::::হিমালয়ান ডায়েরী, স্তোক কাংড়ির পথে -২::::
জাঙ্কসার ভ্যালি, জনশুন্য মরুপ্রান্তর থেকে স্তোকের চুড়া।
স্তোক কাংড়ি, হিমালয়ের লাদাখ রেঞ্জের একটা শ্বেত শুভ্র চুড়া। দৈত্যাকার পর্বত চুড়াটার উচ্চতা বিশ হাজার একশ সাইত্রিশ ফুট বা ৬১৩৫ মিটার। প্রচন্ড ঠান্ডা আর পাতলা বাতাসে অক্সিজেন স্বল্পতাই চুড়াটাতে পা রাখতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু স্তোক উপত্যকার আশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ওয়াইল্ড লাইফ আর তিব্বতী সংস্কৃতি ভুলিয়ে দেয় সব।
আগের পর্ব পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করেন।
রাতের বেলাতে দিল্লীর জামে মসজিদের সামনে থেকে বিরিয়ানি খেয়ে হোটেলে ফিরেই বিল টিল সব চুকিয়ে নিলাম। কালকে খুব ভোড়ে লাদাখ যাত্রা। সারাদিন প্রচন্ড দৌড়া দৌড়ি গেছে, ক্লান্তিতে শরীর নুয়ে আসছিলো। হ্যাভারস্যাক আবার খুলে নতুন করে বাধতে হলো আজকে কেনা একগাদা জিনিসের জন্যে। সকাল সকাল শুয়েও দেখি কিছুতেই ঘুম আসেনা। লাদাখ নিয়ে টেনশান...
লাদাখ নিয়ে বাংলা ব্লগে বেশ কিছু পোষ্ট পড়েছিলাম, কেউ রেস্ট্রিকশানের কথা কিছু বলেনি। প্রথম শুনেছিলাম টিকেট করার সময় ট্রাভেল এজেন্টের কাছে। সামহোয়ার ইন ব্লগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুনতাসির ইমরান, বাংলাদেশে মাউন্টেনিয়ারিং এর পায়োনিয়ারদের একজন। গতবছরও চাডারের ফ্রোজেন রিভার ট্রেক করেছিলেন। ২০০৪এ রিফাত ভাইএর সাথে যৌথভাবে স্তোক কাংড়িতেই ট্রাই করেছিলেন। সেটা ছিল প্রথম দলগত বাংলাদেশী হিমালয় অভিযান। রিফাত ভাই সামিট করলে সেটা হয় সেসময়ে বাংলাদেশীদের সর্বোচ্চ উচ্চতার নতুন রেকর্ড। ক বছর পরে আরেকটা দলগত অভিযান হয় বাংলাদেশীদের এই স্তোকই, কিন্তু সেটা সফল হয়নি। ঈদের দুদিন আগে ইমরান ভাইএর সাথে দেখা হলো এলিফ্যান্ট রোডে, তার কাছেই শুনলাম বাংলাদেশীদের জন্যে নাকি লাদাখে নিষেধাজ্ঞা আছে, ব্যাপারটা আমল করিনি। সেই জানালো সাধারনত আটকায় না, কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আটকানোর কথা। অনেক বাংলাদেশীই সিকিম গেছে, কিন্তু সিকিম বাংলাদেশীদের জন্যে নিষিদ্ধ। বাসায় ফিরে নেট সার্চ করে দেখলাম আসলেই যেসব দেশের সাথে ভারতের বর্ডার আছে, অর্থাৎ বাংলাদেশ, চায়না, পাকিস্তান এবং বার্মা তাদের জন্যে লাদাখের অল্প কিছু অংশ বাদে বাকী সবটাই নিষেধ। যা থাক কপালে, যাবই।
ম্যাকপাই (?) পাখি।
রাতে বিভিন্ন চিন্তায় এপাশ ওপাশ করলাম। বিশেষ করে লাদাখে ঢোকার টেনশান আর শেষ মুহুর্তে স্যামের দল থেকে নাম প্রত্যাহারের ফলে সম্ভাব্য সমস্যার কথা জোর করে মাথায় ঢুকতে লাগলো। শেষ রাতে তুমুল বর্ষন শুরু হলো, বৃষ্টির রিমঝিম গানের সাথে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও টের পাইনি। ঘন্টা দুয়েক ঘুম হতে না হতেই রিসিপশান থেকে ফোন, ট্যাক্সি রেডি। সকাল ৬টা বাজে, চারদিক তখনো অন্ধকার। নাস্তা করার সময় নেই, তারা তারি হ্যাভারস্যাক কাধে নিয়ে হোটেলে ছেড়ে ট্যাক্সি’তে উঠলাম। সারা রাত অঝোর বৃষ্টির ফলে এখানে ওখানে জমে থাকা পানির ফাক দিয়ে ট্যাক্সি প্রায় উড়ে চললো খালি রাস্তায়। এত তারাহুরো করেও দেরী হয়ে গেছে। তারাহুরো করে এয়ারপোর্টে ঢুকে বোর্ডিং পাস নিয়ে প্লেনে উঠে গেলাম। মোবাইল ফোন অফ করার ঠিক আগ মুহুর্তে স্যামের এসএমএস এসে ঢুকলো- ‘হ্যাভ ফান এন্ড এনজয় এ লট ইন হিমালয়ান ওয়াইল্ডারনেস। মাউন্টেনিয়ারিং ইজ নাথিং বাট ফান। আই উইশ আই ফিনিশ মাই জব আর্লি এন্ড মিট ইউ গাইজ ইন লেহ’।
মনটা ভালো হয়ে গেল। পাহাড় নিয়ে আমাদের দেশে নোংড়া প্রতিযোগিতা চলে। কে আগে উঠল কে পরে উঠলো। যে উঠে গেছে কিভাবে তাকে লেঙ্গি মেরে নিচে নামিয়ে দেয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, হিমালয়ের পর্বত চুড়া গুলো এমন উচ্চতায় যেখানে পাখিও ডানা মেলে না, এখানে কেউ এসে পরখ করার নেই। অথচ পর্বাতোরহন ব্যাপারটাই হচ্ছে অর্জনের, কোন খেতাব নয়। শুধুই আনন্দের। নিজের কাছে নিজেকে প্রমান দেয়ার। ইচ্ছে ছিল এয়ারক্রাফটের জানালা দিয়ে মন ভরে হিমালয়ের ছবি তুলবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য জানালার পাশে সীট পরেনি। পাশের সীটে গোমড়া মুখো এক লাদাখি ভদ্রলোক। পরিচয় হতেই জানালো সে একজন ব্যাবসায়ী, নাম ফুংসুক। আমি বললাম, লাদাখ নিয়ে আমির খানের মুভী আছে থ্রি ইডিয়টস। সেখানে তার নাম থাকে ফুংসুক। ভদ্রলোক সহজ হলেন। জানালেন লাদাখে আসলেই একসময় পাড় এডভেঞ্চার প্রিয় ছাড়া অন্য টুরিস্ট আসতো না। কিন্তু থ্রি ইডিয়টস বের হবার পর এক বছরেই গত পাঁচ বছরের সমান ট্যুরিস্ট এসেছে। প্লেন লাদাখের আকাশে আসতেই পাইলটের গলা শোনা গেল- লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান, আমরা এখন ভারতের সবচেয়ে আকর্ষনীয় হলিডে ডেস্টিনেশান লাদাখের উপরে। ওই দেখা যায় প্যাঙ্গন লেক, ঐ দেখা যায় কারাকোরাম পার্বত্য রেঞ্জ... দুর্ভাগ্য ফুংসুকের সাথে সীট চেঞ্জ করা স্বত্তেও কিছুরই ছবি তোলা গেলনা, কারন সব আকর্ষনীয় জিনিসই বিপরীত সারীতে বসাদের দিকে। ফুংসুক (এই নামটা সম্ভবত খুব কমন, রহিম করিম টাইপ। লাদাখিদের মাঝে অল্প কিছু নামই ঘুরে ফিরে আসে) জানালো ওর এক বন্ধুর ট্রেকিং এজেন্সি আছে। গাইড শেরপা যোগারে সে সাহায্য করতে পারে। ফুংসুকের নাম্বার মোবাইলে সেভ করে নিলাম। ঠিক নামার সময় বহুবর্ণা নিষ্প্রান পাথুরে পাহাড়ের মাঝে বয়ে চলা সিন্ধু নদের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিল। এরা বলে ইন্দুজ নদী। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের ভারত আক্রমনের সময় ইন্দুজ ঘিরেই রক্ষা ব্যুহ তৈরি হয়। প্লিনি বই লিখে জানান ইন্ডাসের ওপাশে বিশাল দেশ নাম ইন্ডিয়া।
লাদাখের লেহ শহরের কেন্দ্রস্থল ফোর্ট রোডে তিব্বতী রিফুজি মার্কেট।
লেহ দুর্গের এক গুম্ফা, উষর মরুপ্রান্তরে সবুজ ছোয়া লেহ শহর।
লাদাখের কেবিআর এয়ারপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে উচু বিমানবন্দর গুলোর একটি। পুরো নাম কুশক বাকুলা রিমপোচে এয়ারফিল্ড। লেহ শহরের উচ্চতাই প্রায় ১২ হাজার ফুট (জম্মু এন্ড কাশ্মীর ট্যুরিজম বোর্ডের গাইড বই অনুযায়ী)। চারদিকে সামরিক প্লেনের ছড়াছড়ি। দৈত্যাকার ২টা সি১৩০ হারকিউলিস আর অনেকক্ষন ধরে ভটভট রত একটা হালকা হেলিকপ্টারের মাঝে গিয়ে রানওয়ের মাঝেই প্লেন দাঁড়িয়ে গেল। এখানেও গ্যাংওয়ের সিস্টেম নেই। নিচে নামতেই প্রচন্ড রোদের হলকা চোখে মুখে বাড়ি মারলো। লাদাখ তুষার শুভ্র হলেও মরুভুমী কথাটা যেন মনে করিয়ে দিল। পৃথিবীর অন্যতম হাই অল্টিচিউড ডেজার্ট। বাসের জন্যে অপেক্ষা করতে করতেই ফুংসুক আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ঐ যে সাদা চুড়াটা দেখছো ওটার নাম সাসের কাংড়ি। সাসের কাংড়ি খুবই কঠিন এক্সট্রিম লেভেলের পিক। আর ঐ যে সাদা চুড়াটা দেখছো ওটাই তোমার স্তোক কাংড়ি। আমি মোহিত হয়ে ডুয়াল পিক (স্তোক কাংড়ির পাশে ১৬ হাজার ফুটের আরেকটা যমজ চুড়া আছে নাম গোলেপ কাংড়ি)। দেখছিলাম।
এয়ারপোর্টের টার্মিনাম ভবনের বাইরে এসে দেখলাম দুনিয়ার পুলিশ মিলিটারীতে গিজ গিজ করছে। বড় বড় করে লেখা-ফরেন পাসপোর্ট হোল্ডার্স। সব বিদেশী নাগরিককে লাদাখে ঢোকার আগে আলাদা ভাবে আর্মির কাছে নাম ধাম লিখে আসতে হয়। আমি সবুজ পাসপোর্ট হাতে নিয়ে সেদিকে এগুতেই কম্ব্যাট পড়া আইটিবিপির (ইন্ডিয়া টিবেট বর্ডার পুলিশ- মাউন্টেনিয়ারিং জগতে এদের গৌরবজ্বল ইতিহাস রয়েছে) একজন বললো- এটা শুধু ফরেনার’দের জন্যে। তুমি এদিকে যাও। পরে আটকে দেয় কি না কে জানে। তাই আমি কথা না বাড়িয়ে সোজা বাইরে চলে এলাম। ফুংসুকের কোন চিহ্ন নেই। ফোন দেব ভেবে মোবাইল বের করে দেখি নেটওয়ার্ক নেই। একজন জানালো লাদাখে বাইরের মোবাইল কাজ করে না। শুধু পোষ্টপেইড অথবা লাদাখে রেজিস্টার্ড প্রিপেইড চলে। ইন্টারন্যাশনাল রোমিংও চলে না। গুগল আর্থ কাজ করবে না, কিন্তু অবাক হয়ে দেখি মোবাইলের জিপিএসও কাজ করছেনা।
বাঁয়ের ছোট্ট দেখা যাচ্ছে সাদা মন্দিরটাই শান্তি স্তুপা, ছবির ডান দিকে খারদুংলা যাবার রাস্তা। খারদুংলা পৃথিবীর সবচেয়ে উচু মোটরেবল রাস্তা।
গোধুলী আলোয় শান্তি স্তুপা।
স্যাম জানিয়েছিল আগের বার সে কারজু’তে একটা ট্যরিস্ট লজে ছিল। সোজা প্রিপেইড ট্যাক্সি নিয়ে কারজু’তে এসে দেখি ট্যাক্সি ড্রাইভার বলছে সেই লজের সে নামও শুনেনি। একটা বড় বোর্ডে ঐ এলাকার সব হোটেল-লজ-গেস্ট হাউজের লিস্ট আছে, সেখানেও নেই। ওটা অবশ্য কোন বড় লজ না। ব্যাগপ্যাকার কিংবা মাউন্টেনিয়াররা স্বস্তায় রাতে ঘুমানোর জায়গা। বিছানা আর কমন বাথরুম ছাড়া আর কোন সুবিধা নেই। অনেক ঘুরে ফিরেও হদিশ পেলাম না। এদিকে জানি যে পিটার আর তার সঙ্গীও আসবে আজকে বিকেলে, এসেই তারা এই লজেই আমাকে খুজবে। ঢাকা থেকেই রিনচেন নামের এক হোটেল মালিকের নাম্বার নিয়ে এসেছিলাম। গতকালকে তাকে ফোনও দিয়েছিলাম। তার হোটেলটা ওল্ড লেহ সিটি’তে। বাধ্য হয়ে সেখানেই গেলাম। রিসেপশান জানালো তাদের সব রুমই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন কই যাই? খামোখাই চাপা পেটালাম, রিনচেন আমার বন্ধু মানুষ। তার সাথে কথা হয়েছে। ওরা রিনচেনকে ফোন দিয়ে বললো, বাংলাদেশ থেকে একজন এসেছে। আমি রিনচেনের ভাই’এর থ্রু দিয়ে এসেছি। কিন্তু সেও নাই। একটা সুইস টিম নিয়ে ক্লাইম্বিং এ গেছে। রিনচেন জানালো সে এসে একটা ব্যাবস্থা করবে।
রাতে ঘুমিয়েছি ২ঘন্টারও কম, তাছাড়া দিল্লীর ৭০০ফুট উচ্চতা থেকে দুঘন্টায় লেহ এর ১২হাজার ফুটের উচ্চতায় চলে এসেছি; শরীর জানান দিচ্ছিলো। প্রচন্ড ক্লান্তিতে লবিতেই ঝিমাতে লাগলাম। অল্পক্ষনেই রিনচেন এসে হাজির। ব্যায়াম পুষ্ট মাসকুলার একজন। চেহারা হলিউডি নায়কদের মতো। সিনেমা’তে যে আগ্রহ বোঝাই যায়। লবি’তে বিশাল বাধানো ছবি হৃত্বিক রোশানের কাধে হাঁত দিয়ে দাঁড়ানো। রিনচেন জানালো কালকে আমি কিছু কনফার্ম করিনি দেখে শেষ রুমটাও আজকে বিক্রি করে দিয়েছে। তবে আপাতত সে একটা পাবলিক রুমে বিছানা পেতে থাকার ব্যাবস্থা করে দিল। পুরো প্রাইভেসী থাকবে। কিন্তু বাথরুম নেই, যেতে হবে লবির বাথরুমে। আজকের দিনটায় থাকা এবং খাওয়া ফ্রি। কালকে সকালে রুম দিলে চার্জ করা শুরু। রিনচেনের হোটেলটা ছিম ছাম সাজানো গোছানো আর আধুনিকও। ভেতরে এক চিলতে লন আর চারপাশে অনেক লতানো গাছ, মরুভুমির মরুদ্যানের মতোই। জুনিপার গাছ চিনতে পারলাম। হোটেলটার একমাত্র সমস্যা খাবার। অজ্ঞাত কারনে এরা কোন নন ভেজ খাবার রাখেনা। তিনবেলা শাক শবজি চিবুতে কাহাতক ভালো লাগে। ক্ষুধার্ত ছিলাম তাই কোন মতে দুটো খেয়ে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘরটা অনেক চেষ্টা করেও আলো কমলো না। ৩টার মধ্যে আবার জেগে গেলাম। বেরুলাম লাদাখ দর্শনে।
হোটেলের ঠিক সামনেই এক তিব্বতী মহিলা কোলে বাচ্চা নিয়ে একটা সাইবার ক্যাফে কাম ফোন ফ্যাক্সের দোকান চালায়। স্যাম’কে ফোন করে সব জানালাম। স্যাম জানালো কারজুর ঐ গেস্ট হাউজের নাম্বারে সে সারাদিন ফোন করেও কানেকশান পায়নি। এদিকে পিটারদের সাথে যোগাযোগের কোন উপায় নেই। পিটারকে একটা মেইল পাঠিয়ে দিয়ে হেটে বেড়ালাম রাস্তায় রাস্তায়।
আকাশ থেকে শ্বেত শুভ্র সাসের কাংড়ি থ্রি। পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক এক্সট্রিম ক্লাইম্বের একটা।
সারাজীবন বই পত্রে কতই না রোমাঞ্চকর গল্প পড়েছি। আকাশ থেকে দেখা স্বপ্নময় কারাকোরাম রেঞ্জ।
লেহ অনেক ছোট শহর। নিচে সিন্ধু নদী বয়ে চলেছে। এর পাশ ঘিরেই এয়ারপোর্ট আর আর্মির গ্যারিসন। ঠিক মাঝা মাঝি বড় একটা পাহাড়ের উপরে লেহ প্রাসাদ পুরো শহরের সবখান থেকেই দেখা যায়। উত্তরে শান্তিস্তুপা আর কারজু, কম দামী গেস্ট হাউজ আর ব্যাকপ্যাকারদের লজ এখানে, দক্ষিনে প্যালেস রোড, পোলো গ্রাউন্ড এর মাঝা মাঝি জায়গায় স্বস্তায় হ্যান্ডিক্রাফটের জিনিস আর সেকেন্ড হ্যান্ড পশমি জ্যাকেট আর বুটের দোকান, স্থানীয়রাই ক্রেতা। প্যালেসের অপর দিকে স্থানীয়দের বসতি আর কিছু সরকারী কোয়ার্টার। ঠিক নিচেই মেইন বাজার, মুসলিম পট্টি, লাইব্রেরী রোড আর ফোর্ট রোড। অধিকাংশ স্যুভেনির শপ, ট্রাভেল এজেন্সির অফিস এখানটায়। রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে, একটা ফোর্ট রোড আর আরেকটা ওল্ড লেহ রোড। দুটোই টুরিস্টদের হোটেল এলাকা। দুটো রাস্তার সংযোগে টিবেটিয়ান রিফুজি মার্কেট। চিনের অধিগ্রহনের পরে উদ্বাস্তু তিব্বতীদের দোকান পাট, দেখার মতো এলাকা। সংযোগের একদিকে তিব্র শব্দ করে নেমে আসা পানির নালা, পাথরের দেয়ালের মাঝে। এখানে জার্মান বেকারী টুরিস্টদের আড্ডা (মুলত ইউরোপিয়ান) জায়গা।
হাটতে হাটতে উপরে উঠে প্রথমেই ঢুকলাম তিব্বতী রিফুজি মার্কেটে। তিব্বতি পোষাক, থাঙ্কা (দেয়ালে ঝোলানো একধরনের ধর্মিয় ছবি+লেখা) আর নানা কারুশিল্প আর অলঙ্কার। প্রচুর জপ যন্ত্র (এগুলো ঘোরালে ভেতরের চাকা লাগানো দাতে ইশ্বরের নাম জপ হয়, আর ঘোরানো ব্যাক্তি পূন্য হাসিল করে) দেখলাম। ঘুরে ঘুরে কারজু হয়ে আবার মুসলমান পট্টির ওদিক দিয়ে পোলো গ্রাউন্ডের দিকে হাটা। তিব্বতী ফেস্টিভ্যাল চলছিল লাদাখে। সিনেমা টিনেমাতে দেখেছি খুব বর্ণিল হয়। আজকের উৎসব পোলো গ্রাউন্ডে। পরে দেখলাম থাঙ্কা প্রদর্শনী আর গেলাম হয়না। একটা প্রকান্ড জপ যন্ত্র দেখলাম, সাইজে দশ ফুটের মতো হবে। যান্ত্রিক উপায়ে চালানো হয়। কিন্তু জপ যন্ত্র ঘুরলে যে পূণ্যটা হয় সেটা মেশিনের না হয়ে মেশিন প্রতিষ্ঠাতার ঘরে জমা হয় বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। যন্ত্রটার ব্যাকগ্রাউন্ডে আকাশ আটকে রাখা তুষার শুভ্র স্তোক চুড়ায় গোধুলীর চুড়া। ছবিটাকে ফ্রেমে