মেহের আলীর কথা মনে আছে? সেই যে মানূষটি শূধুই বলত তফাত যাও, বলত, ‘সব ঝুট হ্যায়’। ক্ষুধিত পাষানের সেই আধ পাগলা লোকটির সাথে বিজ্ঞান ও তো সেই কথাই বলে চলছে। তফাত যাও। দেশ বিদেশের ঐতিহাসিক দূর্গগুলো আজ ও রহস্যে রোমাঞ্চে ভরপুর।
মুঘল আমলের তৈরী অতি পরিচিত লালকেল্লার আনাচে কানাচে ছড়ীয়ে আছে অনেক রহস্য। এই কেল্লাতেই ছোট ছেলের হাতে বন্দী জীবন কাটিয়েছে সম্রাট শাজাহান, কথিত আছে রোজ রাতে বন্দী পিতার কাছে আসতেন আওরঙ্গজেব। তার আসার ধরনও নাকি অদ্ভূত। নিশুতি রাতে একা ঘোড়া হাকিয়ে আওরঙ্গজেব এসে দাড়াতেন শাজাহানের কক্ষের সামনে। এখনও গভীর রাতে কেল্লার প্রঙ্গনে শোনা যায় ঘোড়ার খুড়ের শব্দ।
রাজবন্দীদের আটকে রাখা হত, গোয়ালিয়রের দূর্গের চোরা কুঠুরিতে। ওই কুঠুরিগুলোতে এত অন্ধকার থাকত যে দিনের বেলায় কোন আলো ঢুকতনা। সুলতান মুহম্মদ বিন তুগলকের একবার মনে হল বন্দীর সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে তাই প্রহরীদের আদেশ দেন বন্দীদের খাবারে মাদক মিশিয়ে দেবার জন্য। এর ফলে কিছু দিনের মধ্যেই নাকি বন্দীরা উন্মাদ হয়ে মৃত্যু বরন করেন। গোয়ালিয়র দূর্গে এখন ও নাকি নিশুতি রাতে হাহাকার শুনা যায়। সরকার দূর্গটি অধিগ্রহন করলেও সন্ধ্যার পর কাউকে ওখানে থাকতে দেয়া হয়না।
প্রকান্ড দেয়াল, দেয়ালে শিকড় ছাড়িয়েছে নানা গাছপালা, ইটের খাজে খাজে শ্যাওলা, ফাটলে সাপ খোপের বাসা। অন্ধকার ঘরগুলোতে বাদুড় আর চামচিকে, আজকের দূর্গলোর চেহারা অনেকটা এরকম। কিন্ত ১৩৪২ খ্রীষ্টাব্দে গড়ে ওঠা চৌহান সর্দার রাওদেও এর সাধের বুন্ডির কেল্লার চেহারা এমন ছিলনা। বহু টাকা খরচ করে তিনি এই কেল্লা তৈরী করেন। হঠাৎ একদিন রাতে দূর্গের মধ্যে আততায়ীর হাতে নিহত হন সর্দার। তার মৃত্যুর পর তার লাশ কেউ খুজে পায়নি এমনকি মৃত্যুর কারনও রহস্যাবৃত। শুনা কথা এই কেল্লায় যারা গেছেন অনেকেই নাকি আর ফেরত আসেনি।
শুধু এ দেশের না বিদেশের অনেক দূর্গ কে ঘিরেও আছে এ ধরনের অনেক কাহিনী।যেমন ইংল্যান্ডের ক্রদেস ক্যাসেল। এই ক্যাসেলকে ঘিরে উঠেছে অনেক গল্পগাথা। বিরাট প্রসাদটির অধীশ্বর ছিলেন দ্বিতীয় ফ্রেডারিক। তিনি ছিলেন বিচিত্র মনোরোগী। রাজা ফ্রেডারিক ভীষন ভয় পেতেন বাচ্চাদের। তারা যদি কখনো বড় হয়ে রাজার আসন টলিয়ে দেয়? অতএব এই প্রাসাদের নির্জন কক্ষে শিশুদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হত। কত শিশুদের যে এখানে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে তার ঠিক নাই।শেষ জীবনে ফ্রেডারিক নাকি ওই মৃত শিশুদের কান্না শুনতেন। প্রায় অর্ধোন্মাদ অবস্থায় তিনি মারা যান ১২৫০ সালে।
টাওয়ার অফ লন্ডনে অপরাধীদের উপর চলত নির্মম অত্যাচার।নির্বিচারে হত্যাও করা হত। এখানেই সপ্তম হেনরির স্ত্রী রানি অ্যানবলিন এর অশান্ত আত্মা নাকি সবাই কে ভয় দেখিয়ে বেড়ায়। কিছুদিন আগে এখানে একটি ঘটনা ঘটে, টাওয়ারে গুপ্তধন আশায় পাচজন লোক গিয়েছিল, যাদের মৃত অবস্থায় পরের দিন ভোরে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকরা মনে করেন দূর্গগুলি তৈরি করা হত এমন করে যাতে শত্রুরা সহজে পালাতে না পারে, ধরা পরে নির্মম ভাবে মারা যায়। ইঊরোপের দূর্গ গুলোয় ম্যাচিওলেশসন নামে এক ধরনের বড় বড় গর্ত করা হত। ওপর থেকে দেখে সেগূলোকে অদৌ কোন গর্ত বলে মনে হতনা। স্বাভাবিক ভাবে শত্রুরা তার মধ্যে পরে মারা যেত
উপমহাদেশের দূর্গ গুলোর পাশে তৈরী করা হত বড় বড় পরিখা। সেখানে পিছলে পরে যে কত সৈন্য মারা গেছে তার কোন লেখাজোকা নেই। এক কথায় ভীবৎসতা আর নির্মমতার এক চরম নিদর্শ্ন ছিল দূর্গগুলো। ফ্রান্সের দুর্গগুলোতে ছিল অসংখ্য ছোট ছোট খুপরি। এক একটি খুপরিতে যে কত মানুষের শেষ ঠিকানা হয়েছিল তার ইয়াত্তা নেই।
এখানে একটি ঘটনা বিষেশভাবে উল্লেখ্য যোগ্য কোচিন দূর্গে বহু বছর ভাস্কো ডা গামার কফিন রক্ষিত ছিল। স্বাধীনতার পর সেটি স্থানান্তরিত হয় পর্তুগালের ফ্রান্সিস দূর্গে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, একটি খালি কফিন ফ্রান্সিস দূর্গে পাওয়া যায়, সেখানে কোন মৃতদেহের দেহাবশেষের চিহ্ন ছিল না। আর সেটিই পর্তুগালে পাঠানো হয়।
হাড় হিম করা দূর্গের নাম ট্রান্সসিলভানিয়া। এক ভংকর রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার ড্রাকুলা নাকি সেখানে বাস করত। বহুকাল এ দুর্গের ধারে কাছে কেঊ ঘেষত না। কিছুদিন আগে রোমানিয়ান সরকার দুর্গের পাশে খোড়াখুড়ি শুরু করে।কিন্ত দূর্গের কাছে এমন কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে যে ভয়ে শেষ পর্যন্ত খোড়াখুড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৪৬