somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা থেকে সিংগাপুর -২

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যথা সময়ে আমরা সানতোসা আইল্যান্ডে চলে এলাম । ছোট সিংগাপুরের আরো ছোট একটা দ্বীপ অথচ কি সুন্দর ভাবে সাজানো পর্যটকদের জন্য এখানে বীচের আনন্দ নেয়া যায় । গলফ খেলার ব্যবস্থা আছে । ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন যাদুঘর ও এশিয়ান ভিলেজ বানানো আছে । বাটার ফ্লাই বা প্রজাপতির পার্ক একটা মজার জায়গা এখানে গাছে গাছে বহু বর্ণের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে । এখানে সিংগাপুর মেরিটাইম মিউজিয়াম আছে আরো আছে অর্কিড গার্ডেন, হাজার হাজার রকমের অর্কিড ও এর দুষ্প্রাপ্য ফুলের সমাহার । সকালে আসলে সারাদিন থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে । রওয়ানা হতে হতে দুপুর পার হয়ে যাওয়াতে বিকেল বেলা দ্রুত সবকিছু দেখছিলাম । সন্ধ্যায় আমাদের চমকে দেয়ার জন্য আয়োজন ছিল লাইট , সাউন্ড ও পানির সম্মিলিত শো । এটাকে ‘রাইজ অফ সী মারলায়ন’ অনুষ্ঠান বা লেজার ও ওয়াটার শো বলে । সান্তোষা আইল্যান্ডের মারলায়ন এর মূর্তির সামনে বসার সুন্দর জায়গা। সবাই সেদিকে মুখ করে বসে আছে। সন্ধ্যা নাগাদ সারা দ্বীপের পর্যটকরা সবাই এখানে এসে জড়ো হলো অন্ধকার হওয়ার পর পরই মিউজিকের সাথে সাথে মারলায়নের চোখ দিয়ে বিভিন্ন রং এর লেজার রশ্মি বের হয়ে নীচ থেকে উঠা পানির ফোয়ারার উপর বিভিন্ন ধরনের আকৃতি বানাচ্ছিল । সাথে সুন্দর মিউজিক। রং, মিউজিক ও পানির ফোয়ারার বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন দেখতে দেখতে সবাই চুপচাপ উপভোগ করছিল । প্রথমে বেশ কিচির মিচির কথাবার্তা শো শুরু হবার সাথে সাথে সব বন্ধ । আমার পাশে এক চাইনিজ বংশোদ্ভুত আমেরিকান বসেছিল । সে সিংগাপুরে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে বেড়াতে এসেছে । ক্যালিফোর্নিয়া থাকে সাথে তার সিংগাপুরের চাইনিজ মেয়ে বন্ধু । ছেলেটা বলল এখানকার মেয়েরা আমেরিকার মেয়েদের চেয়ে অনেক ফাষ্ট এবং চালাক । এদেরকে সে সামলাতে পারবে না । মেয়ে ব›ধু তার এসব শুনে হাসছে । আমি বললাম তুমিও বেশ চটপটে সে বলল সিংগাপুরে এসে সে কুলাতে পারছে না । ছোট এই দ্বীপে জীবনযাত্রা বেশ ব্যয়বহুল এবং সবাই খুবই ব্যস্ত । লেজার শো দেখার পর সন্ধ্যার অন্ধকারে আর কিছু না দেখে ফিরে যাওয়া ঠিক করলাম । বাস ষ্টপেজ এ চলে এলাম সেখান থেকে বাসে করে সান্তোষাকে বিদায় জানালাম ।

জুরং বার্ড পার্কে কিছুক্ষণ ঃ ট্যাক্সিতে করে জুরং বার্ড পার্কে এলাম। ঢুকতেই টিকেট কাউন্টার । কাউন্টারের পাশে স্যুভেনির শপ। ক্যাপ , গেঞ্জি খেলনা পাখি,ভিউ কার্ড কিনতে পারা যায় এখানে । দাম একটু বেশী। টিকেট দেখিয়ে প্রথমে পেঙ্গুঁইন পাখি দেখতে গেলাম। গরমের দেশ সিংগাপুরে। মেরু অঞ্চলের পেঙ্গুঁইন দেখার অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য এখানে ভীড়ও বেশী । পেঙ্গুঁইন দেখে প্যানো রেল ষ্টেশনে এলাম । উপর দিয়ে ট্রেন চলছে । একটা সার্কিটে সব জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায় ট্রেনে চড়ে । ষ্টেশনে সবাই লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে। সিট ক্যাপাসিটি অনুযায়ী গাড়ীতে লোকজন উঠছে , ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে । ট্রেনে রানিং কমেন্ট্রিতে আশে পাশের পাখিদের সম্বন্ধে ধারণা দিচ্ছে ইংরেজীতে । ট্রেনের গতি বেশ আস্তে এবং সবকিছু একটা চক্কর দিয়ে দেখে এলাম । এরপর ভেতরের ফুড কর্ণার থেকে খাবার কিনে খেলাম । এসব দোকানে পানি,পানীয় ও হালকা খাবার পাওয়া যায় । বসে খাবার ব্যবস্থা আছে ।

জুরং বার্ড পার্কের মজার অনুষ্ঠান দেখার সময় প্রায় হয়ে গেল । ১১ টার সময় পুল অ্যাম্ফি থিয়েটারে অলষ্টার বার্ড শো হয় । অদ্ভুত এক অনুষ্ঠান । খোলা গ্যালারীর নীচে ট্রেনার , উপরে ক্যানভাসের ছাদ । হরেক রকমের পাখির বিভিন্ন রকমের খেলাধুলার ব্যবস্থা । ট্রেনার ডাক দিচ্ছে পাখি আসছে , পাখি সাইকেল চালাচ্ছে, শিকার ধরছে ,বিভিন্ন ধরনের খেলা করছে । প্রায় ১০০ রকমের পাখি এখানে বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখায় এক কথায় শ্বাসরুদ্ধকর এবং সময় যে কখন কেটে যায় বোঝাই যায় না । পাখি ট্রেনারের হাতে বসছে ,দুরের লক্ষ্য বস্তুতে আদেশ অনুযায়ী ঘুরে আসছে , আরো হরেক রকমের খেলা । প্রায় ৩০ মিনিট খেলা দেখলাম । দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক এখানে পাখির খেলা দেখতে এসেছে । গ্যালারী প্রায় ভর্তি । অনুষ্ঠান শেষে সবাই বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে বেরিয়ে যাচ্ছে । হাতে ম্যাপ নিয়ে আমরাও বেরিয়ে পড়লাম । পার্কের ভেতর লেকের মধ্যে হাঁস,রাজ হাঁস সাঁতরে বেড়াচ্ছে । আরো আছে কথা বলিয়ে পাখি । বিভিন্ন ধরনের কথা বলে । বক,কবুতর,টিয়া,শিকারী পাখি যেমন বাজ,ঝুটিওয়ালা কবুতর ,কাঠ ঠোকরা,কিং ফিশার (মাছরাঙা ) সোড বার্ড ,আরো অজস্র পাখি । যে সমস্ত পাখি উড়তে পারে না । তাদেরও একটা সংগ্রহ আছে এই পার্কে । ঘুরে ঘুরে দেখলাম । কৃত্রিম বনের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলা পথ। ম্যাপ দেখে হেঁটে হেঁটে একটা চক্কর দিলাম । জুরং বার্ড পার্ক ভ্রমন প্রায় শেষ পার্যায়ে ৪/৫ ঘন্টা কিভাবে যে কেটে গেল টেরই পাইনি । দুপুর নাগাদ বের হয়ে পরবর্তী গন্তব্যের পথে বার্ড পার্ক ছাড়লাম । এত সুন্দর করে সাজানো ও উপস্থাপন আমাকে মুগ্ধ করেছিল আশাকরি আপনারাও অবাক ও মুগ্ধ হবেন সেখানে গেলে , প্রকৃতি বা পাখি প্রেমি হলেতো কথাই নেই ।

সিংগাপুর ভ্রমণকালীন মোস্তফা শামসুদ্দীন ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের কথা না বললে হয়ত ভ্রমন কাহিনী অসম্পুর্ণ থেকে যাবে । এই বিশাল ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর সেরাংগুন প্লাজায় । এই জায়গাটাকে লিটল ইন্ডিয়াও বলা হয় । নামের সাথে এর মিল অনেক । এখানে আসলে মনে হবে ভারত বা বাংলাদেশের কাছাকাছি । আমাদের মত মানুষের ঢল। দোকানীরা ভারতীয় বংশোদ্ভুত। একটু দরিদ্র এলাকা। সেরাংগুন এলাকা সিংগাপুরের মধ্যে মোটামুটি সস্তা এলাকা, ভারতীয় মানুষগুলোর জন্য এই ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর তবে সব দেশের পর্যটক এমন কি সিংগাপুরের হাজার হাজার মানুষ এখানে কেনাকাটা করে । কি না পাওয়া যায় এখানে । স্বর্ণ অলংকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বাচ্চার খেলনা,বই খাতা ও ষ্টেশনারী ,যা চাই তাই একটু ঘুরে দেখলে মিলবে। বিশাল আয়োজন। আশেপাশে ভারতীয় খাবারের দোকান আছে । দোসা ও কোক দিয়ে এখানে দুপুরের খাবার খেলাম ,ঘুরতে ঘুরতে পিপাসা লাগে তাই পানির বোতল সাথে রেখেছিলাম। এই ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের কলেবর এখন অনেক বেড়েছে। তবে আগেও বেশ বড় ছিল । চকলেট খেলনা ও কয়েকটা নিজস্ব ব্যবহারের জিনিষপত্র কিনলাম। এখান থেকে বাসে করে জুরং বার্ড পার্কে যাওয়ার কথা ছিল উল্টোদিকের বাস ষ্টেশনে বাসে উঠায় গোটা সিংগাপুর ঘুরে সেখানে গেলাম । একটা ভাল শিক্ষা হলো ও প্রায় ১ ঘন্টার বেশী সময় নষ্ট হলো । ড্রাইভারটা কেন যেন সহযোগিতা করেনি । তবে বুঝলাম লোকাল লোকজন চায় যে পর্যটকরা ট্যাক্সি বা উপরের ট্রেন দিয়ে যেন ভ্রমন করে এতে দেশের লাভ । বাস সার্ভিস স্থানীয়দের জন্য। এ গুলোতে ভাড়াও অনেক কম । যাক ভুল করে গোটা সিংগাপুরের অনেক জায়গা বাসে বসে দেখা হয়ে গেল যা টেক্সিতে কখনো দেখা যেত না । এবার আর ভুল না করে সঠিক বাস নিয়ে আবার সেরাংগুনে ফেরত এলাম ।

সিংগাপুর অবস্থানের মেয়াদ শেষের দিকে প্রায়। সবাই মিলে সিংগাপুর ম্যাগডোনাল্ডস এ খেতে গেলাম। এখানে সব আন্তর্জাতিক ফুড চেইন গুলো আছে । এশিয়ার মধ্যেই সব পশ্চিমা স্বাদ সিংগাপুরে পাওয়া যায় । যাওয়ার দিন টেক্সি নিয়ে যথাসময়ে চাংগি বিমান বন্দরে এলাম । সুন্দর ভাবে সিংগাপুরের দিনগুলো কাটিয়ে দেশের ছেলে বিমানে করে আবার প্রিয় বাংলাদেশে ফিরে এলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×