ইরাক থেকে বাহরাইন এয়ার পোর্টে নেমে পোর্ট এন্ট্রি ভিসা পেলাম। বিমান বন্দর থেকে ট্যাক্সিতে করে মানামা শহরের বাব-আল-বাহরাইন এলাকায় এলাম। বাব-আল বাহরাইন বা বাহরাইনের তোরণ ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশরা তাদের সরকারী অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্মান করেছিল এবং এটা বাহরাইনে প্রবেশের আনুষ্ঠানিক প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো । এখন এটা ট্যুরিষ্ট অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর নীচে বেশ ভাল কিছু ট্যুরিষ্ট শপ আছে যেখানে বাহরাইনের ইতিহাস ও অন্যান্য স্যুভেনির পাওয়া যায় ।এই এলাকাকে কেন্দ্র করেই দোকান পাট গড়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন দামের হোটেল আছে । হোটেল আল দিওয়ানিয়াতে উঠলাম। মধ্যম মানের হোটেল তবে রুমগুলো সুন্দর,এসি, লিফ্ট সবই আছে হোটেল থেকে বেরুলেই বাজার এলাকা।। হোটেলে জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে বাহরাইন দেখতে বের হলাম।আবহাওয়া সহনীয়, পোষাক পরিচ্ছদ হালকা গরমের উপযোগী ।
গাল্ফ এর বুকে মুক্তো বিন্দুর মত ছোট দ্বীপদেশ বাহরাইন - রাজধানী মানামা । এই দেশে অনেক বাংলাদেশী, ভারতীয় তথা এশিয়ার লোকজনের অবস্থান, সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। কেউ ব্যবসা, কেউ চাকুরী । মোটকথা এটাকে দেশের বাইরে দেশ বলা যায় । বাংলা, হিন্দী, উর্দূ সব মিলিয়ে খিচুরী ভাষায় কথা আদান প্রদানের এর চেয়ে উত্তম জায়গা এখনো আমি দেখিনি । দ্বীপ দেশ তাই চারিদিকে সাগর, এর মাঝেই পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে অজস্র হোটেল এবং বিশাল ব্যবসায়িক কেন্দ্র । সেই প্রচীন কাল থেকেই বাহরাইন বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ । এর কারন হলো এর ভৌগলিক অবস্থান বানিজ্য পথের মাঝে । বাহরাইনের পোতাশ্রয় এবং গভীর স¦চ্ছ জলরাশি স¦াভাবিক ভাবেই বাহরাইনীদেরকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করেছে । বর্তমানে বাহরাইনের সমৃদ্ধির পেছনে এর ব্যাংক ব্যবসা, পর্যটন এবং অন্যান্য শিল্পের অবদান রয়েছে । বর্তমান বাহরাইনের অর্থনীতি তেল উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল নয় । এই দেশটা গালফের মধ্যে সহজে বেড়ানোর মত একটা দেশ অর্থ্যাৎ ভিসা বা অন্যান্য ঝামেলা কম এবং এশীয় ও ইউরোপীয় বা পাশ্চাত্য ভ্রমনকারীদের জন্য সুলভে ভ্রমনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ।
বাহরাইন
বাহরাইন দ্বীপরাষ্ট্র ৩৩ টা ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে বাহরাইন দ্বীপ হলো সবচেয়ে বড় । দৈঘ্য ৫০ কিঃ মিঃ, প্রস্থ প্রায় ১৬ কিঃ মিঃ এর মত । এর আয়তন ৫৮৩ বর্গ কিঃ মিঃ । বাহরাইন, মুহাররাক, সিটরা এবং উম-আল-নাসান দ্বীপগুলো হলো একটু বড়, কিছু কিছু দ্বীপ কেবল সাগরের বুকে ছোট্ট পাথর খন্ডের মত মাথা বের করে আছে । অনেকগুলো দ্বীপ বর্তমানে বাহরাইন বা মুহাররাক এর সাথে ব্রিজ দিয়ে যুক্ত । এগুলোকে দেখলে এখন দ্বীপ মনে না হয়ে মূল খন্ডের বর্ধিত অংশই মনে হয় । এপ্রিল থেকে অক্টোবর এ কমাস তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশী থাকে । নভে¤¦র থেকে মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়া বেশ ভাল।
