলিম নদীপথে কিলিম জিওফরেষ্ট পার্ক

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




লংকাউই দ্বীপে আমাদের প্রথম দিনে সকাল ৯ টার সময় ড্রাইভার মুসা হাজির । মুসার বাড়ী লংকাউইতে, মালয়ী, ইংরেজী বোঝে কম ইশারা বুঝে । আট ঘন্টার জন্য তার গাড়ী বুক করলাম, ৩০ রিংগিত ঘন্টা এটাও টয়োটা এভেঞ্জা সাত সিটের গাড়ী । মুসার দায়িত্ব সে আমাদেরকে লংকাউইর চারপাশে ঘুরিয়ে দেখাবে এবং যত বেশি সম্ভব জায়গায় নিয়ে যাবে । একদিনে সব আকর্ষনীয় জিনিষ দেখা সম্ভব নয় । তাই তার পরিকল্পনা হলো, প্রথম দিন গাড়ীতে আট ঘন্টা ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, রাইড চড়া ইত্যাদি । দ্বিতীয় দিন আইল্যান্ড হপিং, অর্থ্যাৎ স্প্রিড বোটে চড়ে ৩টা দ্বীপে ঘুরে আসা। এই প্যাকেজ চার ঘন্টার । স্প্রীড বোটের ভাড়া ৩৫০ রিংগিত । ৮/১০ জন হলে সবচেয়ে ভাল আর নিজেরা নিলেও একই টাকা । প্রথম দিন একটার দিকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কিলিম জিওফরেষ্ট পার্কে জন্য নিয়ে এলো । ঢুকতেই এলাকা জুড়ে খাবারের দোকান । সুভেনির বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে, সামনে কাউন্টার । নীচে জেটিতে স্প্রীডবোট বাঁধা। এক থেকে চার ঘন্টার জন্য স্প্রীড বোট ভাড়া করা যায় ।



এক ঘন্টার জন্য ২৫০ রিংগিত ২ ঘন্টা ৩৫০ রিংগিত । প্রথমে যেতে ইচ্ছে করছিল না পরে কি মনে করে এক ঘন্টার টিকেট নিলাম । স্পীডবোটে আমরা দুই পরিবার ২ জন বাচ্চা । কিলিম নদী দিয়ে স্পীড বোট ছুটলো । এই এক ঘন্টার প্যাকেজে আছে, ব্যাট কেইভ বা বাদুরের গুহা ফিস র্ফাম, ঈগল ওয়াচিং এবং আন্দামান সাগর ভ্রমন, প্রথমে আমাদের নিয়ে গেল ফিসফার্মে নদীর বুকে বাসমান কুড়েঘর, এখানে বাঁশ, কাঠ ও জাল দিয়ে ছোট ছোট চৌবাচ্চা বানানো। নদীর পানিতেই এই ভাসমান মাছের ফার্ম, বিচিত্র সব প্রজাতির ছোট বড় মাছ । হাংগর ঈলমাছ দর্শকদের জন্য রাখা আছে ।
কাউকে খাবার দিয়ে, কোন মাছকে শদ্ব করে, ডেকে , দর্শকদের দেখানো হয় । বড় বড় শক্ত খোলসের সামুদ্রিক প্রাণী হাতে ধরে ছবি তোলা যায় । সবগুলি কৃড়ে ঘরে একই ব্যবস্থা । অনেক দর্শক একবারে যাতে এগুলো দেখতে পারে তাই একই ধ্রনের ৮/১০ টা এরকম র্ফাম আছে । একটু বৃষ্টি হচ্ছিল তারপরও খারাপ লাগেনি । নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। নদী বেশ গভীর তাই বোটের ড্রাইবার সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিল । ফিস র্ফাম থেকে বের হয়ে কিলিম নদী দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আন্দামান সাগরে পড়লাম । সাগর নদীর সংগম স্থলেও বেশ কিছু দ্বীপ মাথা তুলে দায়িয়ে আছে এবং তারপর কিছুদুরে খোলা দিগন্তে আন্দামান সাগর। আন্দামান সাগর থেকে নদীর দিকে দেখলে খাঁড়িমুখের পাহাড়ে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজীতে লিখা কিলিম জিওফরেষ্ট পার্ক লিখা দেখা যায় । এই পার্কের এলাকার চুনা পাথরের পাহাড়গুলো পানিতে মাথা ফুরে খাড়া ভাবে উঠে গেছে । কিছু কিছু পাহাড় গোলাকার , এগুলোকে সাগরের মাঝে দ্বীপের মত লাগে । পাহাড়ের মধ্যে মাঝে মাঝে অনেক ছোট বড় গুহা । খাড়া পাড় নীচে বিচ নেই । যে গুলোতে একটু জমি আছে সেখানে ম্যানগ্রোভের বন । পাতুরে পাহাড়ের গায়েও সবুজ ঝোপঝাড়, কিছু কিছু জায়গায় শুধু খাড়া পাথরের চাই ্ বিভিন্ন আকারের ছোট বড় এই সব লাইম ষ্টোনের পাহাড় এই জিওফরেষ্টের অন্যতম বৈশিষ্ট । এই এলাকাটা লংকাউই দ্বীপের পুর্বঞ্চলে । এই পার্কে ম্যানগ্রোভ বন ছাড়াও আরো নানা জাতের গাছ ও ফুল দেখা যায় ।

