somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রান্সফার

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে আসার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। অনেক লোক এসেছিল আমাকে পৌছে দিতে।
তার মধ্যে চারজনকে খুব হিসাব করে হাটতে হচ্ছিলো। পাশ থেকে অনেকেই তাদের সাহয্য করেছে। প্রত্যেকটা কদম ঠিক ঠিক গুনে যাচ্ছিল। দশ কদম পরপর থামতে হয়েছিল তাদের। তারপর আবার স্থান পরিবর্তনের একটা বিষয়ও ছিল। প্রত্যেকটা কাজ করতে হয়রছিল খুব সাবধানে। কাজ ঠিকঠাকভাবেই শেষ করেছিল তারা, অন্তত আমার তাই মনে হয়। অন্য আরো যারা ছিল তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। কেউ কেউ সামনেই প্রশংসা করছিল আমার।

সামনাসামনি গালি দিলে সহ্য করা যায় কিন্তু প্রশংসা কেউ যদি সামনেই করে তবে তাকে আমি মতলববাজ ধরে নেই।

গত কয়েকদিন অনেকের সাথেই দেখা হয়েছে। তারা আমাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেকটা জায়গা ও চরিত্র আমার পূর্ব পরিচিত।

নতুন অফিসটাতে জয়েন করার আগের দিকেই এইসমস্ত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। শেষবয়সে নাকি মাথায় গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। এই সমস্ত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল কিন্তু চুপ করে পড়েছিলাম। তারা কেউই আমাকে শব্দ করারও সুযোগ দেয়নি।

একটা রোগা পাতলা ছেলে এসে বলল, আমার সাথে চলেন। ছেলেটা দেখতে শুকনামত। হাতে একটা খাতা।
আচ্ছা চলো।
কোথায় যেন দেখেছিলাম তাকে কোন মতেই মনে করতে পারলাম না। আমাকে নিয়ে হঠাতই একটা ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে আসলো।
এই জায়গাটা চিনছেন?
আমি জবাব দিলাম না।
চলুন একটা বাসে উঠি।
বাসে প্রচন্ড ভীড় দরজার হাতল ধরেও মানুষ দাড়িয়ে আছে। এরকমই একটা বাসের দিকে দৌড়ে গেলো ছেলেটা। আমিও তার পিছন পিছন গেলাম। কোনমতে একটা পা রাখতে পেরেছি আর একটা হাতে বিপজ্জনকভাবে হাতলটা ধরে আছি। বাসটা মাত্রই গতি বাড়িয়েছে।
ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারে নি, এমন একটা ভান করে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দিলো। মাথাটা থ্যাতলানোর আগে চাকার তীক্ষ একটা আওয়াজ পেলাম।
তার পরপরই আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের ঘরে।

হঠাত করেই বুঝতে পারলাম আমাকে উল্টো করে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমার অপরাধ কি সেটা জানতে পারলাম না। নিচে, ঠিক আমার মাথার কাছেই কিছু একটা বসানো হচ্ছে। কেরোসিনের মত একটা গন্ধ পেলাম কিন্তু জিনিসটা যে কি ঠিক বুঝা গেল না। একটা লোক লাইটার হাতে এগিয়ে আসছে। একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে আমার মাথার ঠিক কাছেই নিচে রাখা তরল বস্তুতে আগুন ধরিয়ে দিল।
পুড়তে থাকা আমাকে দেখার জন্য খুব কাছে এসে একটা মেয়ে দাড়িয়ে থাকলো। মেয়েটার চোখ একটু ঘোলা ঘোলা। সে এসে দেখতে লাগলো। একটুও প্রতিবাদ করল না।

"আগুনের আঁচটা ঠিকমত লাগতাসে না। কেরোসিনের ড্রামটা একটু ডানদিকে নিয়া আসা উচিত।" বলল মেয়েটা।
সাথে সাথে কিছু লোক ড্রামটা সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো এবং আগুনের আঁচের তীব্রতা নিশ্চিত করলো। এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা এই মৃত্যুর আয়োজন দেখে মজা পাচ্ছে।
মেয়েটার চেহার চেনা চেনা মনে হচ্ছে। একটা রেপ ভিডিওতে দেখেছিলাম। কয়েকটা পশু শ্রেনীর লোক এই কাজটা করেছিল। মেয়েটাকে রেপ করে মেরে ফেলা হয়েছিল। স্মৃতি রক্ষার মহান উদ্দ্যেশ্য ভিডিওটা সংরক্ষন করা হয়েছিল। যেকোন ভাবেই হোক আমার কাছে সেটা ছিল। অনেকবার দেখেছি। নির্মম একটা ভিডিওচিত্র।
এখন মেয়েটা আমার মৃত্যু দেখতে হাজির হয়েছে। হয়তো এমন অনেকেই আসবে।
প্রথমে ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন। এখনি ঘুম ভেঙ্গে যাবে কিন্তু সেটা আর হল না।

মিষ্টির দোকানের একজন কর্মচারীও এসেছে। তার দাবী আমার জন্যই তার চাকরীটা চলে গিয়েছে। অনেকগুলো জাল নোট দিয়ে তার বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এখন সে আর চাকরি ফেরত চায় না। শুধু আমার মৃত্যু দেখতে পারলেই খুশি।
আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকলাম। আমার কিছুই করার নেই।

ভয়ংকর সুন্দর আগুন জ্বলতে থাকল মৃত্যুদেবতার সাথে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত!

আবারো নিজের ঘরে। সম্ভবত কয়েকজন বসে আছে ঘরের মধ্যেই। তাদের কাউকেই চিনতে পারছি না। এমনকি গলার আওয়াজ শুনেও বুঝতে পারছিনা ওরা কারা। পরিচিত কেউই হবে অপরিচিত কেউতো আর ঘরে ঢুকতে পারার কথা না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে ট্রান্সফারের কথা বলছিল। একদল লাল পিপড়া এসে একটা জানালার কাছে নিয়ে গেল। জানালা দিয়ে সূর্যের আলো ঘরে এসে পড়ছে। এই সময়টাতে পিপড়েরা খাবারের খোজে ছুটাছুটি করার কথা কিন্তু তারা তা করছে না। মনে হয় তাদের পর্যাপ্ত খাবার রয়ে গেছে।

এমনই একটা জানালাতে একবার অনেকগুলো লাল পিপড়ার উপর এরোসল স্প্রে করে দিয়েছিলাম। সেকেন্ডেরও কম সময়ে সবগুলো মরে পড়েছিল। এক অদ্ভূত সুন্দর মৃত্যুর দৃশ্য ছিল।
এখন আবার পিপড়েগুলোও আমার উপর এমন কোন বিষের প্রয়োগ করবে না তো। নাহ বোধহয় করবে না। পিপড়েরা হোমো সেপিয়েন্সদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। তাদের এরকম ক্ষমতা দেয়া হয় না।
চিন্তায় ছেদ পড়লো হঠাত করেই দম বন্ধ হয়ে আসায়। কোন মতেই নিঃশ্বাস নেয়া যাচ্ছে না। একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম গলায়। ভয়ংকর কোন বিষ ঢেলে দিয়েছে কেউ আমার উপর।
তারচেয়ে আগুনের উপর ঝুলিয়ে রাখাটাই কম কষ্টের ছিল।
কম কষ্ট দিয়ে কোন প্রাণী হত্যা করার এক অদ্ভূত আনন্দ আছে।
কালো বিড়ালকে অপশক্তির প্রতীক ধরা হয় ছোয়বেলায় কোন এক সময় শুনেছিলাম। অপশক্তি ধ্বংস করার ব্রত নিয়ে একবার কালো বিড়াল খুজে বেররিয়েছিলাম। ভাগ্য ভালো ছিল আমাদের, একটা পেয়েছিলামও। উল্টো করে বেধে নিচে একটা কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। অদ্ভূত গোঙানীর আওয়াজ বেরিয়েছিল বিড়ালটার মুখ থেকে।


আমি বুঝতে পারছি আমি মারা যাচ্ছি। এখন চুপচাপ মরতে চাচ্ছি। কিন্তু চাইলেইতো আর সম্ভব না, আমাকে এখন কোথায় যেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছি জানি না।
হাসপাতালে হবে হয়তো। মধ্যবিত্তদের মারা যাওয়ার নিয়ম হসপিটালে। উচ্চবিত্তদের মরার ভেন্যু দেশের বাইরের কোন হসপিটাল। আর নিয়ত খেটে খাওয়া মানুষদের মৃত্যু হয় না। তারা আজীবন নিহত হয়।
কখনো কখনো ভোররাতের প্রচন্ড শীতে, আবার কোন কোন শীতে তাদের জন্য আরামদায়ক মৃত্যুরও ব্যবস্থা করা হয়। কোন একটা বদ্ধ প্রকোষ্ঠে ঢুকিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারা খুশীতে ছুটাছুটি করতে থাকে। আহ। কি প্রশান্তিময় মৃত্যু!
উহু ভুল হল, মৃত্যু শব্দটা তাদের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তারা শুধুমাত্র নিহত।

হসপিটালে যাওয়ার পথের বা তার পরের কোন কিছুই মনে নেই।
আমি এখন আমার নতুন জয়েন করা অফিসটাতে। এখানে একটা দম বন্ধ করা ভাব থাকলেও সবকিছুই শৃঙ্খলিত মনে হল। নড়াচড়া করার দৈব ক্ষমতা থাকলেও তার দরকার পড়ছে না। রুমের চারদিকের দেয়ালের রংটা প্রথমে সাদা মনে হলেও পরে আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম সেটা আসলে আমার গায়ের কাপড়ের রংয়েই প্রতিফলন মাত্র। অদ্ভূত অবস্থাতো। কোন একসময় স্কুলের ইউনিফর্ম সাদা ছিল। অফিসের ইউনিফর্মও সাদাও হয় নাকি?
দেয়ালের রংটা কি দেখার জন্য একবার তাকালাম। কিছুই বুঝা গেল না। তবে একটা মাটি মাটি গন্ধ বেরুচ্ছে। কোন জায়গায় বড় গর্ত খুড়লে যেরকম গন্ধ পাওয়া যায় ঠিক সেরকম। পিয়নকে ডাকব নাকি? কি নামে ডাকব?
অফিসে একটা লোক নাই, দায়িত্ব কেউ বুঝিয়ে দিয়ে গেল না। এভাবে চলে? মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
এখন দেয়ালটা দেখা যাচ্ছে, দেয়াল না ছাদ। সবুজ রংয়ের। এই অফিসে জয়েন করার আগে সবাই দেখা করতে এসেছিল। কেউ একবারও এখানে আসতে মানা করেনি। চাকরি থেকে রিটায়ার করার পর এখানে আসাটাও বোধ হয় একটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে।

এখানে আসার আগেতো আমি হসপিটালে যাচ্ছিলাম। তারপর কি হয়েছিল মনে পড়ছে না। মারা যাওয়ারতো প্রশ্নই আসে না। অন্তত এই সময়ে।
অদ্ভুত! মারা গিয়ে থাকলে এখন আমি অফিসে কেন।

না এটা অফিস না, আর আমার গায়ে কোন ইউনিফর্মও নাই। জাস্ট কাফনের কাপড়। সাদা এক টুকরো কাপড়!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ২০০০ বছরের পুরনো মরদেহের ডিএনএ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৫



২০০০ বছরের পুরনো মরদেহের ডিএনএ থেকে জানা গেলো যত চমকপ্রদ তথ্য।


পল্লব ঘোষ
Role, বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদদাতা
Reporting from লন্ডন
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

পেহেলগাম, ছবি গুগল থেকে প্রাপ্ত।

কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষণিক ফুলের সুবাস ছড়িয়ে বিদায় নিবে অন্তর্বর্তী সরকার

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪



এই কাঠগোলাপ ফুলের সুবাস যেমন একটা নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত থাকে এবং ফুলগুলোও সতেজ থাকে তখন চাইলেই এটা দিয়ে মালা বানানো যায়, দুল বানানো যায় কিংবা মাথায় হেয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×