আটকানোর চেষ্টা করছিলাম, আমাকে দেখে এক বৃদ্ধা মহিলাও ক্যামেরা খুলে একই কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন। মহিলার পকেট ক্যামেরায় বিশেষ সুবিধা হলো না, কিন্তু গল্প জমে গেল। নাম ম্যারিয়েন। ব্রিটিশ মহিলা। স্বামীর সাথে লাদাখ ঘুরতে এসেছেন। স্বামী তাকে রেখে চলে গেছেন স্তোক কাংড়ির জন্যে। তারা অবশ্য বিশাল দল নিয়ে এসেছে। মহিলা আক্ষেপ করে বললেন স্বামীর বয়স ৫৫ বছর কিন্তু এখনো সে মেনে নিতে পারেনি যে তার ৩৫ পার হয়েছে অনেক কাল আগে। মহিলা প্রথমে আমাকে স্থানীয় ভেবে, অনেক জায়গা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি জানালাম আমি এসেছি বাংলাদেশ থেকে। মহিলা জানালেন উনি ইংল্যান্ডে একটা স্কুলের টিচার ছিলেন। এক সিলেটি পরিবারের কিছু বাচ্চাকে পড়াতেন। সিলেটি কত্রী কিছু হলেই তাকে বাসায় খাবার দাওয়াত দিতেন। এত অমায়িক পরিবার উনি লন্ডনে দেখেন নি। সন্ধ্যা মেলাবার পরে কিছু করার নেই। ফোর্ট রোডে ট্রাভেল এজেন্সি গুলো’তে ঢু মেরে মেরে বেড়ালাম স্তোক কাংড়ির জন্যে কোন প্যাকেজ কিংবা দল যোগার করতে পারি কিনা। কিছুই কপালে জুটলো না।
মসজিদের ওপাশে সব কাশ্মীরিদের দোকান। কাশ্মিরি কাবাবের দোকান দেখে সাগ্রহে বসে গেলাম। পাঠার মাংসের কাবাব। খেতে খারাপ না, মুস্তাকিমের মগজ ভাজা কিংবা বাটি চাপের সাথে তুলনায় গেলাম না। তবে হোটেলে ফিরে বুঝলাম লাদাখের প্রথম দিনটা পুরোপুরি মাঠে মারা গেছে। ৩দিন একলামাটাইজেশান। আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেয়া। এর মাঝেই সব আয়োজন শেষ করে স্তোকের পথে রওনা হতে হবে।
আকাশ থেকে দেখা আমার গন্তব্য, স্তোক কাংড়ির চুড়া। ২০ হাজার ফুট উচ্চতার চুড়াটা, কমার্শিয়াল জেট লাইনারের উচ্চতায়।
উষর নিষ্প্রান মরুময়... মারখা ভ্যালি। অনেকেই বলে স্নো-লেপার্ডের স্বর্গভুমী।
ইন্ডাস উপত্যকায় চাডার রিভার থেকে আলাদা হয়ে গেল সিন্ধু (ইন্দুজ) নদী। ইন্দুজ বা ইন্ডাস নদীর নাম অনুসারেই আলেকজান্দার দ্যা গ্রেটের সেনাপতি দেশটার নামকরন করেন ইন্ডিয়া।
আকাশ থেকে লেহ শহর, নদীটা সিন্ধু, আর ছোট্ট এয়ারফিল্ডের নাম কেবিআর এয়ারপোর্ট। এখান থেকেই ক্যামেরা বন্ধ কেননা, লাদাখ সামরিক এলাকা হওয়ায় ক্যামেরার ব্যাপারে ভীষন সতর্ক থাকা উচিত।
স্বপ্নময় স্তোক কাংড়ি (তুষারে ঢাকা বড় চুড়াটা, ছোট চুড়াটার নাম গোলেপ কাংড়ি)
লাদাখ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ মরুভুমীর একটি।
স্নো ক্যাপ পড়া বড় চুড়াটাই স্তোক কাংড়ি
চলবে..........................................................................................
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন