Plan of Solomon's Temple with measurements
হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী রাজা ডেভিড (মুসলমানদের কাছে যিনি হযরত দাউদ (অঃ) নামে পরিচিত) ছিলেন প্রথম ব্যাক্তি যিনি অনুসারীদের জন্য অস্থায়ী উপাসনালয় বদলে স্থায়ী উপাসনার চিন্তা করছিলেন, যার কারনে তিনি মোরিয়াহ পাহাড় কিনে নেন, পূর্বে যার নাম ছিল মাউন্ট জিয়ন। যদিও রাজা ডেভিডের মন্দির নির্মানের নকশা এবং প্রয়োজনীয় উপকরন ছিল কিন্তু ঐশী অনুমতি ছিল না উপাসনালয় নির্মানের। সে দায়িত্ব ছিল রাজা তার পুত্র রাজা সলোমন (মুসলমানদের কাছে যিনি হযরত সুলাইমান (অঃ) নামে পরিচিত) ওপর।
Models and maps. Model of Solomon's Temple and environs, (by Dr. Schick)
কিং সলোমনের রাজত্বের চতুর্থ বছর ১০১২ খ্রীষ্টপূর্বে তিনি এই এই উপাসনালয়ের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন, টয়ারের রাজা হিরামের সাহায্যে সাত বছর পর ১০০৪ খ্রীষ্টপূর্বে তিনি এই কাজ শেষ করেন। হিব্রু সময় অনুযায়ী এটা ৩০০০ বিশ্ব অব্দ। সলোমনের অনুরোধে টায়ারের রাজা হিরাম শুধু কাঠের গুড়িই না তার অঞ্চলের প্রধান স্থপতি এবং নকশাবিদ হিরাম আবিফ কে পাঠান। টায়ার ছিল আধুনা ফিনিশীয় অঞ্চলের অন্তর্গত।
উক্ত উপাসনালয় তৈরী করতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক প্রয়োজন হওয়ায় রাজা সলোমন শ্রমিকদের মধ্য থেকেই যারা সৎ, দক্ষ, ধার্মিক তাদের তদারকির কাজ দেন। উপাসনালয় তৈরী হবার পর এর সব থেকে পবিত্র স্থানে আর্ক অভ দ্য কভেন্যান্ট স্থাপন করেন কিং সলোমন। ইহুদীদের এই উপাসনালয় কে বলা হত যিহোভার (ঈশ্বর) ঘর। বলা হত এটাই সর্ব শক্তিমানের আবাস। প্রাচীন পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এক স্থাপত্য ছিল এই উপাসনালয়। এর চারপাশে ছিল প্রশস্ত আঙ্গিনা। যার পরিধি ছিল আধা মাইলের বেশী। একে ঘিরে রেখেছিল এই সুউচ্চ দেয়াল যার সর্বনিম স্থানও ৪৫০ ফিটের মত উচু।
এর দৈর্ঘ্য ছিল ৯০ ফিট এবং বারান্দা সহ একশ পাচ ফিট। প্রশস্ত ৩০ ফিট। এর বাইরের প্রাঙ্গন অসংখ্য ছোট বড় বারান্দা, ভেতরে বাইরের কারুকাজ এক দিয়েছিল এক অনন্য মাত্রা যার কারনে শেবার রানী এটিকে দেখে বলছিলেন নিশ্চয়ই এটি কোন সুদক্ষ কারিগরির হাতে তৈরী।
The First Temple: Crowning Achievement of King Solomon and Home of the Legendary Ark of the Covenant
ইসরাইলের বারোটি গোত্রই এই নির্মান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি নির্মানে বর্তমানের হিসাবে প্রায় সাড়ে চার হাজার মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। এবং সাত বছর ধরে প্রায় ১৮৪৬০০ মানুষ নিয়োজিত ছিল। কাজ শেষ হবার পর সাত দিন উপবাস করে সলোমন এখানে প্রথমবারের মত উপাসনা করেন। এই সময় বিশ হাজার ষাড়, এক লাখ বিশ হাজার ভেড়া উৎসর্গ করা হয়। যা গ্রহন করতে আকাশ থেকে নেমে আসে স্বর্গীয় আগুন।
খ্রীষ্ট পূর্ব ৫৮৭ সালে ব্যাবেলনীয়ার রাজা নেবুচাদনেজার এই মন্দির ধ্বংস করে দেয়, এবং হারিয়ে যায় আর্ক অভ কভেন্যান্ট। মুল প্রাঙ্গন থেকে বারো ধাপ ওপরে উঠলে ছিল মুল মন্দির। যেটি তিনটি ধাপে বিভক্ত বারান্দা, আশ্রম এবং সব থেকে পবিত্র স্থান “ Holy of the holies” যেখানে এই আর্ক অভ কভেন্যান্ট রাখা হয়েছিল। সে সময় কাসা ছিল সব থেকে মূল্যবান ধাতু। মুল মন্দিরে ঢোকার দরজা ছিল সম্পূর্ন কাসার এর ঠিক নীচেই বারান্দার ঠিক বাইরেই ছিল ২৭ ফিট উচু কাসা নির্মিত দুটো খুটি এদুটোর নাম ছিল “জাকিন” এবং “বোয়াজ”। ধারনা করা এই খুটি দুটো নির্মানের সময় সলোমন আগুন আর মেঘের সেই খুটির কথা মনে রেখেছিলেন যেটি দেশত্যাগের সময় বুনো অঞ্চল পার হবার সময় ইজ্রাইলীদের সামনে থাকত।
Solomon and the plan for the First Temple , illustration from a Bible card published by the Providence Lithograph Co
বারান্দা থেকে একটি সরু পথের মাঝ দিয়ে আশ্রমে প্রবেশ করা যেত। এখানে দরজার পরিবর্তে থাকত নানা রঙয়ের একটি পর্দা, যেটি মুলতঃ মহাবিশ্বের প্রতীক হিসাবে কাজ করত। সব থেকে পবিত্র স্থান ছিল একদম আশ্রমের কেন্দ্রে যা একটা জলপাই কাঠে প্রস্তত দরজা দ্বারা আলাদা করা হয়েছে। এই পবিত্র স্থানে কেবল মাত্র প্রধান পুরোহিত ঢুকতে পারত তাও বছরের একটা নির্দিষ্ট দিনে যাকে তারা বলতঃ “প্রায়শ্চিত্ত স্বীকারের দিন”।
জোসেফাস বলছেন, “কেউ যদি প্রাচীরের ওপর থেকে নীচের দিকে তাকাত তবে তার মাথা ঘুরে উঠত, কারন এর নীচ পর্যন্ত দৃষ্টি চলত না।” এটিকে অবশ্য বাড়িয়ে বলা বলে মনে করা হত যতদিন না আধুনিক পর্যবেক্ষক দলের মাধ্যমে কথাটির সত্যতা প্রমানিত না হত। মোরিয়ার ঢাল বেয়ে গড়ে উঠেছে বিশালাকার সব বিল্ডিং তাদের চাপে উপাত্যাকা প্রায় সমান হয়ে গিয়েছিল। সলোমনের মন্দির বলে যে জায়গাটিকে সনাক্ত করা হয়েছে বাস্তবে দেখা গেল তার সত্তর থেকে নব্বই ফিটে এর অবস্থান।
In the middle of ancient Jerusalem stands the famous temple of Solomon. Library of Congress's Prints and Photographs division
কোদাল আর শাবল নিয়ে লেগে গেল ব্রিটিশ অভিযাত্রী দল সঠিক ভিত্তির সন্ধানে। বিশাল খুটিগুলো সামনে পড়লে এড়িয়ে যাওয়া হত অথবা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরনের মাধ্যমে পথ করে নেয়া হত। দগ্ধ জেরুজালেমের ছাই আর মাটির নীচ থেকে বের হতে থাকল ইহুদী অহংকারের সব প্রতীক। এখান থেকে উদ্ধার করা হয় প্রাচীন হিব্রু ভাষায় লেখা “হাজ্জাই” এর সীলমোহর। ফিনিশীয় স্থাপতিদের প্রথম স্থাপন করা পাথরের ভিত্তিতে পৌছে যায় অভিযাত্রীরা যার নীচেই ছিল প্রাকৃতিক পাথরের ভিত্তি।
Gigantic footprints belonging to the resident deity were carved at the temple’s entrance. Photo: A.M. Appa.
পুরা মোরিয়া পাহাড় পর্বতে রয়েছে অসংখ্য গুহা। এর একটি গুহার নাম “গ্রেট সী” যেখানে প্রায় দশ মিলিয়ন গ্যালন পানি ধরত। ওফেলের দেয়াল পাওয়া গেছে যেটি পাওয়ার সময়ই ছিল সত্তর ফিট উচু, এছাড়া অন্যান্য বাড়ী ঘর পাওয়া গেছে যেগুলো জুডাহদের রাজাদের সময় তৈরী। বর্তমানে সলোমনের মন্দিরের জায়গায় আছে দুটো তুর্কি নির্মিত মসজিদ। ৯৭৫ খ্রীষ্টপূর্বে রাজা সলোমন মারা যায়। তার সময় তার রাজ্য এতই সম্পদশালী হয়ে উঠছিলো যে রূপা হয়েগিল মূল্যহীন।
আজকে কিং সলোমন টেম্পলের এতটুকু বর্ননাই দেব ভালো লাগলে এর সাথে সম্পর্কীয় অন্যান্য বিষয় বস্ত আনব।
কেন জানি আজকে বাংলা ব্লগের মুকুটহীন সম্রাট প্রায়াত ইমন যুবায়ের ভাইকে মনে পড়ছে লেখাটা তাকে উৎসর্গ করে। এই ধরনের লেখা উনি খুব পছন্দ করতেন।।
কেউ চাইলে এই রিলেটেড কিং সলোমন ও শেবার রানী বিলকিস লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। অনেক আগে লিখছিলাম।।
হযরত সোলায়মান (অঃ) মুসলমানদেরও নবী ছিলেন, পবিত্র কোরানের আলোকে হযরত সোলায়মান (অঃ) এর জীবনীঃ লেখাটা পড়লে ইসলামের দৃষ্টিতে তাকে বুজতে পারবেন।
সূত্রঃ Solomon's Temple
The First Temple: Crowning Achievement of King Solomon and Home of the Legendary Ark of the Covenant
Searching for the Temple of King Solomon
The origin of freemasonry and Knights templar
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৪