somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়ালালামপুর থেকে লংকাউই -১

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যাগ ব্যাগেজ গুছিয়ে নিলাম । জালাল প্যাটালিং এলাকার এই হোটেল আজই ছেড়ে দিচ্ছি । লংকাউই থেকে ফিরে বুকিত বিনতাং এলাকার হোটেলে উঠব । ঢাকা থেকেই শাহেদ ভাইকে বলেছি হোটেল বুকিং করার জন্য । ইন্টারনেটে বুকিং, কোন সমস্যা হয়নি । শাহেদ ভাই কুয়ালালামপুরে ব্যবসা করেন । আজ তিনিও সপরিবারে বিমানে লংকাউই যাচ্ছেন ।
সকাল ঠিক নয়টায় মোহাম্মদ ট্যাক্সি নিয়ে হাজির । হালকা বিস্কিট খেয়েছি সকালে । বেশী দেরী না করে টেক্সিতে চড়ে বসলাম । ৭/৮ ঘন্টার জার্নি পথেই খেয়ে নেয়া যাবে । সকালে কুয়ালালামপুরে প্রান চাঞ্চল্য ফিরে আসছে । আমরা মারদেকা স্কোয়ার হয়ে শহরের পথে চলা শুরু করেছি । শহর দেখতে দেখতে যাচ্ছি এবং অসম্ভব ভাল লাগছে । এই ভ্রমনটা বিমানে করার কথা ছিল । গাড়ীতে উঠে সবাই একবাক্যে স্বীকার করল বিমানে এমনভাবে দেশ দেখা হতো না এবং এত স্বাধীনতাও থাকত না । শহর থেকে বাইরে বেরানোর পথে টোল দিতে হলো । সবগুলো টোল প্লাজাতে মেয়েরা সুন্দর ভাবে দায়িত্ব পালন করছে । কোন সমস্যা নেই । ভীড় এড়ানোর জন্য মোহাম্মদ জেটিং হাইওয়ের রাস্তা দিয়ে এক্সিট নিল এবং আমরা কুয়ালালামপুর ছাড়িয়ে সেলাংগর প্রদেশে ঢুকে গেলাম । আমরা নর্থ সাউথ হাইওয়ে দিয়ে উত্তরের দিকে যাচ্ছি । এই রাস্তা জহুর বারু থেকে সুরু হয়ে পেরাক প্রদেশের শেষ সীমানা থাইল্যান্ড বর্ডার পর্যন্ত গেছে । এই রাস্তা দিয়ে সিংগাপুর থেকে থাইল্যান্ড যাওয়া যায় । সেলাংগুর প্রদেশের রাজধানী শাহ আলম এই নর্থ সাউথ হাইওয়ে থেকে বেশ দূরে । হাইওয়েতে শাহ আলম যাওয়ার এক্সিট দেখলাম । প্রশস্ত রাস্তা, সুন্দরভাবে সাজানো সাইন পোষ্টিং এবং বিশাল এলাকা নিয়ে এক্সিট সুবিধা । এক কথায় হাইওয়ের সব সুবিধা এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে । কুয়ালালামপুর ছাড়িয়ে জেন্টিং এর পথে ছোট বড় পাহাড় দেখলাম । রাস্তা থেকে দূরে অনেক নির্মান কাজ চলছে । হাইওয়েতে মানুষ চলাচল নেই তবে পাশের জনপদে অল্প মানুষের আনাগোনা দেখা যায় । রাস্তায় মাঝে মাঝে পাম বাগান ও রাবার বাগান । পরিকল্পিত ভাবে এই বাগান করা হয়েছে এবং এখনও এর কাজ চলছে ।


