somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত ভ্রমণ-১

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত এত কাছে তবুও যাওয়া হয় না । তাই প্রতিবেশী দেশ ভারত দেখার ইচ্ছেটা সেই ছোট বেলা থেকে। কেন যেন সুযোগ হয়ে উঠছিলো না । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ পেলেও পাশের দেশ ভারত অদেখাই রয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালে এই সুযোগ এলো । সময়টা জুলাইয়ের শেষ দিকে । বেশ কদিন সময় পাব ভারতের রাজধানী , ভারতীয় সিলিকন ভ্যালী অর্থাৎ ব্যাংগালোর, বিশাখা পত্তম ও ভারতীয় পশ্চিম বংগের রাজধানী কলকাতা একটু ঘুরে ফিরে দেখার । এই ফাঁকে আগ্রা, জয়পুর দেখার সখটাও মিটিয়ে নেয়া যাবে । ৩০ জুলাই সকাল নয়টা ত্রিশ মিনিটের জেট এয়ার ওয়েজ এর ফ্লাইট নম্বর ৯ ডব্লিউ ০২৭১ এ করে ঢাকা থেকে ¢পস‘£ষ পথে রওয়ানা হলাম । ১ ঘন্টা ৫০ মিনিট ফ্লাইট টাইম শেষে স্থানীয় সময় পৌনে বারটায় ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে ল্যান্ড করল আমাদের প্লেন ।

ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, দিল্লী
কাষ্টম ও ইমিগ্রেশন শেষ করতে সময় লাগেনি । মোবাইলের সিম কিনতে ২ ঘন্টা লেগে গেল । সিম কিনলাম ৩৪০ ষ¦¢ভ দিয়ে । নিউ দিল্লীর রাজেন্দ্র ­ভ‘­ঢ়ষ হোটেল জয়পে সিদ্ধার্থতে আসতে আসতে ২টা ৩০ হয়ে গেল । ফ্রেস হয়ে ৩-৩০ এ রুম থেকে নেমে এলাম । লোকাল দোকানে বার্গার ও ড্রিংকস দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম, সাথে জুস । এরপর ৪-৩০ এ বাসে করে শহর ঘুরতে বের হলাম । প্রথম দেখায় পুরানো দিল্লী শহর বেশ নোংরা, ময়লা ও অনুন্নত, বাজে লাগলো পরে আস্তে আস্তে চোখে সয়ে গিয়েছিল। দেখতে দেখতে মোগল আমলের ঐতিহাসিক দিল্লী জামে মসজিদে চলে এলাম ।


জামে মসজিদ, দিল্লী
আসরের নামাজ জামে মসজিদে পড়লাম। জুম্মা মসজিদ সম্রাট শাহাজানের শেষ কীর্তি । লাল কেল্লার বিপরীত দিকে ১৬৫৮ সালে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনি এ মসজিদটি তৈরি করেন। পিয়াজ আকৃতির গম্বুজ আর দীপ শিখার মত মিনার যুক্ত অপরুপ সৌন্দর্য মন্ডিত ২০১ ফুট উচু মসজিদটিতে ৩৯ টি সিঁড়ি বেয়ে ঢুকতে হয় ।

জামে মসজিদ, দিল্লী
মসজিদের ভিতরে প্রায় পঁচিশ হাজার লোক একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন । এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর চটি, একটি দাড়ি, তার সমাধির একটি চাঁদোয়া সংরক্ষিত আছে । বিশাল মসজিদ অর্থের অভাবে সংস্কার নেই তাই আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । সময়ের অভাবে এগুলো দেখা হয়নি, এর কাছাকাছি মিষ্টির দোকান থেকে দিল্লাকা লাড্ডু খেলাম ।

রাজঘাট, মহাত্মা গান্ধীর সমাধি
সেখান থেকে মহাত্মা গান্ধীর সমাধি রাজঘাট ঘুরে এলাম । রাজঘাট বেশ সুন্দর করে সাজানো। আবহাওয়া গরম, বাতাসে আর্দ্রতাও বেশ। গরমের কারণে তেমন ভাল লাগেনি । বিকেলেও গরম কমেনি। বহু খ্যাতনামা ব্যক্তির শেষ কৃত্যস্থল রচিত হয়েছে যমুনার পারে । এগুলো দেখতে হলে প্রথমেই আসতে হবে রাজঘাটে । ফিরোজশাহ কোটলার কাছে যমুনার পারে মহাত্মা গান্ধীর মরদেহ ভম্মীভূত হয় । এখানে তার সাদাসিদে সমাধি বেদিটিকে দেখা যাবে। এ সাধারণ বেদীটির সামনে দাঁড়ালে চোখের সামনে ভেসে উঠবে সেই অহিংসার ব্রতী, কাঠের খড়ম ও খদ্দর পরিহিত দেবতুল্য সাধারণ লোকটির চেহারা । এখানে আছে গান্ধী স্মারক সংগ্রহশালা। আরও তার সম্পর্কে লিখিত প্রায় পনেরো হাজার পুস্তক সহ তার লিখিত ও ব্যবহৃত বহু দ্রব্য সামগ্রী । এগুলোর মধ্যে তার চপ্পল, লাঠি , চরকা, জেলখানার বাসনপত্র ও জীবনের শেষ দিনে পরিহিত রক্তমাখা কাপড় । নাথুরাম গড্সে কর্তৃক বুলেট বিদ্ধ হয়ে নিহত হন গান্ধীজি ।

রেড ফোর্ট, দিল্লী
তারপর লাল কেল্লা বা রেড ফোর্ট দেখতে গেলাম। দিল্লী এসে প্রথম ধাক্কাতেই হতাশ হলাম। হিন্দি ছবিতে দেখা চাকচিক্যের সাথে বাস্তবের বেশ ফারাক । দিল্লীর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ সম্রাট শাজাহানের নির্মিত লাল কেল্লা বা রেড ফোর্ট । ১৬৪৭ সালে তিনি এই লাল কেল্লা তৈরির মাধ্যমেই দিল্লী নগরীর ভিত রচনা করেছিলেন । এক সময় সম্পূর্ণ জায়গাটা ছিল খোলা বিরান অঞ্চল, হায়েনার বসবাসের স্থান । সম্রাট শাহজাহান এই লাল কিল্লা প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি আগ্রা থেকে মোগল সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তর করার জন্যই এই স্থাপনা নির্মান করেন যার নির্মান কাজ ১৬৪৮ সালে শেষ হয় । সম্রাট এটার উদ্ভোধন করেন । বিপুল উৎসাহ ও বর্ণীল উৎসবের মধ্যে দিয়ে লাল কেল্লার সীমানা ছাড়িয়ে নতুন নগর শাহজাহানাবাদের পত্তন হয় । তখন এটিই ছিল শক্তি আর সৌন্দর্য্যরে আধার । এর চারপাশ ৯০ ফুট উচু দেয়াল আর ৩০ ফুট গভীর পরিখা দিয়ে ঘেরা । এক সময় এটি ছিল দুর্জেয় এক মহাশক্তিশালী দুর্গ । ১৭১৫ সালের ভূমিকম্প, ১৭৩৯ সালের নাদির শাহের আক্রমণ ও লুট, ১৭৫৯ সালে মারাঠি ও অন্যান্য আক্রমনে এই দুর্গ শক্তিহীন হয়ে পড়ে । তবে শক্তিহীন হলেও সে সৌন্দর্য্যরে মোহনীয় রুপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বহুকাল ধরে । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা এর অনেক ক্ষতি সাধন করে ।
দিল্লীর রেডফোর্টে সন্ধার পর লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয় । দর্শকদের বসার সুন্দর ব্যবস্থা আছে । দুরে বাদশাহদের দরবার, খাস মহল মসজিদ ইত্যাদি ভবন । এগুলোর উপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রংএর আলো ফেলে সাথে শব্দের সমন্বয়ে সুন্দর এই লাইট এন্ড সাউন্ড শো, টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয় । হিন্দী ও ইংরেজী দুটো ভাষায় এই প্রোগ্রামটা হয়। ইংরেজীতে শেষ হলে ভারতীয় দর্শকদের জন্য হিন্দী ভাষায় উপস্থাপন করা হয়। সন্ধ্যা ৭-৩০ এ লাইট এন্ড সাউন্ড সো দেখলাম রেড ফোর্ট এ । মোঘল আমলের ইতিহাস দিয়ে শুরু হয়ে ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ পর্যন্ত ধারাবাহিক ঘটনাগুলো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করার চমৎকার ব্যবস্থা । সেনাবাহিনীর মার্চের পদধ্বনি, ড্রামের শব্দ, ঘোড়ার খুরের আওয়াজ পরিষদের কথাবার্তা সব মিলিয়ে আলো ও শব্দের মধ্যে রেড ফোর্ট যেন প্রান ফিরে পায় । মোগল আমল থেকে শুরু করে ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত ইতিহাসের টানাপোড়েন উত্থান পতন এর ইতিহাস সুন্দর ভাবে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এই অনুষ্ঠানে । তিন শতাব্দী ধরে এই লাল কিল্লা ভারতের বুকে দাড়িয়ে আছে । জীবনের শেষ প্রান্তে শাহজাহান ক্ষমতার লড়াইতে তার ছেলে আওরঙ্গজেব এর হাতে বন্দী হয় এবং ১৬৬৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এখানে বন্দী জীবন যাপন করেন । আওরঙ্গজেব এখানে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করেন এবং মোতি মসজিদ নির্মান করেন । এটাই কেবল তিনি এখানে যোগ করেছেন ।
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর সাথে সাথে মুগল বংশের ক্ষয় শুরু হয় । পরবর্তী বাদশাহরা নাচ গান এ আসক্ত হয়ে পড়েন এবং একের পর এক ক্ষমতায় আসেন ও চলে যান । তারা বার বার পারস্য থেকে আসা নাদির শাহর আক্রমনের শিকার হয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়েন । শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর একজন কবি ও কবিতার ভক্ত ছিলেন । ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের পর বাহাদুর শাহকে বার্মা মুলুকে নির্বাসন দেয়া হয় ও তার কিছু কিছু বংশধরকে হত্যা করা হয় । ভারত ইংরেজ শাসনের আওতায় আসে । পরবর্তী ২০০ বৎসর ইংরেজরা ভারতে তান্ডব চালায় । মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু ও অনেক সাহসী বীর ভারতীয়রা ভারতকে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহনে সাহায্য করে । শব্দ ও আলোর মুর্চ্ছনায় কখন যে সময় কেটে যায় বোঝা যায় না । ভারতের ইতিহাস না জানা থাকলেও একজন শ্রোতা এই অনুষ্ঠানে বসে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে । এখানে মোগল সম্রাটদেরকেও ভারতের আগ্রাসী শক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে । বিদেশীরা যে ভারতে থাকতে পারে না চলে যেতে বাধ্য হয় তাই দেখানো ও বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে ইতিহাস ও দেশপ্রেম মূলক এই অনুষ্ঠানে ফোর্ট ঘুরে দেখার পাশাপাশি এটাও একটা বিশাল অভিজ্ঞতা । বাইরে এসে নিম্বু পানি খেলাম। তারপর হোটেলে এসে ডিনার করতে বের হলাম । ডিনারে বিরিয়ানী খেলাম। সাউথ ইন্ডিয়ান রান্না মশলা, ঝাল ও তেলে একাকার।
পরদিন সকাল বেলা হোটেলে নাস্তা খেলাম তারপর কাজকর্ম সেরে দুপুর বেলা আবার হোটেলে ফেরৎ। দিল্লীর রাজপথ গুলো দেখা হলো । মানুষজন তেমন নেই, রাস্তা প্রশস্থ, গাড়ীগুলো বেশীরভাগ ভারতীয়। দুপুরে লাঞ্চ করতে গেলাম, ফ্রাইড রাইস ও ভেজিটেবল খেলাম রাজেন্দ্র প্লেস ষ্টেশন এর কাছে ছোট একটা রেস্তোরাতে, এক শিখ তরুন এর মালিক । ৯ রুপি দিয়ে টিকেট করে রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশন থেকে কনট প্লেস যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম । রাজীব চক ষ্টেশনে নামতে হলো, তারপর হেঁটে কনট প্লেস । বেশ সুন্দর জায়গা । কনট প্লেস থেকে জুতা ও জামা কাপড় কিনলাম । কনট প্লেসের কাছেই দিল্লী আন্ডার গ্রাউন্ড এসি মার্কেট পালিকা বাজারে নামলাম । অনেক আগে এর নাম শুনেছিলাম । আজ নতুন অভিজ্ঞতা হলো দিল্লীর মেট্রোতে চড়া, এছাড়া বাসে করে ঘুরার সময় সুন্দর রাস্তাগুলো দেখলাম । একটু পরিচ্ছন্নতা ও নতুনত্বের ছোঁয়াতে গতকালের হতাশা কিছু কমে গেছে আজ । বৃষ্টি হলো আজ দিল্লীতে । ইন্ডিয়া গেট দেখলাম । পরে আসলে ছবি তুলতে হবে এই বিখ্যাত স্থাপত্যের ।
আগস্ট মাস ভারতের স্বাধীনতা দিবস এর মাস । ১ লা আগস্ট ইন্ডিয়া গেট এর সামনে বেড়াতে গেলাম ছবি তুললাম বেশ কিছু । বেশ গরম আর রৌদ্র । ৪-৩০ এর দিকে মেট্রো ট্রেনে করে ক্যারলবাগ মার্কেট দেখতে গেলাম। অনেক দোকান পাট । একটা সোজা রাস্তার দুপাশে মার্কেট। ব্রান্ডের জিনিষ পত্রের অনেক গুলো দোকান আছে। কে এফ সি’র মত আন্তর্জাতিক চেইন সপ অনেক আছে । সব ধরণের পণ্যের সমাহার থেকে পছন্দ করে কিনে নিলেই হলো , দামও সাশ্রয়ী। আজকে দিল্লী ঘুরতে ভালই লাগল । আকবর রোড, তোঘলক রোড, মানসিংহ রোড, আশোকা রোড দেখলাম । আগামীকাল আগ্রার পথে রওয়ানা হব ।
আগ্রা
সকালে ৬-৩০ এ উঠে হোটেলেই নাস্তা করলাম । ৭-৩০ এ আগ্রার উদ্দেশ্যে বাসে করে রওয়ানা হলাম । দিল্লীর সীমানা পেরিয়ে হরিয়ানা প্রদেশ হয়ে উত্তর প্রদেশে ঢুকলাম। দুইবার হাইওয়েতে টোল দিতে হলো । হরিয়ানা একটু নীচু এলাকা, এখানে জমিতে পানি জমে । চলার পথে উত্তর প্রদেশ সীমান্তের কাছে একটা হোটেলে যাত্রা বিরতী। হোটেলটা পর্যটকদের জন্য বিশেষ ভাবে বানানো । ফ্রেস হবার জায়গা অন্যান্য কেনাকাটি এবং খাবারের ব্যবস্থা আছে। সুভ্যেনিরের বেশ দাম তবে ভাল সুভ্যেনির আছে । দুপুর ১ টায় আগ্রায় পৌঁছালাম । আগ্রাক্যান্ট এর চাইনিজ রেস্তোরাতে বেশ মজা করে লাঞ্চ করলাম । তারপর ৪ টার দিকে জয়পে প্যালেস হোটেলে এলাম । সুন্দর সাজানো, রুমগুলো বেশ ভাল, আমাদেরকে বেশ আন্তরিকতার সাথে রিসিভ করল হোটেল কর্তৃপক্ষ । ৪-৩০ এ তাজমহল দেখতে গেলাম ।

তাজমহল,আগ্রা
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের আরও একটা নিদর্শন দেখার সৌভাগ্য আল্লাহ দিলেন । ভেতরে ঢোকার টিকেট এর ব্যবস্থা আছে । বাংলাদেশীদের জন্য সাতশ পঞ্চাশ রুপী করে টিকেট । বেশ চেক করে ভেতরে ঢুকার আয়োজন । পৌনে ছটা পর্যন্ত ভেতরে ঘুরে ঘুরে দেখলাম অপূর্ব সুন্দর দেখার মত স্থাপনা । মানুষ পৃথিবীতে কত সম্পদ ঢেলেছে তা দেখা যায় এখানে । সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখলাম চোখ জুড়িয়ে যায় । ক্যামেরায় ছবি তুললাম তাজমহলের । ৬ টায় আগ্রা ফোর্টে এলাম।
বিশাল কারবার, বাদশাহদের থাকার জায়গা বেগম ও শাহজাদীদের থাকার ব্যবস্থা দেখলাম । শাহজাদী জাহানারা ও রওশন আরার মহল দেখা হল । বন্দী অবস্থায় শাহজাহান যে জায়গা থেকে তাজমহল দেখতেন সেখানে গেলাম । সন্ধ্যায় আগ্রার বাজার এলাকা থেকে খাবার কিনলাম । রাতে রুমে টিভি দেখে সময় কাটালাম । পরদিন ভোর ৭-৩০ এ আগ্রা থেকে জয়পুর এর দিকে রওয়ানা হলাম । পথে ১০-৩০ এ ফতেহপুর সিক্রিতে গেলাম । সম্রাট আকবর এটা বানিয়েছিল । এখানে ১৫০ রুপি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানের উপর নির্মিত কয়েকটা সিডি ও বই কিনলাম একটা ছেলের কাছ থেকে । ব্যাটারী চালিত টেক্সি নিয়ে ফতেহপুর সিক্রিতে এলাম ।

ফতেহপুর সিক্রি থেকে যাত্রা করে জয়পুর পৌঁছাতে ৩ টা বেজে গেল। জয়পুরে রাস্তার পাশে আকবর হোটেলে যোহরের নামাজ পড়লাম । এটা খাবারের রেস্তোরা । ২০০ রুপি দিয়ে ভাত মাংস ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম । তারপর আম্বর প্যালেস দেখতে এলাম । সম্রাট আকবরের হিন্দু রাজপুত রাণী জুদাবাই এর প্রাসাদ এটা । জয়পুরের রাজপুত রাজা মানসিংহ এটা নির্মাণ করেন । জয়পুরকে পিংক সিটিও বলে । জয়পুরে কয়েকটা ছবি তুললাম । আম্বর প্যালেসে পরিবেশ বান্ধব ব্যাটারী চালিত জীপে করে যেতে হয় । পাহাড়ের উপর অনেক উঁচুতে প্রাসাদ। সবদেখার পর মার্কেটিং করতে এলো। সবই ফিক্স প্রাইস এর দোকান । চুড়ি কিনল অনেকে, শাড়ীও পাওয়া যায় । ৬ টার দিকে দিল্লীর পথে রওয়ানা হলাম । রাত ১১-৩০ এ মাইল স্টোন ৩২ নামের ক্যাফেতে ডিনার খেলাম। দিল্লী তখনও ৩২ মাইল দুরে । হোটেলে আসতে আসতে ১২-৩০ বেজে গেল । সব গুছিয়ে ঘুমাতে ২ টা বাজলো । ৭০০ কিঃমিঃ এর মত বাস ভ্রমণ হলো আজ। এটা ভারতে অবস্থানকালীন একদিনের দীর্ঘতম বাস যাত্রা । সকাল ৪ টায় উঠে হোটেলের ডাইনিং এ নাস্তা খেতে গেলাম । হালকা নাস্তা খেয়ে ৫-৩০ এ এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম ।

ব্যাংগালোর বিমান বন্দর
জেট এয়ারে দিল্লী ব্যাংগালোর ২-৩০ মিনিট এর ভ্রমণ, সময়মত রওয়ানা হলাম । ১২-৩০ এর দিকে ব্যাংগালোর বিমান বন্দরে পৌঁছালাম। প্লেনে নাস্তা দিল সার্ভিস ও বেশ ভাল । ব্যাংগালোর বিমান বন্দর বেশ সুন্দর। ইউরোপের মত খোলামেলা ও পরিচ্ছন্ন। এয়ারপোর্ট থেকে ৪৫ কিঃমিঃ দুরে আমাদের হোটেল । কোন ট্রাফিক জ্যাম নেই । আমরা ভাইসরয় হোটেলে উঠলাম । ব্যাংগালোরকে ভারতের সিলিকন ভ্যালীও বলা হয় । রুমে এসে হোটেলের ডাইনিং এ লাঞ্চ করতে গেলাম । বেশ মজার খাবার ১২৫ রুপি বিল এলো ।
আজ বিকেলে ভারতের অন্যতম সফ্্টওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনফোসিস দেখতে গেলাম । বেশ সুন্দর কনফারেন্স রুম, জনসংযোগ কর্মকর্তা একজন প্রাণোচ্ছল তরুন । ভাল ব্রিফ করল । তারপর ইনফোসিস এর ৮০ একর জায়গাতে ব্যাটারী চালিত কারে করে বিভিন্ন ধরণের আধুনিক স্থাপনা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা ঘুরে ঘুরে দেখলাম । সন্ধ্যায় পর সিল্ক শাড়ীর বাজারে গেলাম । বেশ সুন্দর শাড়ী পাওয়া যায় এখানে,এরাই বানায় । রাতে ৮৫ রুপি দিয়ে মজা করে ২ টা শোয়ারমা ও জুস দিয়ে ডিনার করলাম । পরদিন সকাল ১০ টার দিকে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস্্ লিমিটেড এ ভিজিট ছিল । ভারত যে অনেক এগিয়ে আছে এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখে তা বুঝা যায় । ভারত এখন হেলিকপ্টার বানাতে পারে ।

সফ্্টওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ইনফোসিস
১২ টার দিকে ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এ গেলাম । অনেক রকম ইলেকট্রনিক্স ও যুদ্ধের যন্ত্রপাতি বানায় এই প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ৭৬ঃ২৪ শেয়ার সরকার ও পাবলিক এর। নাসডাক নিউইয়র্কেও এদের শেয়ার আছে । বিকেল ৫ টায় শহর দেখতে বের হলাম।

ব্যাংগালোর শহরের দৃশ্য
ব্রিগেড রোড ও মহাত্মা গান্ধী রোডে গেলাম। ছবি তুললাম । অনেকক্ষণ হেঁটে মসজিদ খুজে পেলাম সুলতান মসজিদ,এখানে মাগরেবের নামাজ পড়লাম, বেশ বড় মসজিদ । কে এফসি’তে ৩০০ রুপি দিয়ে ডিনার করলাম । তারপর ৬০ রুপি দিয়ে সি এন জি ট্যাক্সিতে করে হোটেলে ফিরে আসলাম। পানি কিনলাম ১ লিটার । গোসল ও নামাজ পড়ে ব্যাগ গোছালাম । বেশ ভোরে উঠতে হবে। ব্যাংগালোর শহর সারাদিনে কিছুটা দেখা হলো ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×