somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরাফাত থেকে মুজদালিফা- মিনা -৩

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরাফাত থেকে মুজদালিফার পথে ও মুজদালিফাতে রাত্রিবাস
আরাফাতের ময়দান থেকে মুজদালিফা তেমন একটা দুরে না ৫/৬ কিলোমিটার হবে । তবে রাস্তায় গাড়ীর জ্যাম এর কারণে অনেক সময় লেগে যায় । আরাফাত থেকে ভাল বাস পাওয়া যায়নি । মনে হয় নন এসি বাস বা এসি ভাল কাজ করছিল না । সূর্যাস্তের বেশ পর আমরা রওয়ানা হলাম। মাগরেব ও এশা মুজদালিফাতে গিয়ে পড়তে হয় । মুজদালিফার মায়দানে প্রচন্ড ঠান্ডা । রাত প্রায় ১১ টার পর আমরা পৌছালাম । ২ বাসের যাত্রীরা আলাদা হয়ে গেল। অন্ধকার ঠান্ডা অচেনা জায়গা সব মিলিয়ে অন্য রকম অবস্থা। এহরামের কাপড় পড়া, এক রাস্তার পাড়ে নামলাম সেখান থেকে নীচে পথের উপর থাকার জায়গা নীচে কংকর ও পিচের রাস্তা। ঠান্ডায় জমে যাবার দশা, দাঁত কপাটি লাগে গা কাঁপে । হজ্জ ম্যাট এর ব্যবহার এখানে অতি প্রয়োজনীয়। ম্যাট বিছালাম বাকী সব কাপড় এহরামের কাপড়ের উপর দিয়েও শীত কমেনা। প্রথম কাজ হলো ওজু করা দুরে টয়লেট অচেনা পথ । ওজু করে পথ হারিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরলাম । আম্মু ও মানসুরাকে এক জায়গায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলাম । ঠান্ডা বাতাসে ওঁনারা কাৎ হয়ে গেছেন । আম্মু একটু অসুস্থ । খাবার কোথাও নেই ক্ষিধা লেগেছে । হঠাৎ খবর পেলাম দুরে ভাত ও কারী দিচ্ছে হাজীদের জন্য। সেখানে গিয়ে ৩ প্লেট খাবার আনলাম । আম্মু ও মানসুরা খেলনা । গরম ভাত শব্জী দিয়ে ভালই লাগল ।
মাগরিব ও এশা পরে ৭টা করে কংকর জোগাড় করলাম তারপর শুয়ে পড়লাম । ঠান্ডায় ঘুম আসেনা । দোয়া দুরুদ পড়ছি । রাত ৪ টা ৩০ এর দিকে ঘুম ভেংগে গেল । ছোট ভাই ফোন করল আমেরিকা থেকে। আম্মুর অবস্থা কাহিল । আমি ঠকঠক করে কাঁপছি । হাড় হাড্ডি সব কাঁপছে । বাথরুম ও ওজু করতে গেলাম । ল¤¦া লাইন । তবে গরম পানি আছে । কাপড় এ ছিটা লাগছে আল্লাহ মাফ করে দিবেন । ফজরের নামাজ আমরা লোকালভাবে জামাতে পড়লাম । সকাল হয়নি তখনও । আলো উঠার পর ময়দান ছেড়ে মিনায় যেতে হয়। মাওলা ভাই সকালে এসে আমাদেরকে আমাদের তাঁবুর দিকে নিয়ে রওয়ানা করল । আম্মুর পায়ের ব্যাথার কারণে আস্তে আস্তে হাঁটছেন । ব্যাগ বেশী হয়ে গেছে । অনেক পথ হেঁটে আমরা তাঁবুতে পৌছালাম । শীত যেন উধাও রাতের শেষে । ভাগ্য ভাল আমরা আমাদের তাঁবুর বেশ কাছেই ছিলাম। মীনায় এসে মনে হলো একটু আস¦স্থ হলাম । তবে মুজদালেফার জন্য ক্যাম্পিং এর তাঁবু পাওয়া যায় । ওগুলো ১ টা কিনলে আমরা সুন্দরভাবে থাকতে পারতাম । ভবিষ্যতে আল্লাহ তৌফিক দিলে ইনশায়াল্লা সে ব্যবস্থা করা যাবে । মুজদালিফার রাত্রি শেষে সকাল হলো । হে আল্লাহ তুমি সহায় আমিন।
