চামচামাল হয়ে তাকতাক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
তাকতাকের পথে
সোলেমানিয়া শহর থেকে বের হয়ে পশ্চিমে হাইওয়ে বরাবর চলতে চলতেই রাস্তাটা সামনে গিয়ে দুভাগ হয়ে গেছে সোজা পথটা চামচামাল হয়ে কিরকুকের দিকে আর ডানের রাস্তা সোলেমানিয়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরী বাঁয়ে রেখে দোখান লেক হয়ে ইরবিল ও অন্যান্য জনপদের দিকে চলে গেছে। কুর্দিরা কিরকুককে কুর্দিস্থানের অংশ বললেও এটা গভর্নমেন্ট অব ইরাকের অংশ এবং কুর্দি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত নয়। তাই বিনা অনুমতিতে যাওয়া আসা অসম্ভব। বাগদাদ থেকে সরাসরি হাইওয়ে কিরকুক হয়ে সোলেমানিয়াতে চলে এসেছে তবে এ পথে আবার রুট পারমিট নেই, তাই ইরবিল হয়েই সোলেমানিয়াতে আসতে হয়। ডহুক প্রদেশে যাওয়ার জন্য ইরাকের মসুল শহর থেকে যেতে হয় এবং অনুমতি পাওয়া যায় যাওয়ার জন্য। কিরকুক তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানকার তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রতিনিয়ত তেল উঠানো হচ্ছে। চামচামাল পার হলেই রাস্তায় ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড। কুর্দিস্থানের দিকে পিউকে পেসমারগাররা পাহারা দিচ্ছে। সামনে তাকালে নোম্যান্স ল্যান্ড এবং তা পার হলে ইরাকী বর্ডার গার্ডদের চেকপোষ্ট। কোন মানুষ বা গাড়ী বিশেষ অনুমতি ছাড়া সে পথে চলতে পারে না।
চামচামাল ছোট্ট জনপদ কিছু পাকা একতলা ও দোতলা দালান,কিছু মাটির ঘর। ছোট ছোট কিছু দোকান,মাঝারী আকারের মসজিদ এবং কয়েকটা বিদেশী সাহায্য সংস্থার অফিস। অল্প কিছু বাচ্চকাচ্চা উজ্জল লাল নীল জামাকাপড় পড়ে খেলাধুলা করছে। যুবকদেÍ দেখা যায় না। স্থানীয় দোকান গুলোতে বৃদ্ধ লোকজন বসে চা পান করছে সাথে অল্প স্বল্প গল্প। পেশমারগারদের কথা একটু না বললেই নয়। এদের সবার পরনে কুর্দি পোশাক। এই পোশাকের বৈশিষ্ট হলো ঢোলা মোটা কাপড়ের পাজামা এবং উপরের জামা একই সাথে সেলাই করা। মাথায় কুর্দি পাগড়ি পায়ে জুতা বা সেন্ডেল এবং কাঁধে ঝোলানো কালাসনিকভ এবং গুলির বেল্ট। দেখলে প্রথমে হিংস্র মনে হয় তবে কুর্দিস্থানে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হয় যে, তাদেরকে তেমন কখনই মনে হয়নি। তবে যুদ্ধ,গুলি ছোড়াছুড়িতে তাদের সাহস আছে। মাঝে মাঝে দুদলের অন্তর্ঘাতে বেশ আহত নিহত ও হচ্ছে। এরা কুর্দিস্থানের স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত যোদ্ধা। যুবকদের চাকুরী নেই,জীবন চালানো কষ্টের তাই অনেকে পেশমারগার হিসেবে যোগ দিয়েছে, কিছু মাসোহারা পাওয়া যায় সময়ও কেটে যায়। রাস্তা ঘাটে হাট বাজারে এদের সব সময় দেখা যায়। এরা খাদ্যও অন্যান্য রশদবাহী ট্রাক চলাচল চেক পয়েন্ট নিয়ন্ত্রন করে চাঁদা তোলে এবং পিডিকে পিউ্েকর মধ্যবর্তী নিজস্ব বর্ডার পাহারা দেয়। কুর্দিস্থানে ঢুকলেই এই পোশাক পড়া মিলিশিয়া দেখা যায়।
চামচামাল থেকে উত্তরের জনপদের দিকে ঢুকলে অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা যায়। দুদিকে পাহাড় মধ্যখানে সমতল উপত্যকা একদিকের পাহাড়ে গা ঘেষে ও উপত্যকার উপর দিয়ে রাস্তা দু পাশের গ্রামগুলোর সাথে সংযোগ রাখছে। এই রাস্তা চলতে চলতে কাসরাকান গ্রামের কাছে এসে এক অংশ তাকতাকের দিকে চলে গেলে অন্যটি দোখান লেকের দিকে গিয়ে ইরবিল সোলেমানিয়ায় মূল রাস্তায় এসে মিশেছে। চামচামাল থেকে দুপাশের মোজাইকের মত ঘন ও হালকা সবুজ উপত্যকা দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছি। উপত্যকাতে ভেড়া,ছাগল চড়ছে। বৎসরের এ সময় খাবারের কোন সমস্যা থাকে না। ডানের খাড়া পাহাড়ের ছায়া রাস্তায় এসে পড়ছে মাঝে মাঝে। এই পাহাড় পাথুরে, সবুজ কম তবে দুরের বামদিকের পাহাড়গুলোতে সবুজের ছোয়া লেগে আছে। ্িকছু গ্রাম আছে এখানে তবে তা মূল রাস্তা থেকে ভেতরে বলে যাওয়া হয়নি। গ্রামগুলোতে ১০/১২ টা বাড়ী পাথর ও মাটি দিয়ে বানানো ঘর এবং মাঝে মাঝে সিমেন্ট দিয়ে বানানো দেয়াল। খুব সাধারণ সরল জীবন। বামে তাকতাকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই প্রথমে গোপথাপা গ্রাম পড়ে। গ্রাম গুলো মুসলিম প্রধান গ্রামে ছোট একটা মসজিদ,কিছু ছোট ছোট দোকান আছে। চা,সাধারণ বিস্কিট,সাবান এবং নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিষ দোকানে পাওয়া যায়। রাস্তা মসৃণ ছিল এক সময়। এখন মাঝে মাঝে ভাংগা, চলতে চলতে গ্রিডখাবার সাতাকালা,কোয়াসরোক কামিশা গ্রাম পার হয়ে তাকতাক এসে পৌছাই। এটা একটু বড় জনপদ এখানে পাহাড় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা নদীর উপর বড় একটা ব্রিজ আছে। এখান দিয়ে অন্য আরেকটা পথে ইরবিলের রাস্তায় যাওয়া যায় তবে এখন এটা তেমন ব্যবহার হয় না। তাকতাকের চীফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কাকা খান নাসরুদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আমরা ফেরার পথ ধরি। এখন অর্থনৈতিক মন্দা থাকায় তাদের কাজকর্ম কমে গেছে মুখে হাসি থাকলেও চোখের ভাষায় বোঝা যায় অনেক কষ্ট। কর্মক্ষম মানুষ গুলো বেকার, সব জায়গায় জাতিসংঘের সাহায্য সময় মত আসে না। মানুষের অভাব চারিদিকে। এখানেও কিছু কিছু বিদেশী এনজিও কাজ করছে তবে তাদের সাফল্য তেমন চোখে পড়ে না। ফেরার পথে আশকান গ্রামে থেমে গ্রামটা একটু ঘুরে দেখার ইচ্ছা হলো। গ্রামটা বেশ বড় দেড় দুশো পরিবার এখানে থাকে, বড় একটা মসজিদ আছে। এখানে ইউরোপিয়ান কমিউনিটি হিউমেনি টেরিয়ান অফিসের ( ইকো ) একটা ছোট্ট শাখাও আছে। গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়ার সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বেতন দিতে পারছে না তাই শিক্ষক নেই। একদিকে বেকারত্ব,আরেক দিকে শিক্ষার অভাব সব মিলিয়ে মানুষের দুর্দশা বলার মতো না। তারপরও এরা হাসে,খেলাধুলা করে বিদেশীদের প্রতি সদয় এবং বলে চোয়ানী ? কেমন আছেন, উত্তরে ভগ্ন মনে বলি ‘বাসি’ ভাল আছি তু চোয়ানি ? তুমি কেমন আছো উত্তর পাই ‘চাখি’, সারচাও’ ধন্যবাদ তুমি আমার চোখের মধ্যে। হাসিমাখা উত্তর। কিছু না করতে পারার অব্যক্ত বেদনা বুকে নিয়ে ফিরে আসি সোলেমানিয়াতে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন