somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

“মিষ্ট্রিয়াস রেপিষ্টঃ জ্যাক দ্য রিপার” আনসলভড মিষ্ট্রি

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“দ্য ফিফথ মোষ্ট অ্যামেজিং ক্রাইমস অভ দ্য লাষ্ট ফিফটি ইয়ারস” বইতে এক মাত্র জ্যাক দ্য রিপারের কোন ছবি নাই, অন্য সব অপরাধীদের ছবি আছে। জ্যাকের ছবির জায়গায় একটা বড় প্রশ্ন বোধক চিহ্ন দেয়া, এই একটা মাত্র কারনই আমকে কৌতুহলী করার জন্য যথেষ্ট। কে ছিলেন জ্যাক দ্য রিপার? অন্য সিরিয়াল খুনীদের চেয়ে এই একটা মাত্র প্রশ্নই জ্যাক কে করেছে রহস্যময়ী চরিত্র। জ্যাক কি ছিল কোন রাজপুরুষ? কোণ ছিচকে চোর? কোন পন্ডিত? এই না জানাই অন্য গনহত্যাকারীদের থেকে রিপার কে আলাদা করে রেখেছে।

সে কতগুলো হত্যা করেছিল? এমন কি এটাও বিতর্কের বিষয়। আমরা কেবল এইটুকু জানি যে ১৮৮৮ সালের শেষ ভাগে সংগঠিত হয়েছিল অন্তত পাচঁটি নৃশংস খুন।তার মধ্যে চারটে লন্ডনের হোয়াইটচ্যপেল জেলায়, রাতের বেলায়, শিকারদের সবাই ছিল দেহপপোজীবি, যদিও তারা কেঊ পেশাদার ছিল না। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল পুরো লন্ডনে, রাস্তায় রাস্তায় মিটিং বসল, হোয়াইট চ্যাপেল রাত পাহারা দেবার জন্য দল গঠন করল নাগরিকরা। হাজার হাজার মানুষকে জেরা করে অবশেষে ছেড়ে দেয়া হল, কালো ব্যাগওয়ালা অনেকের ওপর জাপিয়ে পড়ল জনতা, চাকুরীতে ইস্তাফা দিল পুলিশ কমিশনার। এক মাসের ও বেশি শান্ত থাকার পর আবার আঘাত হানল রিপার, বিশ পেরুনো একটি মেয়েকে কেটে টুকরো টুকরো করে সারা রুমে এমন ভাবে ছড়ানো হল যেন জিগস স পাজল। পরবর্তী বছর ১৮৮৯ সালে হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় আরো দুটি খুন হল দুজনেই পতিতা, কিন্ত আমরা কোনদিনই জানতে পারব না এই দুই হত্যার জন্য রিপার দায়ী কিনা। ১৮৮৮ সালে জর্জ বার্নার্ড শ সাংবাদিকদের কাছে একটা চিঠি লেখেন যে আসলে হত্যাকারী একজন সমাজ সংস্কারক যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায় ইষ্ট এন্ডের সামাজিক অবস্থার ওপর। চুপি চুপি বলে রাখি আমদের এই বার্নার্ড শ কিন্ত রিপার সন্দেহে অনেক গবেষকের তালিকায় আছে।

রিপারের শেষ খুনটা হল ১৯৮৮ সালে ৯ই নভেম্বর ডরসেট ষ্ট্রীটে এক লোক ভাড়া আদায়ের জন্য টোকা দিল মেরী কেলির দরজায়, মেরী কেলি ছিল বারবনিতা। কোন সাড়া না পেয়ে উকি দিল জানালা দিয়ে তারপরই সম্ভবত দেখল লন্ডনের সবচেয়ে বিভৎস খুনের দৃশ্য, বিছানার ওপর পরে থাকা খন্ড খন্ড টুকরো, কোনটা ছবি ঢেকে ঝুলছে ঝালরের মত। আবার কোনটা গাদা হয়ে ঝুলছে সাইডবোর্ডের ওপর। পরে হাচিনসন নামে এক প্রতক্ষ্যদর্শীর বর্ননা থেকে জানা যায় মেরী ওই রাতে নাকি বার বার এক আগন্তুক কে ডাকছিল, লোকটা ছিল খাট, গাট্টাগোট্টা, পরনে ছিল চমৎকার পোষাক, মুখে পাকানো গোফ, হাতে পার্শ্বেলের মত কিছু একটা। খানিক পরে এক প্রতিবেশি শুনতে পেল মেরী গুন গুন করে গাইছে “ সুইট ভায়োলেট”। বেশ কিছু পরে সেই একই প্রতিবেশি শুনতে পেল একটা চিৎকার “ মরে গেলাম”। পরবর্তী দুই ঘন্টা জ্যাক দ্যা রিপার ওই লাশ টুকরা টুকরা করছে।

শুরু হল বিরাট এক রহস্য, রক্ত ভেজা কাপড় নিয়ে কিভাবে সে যেতে পারল লন্ডনের বুকের ওপর দিয়ে, কেন সে একগাদা কাপড় পোড়াল মেরী কেলির রুমের চুলায়? কি হল হত্যাকারীর ৯ই নবেম্ভ্রের পরে? ম্যনিয়াক হত্যাকারীদের কারো স্বেচ্ছায় থেমে যাবার ইতিহাস নেই। কেন সে থেমে গেল? প্রশ্ন গুলো আমার কাছে আর অপরাধ বিজ্ঞান এর ছাত্রদের কাছে এক চিরকালীন ধাধা। এ সব বিষয় তথ্য আছে ভুড়ি ভুড়ি কিন্তু প্রমান নেই। আজকের আধুনিক এই যুগেও কি কারো পক্ষে জ্যাক দ্য রিপারের পরিচিতে প্রমান করা সম্ভব? অথবা কোথাও কোন অন্ধকারে পড়ে থাকা কোন ফাইলে কি আছে জ্যাকের আসল পরিচয়?

আমার দৃঢ় বিশ্বাস রিপার ছিল একজন স্যাডিষ্ট- অর্থ্যাৎ মানুষিক ভাবে একজন অসুস্থ লোক। যার পক্ষে কাউকে যন্ত্রনা না দিয়ে বা প্রচুর রক্তপাত না ঘটিয়ে যৌন তৃপ্তি লাভ সম্ভব ছিল না। এটা কেবল অনুমান করা যায় শেষ হত্যাকান্ড তার রক্ততৃষা সম্পূর্ন চরিতার্থ করছিল বলেই সে স্বেচ্ছায় থামিয়ে দিয়েছিল হত্যাকান্ড। রিপারের পরিচিতি ও অপরাধের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত সর্বজন বিদিত তত্ত্বটা পেশ করেন লিওনার্ড ম্যাটারস। সে ঘোষনা করে যথাবিহিত কোন প্রমান ছাড়া যে রিপার ছিল জনৈক ডাক্তার ষ্ট্যানলি, বিপত্নীক যে মানুষটা তার ছেলেকে ভীষন ভালবাসত। সেই ছেলে মেরী কেলীর সংস্পর্শে আসার পর মারা গেল সিফিলিসে আক্রান্ত হয়ে আর তখন থেকেই ডাক্তার ষ্ট্যানলি তার জীবন উৎসর্গ করল মেরীকে খুজে বের করার জন্য, তার সব গুলো শিকারের কাছে জানতে চাইল মেরীর কথা, তারপর সবাইকে হত্যা করল মূখবন্ধ রাখার জন্য, অবশেষে মেরি কেলীকে খুজে পাওয়ার পর বন্ধ করে দিল ইষ্ট এন্ডে শিকারের পিছু নেয়া। ম্যাটার বলেছে যে ডাক্তার ষ্ট্যানলি মারা গেছে বুয়েনেস এয়ারসে, আর মৃত্যুশয্যায় দিয়ে গেছে একটা আনুষাঙ্গিক স্বীকারোক্তি।

পুলিশ বিভাগের অন্যতম জনপ্রিয় তত্ত্ব হল জ্যাক দ্য রিপার ছিল জর্জ চ্যাপম্যান। প্রকৃত পক্ষে চ্যাপম্যান ছিল পোল্যান্ডের এক জন অধিবাসী। যার আসল নাম সেভেরিন ক্লোসোউস্কি, হত্যাকান্ডগুলো সংগঠিত হবার সময় সে নাপিতের কাজ করত হোয়াইট চ্যাপেলে। ১৮৮৯ সালে চ্যাপম্যান গিয়েছিল আমেরিকা আর লন্ডনে ফিরে আসে ১৮৯২ সালে। পরবর্তী দশ বছর বিশ প্রয়োগে হত্যা করে তিন মহিলাকে কোন ঊদ্দেশ্য ছাড়া, স্রেফ স্যাডিষ্টিক আচরন চরিথার্ত করার জন্য। চ্যাপম্যানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯০৩ সালে, আর রিপারের হত্যাকান্ডে নিয়োজিত চীপ ইনেস্পেক্টর সদম্ভে ঘোষনা দিল চ্যাপম্যানই ছিল রিপার।

রিপারের পরিচিতি বিষয়ে এক তত্ত্ব পেশ করেন ডোণাল্ড ম্যাককরমিক তার “দ্য আইডেন্টিটি অভ জ্যাক দ্যা রিপার” বইতে, ম্যাককরমিক বলেছেন যে ১৯১৭ সালে খুন হওয়া আর এক রহস্যময় চরিত্র “রাশপুটিন” এর কাগজ পত্রের মধ্যে একটি দলিল দাবী করছে যে রিপার ছিল এক খুনে উন্মাদ যাকে জারের পুলিশরা লন্ডনে পাঠিয়েছিল শুধু ইংরেজ পুলিশকে হতবাক করার জন্য। ম্যাককরমিক অনেক প্রমান উদ্বার করে ইষ্ট এন্ডে বসবাসরত রুশ অভিবাসীদের সাথে একটা যোগসূত্র আবিস্কারের চেষ্টা করেছে বিশেষ করে পেদাচেঙ্কো নামে এক নাপিত সার্জেনের সাথে। কিন্তু এখনও কোন নিশ্চিত প্রমান এবিষয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি।

কিন্তু অনেক গবেষনা আর নতুন নতুন অনেক তত্ত্ব উপস্থাপন করা সত্ত্বেও রিপারের পরিচিতি আজ ও রয়ে গেছে নাগালের বাইরে। এরপরেও অনেক রিপার হাজির করা হয়েছে কেঊ বলেছেন তরুন আইনজিবী এম জ়ে ড্রুইট এর কথা কেউ বলেছেন জ়ে কে ষ্টিফেন্স, ক্ল্যারেন্সের ডিঊক আর চুড়ান্ত জটিল এক তথ্য উপাস্থপনের জন্য জড়িয়ে গেছেন চিত্রকর ওয়াল্টার সিকার্ট ( অতি জটিল এই ঘটনা জানতে হলে পড়ুন ষ্টিফেন নাইটের “ জ্যাক দ্য রিপারঃ ফাইনাল সল্যুশন”)। কিন্তু ইতিহাসের এই রহস্যময় চরিত্র কিন্ত রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

মূলঃ কলিন উইলসনের “জ্যাক দ্য রিপার” বইর চুম্বক অংশ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:১৭
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×