somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরবিল হয়ে ডহুক

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডহুক শহর
ইরাকী কুর্দিস্থানে অবস্থানকালে কুর্দিস্থানের তিনটি প্রদেশে মোটামুটি ভাল ভাবেই দেখা হয়েছিল। সোলেমানিয়া থেকে ইরবিল হয়ে ডহুক যেতে হয়। ডহুক প্রদেশটি তুরস্কের বর্ডারে। ইরাকের দিকে বর্ডার শহর হলো জাখো এবং তুরস্কের শহর দিয়ারবাকের। দুটোই ছোট শহর তবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ । সাদ্দাম শাসিত ইরাকের সাথে কুর্দিস্থানের রেশারেশির কারণে পোষ্টাল সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। কুর্দিস্থানের প্রবাসী কুর্দিরা স্বদেশে যদিও স্যাটেলাইটের সাহায্যে দ্রুত টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারত,তবে এই মাধ্যম ছিল তুলনা মূলক ভাবে ব্যয়বহুল । আরেকটা উপায় ছিল পোষ্ট অফিসের চিঠিপত্রের মাধ্যমে। কুর্দিস্থানের ভেতর বিদেশীরাও তাদের ডহুক ও জাখোর স্থানীয় অফিসগুলোর মাধ্যমে চিঠিপত্র সংগ্রহ করত। এখানে রমরমা ব্যবসা হলো স্যাটেলাইটের সাহায্যে টেলিফোন পরিচালনা। ছোট ছোট রুমের উপর ডিস এন্টেনার মত এন্টেনা লাগিয়ে টেলিফোনে সারা বিশ্বের সাথে আলাপ চলত। ই মেইল, এস এম এস ইত্যাদি নব্বই এর শেষ দিকেও কুর্দিস্থানে চালু হয়নি। সোলেমানিয়া থেকে তিন ভাবে ডহুক যাওয়া যায়। সোলেমানিয়া হয়ে ইরবিল এবং সেখান থেকে মসুল এর ভেতর দিয়ে ডহুক। এই পথে ইরাকী অথরিটির অনুমতি প্রয়োজন তবে এটা সবচেয়ে ভাল রাস্তা।

ডহুকের পথে
মসুল থেকে ডহুক ৭৩ কিঃ মিঃ দুরে। ডহুক পর্বত মালার শুরুতেই ডহুক শহর। ইরবিল শহরে না গিয়েও ডহুক যাওয়া যায়। সোলেমানিয়া থেকে হিরণ ভ্যালি ও বালিসান ভ্যালি দিয়ে দুটো রাস্তা উপত্যকা ও পাহাড়ী পথে আঁকাবাকা চড়াই উৎরাই হয়ে ডহুকে এসেছে। সকাল বেলা সোলেমানিয়া থেকে রওয়ানা হলাম। এ যাত্রা বালিসান ভ্যালি দিয়ে ডহুকে যাব। দোখান লেক পার হয়ে রানিয়ার পথে বালিসান ভ্যালির রাস্তায় চলে এলাম। পথের দুধারের সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। শীতের শেষে এসব পাহাড় উপত্যকা গুলো সবুজের ভরে যায়। কয়েক মাস পরেই ধুষর শুকনো ও বিবর্ণ হয়ে যাবে এসব এলাকা। বালিসানে আগেও এসেছি। একদিকে পাহাড় আর মাঝের সমতল দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। প্রকৃতি আর পাহাড়ের ধারের গ্রামগুলো দেখতে দেখতে চলছিলাম। রাস্তা এসফন্টের তবে চলাচল ও রক্ষণাবেক্ষণ কম তাই মাঝে মাঝে গর্ত রাস্তার অবস্থা তেমন ভাল নেই । টোটমা ভিলেজ পার হবার পর যাত্রা বিরতি। রাস্তার পাশে থেকেই গাড়ীতে বসে বার্গার ও কোক খেলাম। স্থানীয় কিছু বাচ্চাকাচ্চা আমাদের দেখে ছুটে এলো। তাদেরকে বিস্কিটের প্যাকেট দিলাম কয়েকটা,বেশ হাসিখুশি। টোটমা থেকে কালিফান হয়ে ডহুকের রাস্তায় চলে এলাম। দুপুর একটার সময় আমরা ডহুক থেকে ৮৫ কিঃমিঃ দুরে ছোট্ট গ্রামে থেমে লাঞ্চ করলাম। লাঞ্চ শেষে পাহাড়ী পথে চড়াই উৎরাই পার হয়ে চলা শুরু হলো। রাস্তা ভাল না তাই আস্তে আস্তে ড্রাইভ করতে হচ্ছিল। পাহাড়ী পথে চলতে চলতে দুরে আটরোশ ক্যাম্প দেখলাম। তুরস্ক থেকে বিতারিত কুর্দিরা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। বহুদিন ধরে তারা সব ক্যাম্পে থাকছে। বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর সাহায্যে কোন রকম এ সব ক্যাম্পে মানুষ মানবেতর জীবন কাটাছে। আটরোশ পার হয়ে কিছুক্ষণ পাহাড়ী পথে চলার পর ডহুকের সমতল রাস্তায় চলে এলাম। এখানে জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশীদের বাসায় আমাদের দাওয়াত। ডহুক পাহাড়ী এলাকা তবে এর সমতলে প্রচুর আংগুর, বেদানা ও ফিগ এর ফলন হয়। মোটামুটি সবুজ এলাকা। তুরস্কের কাছে বলে এখানে ব্যবসা বাণিজ্য ও সচল। তাছাড়া তুরস্কের দিয়ারবাকের দিয়ে ফুড ফর অয়েল প্রোগ্রামের তেলবাহী লরী তুরস্কের ভেতরে যায় বলে বাণিজ্য বেশ সরগরম। তুর্কী প্রায় সব প্রয়োজনীয় জিনিষ এখানে পাওয়া যায়। বিকেল বেলা লাঞ্চ সেরে বাজারে বেড়াতে গেলাম। জেনারেটর চলছে বিদ্যুৎ প্রায় সময় থাকে না তাই সন্ধ্যার পর আস্তে আস্তে সব বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় বাসায় বারবিকিউ পার্টি ছিল। কুর্দিরা এ ধরণের বারবিকিউ পার্টি হরহামেশাই করত। করত বলছি কারণ এখন মন্দার কারণে সবার সবসময় সামর্থে কুলায়না । বারবিকিউর সব যন্ত্রপাতি বাজারে প্রচুর পাওয়া যায় দামও বেশ সস্তা।

ডহুক লেক
পরদিন সকালে আমাদের গন্তব্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দুরের জাখো শহর। ডহুক থেকে সুন্দর রাস্তা জাকো চলে গেছে। এ পথে জ্বালানী তেলবাহী লরি চলতে চলতে পিচঢালা পথ তেলে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। সাবধানে চালাতে হয়। উচু নিচু পাহাড়ী পথ বেয়ে প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে জাখো এসে পৌছালাম। জাখো শহরটা ছোট একটু ঘিঞ্জি মনে হলো। সোলেমানিয়া বা ইরবিলের মত খোলামেলা জায়গার অভাব। কুর্দিস্থানের তিনটি প্রদেশের মধ্যে সোলেমানিয়াতে থাকার সুবাদে আমার সোলেমানিয়াই ভাল লেগেছিল। জাখোতে প্রধান আকর্ষণ দেশে কথা বলা। এখানে বেশ সস্তায় স্যাটেলাইট ফোন বুথ থেকে কথা বলা যায়। কথা বলে মনে শান্তি আসার পর শহর ঘুরে দেখার ইচ্ছা হলো। জাখো শহরে তিনটা দেশ একসাথে মিলেছে। সিরিয়া,ইরাক ও তুরস্ক। সিরিয়া সীমান্ত প্রায় ফাঁকা,যতদুর চোখ যায় সমতল, সবুজ ঘাসে ছাওয়া কাটাতারের ছোট বেড়া এবং হলুদের মধ্যে কালো একটা সাইন বোর্ডে আরবীতে সিরিয়ার সীমান্ত কথা লেখা আছে। কোন প্রহরা নেই লোকজন ও কেউ এ পথে যায় বলে মনে হয়নি। অন্যদিকে জাখো থেকে খাবুর নদীর উপর ব্রিজ দিয়ে তুরস্ক থেকে মালপত্র ও মানুষ জন নিত্য আসা যাওয়া করছে। তুরস্কের দিকে বর্ডার গার্ডরা অনুমতি পত্র দেখে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে। বিদেশী কর্মীরা সবাই তুরস্ক হয়ে কুর্দিস্থানে ঢোকে তাই তারা এ এলাকার সাথে বেশ পরিচিত। মালপত্র,তেলবাহী লরী কুর্দিস্থান থেকে তুরস্কে যাচ্ছে আর নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যসব দ্রব্যসামগ্রী তুরস্ক থেকে জাখো দিয়ে কুর্দিস্থানের অন্য শহরগুলোতে আসছে। তুরস্কের সাবান,শ্যাম্পু চকলেট বিস্কিট কি না পাওয়া যায় এখানে। তুর্কী গানের ক্যাসেট ও বাজে জাখোর বাজারে।
জাখোতে দেখার মত বহু পুরাতন প্রাসাদ আছে। জীর্ণ হলেও এগুলো অ্যাসিরিয়ান সভ্যতাকে এখনো কিছুটা জাগিয়ে রেখেছে। জাখোতে সবচেয়ে ভাল লেগেছে আব্বাসীয় ব্রিজ, এটা খাবুর নদীর উপর বানানো। এর বিশেষত্ব হলো এটা পাথর কেটে বানানো ইট দিয়ে তৈরী এবং এখনো মজবুত। প্রাচীন স্থাপত্যের এটা এক অনুপম নিদর্শন। এখন এটার উপর দিয়ে গাড়ী ঘোড়া চলে না তবে পর্যটকরা অনায়াসে এর উপর দিয়ে হাঁটছে। নীচের নদী এখন স্রোতহারা হলেও ব্রিজটি যখন বানানো হয়েছিল তখন স্রোত ছিল বেশ। এখন নতুন ব্রিজ হয়েছে এবং সেখান দিয়ে তুরস্ক যেতে হয়।


আব্বাসীয় ব্রিজ, জাখো

ব্রিজের কাছে দাড়িয়ে ছবি তুললাম। আব্বাসীয় যুগের স্থাপত্যের সাথে একাত্মবোধ করলাম কিছুক্ষণের জন্য । জাখোতে থাকার ইচ্ছে নেই তাই দুপুরে খেয়ে ডহুকের পথে রওয়ানা হলাম। তুরস্ক, সিরিয়া সীমান্তের আলোবাতাসে সিক্ত হয়ে ফিরে চললাম আপন ডেরার পথে।

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×