ডাচ মাষ্টার ভ্যান গঘ এবং এ্যাবসিনথি মদ
জানিনা ডাঃ বরেন চক্রবর্তীর নাম কয়জন শুনেছেন। পেশায় একজন ডাঃ কিন্তু নেশায় একজন চিত্র ট্রাভেলগ। ছবি দেখার জন্য সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর সেগুলোর এত মনোমুগ্ধ কর বর্ননা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লিখছেন যে, আমার মত ছবি নিয়ে নাক সিটকানো মানুষকে ও চিত্র এবং চিত্রকলা নিয়ে দেখতে আর পড়তে উৎসাহিত করেছেন। অনেকেই হয়ত উনার বিভিন্ন লেখা পড়ছেন। আমি চেষ্টা করব উনার সেই সব বর্ননা থেকে মাঝে মাঝে নিজের ব্লগে সেগুলো লিখে রেখে যেতে।
এ লেখাটার অধিকাংশ ডাক্তার বরেন চক্রবর্তীর একটা লেখা থেকে নেয়া। উনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকে ডাচ মাষ্টার ভ্যান গগ এর উপর লেখাটা
ডাচ পেইন্টার ভ্যান গগ ছিলেন একজন বোহেমিয়ান টাইপের মানুষ। তার শিল্প জীবন মাত্র ১০ বছর অর্থ্যাৎ ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত। এমন পাগল মানুষ ছিলেন তিনি যত না ছবি একেছেন তার থেকে বেশী পেইন্টিং নিজ হাতে ধ্বংস করেছেন। সামান্য তম খুত পেলেই নিজের ছবি নিজে ধ্বংস করে দিতেন। তারপরো ৯০০ টি পেইন্টিং ১১০০ ড্রয়িং টিকে গেছে
ভ্যান গঘ নিজেই বলে গেছেন The Potato eaters ছবিটি তার সেরা ছবি
ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গগের জন্ম ১৮৫৩ সালের ৩০শে মার্চ হল্যান্ডের পশ্চিমে একটা ছোট গ্রামে। বাবা থিওডরাস ভ্যান গগ ছিলেন স্থানীয় চার্চের যাজক। ছোটবেলা থেকেই পড়া শুনায় অমনোযোগী ভ্যান গগ ছিলেন স্বশিক্ষিত চিত্রকর। নিজের শৈশব নিয়ে নিজেই বলেছেন Gloomy, cold and sterile. লেখা পড়ার জন্য তার পরিবারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থতায় পর্যবাসিত হয় তখন তাকে হেগের গোপিল এ্যান্ড চি আর্ট গ্যালারীতে সেলসম্যান হিসাবে কাজ দেয়া হয়। মালিক তার আর্টের ওপর জ্ঞান দেখে তাকে লন্ডনের আর্ট গ্যালারীতে বদলি করা হয় এখানেও ভ্যান গগ দক্ষতা দেখাতে থাকেন।
Sunflowers
Sunflowers সেই বিখ্যাত ছবি
এখানে এসেই ভ্যান গগের জীবনে ছন্দ পতন ঘটে। যে বাড়ীওয়ালার বাড়ীতে থাকতেন সেই বাড়ীওয়ালার মেয়ে ইউজিন কে প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। কাজে মনোযোগ হারান ফলশ্রুতিতে চাকুরী হারান। এই সময় থেকে ভ্যান গগ এর মানসিক অস্থিরতা দেখা যায় প্রায় সময়ই কাটান পতিতালয়ে, এক পর্যায়ে ধর্মের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। ধর্মবিদ্যা পড়ে চার্চেও চাকুরী নিন। কিন্তু যাজকের কাজ করার সময় অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য আবারো যাজকের চাকুরী হারান।
চাকুরী হারিয়ে ভ্যান গগ তার ভাই থিয়োর কাছে চলে আসেন। থিয়ো তাকে ছবি আকা শেখার পরামর্শ দেন। সে আমালের বিখ্যাত ডাচ শিল্পী উইলিয়াম রুলফ চিত্রকলার বিভিন্ন টিপস ভ্যান গগ কে শিখাতে থাকেন।
শিল্পী হবার উদ্দাম নিয়ে তিনি বাড়ীতে আসেন এখানে এসে আর এক বিপর্যয়। বাড়ীতে এসে দেখেন তার থেকে আট বছরের বড় মামাতো বোন কী ভস ষ্ট্রিকারকে যে কিনা বিধবা আর ৮ বছরের এক ছেলের মা। এই কী ভস কে দেখে আবার প্রেমে পড়েন ভ্যান গগ বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যান কিন্তু ওই সময় ডাচ চার্চের নিয়ম অনুযায়ী একই বংশের ভাই বোনের বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল।
ভ্যান গগ যখন কী ভস কে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন কী ভস মাত্র তিনটি কথায় উত্তর দেন Niet, Nooit, Nimmer. মানে No, Never and never. কিন্তু প্রেমে পাগল ভ্যান গগ এতে দমে যান নি। মামার বাড়ী ছুটে যান কী ভস কে দেখার জন্য কিন্তু মামা বলে দেন কী ভস তার সাথে দেখা করবে না। রাগে উন্মাদ ভ্যান গগ মোমবাতি জ্বালিয়ে তার ওপর হাত রেখে চিৎকার করেন “Let me see her for as long as I can keep my hand on flame.
ওই সময়ের পর ভ্যান গগ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েন। মানসিক আর সামাজিক দিক দিয়ে প্রায় উন্মাদ হয়ে যান। বার বার নানা রকম যৌন রোগ বাজাতে থাকেন। ১৮৮৩ সালে জটিল গনোরিয়া থেকে ভালো হয়ে নতুন উদ্দামে কাজ শুরু করেন।
ভ্যান গগের সাথে আর এক ডাচ মাষ্টার পল গগ্যার ছিল বেশ বন্ধুত্ব। কিন্তু পাগলের সাথে বন্ধুত্ব কত দিন আর টেকে। ১৮৮৮ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর বন্ধু গঁগ্যার সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে শেভ করার রেজার দিয়ে গঁগ্যাকে আক্রমন করে আহত করেন। বন্ধুকে আহত করেই পুলিশের ভয়ে ভ্যান গগ পতিতালয়ে চলে যান। ওই পতিতালয়ে ভ্যান গগ পতিতা র্যা চেলের সাথে তার কাটান। এই সময় ভ্যান গগের পকেটে কোন টাকা পয়সা থাকত না।
সকালে পকেটে হাত দিয়ে দেখেন কোন টাকা নেই, হাতে ছুরি নিয়ে নিজ হাতে নিজের কান কাটেন ভ্যান গগ এর পর একটা প্যাকেটে ভরে ওটা সরল মনা র্যা চেলের হাতে দেন আর বলেন, “keep this object carefully”। ব্যাচেল ভেবেছিলেন ওটা তার পাওনা টাকা। শুধু এই কান কাটার সাথে সম্পৃক্ত থেকে র্যা চেল নামক পতিতাও আজকে চিত্রশিল্পের ইতিহাসে অমর। এই কানা কাটার ছবি সহ নিজের সেলফ পোর্ট্রেট আকেন Self portrait with bandaged ear and pipe.
ভ্যান গগ হলুদ রঙের প্রতি মারাত্মক দূর্বল ছিল। শিল্পী নিজেও বলেছেন হলুদ মানেই সূর্য। শিল্প বোদ্ধারা বলেন “Foe Van gogh the color yellow symbolized the hope and the truth of God’s love”. এই হলুদ রং পছন্দ করা নিয়েও নানা মুনীর নানা মত আছে, কেউ কেউ বলতেন ভ্যান গঘ Absinthe নামে এক ধরনের তীব্র ঝাজওয়ালা মদ খেতেন এই এ্যাবসিনথি নামক মদে Thujone নামে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ আছে আর এই থুজন খেলে মানুষের “ইয়োলো ভীষন” হয়। শিল্পীর the yellow house দেখুন।
এই এ্যাবসিনথি মদের উৎপত্তি হলো Artimisia absinthium নামক এক প্রকার গাছ থেকে, এর নির্যাস কে থুজন বলা হয়। এই থুজনকে বলা হয় The green fairy. এই মদ খেলেই আপনার চোখের সামনে লাল পরী, নীল পরী, হলুদ পরীরা নাচতে থাকবে। এ্যাবসিনথি মদ নিয়ে বেশ কটি মাষ্টার পীস আছে পৃথিবীতে। এদ্যুয়ার মানের “The Absinthe drinker”
এডগার দেগারের “L’ Absinthe”
এ্যাবসিনথি মদে ৪৭ থেকে ৭৪ ভাগ এ্যাবসলুট এ্যালকোহল থাকে। এক সময় পৃথিবীর প্রায় সব শিল্পী কবিরা এই এ্যাবসিনথি মদে আসক্ত ছিলেন। তাই তাদের কে বলা হত “Bad men of that day who were devotees of the green fairy Absinthe” এই এ্যাবসিনথি তে আসক্ত কয়েকজন বিখ্যাত র নাম ফ্রান্সের কবি চার্লস পিয়ের বোদলেয়ার, আইরিশ লেখক অস্কার ওয়াইল্ড, ফ্রান্সের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হেনরি দ্যা লোত্রেক টলুজ। আজব ব্যাপার কি জানেন এই মদ যারা খেতেন সেই সব বিখ্যাত মানুষ গুলো কিন্তু বেশী দিন বাচে নি, কিন্তু যত দিন বেচেছেন তার মাঝে দুনিয়াকে তাদের মিধা প্রতিভা দিয়ে চমকিত করে গেছেন, বলা হয় বর্তমান বিশ্বের কবিদের ওপর বোদলেয়ারের প্রভাব সব থেকে বেশি, লোত্রেক মাত্র ৩৬ বছর বেছে ছিলেন, ওয়াইল্ড লিখে গেছেন An Ideal Husband এর মত প্লে। লোত্রেক একে গেছেন তার La Blanchisseuse.
এতে কি প্রমানিত হয় এবসিনথি খেলা মানুষ প্রতিভাবান হয়? অবশ্যই না। কারন এ্যাবসিনথি একটা সাইকোঅ্যাক্টিভ ড্র্যাগ। তবে অনেকের ই ধারনা এই থুজন ভ্যান গগ কে সব কিছু হলুদ দেখাত তাই তো তার আকায় হলুদ রং এর এত প্রভাব।
ভযান গঘের হার্ট ফেইলুর রোগ ছিল। সেসময়ের বিখ্যাত ডাঃ গ্যাসেট ভ্যান গঘ কে চিকিৎসা দেন। গ্যাসেট ভ্যান গঘকে Digitalis নামে যে অষুধ দেন তা Foxglove নামে এক ধরনের গাছের রস থেকে তৈরী। আর এই ডিজিটালিস ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিন্তু ইয়োলো ভীষন। ভ্যান গঘ তার ডাঃ গ্যাসেট কে অমর করে রেখে গেছেন তার “Portrait of Dr. Gachet” চিত্রে। ডাঃ গ্যাসেটের পোর্টেট কিন্তু পৃথিবীর সর্বাধিক মূল্যবান পোর্টেটের একটি। ১৯৯০ সালে এই পোর্টেট মাত্র ৮২.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়।
ডাচ মাষ্টার ভ্যান গঘকে নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে আছে যদি আপনাদের এই পর্ব ভালো লাগে।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন