somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রেকিং, ব্যাগ পেকিং আর হাইকিং, এডভেঞ্চারের সাথে মিশে যান প্রকৃতির সাথে

২৬ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
খুব সাধারন কথায় ট্রেকিং বলতে বুঝায় কান্ধে একটা বস্তা (ব্যাগপেক যার মধ্যে ৪/৫ দিনের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র) ঝুলিয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া। টুরিজম কিংবা ট্রাভেলিং বর্তমান কালে সবচেয়ে জনপ্রিয় হবি গুলোর একটা। আজকাল আমরা সুযোগ পেলেই বের হয়ে যাই ঘর থেকে। পৃথীবীকে দেখবো বলে। কিন্তু টুরিজম এর বিস্ফোরণের একটা বড় নেতিবাচক দিক হল অধিকাংশ লোকের প্রাকৃতিক দুষণ সম্পর্কে অসেচতনতা। আমরা সুন্দর বনে গেলে মনের আনন্দে চোরাশিকারীদের কাছ থেকে হরিণের মাংশ খাই, সেন্ট মার্টিন থেকে লুকিয়ে প্রবাল পাথর কিনে ঢাকায় ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখি, কিংবা কক্সবাজারকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য হিসাবে ভোট দিয়ে হাসি মুখে বীচের পানিতে ওয়ানটাইম গ্লাস আর বিস্কুটের প্যাকেট ফেলতে ফেলতে ভাবি কক্সবাজারকে ভোট দিয়ে আমরা বিশাল এক দেশপ্রেমিকের কাজ করে ফেললাম। খুব বাস্তব একটা কথা হচ্ছে যে আমরা জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটগুলোকে ১০০ ভাগ খাটি প্রাকৃতিক ভাবে রাখতে পারবো না। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন। তাই যারা সম্পুর্ন ভাবে নির্ভেজাল প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চান তাদের জন্যে আদর্শ হচ্ছে ট্রেকিং। আর সবাই মুলত ঘুরতে গেলে এডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে যান, ট্রেকিং(TREKKING) হচ্ছে পুরোদস্তুর এডভেঞ্চার।
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/shoummo71_1225032487_2-n513036304_1051997_8009.jpg


নেপাল, ভুটান, ভারতের দার্জিলিং এবং অন্যান্য এলাকা, দক্ষিন আমেরিকার দেশ গুলো ট্রেকিং আর হাইকিং এর জন্যে খুব বিক্ষাত। বাংলাদেশেও রয়েছে ট্রেকিং করার কিছু অসাধারণ স্পট। তার আগে ট্রেকিং কে আরেকটু সহজ কথায় বলি। নর্মালি ট্রেকিং করা হয় কোন দুর্গম এলাকায়, যেখানে যোগাযোগ ব্যাবস্থা অনুন্নত, রাস্তা ঘাট নেই, হোটেল-গেস্ট হাউজ কিংবা ইঞ্জিন চালিত যানবাহন, ইলেক্ট্রিসিটি, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি আধুনিক সুযোগ সুবিধা নাই। যেহেতু যোগাযোগ সুবিধা অনেক খারাপ তাই ওখানে টুরিস্টরা গন হারে গিয়ে ঝক ঝকে লেকের মাঝে চিপসের প্যাকেট কিংবা ঘন সবুজ বনের ভেতরে সিগারেটের টুকরো ফেলে আসে না। যারা ট্রেকিং করে তারা স্বাভাবিক ভাবেই দুষন সচেতন। আর ওখানকার আদিবাসীরা প্রকৃতিরই অংশ। ট্রেকাররা তাদের মত জীবন যাপন করে। সাধারন ভাবে ট্রেকারদের বাহন হয় তার নিজের দুই পা, কোন ধরনের মেকানিক্যাল বাহন যত সম্ভব কম ব্যাবহার হয়, অবস্থা ভেদে, ঘোরা, গাধা, খচ্চর কিংবা নৌকাও বাহন হয়ে যায়। যেহেতু জনবসতী খুব কম তাই ট্রেকাররা মুলত আদীবাসীদের সাথে ঘনিষ্টভাবে মিশে যায় এবং তাদের মত করে বাঁচে। প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে হয় একটা ব্যাকপেক এর ভিতরে। তাই ট্রেকিং এর আরেক নাম ব্যাক পেকিং।