কি বিচিত্র প্রকৃতি, পাথরের গায়ে সবুজ, হলুদাভ ফল ও বৃক্ষ। আন্দামান সাগরের ঢেউ একটু উত্তাল ছিল বৃষ্টির কারনে । কিছুক্ষণ সাগরের ভ্রমন করা যেতো তবে দলে অন্যদের আগ্রহ না থাকাতে গাইড আমাদেরকে একটু ঘুরিয়ে ঈগল পাখি দেখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গেল । এই এলাকাটা ঈগল পাখির অভয়ারন্য । ঈগল পাখি, গুহা এসবই এই লংকাউই দ্বীপের উপকথার সাথে জড়িত । এখানে গারুদা নামের উপকথার পাখির আবাসের গল্প ও প্রচলিত । এই স্ত্রী শ্রেণীর বিশাল পাখির যে কোন জীবিত প্রাণীকে পাথর বানিয়ে দেবার ক্ষমতা ছিল । যদিও সে সব রুপ কথা । তবে পর্যটকদের জন্য এগুলো বেশ রং লাগিয়ে পরিবেশন করা হয় । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছির তাই ঈগলের ওড়াওড়ি বন্ধ । দু চারটা মাঝে মাঝে উড়ে যাচ্ছে । আবহাওয়া ভাল হলে তবে শত শত ঈগল দিনের অণ্যান্য সময় আকাশে উড়ে বেড়ায় । এই ঈগলগুলো আকারে অবশ্য ছোট । বোট থেকে মুরগীর মাংস ছড়িয়ে দিয়ে একটু দুরে সরে গেলে আশে পাশের গাছ থেকে ঈগল পাখি সেই মাংশ খেতে আসে এবং তখন ঈগলের দেখা মেলে । ঈগল দেখা শেষ করে কিলিম নদী দিয়ে ফিরতী পথে বাদুরের গুহার কাছে এলাম । জেটিতে বোট লাগিয়ে বোটম্যান আমাদের ভেতরে ঘুরে আসবে বলল । কাউন্টারে সার্চ লাইট, পাওয়া যায়, ১ থেকে ৫ রিংগিত ভাড়া । পাহাড়ের মাঝে বিশাল অন্ধকার গুহা । গুহার ছাদে বাদুর জুলে আছে । কিছুদুর গিয়ে গুহা সংকীর্ন হয়ে গেছে । প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে কিছুক্ষন যেতে হয় তারপর আবার বড় গুহা। গুহার মধ্যে পর্যটকদের জন্য হাটাপথ, ছবি তোলার জায়গা ইত্যাদি রয়েছে । গুহা দেখে বোটে ফিরে এরাম । প্রায় ৫০/৫৫ মিনিট লাগল সবকিছু দেখতে । আন্দামান সাগরে কিছুক্ষণ বেড়ালে একঘন্টা ভ্রমন হতো । ফিরে আসার পর সবাই এক বাক্যে বলল না দেখেলে মিস করতাম । তবে সূর্য়ের হাসি থাকলে আন্দামান সাগরে ভ্রমন একটু লম্বা হতো ও ঈগল পাখির ঝাাঁক দেখা যেতো । থাক তবুও মন্দ লাগেনি । ক্যামেরার মেমোরী কার্ড ফুল হয়ে যাওয়ায় শেষের কিছু ছবি তোলা হলো না । তবে বোটের চড়ার সময় আমাদের গ্র“প ছবি ২৫ রিংগিত দিয়ে কিনে নিলাম ফেরার পথে । পেশাদার ক্যামেরাম্যান এই সব ছবি দ্রুত ওয়াস করে ফ্রেমে ভরে বিক্রি করে । ভালই কেটে গেল কিলিম নদীর এক ঘন্টার স্প্রীড বোট ভ্রমন ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×