সকালের নাস্তা খাওয়া হয়নি । আমরা একটা রেষ্ট এরিয়ার ভেতর ঢুকলাম । হাইওয়েতে এ ধরনের রেস্ট এরিয়া বানানো আছে । কুয়ালালামপুর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে তাপাহ (ঞধঢ়ধয) নামক জায়গায় এই সুন্দর রেষ্ট এরিয়া । এখানে বাসকিন রবিনস্ এর আইসক্রিম, ম্যাগডোনাল্ডস এবং অন্যান্য অনেক চেইন ফুড শপ আছে । এর সাথেই মালয়ী খাবারের সুন্দর দোকান । মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন মালয়ী খাবার ভাল হবে, সে বলল নাশি আইয়াম তোমাদের ভাল লাগবে । তাকে আমাদের সাথে খেতে বললাম তবে সে শুধু কফি খেল ।
মালয়ীফুড শপে বয়স্ক একজন মহিলা দেখাশোনা করছে । তাকে বেশ সম্ভ্রান্ত বলেই মনে হলো । সাথে দুজন মেয়ে । আমি নাশি আইয়াম দেখতে চাইলাম । সে মুরগী ও ভাত দেখালো । দুটো প্লেট অর্ডার দিলাম টেষ্ট করার জন্য, সাথে বাচ্চাদের জন্য বার্গার । মালয়ী খাবার প্রথম বারের মত খেলাম । ভালই লাগল । পরে আরো অর্ডার দিলাম । প্লেট, গ্লাস, চামচ সব ওয়ান টাইম । এরপর চার অর্ডার দিলাম । চিনি দুধ দিল আলাদা বেশ মজা ।

তারপর বাসকিন রবিনসে গিয়ে আইসক্রিম অর্ডার দিলাম । দাম রিজনেবল । সকালে কেউ নাস্তা খায়নি তাই বেশ তৃপ্তি করে খেল । দুপুরে কেউ লাঞ্চ খেতে পারবে না । নিজেদের গাড়ী থাকায় এটাই সুবিধা যে স্বাধীনভাবে চলা যায় ।
এখানে ফ্রেস হওয়ার জন্য ভাল ব্যবস্থা আছে, একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, গোসল করার জায়গাও আছে, এলাকাটা এ ধরনের ভ্রমনকারীদের জন্য । বহু মালেশিয়ান এখানে এসেছে, পার্কিংলট, গাড়ী বোঝাই, একটা একটা করে গাড়ী এক্সিট দিয়ে বের হচ্ছে । কোন তাড়াহুড়া নেই, হর্নের শব্দ নেই, ধৈর্য্য ধরে তারা হাইওয়েতে যাচ্ছে ।


খেয়েদেয়ে আবার যাত্রা শুরু । এখনও আমরা সেলাংগুর প্রদেশে । রাজধানীর কাছের এই প্রদেশে অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ চলছে । আরো সামনে গিয়ে মূল হাইওয়ে থেকে ডানে বুকিত মিরা রিসোর্ট, ওয়াটার পার্কের বিশাল সাইন বোর্ড দেখলাম । ছুটির দিনে বহু ভ্রমনকরী এখানকার কটেজগুলো দখল করে রাখে । হাইওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলছে । ঈদের ছুটির শেষ দিন হওয়াতে সবাই কুয়ালালামপুর ফিরছে তাই উত্তরে যাওয়ার পথে একটু কম ট্রাফিক ।
চলতে চলতে আমরা পেরাক প্রদেশে ঢুকে গেলাম । আশে পাশে এখন অনেক ছোট বড় পাহাড় দেখা যাচ্ছে । পেরাক প্রদেশের রাজধানী ইপোহ । আমাদের গাইড কাম ড্রাইভারের বাড়ী এই ইপোহ প্রদেশে । সে এখন কুয়ালালামপুরে সপরিবারে থাকলেও বাড়ীতে তার দাদীকে দেখতে যায়। আমাদের সাথের এ ট্রিপে সে প্লান করেছে কয়েকদিন নিজ ্বাড়ীতে থাকবে এবং লংকাউই থেকে আমাদের নিয়ে ফেরত আসবে । পেরাক প্রদেশের পাহাড়গুলোতে বিভিন্ন ধরনের খনি আছে । খনি থেকে নানা প্রকার খনিজদ্রব্য আহরণের কাজ চলছে । কাটা কাটা পাহাড়গুলো বলে দিচ্ছে, এই সব পাহাড় থেকে আহরিত কাঁচামালই মালেশিয়াকে সমৃদ্ধ করছে । নর্থ সাউথ হাইওয়ের পশ্চিম দিকে রাজধানী শহর ইপোহ । দূর থেকে পাহাড়ের উপর বিশাল নিয়ম সাইনে ইপোহ লিখা রয়েছে । রাতের বেলা যাত্রীরা তা অনেক দূর থেকে দেখতে পায় ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×