ট্রেকিং সবচেয়ে বড় দরকার মনের জোর। ট্রেকিং এ মুলত ট্রেকাররা কোন বড় পর্বত চুড়া সামিট করে কিংবা কোন বিখ্যাত লেক কিংবা কোন প্রাকৃতিক স্পট হাজির হয়। ট্রেকিং এর সাথে তাই মাউন্টেনিয়ারিং আর সারভাইভেলেরও ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। ট্রেকিং অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে, দলের কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, বিপদ আপদ হতে পারে, পথ ভুল হতে পারে, আবহাওয়া বিরুপ হতে পারে কিংবা আদিবাসীরা অসহোযোগিতা করতে পারে। এসব সময় শুধু মাত্র মনের জোরের সাথেই মোকাবেলা করতে হয় প্রতিকুলতাকে ।


ট্রেকিং এর সময় দরকারী কিছু জিনিসপত্র নিতে ভুলবেন না। যেমনঃ খুব ভালো একটা আরামদায়ক ব্যাগপেক (ঢাকার নিউমার্কেটে ৭০০-১৫০০ টাকায় ক্যামেল মাউন্টেনের খুব ভাল ব্যাগ পাওয়া যায়, কিন্তু সম্ভব হলে কেউ বাইরে থেকে প্রফেশনাল ট্রেকিং বা ক্যাম্পিং ব্যাক পেক আনাতে পারেন), ওডোমস ক্রিম, সান ক্রিম, শুকনা খাবার (চিড়া, গুর,ম্যাগি নুডলস)পানির বোতল, লাইটার, চাকু, সানগ্লাস, ক্যাপ। লিস্টের জিনিসগুলো বাংলাদেশে ট্রেকিং করার জন্যে। আমাদের দেশে মুলত ৪/৫ দিনের ট্রেক করে সবাই। দির্ঘ দিন ট্রেক করতে হলে টেন্ট, জিপিএস ইত্যাদি নিতে পারেন।


আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকিং ডেস্টিনেশন কেওকারাডং পর্বত চুড়া। ঢাকা থেকে বাসএ বান্দারবান, এরপরে চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজারের পথে, সদরঘাট বলে একটা জায়গায় গাড়ি থামবে, এর পরে সাঙ্গু নদীতে নৌকায় অথবা পায়ে হেটে ৪/৫ কিলো গেলে রুমা বাজার। সেখান থেকে গাইড নিয়ে নিতে হবে। এর পরে ট্রেকাররা মুলত ঝিরি পথ অথবা মেইন রোড ধরে বনের ভিতর দিয়ে হেটে (৪/৫ ঘন্টার হাটা) বগালেকে পৌছায়। বগালেকে রাত্রিযাপন করে কেওকারাডং অথবা তাজিন ডং এর দিকে চলে যায়। এছাড়া, সাজেক ভ্যালী, তিন্ডু, সিপ্পি আরসুয়াং আরো অনেক জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন আছে।

ট্রেকিং অবশ্যই দল বেধে করতে হবে। নুন্যতম ৩ জনের দল। অবশ্যই একজন গাইড থাকা লাগবে। ট্রেকিং করার সময় ওয়াইল্ড লাইফের সম্মুখিন হবেন প্রতিনিয়ত। হরিন, সাপ, পাইথন (খুব লাকি একজনকে চিনি যিনি গেছো বাঘ পেয়েছিলেন) ইত্যাদির দেখা মিলতে পারে, কোন অবস্থায় এদের ক্ষতি করা যাবে না। বাংলাদেশের জঙ্গলগুলোতে দাবানলের ভয় খুব বেশি এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, আর কোন অবস্থায় পাহাড়িদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবে না। সরকারী আইন ও সকল রীতি নীতি মেনে চলতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:১৯
২৪টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×