[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/shoummo71_1225032487_2-n513036304_1051997_8009.jpg
নেপাল, ভুটান, ভারতের দার্জিলিং এবং অন্যান্য এলাকা, দক্ষিন আমেরিকার দেশ গুলো ট্রেকিং আর হাইকিং এর জন্যে খুব বিক্ষাত। বাংলাদেশেও রয়েছে ট্রেকিং করার কিছু অসাধারণ স্পট। তার আগে ট্রেকিং কে আরেকটু সহজ কথায় বলি। নর্মালি ট্রেকিং করা হয় কোন দুর্গম এলাকায়, যেখানে যোগাযোগ ব্যাবস্থা অনুন্নত, রাস্তা ঘাট নেই, হোটেল-গেস্ট হাউজ কিংবা ইঞ্জিন চালিত যানবাহন, ইলেক্ট্রিসিটি, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি আধুনিক সুযোগ সুবিধা নাই। যেহেতু যোগাযোগ সুবিধা অনেক খারাপ তাই ওখানে টুরিস্টরা গন হারে গিয়ে ঝক ঝকে লেকের মাঝে চিপসের প্যাকেট কিংবা ঘন সবুজ বনের ভেতরে সিগারেটের টুকরো ফেলে আসে না। যারা ট্রেকিং করে তারা স্বাভাবিক ভাবেই দুষন সচেতন। আর ওখানকার আদিবাসীরা প্রকৃতিরই অংশ। ট্রেকাররা তাদের মত জীবন যাপন করে। সাধারন ভাবে ট্রেকারদের বাহন হয় তার নিজের দুই পা, কোন ধরনের মেকানিক্যাল বাহন যত সম্ভব কম ব্যাবহার হয়, অবস্থা ভেদে, ঘোরা, গাধা, খচ্চর কিংবা নৌকাও বাহন হয়ে যায়। যেহেতু জনবসতী খুব কম তাই ট্রেকাররা মুলত আদীবাসীদের সাথে ঘনিষ্টভাবে মিশে যায় এবং তাদের মত করে বাঁচে। প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে হয় একটা ব্যাকপেক এর ভিতরে। তাই ট্রেকিং এর আরেক নাম ব্যাক পেকিং।
ট্রেকিং সবচেয়ে বড় দরকার মনের জোর। ট্রেকিং এ মুলত ট্রেকাররা কোন বড় পর্বত চুড়া সামিট করে কিংবা কোন বিখ্যাত লেক কিংবা কোন প্রাকৃতিক স্পট হাজির হয়। ট্রেকিং এর সাথে তাই মাউন্টেনিয়ারিং আর সারভাইভেলেরও ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। ট্রেকিং অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে, দলের কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, বিপদ আপদ হতে পারে, পথ ভুল হতে পারে, আবহাওয়া বিরুপ হতে পারে কিংবা আদিবাসীরা অসহোযোগিতা করতে পারে। এসব সময় শুধু মাত্র মনের জোরের সাথেই মোকাবেলা করতে হয় প্রতিকুলতাকে ।
ট্রেকিং এর সময় দরকারী কিছু জিনিসপত্র নিতে ভুলবেন না। যেমনঃ খুব ভালো একটা আরামদায়ক ব্যাগপেক (ঢাকার নিউমার্কেটে ৭০০-১৫০০ টাকায় ক্যামেল মাউন্টেনের খুব ভাল ব্যাগ পাওয়া যায়, কিন্তু সম্ভব হলে কেউ বাইরে থেকে প্রফেশনাল ট্রেকিং বা ক্যাম্পিং ব্যাক পেক আনাতে পারেন), ওডোমস ক্রিম, সান ক্রিম, শুকনা খাবার (চিড়া, গুর,ম্যাগি নুডলস)পানির বোতল, লাইটার, চাকু, সানগ্লাস, ক্যাপ। লিস্টের জিনিসগুলো বাংলাদেশে ট্রেকিং করার জন্যে। আমাদের দেশে মুলত ৪/৫ দিনের ট্রেক করে সবাই। দির্ঘ দিন ট্রেক করতে হলে টেন্ট, জিপিএস ইত্যাদি নিতে পারেন।
আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকিং ডেস্টিনেশন কেওকারাডং পর্বত চুড়া। ঢাকা থেকে বাসএ বান্দারবান, এরপরে চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজারের পথে, সদরঘাট বলে একটা জায়গায় গাড়ি থামবে, এর পরে সাঙ্গু নদীতে নৌকায় অথবা পায়ে হেটে ৪/৫ কিলো গেলে রুমা বাজার। সেখান থেকে গাইড নিয়ে নিতে হবে। এর পরে ট্রেকাররা মুলত ঝিরি পথ অথবা মেইন রোড ধরে বনের ভিতর দিয়ে হেটে (৪/৫ ঘন্টার হাটা) বগালেকে পৌছায়। বগালেকে রাত্রিযাপন করে কেওকারাডং অথবা তাজিন ডং এর দিকে চলে যায়। এছাড়া, সাজেক ভ্যালী, তিন্ডু, সিপ্পি আরসুয়াং আরো অনেক জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন আছে।
ট্রেকিং অবশ্যই দল বেধে করতে হবে। নুন্যতম ৩ জনের দল। অবশ্যই একজন গাইড থাকা লাগবে। ট্রেকিং করার সময় ওয়াইল্ড লাইফের সম্মুখিন হবেন প্রতিনিয়ত। হরিন, সাপ, পাইথন (খুব লাকি একজনকে চিনি যিনি গেছো বাঘ পেয়েছিলেন) ইত্যাদির দেখা মিলতে পারে, কোন অবস্থায় এদের ক্ষতি করা যাবে না। বাংলাদেশের জঙ্গলগুলোতে দাবানলের ভয় খুব বেশি এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, আর কোন অবস্থায় পাহাড়িদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবে না। সরকারী আইন ও সকল রীতি নীতি মেনে চলতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:১৯