শ শ বছর ধরে রাজা রানীদের ভুত প্রেতদের নিয়ে নানা গল্প কাহিনী চলে আসছে, আসবে না কেন? জীবিতকালে যে ভাবে মানুষদের উপর অত্যচার করেছে তাতে মরার পর ভূত হওয়া এক রকম অবধারিত।আর সাধারনত তারা ভূত হয়ে তাদের দূর্গে ঘুরে বেড়ায়, তাদের অপরাধ এত বেশি ছিল যে এখনো মাঝে মাঝে চকিত চমকের মত মহাকালের গর্ভ ফুরে জনসমক্ষে বেরিয়ে এসে মনে করিয়ে দেয় তাদের নৃসংশতা।সাহেব রাজা, রানীদের ভুতের দেখা এখনো ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যায়।
গ্লুসেস্টারশায়ারের বার্নলি শহরের মানুষ সেখানে অবস্থিত এক প্রাচীন দূর্গের কারনে যথেষ্ট গর্বিত আবার বিব্রত ও বটে। কারন ওই দূর্গ থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসে যন্ত্রনাকাতর আর্তনাদ এবং আরো নানা বিভৎস চিৎকার। ১৩২৭ সালে ওই দূর্গে অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সাথে গনগনে লাল শিক দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল রাজা দ্বিতীয় এডোয়ার্ডকে( জন্ম ১২৮৪ খ্রীষ্টাব্দে)।ওই বীভৎস নির্যাতনের কারনে দুঃসহ যন্ত্রনায় অবিরাম অর্তনাদ করেছেন তিনি, সেই আর্তনাদ এখনো নাকি মাঝে মাঝে শহরের এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত শোনা যায়।
এডোয়ার্ডকে নির্যাতনের পেছনে ছিল তার ব্যাভিচারী স্ত্রী ইসাবেলা (১২৯২-১৩৫৮)। তার প্রেতাত্মাকে নাকি উন্মাদিনীর মত ছুটে বেড়াতে দেখা যায় নরফোকের রাইজিং দূর্গের ওপর ও চারপাশে নির্মিত ঢিবিতে। আর এডোয়ার্ড ও ইসাবেলার পুত্র রাজা তৃতীয় এডোয়ার্ড এর প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায় কেন্ট এর হল প্লেস এ। ব্লাক প্রিন্স নামে পরিচিত তৃতীয় এডোয়ার্ড মায়ের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে রাজ্যশাষন শুরু করছিলেন ১৩৩০ অব্দে। তবে তার প্রেতাত্মাকে তখন ই দেখা যায় যখনই বৃটেন কোন হুমকির মুখে পড়ে। তাছাড়া তার প্রেতাত্মা ওই প্রাসাদের বর্তমান মালিকদের বিপদ আপদ সম্পর্কে আগাম ধারনা দেয়। ওই প্রেতাত্মাকে দেখা যায় গোধুলী বেলায় তখন নাকি শোনা যায় বিভিন্ন প্রাচীন যন্ত্র সংগীত।
ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরী (১৪৫৭-১৫০৯) বিয়ে করছিলেন বিধবা ভ্রাতৃবধু ক্যাথেরিনকে। যাকে তিনি তালাক দেন ১৫৩৩ সালে। এরপর বিয়ে করেন অ্যান বেলিন কে। ব্যভিচারের দায়ে অ্যানের শিরচ্ছেদ ঘটান ১৫৩৬ সালে। হেনরীর তৃতীয় স্ত্রী জেন সিমুর মারা যায় ১৫৩৭ সালে। এরপর ১৫৪০ সালে বিয়ে করেন অ্যান অভ ক্লিভসকে। পরে তাকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেন ক্যাথেরিন হাওয়ার্ডকে। ব্যাভিচারের দায়ে তার শিরচ্ছেদ ঘটান ১৫৪২ সালে, পরের বছর বিয়ে করেন ক্যাথেরিন পার কে। তার অবশ্য স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বিধবা অবস্থায়।
রানী অ্যান বেলিনের প্রেতাত্মাকে দেখা যায় শেষ বিকালে হ্যাম্পটন কোর্ট প্রাসাদের করিডোরে। যারা তাকে দেখেছেন তারা ব লেছেন রানীকে নাকি দেখা যায় বিষন্ন, উদ্ভিগ্ন, উৎকন্ঠিত অবস্থায়। মনে হয় আসন্ন বিপদের খবর তিনি পেয়েছিলেন। রানী জেন সিমুরের প্রেতাত্মাকে নাকি দেখা যায় ১২ই অক্টোবর। ওই দিন জন্ম নেয় তার সন্তান পরবর্তী রাজা ষষ্ট এডোয়ার্ড (১৫৩৭-১৫৫৩)। জেন সিমুরের চেহারা নাকি শান্ত স্নিগ্ধ কিন্তু ক্যাথেরিন হাওয়ার্ড এর আত্মা নাকি সব সময় চিৎকার করে বেড়ায় কারন রাজা তাকে ব্যাভিচারের অভিযোগে যখন গ্রেফতার করে টাওয়ারে নিয়ে যায় তখন তিনি নাকি নিজেকে নিরাপরাধ দাবী করছিলেন।
কিছুদিন আগে হ্যাম্পটন কোর্ট ধোয়া মোছার জন্য এক শক্ত সমর্থ পরিচারিকা নিয়োগ দেয়া হয়। একদিন হঠাৎ দেখা যায় সিড়ির ওপর মরে পরে আছে বিচিত্র ভাবে। সে ছিল হাটু গেড়ে বসা- পাথরের মুর্তির মত।এক হাতে সামলে রেখেছে নিজেকে, অন্য হাতে ধরে রেখেছে ধোয়া মোছার বুরুশ। ভয়ে আতঙ্কে তার চেহারা বিকৃত- দু চোখ শূন্যের দিকে নিবন্ধ। কিন্তু কি এমন দেখেছিল যাতে আতঙ্কে তার মৃত্যু হয়েছিল তবে কি রাজা তৃতীয় হেনরী?
হ্যাম্পটন কোর্ট প্রাসাদটি নির্মান করেছিলেন লর্ড চ্যান্সেলর কার্ডিনাল টমাস উলসি (১৪৭৫-১৫৩০)। রাজা অষ্টম হেনরীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার সেই সম্পর্ক পূনোরুদ্বার করার আশায় প্রসাদ টি নির্মান করে রাজাকে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত এই প্রাসাদ এক দিন হানা বাড়ী হয়ে দেখা দেবে? টমাস উলসি নিজেও প্রেতাত্মা হয়ে দেখা দেবে? ১৯৬৬ সালে প্রাসাদে ‘সন অভ ল্যুমেয়ের’ নামক এক অনুষ্ঠানে কার্ডিনাল টমাস উলসিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রথমে তাকে সবাই মনে করেছিল অন্যান্য অভিনেতাদের একজন, হঠাৎ খেয়াল পড়ল এই অনুষ্ঠানে টমাস উলসি নামে কোন চরিত্র নাই ততক্ষনে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে পঞ্চদশ শতকের ইংল্যান্ডের এই ভাগ্যনিয়ন্তা।
আমি জানি আপনারা বল্বেন ভুত বলে কিছু নেই এগুলো কোন দুষ্ট লোকের কারসাজি অথবা সাজেঁর আলোর লুকোচুরি, সে যাই বলেন না কেন আমি কিন্তু আপনাদের সাথে এ ব্যাপারে কোন বাজি ধরবনা। বিশ্বাস অবিশ্বাস সম্পূর্ন আপনার ইচ্ছে। রাজা রানীদের মর্জি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫১