somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলম্বো - শ্রীলংকা

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১লা মে ১৯৯৩ , মে ডে প্যারেডের সময় বাংলাদেশের বন্ধু প্রতীম দেশ শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা এক তামিল আত্মঘাতীর বোমার আঘাতে নিহত হন যা ছিল বাংলাদেশ তথা সার্কভুক্ত দেশ সমূহের জনগনের জন্য একটা অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক ঘটনা । সাত দেশের ঐক্যজোটের মানুষ বেদনায় বিমূঢ় হয়ে যায় এই ঘটনার আকস্মিকতায় । প্রেমাদাসার সাথে বাংলাদেশের মানুষের বেশ আন্তরিক সম্পর্ক ছিল কারন তিনি পরপর তিনবার বিভিন্ন কারনে এই দেশ ভ্রমন করেন এবং একজন বিজ্ঞ ও সংগ্রামী রাজনীতিবিদের গুণাবলীর সাহায্যে এদেশবাসীর মন জয় করে নিতে সক্ষম হন । বিশেষকরে ৭ম সার্কের মত মহৎ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলা ভাষায় তার বক্তব্য রেখে মানুষকে আরো নিজের মত করে নেন । সবাই তাকে একান্ত আপন ভাবতে শুরু করে । তাই তার স¥ৃতি ছিল সবার মনে জ্বাজল্যমান । বাংলাদেশের জনগনকে তাই তাঁর সেই মৃত্যুর ঘটনা হতবাক ও বিমূঢ় করে দিয়েছিল । এই ঘটনার রেশ ধরেই শ্রীলংকাতে ৬ই মে ’৯৩ তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কল¤ে¦ার স¦াধীনতা চত্বরে । যেখানে তাঁর দেহকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষে চিতাতে দাহ করা হবে ।
ছোটবেলায় শুনতাম সিন্ধুর টিপ সিংহল দ্বীপ । এই দ্বীপে এই বঙ্গ সন্তানের যে পদচারনা হবে তা আসলে কখনো ভাবিনি । তা ছাড়া রাম রাবনের সেই সিংহল দ্বীপ মনে যে কৌতুহল জাগাতো না তা নয় । এই আগ্রহ নিয়েই শ্রীলংকা যাত্রার সুচনা । ৪ঠা মে, আমাদের যাত্রার দিন । বাংলাদেশ বিমান এর টিকেট মিললনা তাই পিআইএতে টিকেট কিনে আমরা চারজন পিআইএর বিমানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম টার্মিনালে । সকাল ১০ টার দিকে পিআইএর এয়ার বাস অবতরণ করল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে । আনুষংগিক কাজ কর্ম শেষ করে আমরা বিমানের ইকোনোমি ক্লাসে আসন গ্রহণ করলাম । সময় প্রবাহে বিমান বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে আকাশের নীলিমায় ডানা মেলে দিল । ৩০,০০০ ফিট উপর দিয়ে সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ ফেলে সাগরের নির্জনতায় ছাওয়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম । ঢাকা থেকে উড়ে যশোর বিমান বন্দর তারপর কোলকাতার দমদম এয়ারপোর্ট দেখতে দেখতে চলে এলো। ভারতবর্ষের বুক চিরে তখন বিমান উড়ছিল উচুতে অনেক উচুতে । মেঘের স্তর ছাড়িয়ে সীমাহীন সূর্য রশ্মির বুক চিরে ।
সবুজ শ্যামলিমা আর উষর মরুভূমির যে কি পার্থক্য তা আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না । বাংলার মাটি যখন বিমানের গতির সাথে তাল রাখতে পারছিল না তখন বিজয়ী গতিতে বিমান উড়ছিল ভারত বর্ষের মাঝ দিয়ে । নীচে লাল মাটি, যতই এগুচ্ছিল ততই উষর হচ্ছিল। পানিহীন, সবুজ বিবর্জিত এক অবান্ধব পরিবেশ যেন দেখতে পাচ্ছিলাম । ঠিক তখনই যদিও আমি নষ্টালজিক নই তবু আমার সবুজ শ্যামল প্রাণ জুড়ানো বাংলাদেশের কথা বারবার মনে হচ্ছিল । কি ভীষণ সুন্দর আমাদের এই দেশ । বিমানের জানালা দিয়ে ছোট খাট শহরগুলোকে দেখছিলাম ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সবুজ ও ধুধু এলাকা । জনমানবের কিংবা বসতির সংখ্যা বার্ডস আই ভিউ তে অত্যন্ত নগণ্য ছিল । আমরা এগিয়ে চলছিলাম সামনের দিকে । পিআইএ তে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল করাচী । ভারতের সীমা রেখা অতিক্রম করে যখন পাকিস্তানী ভূখন্ডের উপর দিয়ে বিমান উড়ছিল তখনও প্রকৃতিতে তেমন একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল না ।
৩ ঘন্টা উড়ার পর আমাদের বিমান পাকিস্তানের করাচীর কায়েদে আজম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল । তখন সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫০ সেলসিয়াস। বিমান বন্দরের ভিতরে এয়ারকন্ডিশন্ড তাই বাইরের তাপমাত্রা সেখানে কোন ভূমিকা রাখছিল না । করাচীতে আমাদের যাত্রা বিরতী ছিল ১ ঘন্টার । এর মধ্যে প্লেন পরিবর্তন করতে হবে । আমি আমাদের কিছু প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম শেষ করার জন্য বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখি । রানওয়ে বিমান বন্দর এলাকার যেদিকে দুচোখ যায় লাল বালু মাটি ও মাঝে মাঝে কাঁটা ঝোপ । আবহাওয়া বেশ উষ্ণত। তবে জলীয়ভাগ কম বলে ঘাম এর অনুভুতি তেমন প্রবল ছিল না এবং তাপমাত্রাও আমাদের জন্য সহনীয় বলা চলে ।
পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখে দুটো দেশের মধ্যে উন্নতির পার্থক্য দেখলাম। একসময় আমাদের দেশ এই দেশের সাথেই ছিল যা ঐতিহাসিক সত্য এবং বুঝলাম যে পাকিস্তানীরা আমাদেরকে বৈমাত্রেয় চোখেই দেখত। তা না হলে স¦াধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের চেহারও এমনই হতো যদি উন্নতি সে সময় সমবন্টনের ভিত্তিতে হতো । বিমান বন্দর থেকে আমাদের বাইরে যাওয়ার তেমন সুযোগ বা সময় ছিল না, যদিও আমাদের পাকিস্তানে অবস্থানের জন্য ভিসা ছিল । করাচী থেকে আমরা পিআইএ এর অন্য আরেকটা এয়ারবাসে চড়লাম যা আমাদেরকে মালদ্বীপের রাজধানী মালে হয়ে ভারত মহাসাগরের নীল জলরাশির উপর দিয়ে উড়িয়ে শ্রীলংকা তে নিয়ে যাবে । বিমানে উঠেই বেশ পরিবর্তন দেখলাম । পিআইএর এই রুটের বিমানগুলো ঢাকা করাচী রুটে যাতায়াতকারী বিমান থেকে সাজ সজ্জা ও আতিথেয়তার দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । বিমান এর পরিচ্ছন্নতা, বিমান বালাদের ব্যবহার সব কিছুই উন্নত মানের । এখানে সফর কালীন সময়ের জন্য ’’হামসফর’’ বলে একটা বুকলেট ও বিভিন্ন বিষয় স¤¦ন্ধে অবহিত করে । এখানে বসার ব্যবস্থা ও অন্যান্য সার্ভিস বেশ উন্নত মানের এবং আমাদের তা বেশ চোখে লাগল ।
ঢাকা থেকে করাচীর ভ্রমন প্রায় ৩ ঘন্টার ছিল । পথের মধ্যে আমাদের লাঞ্চ সাপ্লাই করে পিআইএ । বাঁশমতি চালের ভাত, মাংস দিয়ে খাবার। করাচী থেকে মালে যাওয়ার পথে একবার নাস্তা দিল। কফি, বিস্কিট খারাপ না । ভারত মহা সাগরের উপর দিয়ে উড়ছিলাম। যতই এগিয়ে যাচ্ছিল বিমান আমরা ততই সময় গেইন করছিলাম । সূর্য্যরে অকৃপন রশ্মি ও নীচে ভারত মহাসাগরের বিশাল নীল ব্যপ্তি দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল । সন্ধ্যা হয় হয় ঠিক এ সময় প্লেন মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ল্যান্ড করল । ছোট্ট ছোট্ট মালার পুতির মত দ্বীপপুঞ্জ এই মালদ্বীপ । মুসলিম অধ্যুষিত একটা দ্বীপ দেশ । যোগাযোগ মাধ্যম হলো স্পিডবোট। মালে ইন্টারন্যাশলাল এয়ারপোর্টই একটা ছোট্ট দ্বীপ ও মুল দ্বীপের সাথে এর যোগাযোগ বোটে । ছোট্ট একটা এয়ার পোর্ট। বিমান থেকে আমাদেরকে নামতে দিল না। বিমানে বসেই দেখলাম বাইরের দৃশ্য ।
টিনের চালের একতলা একটা এয়ার পোর্ট । নিয়ন আলোতে ঝলমল । দেশের ওই বিমান বন্দর প্রধানত পর্যটন ও বিদেশের সাথে যোগাযোগের জন্য নির্মিত । কদিন আগেই সার্কভুক্ত এই দেশের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসেছিলেন । মালদ্বীপের নিজস¦ কোন এয়ার লাইন এখন পর্যন্ত নাই । কিছু যাত্রী বিমানে উঠছে । তারা কল¤ে¦া হয়ে ঢাকা যাবে হয়ত ২/১ দিন পর । একজন বাংগালীর সাথে কথা হলো ৫ বৎসর মালেতে আছে । এদেশের লোকজন মন মানসিকতার দিক থেকে ভাল, সে ভালই আছে। স্থানীয় কোন এক বারে কাজ করে । তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে । আশ পাশ অন্ধকার হচ্ছে । আমাদের বিমান মালে থেকে কল¤ে¦ার উদ্দেশ্যে তার ডানা মেলে দিল ।
মালে থেকে কল¤ে¦া ১ ঘন্টার বিমান ভ্রমন । তখন ভারত মহাসাগরের উপর অন্ধকার হয়ে এসেছে । মালদ্বীপের আলো আকাশে উড়ার কিছুক্ষণ পরই হারিয়ে গিয়েছিল । তারপর শুধু বিমানের মধ্যেই আলো। বাইরে নীকষ কাল বিশাল অন্ধকার । উপরে যেমন নীচেও তেমন । তখন পাকিস্তান এর সময়ে রাত প্রায় ৯ টার মত । হোষ্টেসরা সবাই রাতের খাবার সার্ভ কারার জন্য ব্যস্ত। এক ঘন্টার মধ্যে ডিনার খাইয়ে ল্যান্ড করার জন্য রেডি হতে হবে । সবাই খুব ব্যস্ত ছিল । ডিনার খেতে তেমন ভাল লাগল না । কারন পুরোটা ভ্রমনই বসে বসে সময় কেটেছিল বলা যায় । ডিনার শেষ করতে করতেই ঘোষণা দেয়া হলো কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা কল¤ে¦া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করব । সীট বেল্ট বেধে রেডি হলাম । আমাদের ভ্রমন পথের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য । নীচের আবহাওয়া ভাল ছিল। শ্রীলংকার সময় রাত প্রায় সাড়ে দশটায় আমাদের বিমান কল¤ে¦ার মাটি ছুয়ে তার গতি শ্লথ করে আনছিল । বিমান থেকে আস্তে আস্তে নেমে এলাম। শ্রীলংকার সাগর ঘেষা বাতাস টেনে ফুসফুস ভরলাম। পরিবর্তন তেমন চোখে পড়ল না । এশিয়ার এই অঞ্চল আমাদের বাংলাদেশেরই কাছা কাছি । কিছু না হলেও গাছ পালা জলবায়ূ ও প্রকৃতিতে কেমন যেন আপন আপন ভাব দেখলাম । আমি যেহেতু আমাদের সফরের কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্বে ছিলাম তাই সমস্ত জিনিষপত্র সংগ্রহ করলাম ।
এয়ারপোর্টে সবাই আন্তরিক ছিল তাই আমাদের লাগেজ নিতে বা পেতে তেমন কোন অসুবিধা হলো না। আমাদের ক্যামেরার ফ্লাসগুলো জ্বলে উঠছিল বারবার । নতুন দেশ দেখতে এসেছি কাজেই সবারই প্রায় ক্যামেরা ছিল । কল¤ে¦া বিমান বন্দর এর আন্তর্জাতিক লাউঞ্চ এর বাইরে যেতে সেড দেয়া টানা রাস্তা , কাজ চলছিল তখন । সামনে টিন সেড ও পার্কিং থেকে গাড়ী ডাকার ব্যবস্থা । সে রাতে বিমান বন্দরের অন্যান্য অংশ দেখা হলো না তবে বেশ ভাল এয়ার পোর্ট ছিল সেটা । এয়ার পোর্ট থেকে কল¤ে¦া প্রায় ২৫/৩০ কিঃ মিঃ ৪০ মিনিট সময় লাগল । আমাদের জন্য ২টা মাইক্রোবাস ছিল । কল¤ে¦া পৌছানোর আগে দুটো ছোট শহর পার হয়ে এলাম । সাদা মাটা শহর, কাঠ ও মাঝে মাঝে পাকা বাড়িঘর । মাত্রাতিরিক্ত প্রাচুর্য অনুপস্থিত । মুসলিম অধ্যুষিত একটা শহর ও দেখলাম । এদেশে মুসলমান আছে । তবে সিংহভাগ হচ্ছে সিংহলী যাদের ধর্ম হলো বৌদ্ধ ধর্ম । তারপর আছে হিন্দু ধর্মাবল¤¦ী তামিল । কিছু খ্রীষ্টান ও আছে যাদেরকে বার্গার বলে স¤ে¦াধন করা হয় । ইউরোপীয় শংকর গোষ্ঠী । কল¤ে¦াতে তখন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর্মি টেকওভার করেছে ও জায়গায় জায়গায় চেকপোষ্ট ও চেকিং এর ব্যবস্থা । সব পার হয়ে রাত প্রায় ১২-৩০ মিনিটে লংকা ওবেরয় হোটেলে এসে পৌছালাম । হোটেল এর আশ পাশেই ভেসে আসছিল ভারত মহাসাগরের স্নিগ্ধ হাওয়া জল কল্লোল । নিশুতী রাত বিমূর্ত হচ্ছিল সাগরের হাতছানিতে । ৯ তলার একটা রুমে আমরা উঠি । রাত প্রায় ২ টা তখন । রাতে লংকা ওবেরয় হোটেলের রুমে ঘুমাতে ঘুমাতে ৩ টার মত বাজল ।

কলম্বো - শ্রীলংকা
সকালে নাস্তা সেরে ৯ টার দিকে বের হলাম । কার ড্রাইভারের নাম আবে সিংহে । সুঠাম দেহ । কথাবার্তা ভালই বলে । তাকে কল¤ে¦া শহরটা ঘুরিয়ে দেখাতে বললাম । কলম্বো শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় শহর ও পুরানো রাজধানী। দ্বীপদেশ শ্রীলংকার পশ্চিম পাশের এই শহরের অবস্থান বর্তমান রাজধানী শ্রী জয়বর্ধনাপুরা কোটের কাছেই। কলম্বো ঘনবসতি পূর্ণ শহর এবং আধুনিক ও কলোনিয়াল সময়ের বিভিন্ন স্থাপনা ও ধ্বংসাবশেষ এই শহরে সহবস্থান করছে। বর্তমানে এটা দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। ১৫০৫ সালের দিকে পুর্তগীজরা এই কলম্বো নামকরণ করে। কলম্বোর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় কথা ২০০০ বৎসর আগেও আরব রোমান ও চাইনিজ ব্যবসায়ীদের জানা ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে বতুতা এই দ্বীপে ভ্রমণ করেন। পর্তুগীজ ও ডাচদের হাত বদল হয়ে ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশরা কলম্বো দখল করে এবং বর্তমান শহরের পরিকল্পনার বহুলাংশ বৃটিশরাই করেছিল।

কলম্বো শহরের দৃশ্যাবলী
হোটেল থেকে বের হয়েই ভারত মাহাসাগরের পাশ দিয়ে সুন্দর রাস্তা চলে গেছে। সাগর এখানে শান্ত। বীচও আছে কিছুটা রাস্তার পাশে । ফিউনারেল এর জায়গাটা নেভির সৈন্যরা পাহারা দিয়ে রেখেছে । ন্যাভাল বেস এর ভিতর দিয়ে যেতে হয় । জায়গাটার সামনে বিশাল মাঠ, রাস্তাও আছে । চিতা বানানো হচ্ছে পরের দিনের অনুষ্ঠানের জন্য । মানুষজন যেন শ্রদ্ধা জানাতে পারে সে জন্য রাস্তার পাশে এ সুব্যবস্থা । বিভিন্ন দেশ থেকে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এই অন্তেষ্টিক্রিয়াতে যোগ দিতে আসবেন। শ্রীলংকার লোকজন শোকে সাদা পোষাক পড়ে। প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসার শবাধার যে চত্বরে ছিল কলম্বোর মানুষ শোকের পোষাক পড়ে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে অসম্ভব ধৈর্য্য নিয়ে তাদের নেতাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য যাচ্ছিল ।


সাগর সৈকত,কলম্বো, শ্রীলংকা ভারত মহাসাগর
ভারত মহাসাগরের পাড় ঘেষে বানানো রাস্তার এক পাশে কয়েক মাইল লম্বা মানুষের দীর্ঘ সারি বুঝিয়ে দিয়েছিল প্রেমাদাসার জনপ্রিয়তা। সবাই নিঃশব্দে আস্তে আস্তে এগুচ্ছিল । কোন ধরনের শৃংখলা ভংগের প্রবনতা দেখা যায়নি । কি শান্ত ও সমাহিত ভাব ।

পার্লামেন্ট ভবন, কলম্বো
এখানে কাজ কর্ম শেষ করে শহরের চারপাশ দেখতে বের হলাম । কল¤ে¦া ষ্টেডিয়াম এ এলাম । এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। মাঠে হাঁটলাম কিছুক্ষণ । সাগরের কাছেই এই ষ্টেডিয়াম । প্রেমাদাসার বাড়ী, প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেস,সংসদ, ভবন এগুলো আমাদের ঘুরিয়ে দেখালো । রাস্তায় ট্রাফিক তেমন নেই । আমাদের মত এত জনবহুল দেশ নয় শ্রীলংকা । শহরে সুন্দর সুন্দর অট্রালিকা ও রাস্তা আছে এর পাশাপাশি ড্রাইভার আমাদেরকে অনুন্নত বস্তীর কাছে দিয়ে নিয়ে গেল । সেখানে দারিদ্রের চেহারা দেখলাম। সব দেশেই এটার চেহারা এক । ছেলে পেলে কাগজের বল খেলছে, মলিন জীর্ন পোষাক, ছোট ছোট ছাপড়া ঘর । শ্রীলংকায় জিনিষ পত্রের দাম আমাদের দেশের তুলনায় একটু বেশীই বলা চলে । আলুর কেজি ৫০ টাকা আমাদের টাকায়। তখন বাংলাদেশে ছিল দশ টাকা কেজি । আবে সিংহ এক হাজার টাকার মত বেতন পায় ৫০০/৬০০ টাকা বাড়ী ভাড়া ও অন্যান্য খরচ লাগে ও বাকী টাকায় সংসার চালাতে হয় । কিভাবে সম্ভব জিজ্ঞাসা করায় বলল কি করব । ওর শার্ট ও ভাল প্যান্ট সম্ভবত একটাই । ডিউটির সময় পড়ে । সাধারন জনগনের জীবন যাত্রা বেশ সরল ও সাধারন বলে মনে হলো । শ্রীলংকার লোকজনের গায়ের রং বেশ কাল । আবে সিংহ ও এর ব্যতিক্রম না । দুপুর নাগাদ কল¤ে¦া শহরটা দেখে হোটেলে ফিরে এলাম । হোটেলটা বিশাল । রিসিপশনে সাদা চামড়ার মেয়ে বসে আছে । কোন দেশের জানতে চাইলে বলল শ্রীলংকান । তবে খৃষ্টান । এদেরকে বার্গার বলে । এরা সংকর প্রজন্ম । ইউরোপিয় এবং সিংহলী বা তামিল এর মিলনে এই স¤প্রদায়ের সৃষ্টি । এরা বেশ স¥র্ট ও সুন্দর ইংরেজী বলে । শ্রীলংকায় সামাজিক ব্যবস্থা বেশ রক্ষণশীল বলেই মনে হলো । মানুষগুলোর ব্যবহার ভাল । হোটেলে বেশ কিছু স্যুভেনির শপ আছে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম । পরে সিলোন টির সুন্দর দুই তিনটা বাক্স কিনলাম গিফট্ দেবার জন্য । চা কে সুন্দর করে কাঠের বাক্সে প্যাকেট করে রেখেছে । বেশ ভাল লাগে । শ্রীলংকা চা উৎপাদনের জন্য ও বিখ্যাত ।
দুপুরে লাঞ্চ খেতে বের হলাম । হোটেলেই জিজ্ঞাসা করলাম ইন্ডিয়ান ফুড কোথায় পাওয়া যায় । কয়েক ব্লক পরে যেতে হবে বলল। আমরা হেঁটে হেঁটেই হোটেল এ চলে এলাম । ভাত, মুরগী, মাংশ, সব্জী ও ডাল খেলাম । প্রচন্ড ঝাল খায় এরা, মুখটা একদম জ্বলে গেল । মিষ্টি খেলাম দোকান থেকে । খাওয়া রিজনেবল দাম, একশত পঞ্চাশ রুপীর মত লাগল । বিকেল বেলা রুমে এসে কিছুক্ষণ রেষ্ট করলাম ।

রাতে আমাদের পরিচিত বাসায় ডিনার এর দাওয়াত। সন্ধ্যায় আমাদের জন্য দুইটা গাড়ী পাঠিয়ে দিল । খুব সুন্দর বাসা, ড্রইং রুমে বসতে দিল । আমাদের জন্য এলাহি কারবার করেছে পোলাউ, মাংশ, ডিম ইত্যাদি লোভনীয় খাবার । তবে খেতে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল । সবকিছু নারিকেল তেল দিয়ে রাঁধা হয়েছে । আমরা অভ্যস্থ না বলে খেতে মনটা সায় দিলনা । শেষমেষ পোলাউ ও ডিম দিয়ে খাওয়া শেষ করলাম । খাওয়ার শেষে নারকেলের পিঠা ও ডেজার্ট ছিল । অনেকক্ষণ গল্প হলো । রাতে আবার তাঁর গাড়ীতে আমরা ফেরত আসি হোটেলে । এই সুযোগে রাতের শান্ত কল¤ে¦া শহরও দেখা হয়ে গেল ।
পরেরদিন অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময় দুপুরের পর, ৪ টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হলো। সিংহলী ভাষায় বক্তৃতা হলো তারপর তার চিতায় আগুন দেয়া হলো । অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে ফিরে এলাম । এয়ার পোর্টে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । বিমান বন্দরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা । অনেক আর্মি ও পুলিশ বিমান বন্দর ঘিরে রেখেছে । বোমা হামলার আশংকা করছে হয়ত । আমাদের মালপত্র কুকুর দিয়ে চেক হলো । বিমানের সব কিছু চেক করে বিমান উড়ার জন্য প্রস্তুত হলো । আমাদের বিমান ত্রিংকোমালি হয়ে ভারতের উপর দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো । পেছনে ফেলে গেলাম শ্রীলংকার চার দিনের স¥ৃতিময় অবস্থান ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×