বাহরাইনে প্রায় ৫,৫০,০০০ এর মত লোক বসবাস করে এর মধ্যে ১,৫০,০০০ হলো বিদেশী কর্মজীবি। এরা বাহরাইনে ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। বাহরাইনীরা আরব জাতি তবে এদের অনেকের মধ্যে ইরানী রক্তের অনুপ্রবেশ ঘটেছে । অর্থাৎ অরব ও পারস্য দুই দেশের সম্মিলন হয়েছে এখানে । এই ছোট্ট দ্বীপ দেশে নতুন এবং পুরানো পাশাপাশি এখনো অবস্থান করছে । একদিকে গগনচু¤¦ী প্রাসাদ আধুনিক বাড়ীঘর অফিস আদালত, অন্যদিকে সার বেধে গড়ে উঠা ছোট ছোট দোকান পাট এ পরিপূর্ণ বাজার এলাকা । এখনও অনেক নির্মান কাজ চলছে । সব আধুনিক স্থাপত্যকলা অনুসরন করেই এগুচ্ছে । বাহরাইনের সরকারী ভাষা আরবী তবে ইংরেজী বহুল ব্যবহৃত , ভারতীয় এবং ফিলিপিনো বেশী বলে এ দুটো ভাষার বেশ চল আছে। এমন কি বাংলায় ও কথা বলে কাজ চালানো যায় । ফার্সী ভাষার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় তবে বাইরে এর ব্যবহার সীমিত । ইরানী বংশোদ্ভুত বাহরাইনীরা এটা ব্যবহার করে এবং সব ব্যবসা বলতে গেলে তারাই নিয়ন্ত্রন করছে ।
রাস্তার পার্শ্বে সারি সারি বিভিন্ন জিনিষপত্রের দোকান বেশির ভাগ সেলসম্যান ভারতের কেরালা রাজ্যের। এরাই মূলত বাহরাইনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর চাকুরী দখল করে রেখেছে। রোজার দিন, তাই দিনের বেলা খাবার তেমন প্রয়োজন নাই। ইফতারের ও সেহরীর ব্যবস্থার খোজে বের হলাম। বাংলাদেশী লোকজন আছে। আমাদেরকে মামার হোটেল দেখিয়ে দিল। সবাই মামা বলে তাই আমাদেরও মামা। বাড়ী কুমিল¬ার চৌদ্দগ্রামে। অনেক বছর ধরে বাহরাইনে। হোটেল ব্যবসায় বেশ লাভ আছে বলে জানালো। আশেপাশের সব বাংলাদেশী, পাকিস্তানী ও মাঝে মাঝে ভারতীয় লোকজন এখানে চা নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার খায়। কি পাওয়া যায় না এখানে ? মরিচ,পেয়াজ, মুড়ি, কইমাছ সবই আছে। সব কিছু আটআনা, একটাকা, দুই টাকা দাম। অবশ্য বাংলা টাকা না বাহরাইনী টাকা। এক বাহরাইনী দিনারে দুই ডলার এর উপর পাওয়া যায় । মামার সাথে ইফতার ও অন্যান্য খাবারের ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধান পাওয়া গেল । সেহরীতে আমরা এসে খাব। সারারাত বাজার খোলা। অতএব কোন সমস্যা নেই।
হাঁটতে হাঁটতে সিটি সেন্টারের দিকে গেলাম। এখানে গাড়ী চলে না। দুরে গাড়ী রেখে হেঁটে আসতে হয়। এখানে মিউজিয়াম আছে আরও আছে সুভ্যেনীর সপ। জিনিষপত্র সব আবার চীনের তৈরী। বাইত-আল কোরানে ঢুকলাম, গভর্নমেন্ট এভিনিউর পূর্ব প্রান্তে এই কোরান হাউস অবস্থিত । এখানে কোরান শরীফের অসংখ্য ধরনের সংগ্রহ বর্তমান । এটা অনেকটা মিউজিয়ামের মত । সব ধরনের পর্যটকদের জন্য এটা খোলা । এখানে কাঠে খোদাই করা , পান্ডুলিপি আকারে এবং ক্ষুদ্রাকার কোরান শরীফ রয়েছে । এখানে ইসলামিক আর্ট ও ক্যালিগ্রাফির অনেক নমুনা সংগৃহীত আছে যা দেখে সত্যি মুগ্ধ হতে হয় । শনি হতে বৃহস্পতিবার এটা খোলা থাকে দর্শকদের জন্য । ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন সাইজ ও ঐতিহাসিক মূল্য সমৃদ্ধ কোরান দেখলাম। সুন্দর নকসা করা বিভিন্ন সাইজের কোরান শরীফ মিউজিয়ামের এসি কক্ষ গুলোতে রাখা।
নীচে নেমে সুভ্যেনীর সপ থেকে বাহরাইন লিখা কয়েকটা শো পিস কিনলাম এদেশের স্মৃতি হিসেবে। পাশেই পার্ক, হাঁটার রাস্তা আছে। মাঝে মাঝে বাগান বড় বড় খেজুর গাছ লাগানো আছে। পার্ক সাগরের পাশেই। সাগরের দিকে রেলিং দিয়ে ঘেরা এবং এর পেছনে বসার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। বেঞ্চে বসে সাগরের হালকা গরম বাতাস এবং দুর সাগরে ভেসে বেড়ানো জাহাজের দৃশ্য চমৎকার। মাঝে মাঝে সাগর চিল উড়ে বেড়ায় নির্মল নীল আকাশে। বিকেলের দিকে প্রায় প্রতি দিন পার্কে এসে কিছুক্ষণ হাঁটা করে ও সাগরের দৃশ্য দেখে সময় কাটাতাম।
বাহরাইনের ইতিহাস মূলতঃ মানব সভ্যতার গোড়াপত্তনের সময়কার সাথে সম্পৃক্ত । এটা প্রাচীন পৃথিবীর অন্যতম একটা ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল । ব্রোঞ্জ যুগে ডিলমান এর উদ্ভব । মনে করা হয়ে থাকে তা খৃষ্ট পূর্ব ৩২০০ সালের দিকে শুরু এবং এটা পরবর্তী ২০০০ বৎসর এই যুগ চলেছিল । এই সাম্রাজ্য এখানে উৎপত্তি হওয়ার কারন দ্বীপের তাৎপর্যপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান । এই দ্বীপ মেসোপোটেমিয়া ও ইন্দাজ উপত্যকার সংযোগ হিসেবে ব্যবহ্নত হতো । ২২০০-১৬০০ খৃষ্ট পূর্ব পর্যন্ত এই সাম্রাজ্য গালফ এর পশ্চিমের মোটামুটি বড় একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করত । এক সময় তা বিস্তৃত হতে হতে আধুনিক কুয়েত ও সৌদি আরবের পূর্ব অংশ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে ।
খৃষ্টপূর্ব ১৬০০-১০০০ সাল পর্যন্ত এর সমৃদ্ধি আস্তে আস্তে মান হতে থাকে এবং খৃষ্টপূর্ব ৬০০ সালের দিকে এটা ব্যাবিলন এর সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে যায় । ৯ম থেকে ১১ শ শতাব্দীতে বাহরাইন প্রথমে উমাইয়া শাসনাধীনে ও পরবর্তীতে আব্বাসীয় কর্তৃক শাসিত হয়েছিল । আব্বাসীয়দের শাসনামলে বাহরাইন শিয়াদের শক্ত ও সুদৃঢ় ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল । তবে এই সময়ে বাহরাইনের অতীত প্রাচুর্যের কিছুই অবশিষ্ট ছিল না । পরবর্তীতে এটা আস্তে আস্তে আবার সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং পুণরায় এটা ভারত উপমহাদেশ ও মেসোপটেমিয়ার মাঝে যোগসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় । গালফের একটা অন্যতম প্রধান মুক্তার বন্দর হিসেবে এর বেশ অর্থনৈতিক গুরুত্বও আছে । ১৪৮৭ সালে ওমান বাহরাইন ও মুহাররাক দ্বীপ দখল করে মুহাররাক এলাকায় আবাদ দূর্গ নির্মান করে । এর প্রায় ৩৬ বৎসর পর ওমানীয়রা পর্তূগীজ কর্তৃক বিতাড়িত হয় এবং ১৬০২ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপটি পর্তুগীজদের দখলে ছিল ।
১৮শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমানের শাসক পরিবার আল-খলিফা এই এলাকায় প্রথম বসতি স্থাপন করে । এরা নিজেদেরকে লোভনীয় মুক্তা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলে । ১৭৮২ কিংবা ৮৩ সালের দিকে এই পরিবার ইরানী ফার্সীদের বাহরাইন থেকে বিতাড়িত করে । এর ৩ বৎসর পর আল-খলিফা পরিবার অরেকটা ওমানী আগ্রাসন এর ফলে বিতাড়িত হয় এবং ১৮২০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তারা বাহরাইনে সুদৃঢ় ঘাটি প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল । এর পর আবার বাহরাইন খলিফাদের কর্তৃত্বে আসে এবং ব্রিটিশদের সাথে বাহরাইন এর একটা চুক্তি হয় । বৃটিশদের মূল লক্ষ্য ছিল অন্যান্য পশ্চিমা আগ্রাসী শক্তিবর্গ থেকে ব্রিটিশদের মূল সরবরাহ পথকে রক্ষা করা, কারন এই পথেই ভারতের সাথে ব্রিটিশদের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল । ১৯শ শতকে বৃটিশরা বাহরাইনে থাকলেও পারতঃ পক্ষে তারা বাহরাইনের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা অন্যান্য বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি ।
গালফের আরব অংশের মধ্যে বাহরাইন হলো প্রথম দেশ যেখানে তেল আবিস্কার/উত্তোলন করা হয়েছিল । ১৯২৫ সালে ফ্রাংক হোমস নামে এক নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী প্রথম তেল উত্তোলনের জন্য অনুমোদন পায়। ১৯৩২ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল উত্তোলন শুরু হয় । বাহরাইনের তেল আবিস্কারের সমসাময়িক সময়ে মুক্তা ব্যবসাকে অন্যতম হিসেবে ধরা হতো । যেহেতু গালফ এর মধ্যে বাহরাইনেই প্রথম তেল উত্তোলন শুরু হয় তাই এ দেশবাসীরা তেল থেকে প্রাপ্ত মুনাফার সুবিধাগুলো সবার আগে উপভোগ করার সুযোগ পায় ও বাহরাইনের অধিবাসীদের জীবন ধারায় নাটকীয় পরিবর্তনের সূচনা হয় । বিশেষতঃ শিক্ষা এবং স¦াস্থ্য খাতে প্রভূত উন্নতি হয় । উন্নতির সাথে সাথে বাহরাইনে বৃটিশদের ভূমিকা বৃদ্ধি পায় এবং বৃটিশরা তাদের কর্মতৎপরতা আরো জোরদার করে ।
১৯৩৫ সালে বৃটিশ নেভী বেস বাহরাইনে স্থানান্তর করা হয় । ১৯৪৬ সালের দিকে গুরুত্বপূর্ণ বৃটিশ কর্মকর্তার অফিসও বাহরাইনে স্থানান্তরিত হয় । ১ম মহাযুদ্ধের পর বাহরাইনের অন্যান্য কর্মকান্ডে উন্নতির সূচনা হয় । ১৯২৬ সালে চার্লস বেলগ্রেইড আমিরের বৃটিশ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর বাহরাইনের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিবর্তনের সূচনা হয় এবং এর অবকাঠামোতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় । শেখ হামাদ-বিন-আলী এবং তার উত্তরাধিকারী শেখ সালাম এর সময় বাহরাইনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে । শেখ সালামের ১৯ বছর শাসনামলে বাহরাইনের অধিবাসীদের জীবন যাত্রার মান প্রভূত উন্নত হয় । এ সময় সৌদি আরব ও কাতারে ও তেল উত্তোলন শুরু হয় । যেহেতু বাহরাইনে সবার আগে তেল পাওয়া গিয়েছিল সেজন্য তারা শিক্ষা ও স¦াস্থ্য খাতে অনেক অগ্রসর ছিল । একারনে সৌদি আরব ও অন্যান্য গালফ দেশ সমূহের আগেই বাহরাইন গালফের প্রধান এন্ট্রিপোর্ট হিসেবে স¦ীকৃতি পায় ।
১৯৭১ সালের ১৪ আগষ্ট বাহরাইন স¦াধীনতা লাভ করে এবং ১৯৭২ সালের শেষ দিকে খসড়া সংবিধান প্রনীত হয় । মে ১৯৭৩ সালে আমির উক্ত সংবিধান জারি করে এবং সে বছর ডিসে¤¦রে নির্বাচিত সাংসদের দ্বারা সংসদ গঠিত হয় । ২০ মাসের মাথায় বিভিন্ন সমস্যার কারনে আমির সংসদ ভেংগে দেয় । ৭০-৮০ এর দশকে বাহরাইনের প্রচুর প্রবৃদ্ধি ঘটে এবং এর জন্য অংশত দায়ী তেল এর দাম বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন তখনও বাহরাইন অবকাঠামোগত ভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল । বর্তমান দশকে যদিও বাহরাইনের সমৃদ্ধি বা জৌলুস কিছুটা নিম্নমুখী তবে দেশটা এখন বিভিন্ন দিকে এর উন্নতির সোপান বিস্তৃত করেছে । দেশের বর্তমান অর্থনীতি তেলের উপর নির্ভরশীল না । ৯০ এর দশকে ইরানের সাথে বাহরাইনের সম্পর্ক উন্নত হয় এবং অন্য দিকে ইরাকের সাথে সম্পর্ক এর অবনতি হয় ।
বর্তমান বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের তথা গালফের বেশ সমৃদ্ধ একটা দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য সব সময় নিয়োজিত রয়েছে । বাহরাইনের শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলমান বাকী খৃষ্টান, ইহুদী, পার্সী ও হিন্দু আরো আছে আদি বাহরাইনের অধিবাসী যারা বহুকাল ধরে বসবাস করে আসছে । মুসলমানদের বৃহত্তর অংশ শিয়া (প্রায় ৭০%) । সুন্নীদের মধ্যে রয়েছে শাসক পরিবার ও প্রতিপত্তিশালী ব্যবসায়ী পরিবার সমূহ ।