৩০ ডিসে¤¦র ২০০৬ (শনি বার), আরাফাত ও মুজদালিফায় রাত কাটিয়ে মীনায় আবার ফিরে আসলাম একই তাঁবুতে । সকাল ৬ টার দিকে মাওলা ভাই আমদেরকে মুজদালেফা থেকে মিনার তাঁবুতে নিয়ে আসল । মুজদালিফা থেকে হেঁটে সকাল বেলা মিনার তাঁবুতে এসে পৌছালাম। আবার আগের জায়গায় । এখানে এখন ২ রাত ৩ দিনের মত থাকতে হবে । সকাল বেলা ফযরের নামাজ পড়ে রেডি হলাম বড় শয়তানকে পাথর মারার জন্য । হালকা বিস্কিট খেয়ে রেডি হলাম জমরাতে পাথর মারতে যাওয়ার জন্য । রাতে ৭ টা পাথর কালেক্ট করেছিলাম । যেতে যেতে ০৯৩০ বেজে গেল । বড় শয়তানকে পাথর মারলাম ভীড় ছিল । নীচ তলাতে পাথর মারলাম আমরা ৭ জন । সহনীয় ভীড় । আলহামদুলিল্লাহ । ১১১০ এ তাঁবুতে এলাম । লাঞ্চ করলাম । ৪ রিয়েল দিলাম চুল কাটার জন্য । দুপুর বিকাল জোহর ও আছরের কছর নামাজ পড়লাম মাগরেবের পর পাথর কুড়াতে গেলাম । জমরায় পাথর মারার পর মসজিদে খায়ফ এ ২ রাকাত নামাজ পড়লাম । তারপর রাতে ঘুম দিলাম । দিনটা ভালই কাটল আল্লাহর রহমতে ।
আগে যখন মিনায় ছিলাম তখন দিনের বেলা হেঁটে হেঁটে ওই জায়গাটার এন্ট্রি পয়েন্ট দেখে এসেছিলাম । এরপর দলের ৫ জন রওয়ানা হলাম । আমি ২১ টা পাথর নিলাম ৩ জনের । আম্মু ও মানসুরা আজ গেলনা আগে শুনেছে পাথর মারতে গিয়ে পিষে মারা যায় তাই অনেকে ভয়ও পেয়েছে । বিসমিল্লাহ বলে রওয়ানা হলাম । ইহরাম এর কাপড় পড়া । হাঁঁটতে হাঁটতে পথ শেষ হয়না শেষ পর্যন্ত নীচের টানেল দিয়ে জমরাতে পৌছালাম। এটাই পাথর মারার স্থান । এখন অত্যন্ত সুন্দর করেছে । স্তম্ভ চওড়া হয়েছে । অনেকগুলো এন্ট্রি ও এক্সিট আছে । তারপরও মানুষ উত্তেজিত হয়ে পাথর মারে । আজকে দেখলাম একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় পাথর মারা যায় । আজ বড় শয়তানকে পাথর মারা হলো ৭টা । তারপর আবার হেঁটে মীনায় এলাম । নুর মোঃ কাকা ১১টার দিকে কোরবানের খবর দিল, ১ টার দিকে চুল চেঁছে ফেললাম তারপর গোসল করে ইহরাম এর কাপড় খুলে ফেললাম। আলহামদুলিল্লাহ । হজ্জ এর একটা পর্যায় শেষ । বিকেল বেলা ঘুরতে বের হলাম মিনার আশে পাশে । এর মধ্যে চা কিনে খাওয়া চলল । তাবুতে মোয়াল্লেমের দেওয়া খাওয়া দাওয়া মাঝারী মানের । দেশ ভেদে টাকা ভেদে অবস্থান, খাওয়া, আলাদা । সবাই কার্ড দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে । বাইরের লোকজন আসা নিষিদ্ধ। ২/১ বার গোয়েন্দা চেকও হলো। বাইরের কেউ অনুমতি ছাড়া হজ্জ করতে এসেছে কিনা দেখার জন্য । নামাজ কলেমা ইবাদাত তাঁবুর ভেতরেই।
৩১ ডিসে¤¦র ২০০৬ (রবি বার) , সকাল ০৯৩০ এর দিকে পাথর মারার জন্য আমরা ৬/৭ জনের গ্র“প বের হলাম । আজ ২১টা করে পাথর মারতে হবে ৩ শয়তানকে । বড়, মাঝারী, ছোট, ৫ কিঃ মিঃ রাস্তা । পথে মাঝে মাঝে পানি খেলাম । ট্যাপ আছে ঠান্ডা পানির । আল্লাহর রহমতে ৩ শয়তানকে ভালভাবেই কংকর মারলাম। তারপর পাথর মারা শেষ করে ফেরার পথে আলবাইক থেকে চিকেন কিনলাম। এরপর নতুন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁঁটতে পথ হারালাম । পথে ১ জনকে হারিয়ে ফেললাম। কোক কিনা হলো পথে দোকান থেকে । রোদের তাপ বেশ ছিল । তাঁবুতে এসে গোসল ও রেষ্ট । বিকেলে ছবি তুললাম কিছু , আজ রাতে মক্কা গিয়ে হজ্জের তাওয়াফ । রাতে সব প্যাক করে ১১ টার দিকে বাসে উঠলাম জনপ্রতি ১০ রিয়েল দিয়ে বাস ভাড়া করলাম আমরা মক্কা পৌছালাম রাত ১২ টায় । আবার মক্কায় ফিরে আসতে ভাল লাগল । এরপর জিনিষপত্র হোটেলে রেখে হজ্জের তাওয়াফ করলাম । শেষ করতে করতে ৪ টা বেজে গেল । সাথে সাঈ ও আছে । এর পর রুমে এসে একটু ঘুমালাম । সকালে আবার মক্কা থেকে মিনায় গিয়ে ২য় দিনের পাথর মারতে হবে শয়তানকে । আজ আমিই যাব । যাক আল্লাহ ভালভাবে সবকিছু শেষ করতে সাহায্য করলেন আমিন ।
০১ জানুয়ারী ২০০৭ (সোম বার) , ০৯৩০ এ উঠলাম। তারপর ১০ টায় অযু করে মিনায় পাথর মারতে গেলাম ৪ জন। ২০ রিয়েল করে জনপ্রতি ভাড়া, মাইক্রোবাস নিয়মিত যায় মক্কা থেকে। আল্লাহর রহমতে শান্তিমত পাথর মারলাম । আলবাইক থেকে চিকেন নিলাম । এর পর বিভিন্ন ট্রাক থেকে গিফ্ট নিলাম, পানি ও প্যাকেট। তারপর টানেল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মক্কা শরীফে পৌছালাম । বাসায় এসে গোসল করলাম ফ্রেস হলাম । তারপর লাঞ্চ করে আছর নামাজ। মাগরেব ও এশা মক্কা টাওয়ারে পড়লাম মানসুরার সাথে। বিকেলে আছর এর নামাজ হেরেমের চত্বরে পড়লাম।


শয়তানকে পাথর মারা -মিনা থেকে

মীনা ক্যাম্প
মুজদালিফা থেকে মীনায় আগের তাঁবুতে আসলাম । আগের জায়গায় । সকালে নাস্তা খেলাম । চা কিনে আনলাম বাইরে থেকে । এহরাম এর কাপড় পড়া । ৭/৮ টার পর জমরাতে পাথর মারার জন্য আমরা কয়েকজন তাঁবু থেকে বের হলাম । আজ বড় শয়তানকে ৭টা পাথর মারতে হবে । তারপর কোরবান করে মাথা মুন্ডন করে এহরাম এর কাপড় খুলতে হবে । ৫/৬ জন মিলে বের হালাম সবাই একত্রে পাথর মারার জন্য যাচ্ছে । সূর্য হেলে পড়ার আগে মারতে হবে । বেশ অনেক পথ ৪/৫ কিলোমিটার হবে । প্রচন্ড ভীড় । আস্তে আস্তে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি । দুই তিনটা রাস্তা পাড় হয়ে অবশেষে জমরার নীচ তালার টানেলে ঢুকলাম । হাজীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে জমরা এখন ১০ তালা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে । আপাতত দুই তালা সম্পূর্ণ হয়েছে । সম্পূর্ণ আলাদা পথে ১ তালা ও দোতলার হাজীরা সেখানে যায় । কারো সাথে দেখা হবার বা জায়গা বদলের সম্ভাবনা নেই । আস্তে আস্তে আগাচ্ছি । একজন আরেক জনের হাত ধরে রেখেছি ।

জমরা, মীনা
হঠাৎ পাথর মারা শুরু হলো । সবাই যেন আবেগ তাড়িত । কাছাকাছি যারা তাদের মাথার উপর পাথর লাগছিল পেছনে থেকে যারা পাথর মারছিল । আমরা দেখলাম দুই প্রান্তে ফাঁকা এবং ঐখানে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে পাথর মারা যায় । ততক্ষণে আমার ৩ জনের জন্য ২১ টা মারা শেষ । পরবর্তী দিনগুলোর জন্য এটা কাজে লাগবে। তারপর ফিরে আসছি ।

মসজিদে খায়ফ
আসার পথে মসজিদে খায়ফ এ ২ রাকাত নামাজ পড়লাম । এটা জমরার কাছে । পাথর মারার জায়গা বেশ প্রশস্ত । শয়তান স্তম্ভের সাইজ অনেক বড় হয়েছে এবং অনেক লোক এখন একসাথে পাথর মারতে পারে । বেশী চাপ হলে দুই দিকে সরে যাওয়ার সুযোগও আছে । মোট কথা এখন আল্লাহর রহমতে শান্তিমত পাথর মারা যায় । তবে আতংক ছড়ানো হয় যে পাথর মারতে গেলে মারা যায় তাই অনেকে নিজে যায় না কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দেয় । আসলে কাজটা এখন বেশ সোজা । ১১-১০ এর দিকে তাঁবুতে পৌছালাম শুনলাম যে আমাদের কোরবানী ১১ টায় হয়েছে । মোবাইল এ নুর মোঃ কাকার থেকে খবর পেলাম । দুপুরে খেয়ে ৪ রিয়েল দিয়ে মাথা কামালাম। তারপর গোসল করে ইহরাম এর কাপড় খুললাম । এখন থেকে প্রায় সব কিছু আমাদের জন্য হালাল । দুপুরে নামাজ পড়ে বিকেলে একটু ঘুরলাম আশপাশের এলাকা । পরের দিনের জন্য পাথর কুড়ালাম ২১ টা করে ৩ জনের ৬৩ টা । রাতে গল্প দোয়া দুরুদ নামাজ । দিনটা কেটে গেল একরকম। পরদিন ভোরে ফযরের নামাজ পড়লাম তাঁবুতে । তারপর নাস্তা খেয়ে আমরা আস্তে আস্তে রেডি হলাম দুপুরের পর পাথর মারতে হয় আমরা রওয়ানা হলাম । আজ মানসুরা সাহস করে বলল আমাদের সাথে যাবে, ওকে সাথে নিলাম । হাঁটতে হাঁটতে বেচারী প্রায় টায়ার্ড। পথে ২/১ বার দাড়িয়ে কল থেকে পানি খেলাম আজও নীচ তলায় গেলাম । মানসুরা ও আমরা একসাথে থেকে ভালভাবে পাথর মারলাম । ভীড় তেমন বেশী ছিল না । আমাদের একটু সময় লাগল কারণ আমাদের দলের ২/১ জনকে হারিয়ে ফেলেছিলাম । পরে ফেরার পথে আলবাইক থেকে চিকেন ফ্রাই কেনা হলো । পথ হারালাম একবার । সঠিক তীর/এ্যারোমার্ক না দেখে আগালেই পথ হারানো সহজ। আবার ঘুরে ফিরে নিজেদের পথে আস্তে আস্তে চিকেন খেতে খেতে তাঁবুর দিকে রওয়ানা হলাম । পথে কোক খাওয়ালো একজন সাথীভাই। জোহর, আছর, মাগরিব ও এশা সব তাঁবুতে। আজ আমাদের কাফেলার সবাই ঠিক করল রাত ১২ টার পর মক্কা চলে যাবে এবং কাল মক্কা গিয়ে তাওয়াফে এফাদা ও সাঈ করবে। এগুলো হজ্জের অংশ । রাতে বাসে করে মক্কা এলাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হলো । যা আগে লিখেছি । এই দিন তাওয়াফে অজস্র মানুষ সোবহানাল্লাহ এত মানুষ কোথা থেকে যে আসে । তবুও জায়গা হলো । আল্লাহ ভুমিকে প্রশস্ত করে দেন । পরদিন ঘুম থেকে উঠে ১১/১২ টার দিকে রওয়ানা হলাম আমরা ৩/৪ জন । হেরেম শরীফ এর পাশে মীনা যাওয়ার জীপ, মাইক্রো ইত্যাদি আছে । আমরা জনপ্রতি ২০ রিয়েল দিয়ে উঠলাম মাইক্রোতে। মাইক্রো নতুন এক জায়গায় থামল । আমরা সেখান থেকে জমরাতে গেলাম । সুন্দরভাবে পাথর মারা সুসম্পন্ন হলো। আমিন । ফেরার পথে সিদ্ধান্ত নিলাম টানেল দিয়ে হেঁটে ফিরব । তীর চিহ্ন ধরে টানেলের খোঁজে চলছি । পথে পানি ও তবরুক বিতরণ চলছে কিছু নিয়ে নিলাম । টানেলের পথ বেশ সুন্দর । এপ্রোচ আছে, উপরে টিনের ছাউনি এরপর টানেলের পথ । বেশ কয়েক মাইল ল¤¦ায় । টানেল এর শেষ প্রান্তে এসে একজন জুস খাওয়ালো। হাজীদের জন্য তবরুক। রসুল (সঃ) এর বাড়ীর কাছে এসে টানেল শেষ । জমজম এর পানি খেলাম নামাজ পড়লাম। টানেলকে আরবীতে নাফাক বলে । দুইটা মুখের কারণে । মুনাফিক থেকে নাফাক । রুমে এসে গোসল । আল্লাহর রহমতে হজ্জের সব করণীয় কাজগুলো সুসম্পন্ন হলো । হে আল্লাহ তুমি সহায় । আমিন ।
০২ জানুয়ারী ২০০৭ (মঙ্গল বার) ,সকালে নামাজ বাইরে পড়লাম ভেতরে মানুষ এর অনেক চাপ। দুপুরে জোহরের নামাজ হেরেম শরীফে পড়লাম। ২/৩ দিনের কাযা নামাজ পড়লাম। আছর রাস্তায় পড়ে একটু মার্কেটিং করা হলো । মাগরেব ও এশা মক্কা টাওয়ারে পড়লাম। এশার পর ডিনার করে মার্কেটিং করতে বের হলাম। বেশ কিছু জায়নামাজ ও অন্যান্য গিফ্ট কেনা হলো । রাত ১২ টায় ঘুমালাম। বায়তুল্লাহ দেখা হলো আজ।
০৩ জানুয়ারী ২০০৭ (বুধ বার) , সকালে বাইরে ফযরের নামাজ তারপর ঘুমালাম । কিছু গোছানো হলো ফিরতি ভ্রমনের জন্য । দুপুরের যোহর মক্কা টাওয়ারে । এশার পর ব্যাগগুলো গোছালাম ।
০৪ জানুয়ারী ২০০৭ (বৃহস্পতি বার) , ফজরের নামাজ রাস্তায় পড়লাম । ৯ টায় আমরা বিদায়ী তাওয়াফ করতে রওয়ানা হলাম । ১০:৪৫ এ শেষ হলো । অনেক মানুষ। নাস্তা চা ও পরোটা খেলাম কিনে । আমি হোটেলে না গিয়ে মাতাফ এ বসে গেলাম । কাবার দিকে তাকিয়ে দোয়া করলাম। জোহর সেখানে পড়লাম আলহামদুলিল্লাহ । আছর রাস্তায়, মাগরেব রাস্তায় ও এশা মক্কা টাওয়ারে। রাতে ইনশায়াল্লাহ মুভ হবে ১২ টার দিকে । ১ টার দিকে জানলাম ফ্লাইট কেন্সেল ।
০৫ জানুয়ারী ২০০৭ (শুক্র বার) , সকালে ফযর রুমে । ঘুমালাম অনেকক্ষণ । নাস্তা ও লাঞ্চ এক সংগে বিরিয়ানি দিল। যোহর মক্কা টাওয়ারে । আছর, মাগরেব রাস্তায় । এশা মক্কা টাওয়ারে । রাতে ১০৩০ সবাই মিলে বায়তুল্লাহ গেলাম। কাযা নামাজ ও আল্লাহর ঘর দেখে ১২ টায় রুমে । ঘুমাতে ঘুমাতে ১ টা বেজে গেল । দিন বাড়াতে এবাদত হলো । হে আল্লাহ আমরা আপনার হেফাজতে । আজ সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলো । মাগরেব নামাজের সময় ও এশাতে । মাগরেব রাস্তায় পড়াতে আমরা হালকা ভিজলাম ।
০৬ জানুয়ারী ২০০৭ (শনি বার), যোহর, আছর মক্কা টাওয়ারে পড়লাম । মাগরেব ও এশা মসজিদে পড়লাম । তারপর রুমে এসে ঘুম। দিনটা ভাল ভাবেই কাটল আল্লাহর রহমতে ।
০৭ জানুয়ারী ২০০৭ (রবি বার), আজ আব্বুর মৃত্যু বার্ষিকী । সকালে ফযর ,তারপর জান্নাতুল মোআল্লাম এ গেলাম । ৮ নং প্লট ৬৯ নং কবর । যিয়ারত করলাম । তারপর তাওয়াফ করলাম । দুপুরে নামাজ বাইরে পড়লাম । আছর দোতলায় । কাবা দেখে রুমে এলাম । কিছু মার্কেটিং করলাম আজ । শুনলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য জেদ্দা যেতে হবে। মাগরেব এর পর লাগেজ গুছানো হলো । রাতে বাইরে নামাজ । এশার পর দুর থেকে কাবা দেখে দোয়া করলাম ।
০৮ জানুয়ারী ২০০৭ (সোম বার), জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার কথা রাত ১০ টার দিকে । মালপত্র অনেক হয়ে গেছে ৩/৪ টা বাসে আমরা যাচ্ছি । মালপত্র উল্টাপাল্টা বাসে উঠেছে । যাক ১১-৩০ এ রওয়ানা হলো শেষ পর্যন্ত । শেষ রাতে জেদ্দা এয়ার পোর্টে । প্রচন্ড বাতাস ঠান্ডা । ভোরে ফজরের নামাজ পড়লাম । চা আনতে অনেক দুর যেতে হলো । আনতে আনতে ঠান্ডা । বিমান কবে আসবে তা অনিশ্চিত । সবারই কাশি ও ঠান্ডা লেগে গেল । সকালে নাস্তা দিল বিমান থেকে দিয়েছে। হাজীরা ঝগড়া করছে মোয়াল্লেমের সাথে। বসে রইলাম সারা সকাল । দুপুরে কুপন দিয়ে খাওয়া । দুর থেকে খাওয়া নিয়ে আসলাম । পছন্দমত খাওয়া আগেইশেষ । মানুষের স¦ার্থপরতা দেখলাম । মাওলা হাজীদের টাকা নিজের মত নিয়ে নিতে চায় । আমারটা দিয়ে দিলাম আল্লাহর ওয়াস্তে । এও এক আজব কারবার ।
বিকেলের দিকে মালপত্র বিমান এর হাওলা করে দিলাম । ওজন কিছুবেশী ছিল । ২/৩ জন মিলে এ্যাডজাষ্ট করে দিলাম । রাত ১০ টার দিকে আছর পড়ে মসজিদে (এয়ারপোর্টের নামাজের এলাকা) মোবাইল চার্জ করছি । এ সময় বোর্ডিং এর ঘোষণা হলো । বাথরুম থেকে ওযু করে রওয়ানা হলাম । ৪০০ যাত্রীর বিশাল লাইন পথে বসে গেলাম । ইমিগ্রেশন নিয়ে নানান দুর্ভোগ তিন চার ঘন্টা অপেক্ষা । আমি সবার শেষে । বিমান ছাড়ে ছাড়ে অবস্থা । আমাদের এখনো ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার হয় নাই । বিশ্রী অভিজ্ঞতা। হাজীদের এত কষ্ট হাজীরাও মারামারি করে ঢুকতে চায় এ ওর আগে যেতে চায় । সব মিলিয়ে এক অনাসৃষ্টি । যাক এসব পার হলাম । ১টা কোরান দিল আকবরীয়া হজ্জ এর জন্য । বিমানেও আমরা প্রায় শেষ গ্র“প। সামনে জায়গা হলো, আবার দেশের পথে । মধ্যখানে প্রায় দেড়মাস আল্লাহর পবিত্র ভূমি মক্কা মদিনাতে কাটানোর সৌভাগ্য দিলেন আল্লাহ । আমিন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×