মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক রহস্যময় চরিত্র হচ্ছে শেবার রানী। বাইবেলে উল্লেখ্য আছে শেবার রানী, রাজা সোলায়মানের কথা শুনে তার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। বাদশাহ সোলায়মানের ছিল ব্যাপক প্রতাপত্তি। বিশাল এই সম্রাজ্যর রাজা ছিলেন সোলায়মান। তার ছিল ১২০০০০ অশ্বারোহী সৈন্য, ১৫০০০০ যুদ্বের উট, ১৪০০০ যুদ্বরথ। এই বিশাল শক্তির সাহায্যে ইউফেট্রিস থেকে সিনাই মরুভূমি ওদিকে লোহিত সাগর থেকে পাময়ারা পর্যন্ত সমস্ত যাত্রাপথ, সোলায়মানের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল।
রাজা সোলায়মান সন্মন্ধ্যে বলা হয় তিনি নাকি ব্যাপক জ্ঞানী ছিলেন। তার হুকুম এমন কি অশরিরীরাও মান্য করত। রাজা সোলায়মান এমন কি পশুপাখির ভাষাও বুজতে পারতেন। এমন জ্ঞানী রাজার সাথে যখন রানী শিবা দেখা করতে এলেন তখন যথোপযুক্ত উপঢৌকনও সাথে অনলেন।
বাইবেলে এর First book of kings এর অন্তর্গত দশম অধ্যায়ে আছে শিবার রানীর কথা। বর্নিত আছে এভাবে যখন শিবার রানী সোলায়মান রাজার জ্ঞানের কথা শুনতে পারলেন তখন তাকে কিছু প্রশ্নের দ্বারা পরীক্ষার জন্য জেরুজালেম এলেন। রানীর সাথে এক বিশাল গাড়ী ভর্তি মশলা, সোনা, জহরত নজরানা হিসাবে নিয়ে এলেন। এরপর রানী তাকে তার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং সন্তষ্ট হয়ে ফিরে যান।
খ্রীষ্টীয় সাধু ম্যাথুস এর সুমাচার এ আছে প্রভু যীশু দক্ষিনের রানীর কথা বলেছেন, “পৃথিবীর সব থেকে দূর্গম স্থান থেকে সোলায়মানের বুদ্বি পরিক্ষা করার জন্য তিনি এসেছিলেন”।
বাইবেলে যেমন শীবার রানি সন্মন্ধ্যে উল্লেখ আছে পবিত্র কোরানেও তার উল্লেখ্য আছে। শেবার রানী বিলকিস যখন সলোমনের সাথে দেখা করতে এল তখন বিলকিস অবাক হয়ে দেখতে পেল তার সিংহাসন সেখানে রক্ষিত। সূর্যউপাসক শেবার রানী হতভম্ব হয়ে গেল।
রানী বিলকিস আরও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তার সিংহাসনে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। তাকে একাগ্রচিত্তে সিংহাসনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাদশা শলোমন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার সিংহাসন কি এ রকম?’
প্রশ্ন শুনে বিলকিস বুঝতে পারলেন তার বিবেক ও বুদ্ধির পরীক্ষা করতে চাইছেন সলোমন। সুতরাং তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথেই উত্তর দিলেন, বললেন, ‘এ তো এরকমই। আমরা আগেই সবকিছু জেনেছি ও আত্মসমর্পন করেছি।’
বিলকিস তার এই জবাব দ্বারা দাবী করলেন না যে এটা তার সিংহাসন। কেননা তার সিংহাসন ও এই সিংহাসনের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। আবার এটাও বললেন না যে এটা তার সিংহাসন নয়। কেননা প্রকৃতপক্ষে এটা তো তারই সিংহাসন।
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- (বিলকিস) যখন পৌঁছিল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘তোমার সিংহাসন কি এ রকম?’
সে বলল, ‘এ তো এ রকমই। আমরা আগেই সবকিছু জেনেছি ও আত্মসমর্পন করেছি।’
আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত তা-ই তাকে সত্য থেকে সরিয়ে রেখেছিল, সে বিলকিস ছিল অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের একজন। (২৭: ৪২-৪৩)
এরপর রানীকে বাদশাহর নিজের প্রাসাদে আমন্ত্রন জানানো হল, রানী বিলকিস যখন রাজার প্রসাদে উপনীত হয়ে রাজার কাছে যেতে চাইল দেখল রাজার প্রসাদের ভুমি পানি দ্বারা তৈরী। শেবার রানী বিলকিস তার পরিধেয় কিছুটা উপরে উঠালেন যেন তার কাপড় ভিজে না যায়। তখন বাদশাহ সোলায়মান মুচকি হেসে বলল এতো স্ফটিকের তৈরী।
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত-তাকে বলা হল, ‘এই প্রসাদে প্রবেশ কর।’
যখন সে ওটার দিকে তাকাল তখন তার মনে হল এ এক স্বচ্ছ জলাশয় এবং সে তার কাপড় হাঁটু পর্য্যন্ত টেনে তুলল।
শলোমন বলল, ‘এ তো স্ফটিকের প্রাসাদ।’
(বিলকিস) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের ওপর জুলুম করেছিলাম। আমি শলোমনের সাথে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করছি।’(২৭:৪৪)
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ইসথার এর তারাগুম শ্রেনীপর্বে আছে, শীবার রানী রাজা সোলায়মানের সাথে এমন একটি কক্ষে সাক্ষাৎ করেন যার মেঝেটি ছিল কাচের। রানি প্রথমে ধারনা করেন মেজেতে পানি রয়েছে, সেজন্য তিনি তার পরনের কাপড় গুটিয়ে ফেলেন। এর ফলে তার রোমশ পা সবাই দেখে ফেলে। এই অবস্থার পরিপ্রক্ষিতে রাজা সোলায়মান তাকে এমন একটি অষুধ তৈরী করার পদ্বতি শিখিয়ে দেন যাতে শরীরের কোন ক্ষতি ছাড়াই শরীরের লোম তুলে ফেলা যায়।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বর্নিত শেবার রানীর ওপর রয়েছে পুরাতাত্ত্বিকদের অসীম কৌতুহল। তাদের মতে ইয়েমেনের দক্ষিনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিবার প্রাচীন রাজধানী মারিবের ধ্বংসাবাশেষ রয়েছে। ইয়েমেনের সাহিত্য, সংস্কৃতি ইতিহাসের সব জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে শিবার রানির কথা।
ইয়েমেনের ধানা উপত্যকার বা দিকের যে পথটি সাইহাদ মরুভূমির দিকে গেছে সেখানেই মারিব অবস্থিত। রানী শীবার রাজত্বকাল ধরা হয় ৯৫০ খ্রীষ্টপূঃ। মারিবের কাছেই অবস্থিত চন্দ্রের মন্দির। কথিত আছে এখানেই নাকি রানী শেবার ব্যক্তিগত প্রাসাদ ছিল।
কৃতজ্ঞতা ও টীকাঃ আমার এ লেখায় কোরানের কিছু আয়াত ব্যাবহৃত হয়েছে বাংলা তর্জমায়, আমি আমার এক ইসলামে জ্ঞানী বন্ধুর কাছে যখন এ সন্মধ্যে জানতে চাই তখন সে আমাকে উক্ত আয়াত দুটি তর্জমা করে দেয়।
অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের আলোকে কিছু ইলাষ্ট্রেশন এখানে ব্যবহৃত হল
বিশিষ্ট লেখক আলী ইমামের একটি লেখা থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারি এ ব্যাপারে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Queen_of_Sheba
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৪৮