আমার জানা মতে সে সময় ক্যাডাররা নারী সংসর্গ কিছুটা এড়িয়ে চলত। তখনকার হিরোইজম ছিল মেয়েদের পাত্তা না দেয়া। আমার জানা মতে কোন ক্যাডারের কোন প্রেমিকা ছিলনা। আর ভাল লাগছে না পুরানো সেই সব স্মৃতি টেনে আনতে। আরো কিছু কথা ছিল এখন আর বলব না। পরে আর কোন দিন। এ সিরিজে এটা আমার শেষ লেখা। একটা কথা খুব পরিস্কার দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানাতে চাই আমি আমার অতীত নিয়ে কোন দিন লজ্জিত না। আমার অন্ধকার দিক থেকে আমি যা জেনেছি তা আজকে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে সহায়তা দিছে।
সবচেয়ে খারাপ বিষয় ছিল তখনকার ক্যাডারদের নেশার ব্যাপারটা। সবাই মোটামুটি ফেন্সিডিলে আস ক্ত ছিল। কেউ কেউ আবার ঘুমের ট্যাবলেট। আপানাদের একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে এরা যেকোন সময় প্রতিপক্ষের আক্রমনের শিকার হতে পারত। সাময়িক হিরোইজম থাকলেও ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা থেকে এরা কিন্ত নেশা করত। ওই সময় কিন্তু নিরিহ ছাত্রদের ওপর অত্যাচার কে কাপুরুষতা হিসাবে গন্য হত।
জাকির কে বলা হয় অভির পর এত কোয়ালিটি অস্ত্রবাজ ক্যাম্পাসে কেঊ পায়নি। কিন্তু জাকিরের ফালতু নেতৃত্বের অভাবে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় জীবন নষ্ট হয়ে যায়। কেউ কেউ তারপরও বের হয়ে আসে। চলুন দেখি ওদের কজনা কেমন আছে।
খালেদঃ কিং খালেদ নামে পরিচিত ছিল। ভীষন ষ্টাইলিশ ছেলে। মেট্রিক, ইন্টারে ষ্টার সহ ঢাবিতে কেমিষ্ট্রিতে ভর্তি হওয়া। ভীষন সাহসী। অসম্ভব বন্ধু বৎসল। প্রচন্ড হতাশার কারনে নেশার কাছে আত্মসর্মপন করে। ভার্সিটির পড়াশুনা শেষ করতে পারেনি। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সিঙ্গাপুর যায়। দু বছর পর দেশে এসে। বর্তমানে বিরাট একটি বেসরকারী অফিসে সিনিয়র ম্যানেজার হিসাবে নিজের যোগ্যতা প্রমান করে যাচ্ছে।
রুনুঃ আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী ছেলে। ভীষন ঠান্ডা প্রকৃতির। ওর চোখ দুটি ছিল সাপের মত। অনেকেরেই দেখছি ওর চোখের দিকে তাকালে সব ভূলে যেত। জাকিরের সাথে অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের হাতে ধরা খায় কিন্তু তাৎখনিক তদবিরে বের হয়ে আসে। ডিবি পুলিশের মাইরে এখনও হাটতে কষ্ট হয়। কিন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যায়। বর্তমানে এ বিদেশে অবস্থান করছে
মিলনঃ ম্যাথের ছাত্র।জাকির গ্রুপের এক মাত্র ছেলে যে কখনও নেশা করেনি। অসাধারন ভালমনের ছেলে ছিল। জাকিরের সাথে ডিবি পুলিশের হাতে রুনুর সাথে ধরা খায়। দু বছ্র জেল খেটে ছাড়া পেয়ে আবার পড়াশুনায় মনোনিবেশ করে। এবং ম্যাথ থেকে মাষ্টার্স করে। বর্তমানে বহুজাতিক কম্পানিতে বিদেশে কর্মরত আছে।
তাপসঃ বিরাট চালু পোলা। অনেক আগেই বুজতে পারছে এ লাইনে ভাত নাই তাই খুব তাড়াতাড়ি হল ছেড়ে খালাতো বোন বিয়ে করে ছাত্র অবস্থায়। এখন হজ করে বিরাট এক মার্চেন্ডাইজারের দেশি বস।
টিটুঃ প্রচন্ড নেশা করে শেষ হয়ে যাবার পথে ছিল। খুব একটা সাহস ছিলনা কিন্তু উপস্থিত ভাব দিয়ে যে কোন পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারত। এক পর্যায়ে স্কটল্যান্ড চলে যায়। বর্তমানে দেশে একটি ফোন কোম্পানীতে চাকুরীরত।
ডনঃ প্রচন্ড ইমোশনাল। ইংরেজীতে পড়ত। প্রচন্ড ঘুমের ট্যাব্লেট খেত, মুড়ির মত হাতের তালুতে করে নিয়ে গিলে ফেলত। অনার্স করে পরে একটি কলেজে শিক্ষকতা করছে।
ডগ শিশিরঃ হলে কুত্তা পালত তাই এর নাম ছিল ডগ। এক মাত্র এই বান্দাই এখনো রাজনীতি করে আমার ব্যাচের। এখন ও হাকিমে গেলে দেখা পাইতে পারেন। ভালই করছে রাজনীতিতে। এখন পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরে। অনেক চেঞ্জ। বর্তমানে এক আওয়ামী নেতার ব্যাবসা দেখাশুনা করে।
আসাদঃ এক সময়ের ঢাবির ছাত্র দলের সেক্রেটারী।
শিমুলঃ বর্তমানে খুব জাদরেল নেতা। শুনছি, তারেক জিয়ার খুব কাছের মানুষ।
এই পর্যন্ত থাকুক। আর না। ভাল লাগে যখন দেখি সবাই বেশ ভাল আছে। আসলে কোয়ালিটি থাকতে হবে। তাইলে যে কোন খানে ভাল করা যাবে। আনেক রাজনীতির গল্প বললাম। এদেশের নষ্ট রাজনীতি চেঞ্জ করতে হবে। আমি আশাবাদী আমরা পারব। আমরা কিন্তু ঘুমাই নি। জেগে আছি। সময় মত গা ঝারা দেব। এই আমার দেশ। আমার বাংলাদেশ। (শেষ)
ভার্র্সিটির অন্যান্য পোষ্ট
আমার দেখা ঢাকা ভার্সিটির অস্ত্রবাজরা
আমার দেখা ঢাকা ভার্সিটির অস্ত্রবাজরা - ২য় পর্ব
আমার দেখা ঢাকা ভার্সিটির অস্ত্রবাজরা - ৩য় পর্ব
বিধাতার অসীম করুনা চমৎকার সব মানূষগুলোর সাথে আমার পরিচয় ছিল
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫৩