somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিড়িখোর

১৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে একটা আইন করা হয়েছিল জনসম্মুখে ধূমপান করলে ৫০ টাকা জরিমানা করা হবে। সেই আইন নিয়েই এবার আমার ছোট পোষ্ট। যেটুকু লিখব সেটা শুধু গল্প নাকি রম্যগল্প হবে বা আদৌ দুটোর কোনটাই হবে কিনা এখনো জানিনা।

১.

প্রচন্ড গরম। সূর্য তার সমস্ত তাপটুকু মনে হয় মাটিতে ঢেলে দিচ্ছে। আনিস মিয়া আজকে বেশি খ্যাপ নেয় নাই। দুপুর বেলা এত রোদে রিকশা চালাতে বড় অস্থির লাগে তাঁর। কয়েকদিন ধরে শরীরটাও ভাল যাচ্ছেনা। গলা থেকে গামছাটা নামিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে ফেলে তিনি ময়লা শার্টটার বুকপকেটে হাত রাখলেন। তাঁর মুখে হালকা স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল। কালকে কেনা বিড়িটা এখনো পকেটে আছে,খাওয়া হয়নি। এখন গাছের ছায়ার বসে আরাম করে টান মারা যাবে। বিড়িটাতে আগুন ধরিয়ে মুখে দেওয়া মাত্র একটা কর্কশ কন্ঠস্বরে কেঁপে ওঠে আনিস মিয়া!

--ওই মিয়া! ভাল-ই তো বইয়া বইয়া বিড়ি ফুকতাছ!

আনিস মিয়া সাধের বিড়িটা মাটিতে ফেলে ধরমর করে রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পুলিশ গুলো কোন কারণ ছাড়া আজকাল বড় ঝামেলা করে। আজকে না জানি ভাগ্যে কি আছে।

--সালাম ছার। ভালা নি? শরীর ভালা?
--আরেব্বাস! কি ভাবছ? খাতির জমায়া কথা কইলেই আমি ও তোমার লগে বিড়ি ফুকুম? তাড়াতাড়ি ৫০ টাকা বাইর কর কইলাম।
--ছার! আমি কি করছি? আমি তো এইহানে রিকশাতে বইসা ছিলাম।
--কি করছ? থানায় নিয়া দুইটা বাড়ি মারলে বুঝবা কি করছ? আমারে চিন? আমি পুলিশ কনন্সটেবল হারুন খান। এক কথার মানুষ। ওই! টাকা বাইর কর। জানস না এখন রাস্তাঘাটে বিড়ি খাইলে ৫০ টাকা দিতে হইব? এইসব মূর্খ রিকশাওয়ালাদের লাইগ্যা দেশটা গোল্লায় গেল গ্যা!
--মাফ করেন ছার! আর বিড়ি খামুনা। খাই-ও নাই। মাত্র টান দিবার লাগছিলাম।
--তোদের মত ছোটলোকরা জীবনেও বিড়ি খাওয়া ছাড়বিনা টাকা না খসাইলে। দে টাকা!
--আইজক্যা খ্যাপ বেশি মারি নাই ছার। হারাদিনে সত্তুর টেহা পাইছি।
--এত কিছু শোনার সময় নাই,বিড়ি খাইছস রাস্তায়,আমারে অহন টাকা দিবি। আর নাইলে জেলে যাবি।

আনিস মিয়ার মন প্রচন্ড খারাপ হয়ে যায়। আজকে এমনিতেই আয়-রোজগার এখনো বেশি হয়নাই। তার উপর এই ঝামেলা। এখন হাতে-পায়ে ধরলে লাভ হতে পারে কিন্তু সেটা করতে আনিস মিয়ার ইচ্ছা করল না। বউটা খুব শখ করে একটা মুখে মাখা পাউডার চেয়েছিল সেটা আর কেনা হবে না আজ। আনিস মিয়া ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেয় পুলিশ কনন্সটেবল হারুন খানের দিকে। হারূন খান সন্তুষ্ট চিত্তে সামনে এগিয়ে যায় নতুন শিকারের আশায়। আনিস মিয়া আকাশের দিকে তাকায়। তপ্ত আকাশটা কি একটু মেঘলা এখন? দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে আনিস মিয়ার বুক চিরে—“আল্লাহ গো আল্লাহ,সব নিয়ম ক্যান গরীবগো লাইগ্যা বানাইছে?”


২.

হারূন খান বেশ চিন্তিত। কয়েকদিন ধরে তাঁর ঘুষ খাওয়া নিয়ে থানায় তোলপাড় চলছে। হয়ত বদলিও হয়ে যেতে পারে অন্য কোথাও। কিন্তু ঢাকায় থাকাটা তাঁর জন্য খুব দরকার। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী। মেয়েটাও ছোট। বড় সাহেবের সাথে একবার দেখা করা দরকার। যদি বদলিটা ঠেকানো যায়! বড় সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে কিছুতেই খালি হাতে যাওয়া যাবেনা। তাই হারূন খান বড় সাহেবের বাসায় যাওয়ার আগে একটা ফ্রুটিকা আর দুই প্যাকেট বেনসন কিনে নিলেন। হারুন খান ভাল করেই জানেন বড় সাহেবের সবচেয়ে পছন্দের জিনিস সিগারেট। সারাদিন টানতেই থাকেন। সিগারেট কিনতে গিয়ে অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে গেল। যাইহোক,টাকা ব্যাপার না—যেই কাজে যাওয়া হচ্ছে সেই কাজ হলেই হয়!

বড় সাহেবের বাসায় কলিংবেল টিপতেই একটা কিশোরী মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল। স্যারের কাজের মেয়ে হবে হয়ত! বাসার ভেতর থেকে ঠান্ডা বাতাস আর মিষ্টি সুঘ্রাণ আসছে। বড়লোকি ব্যাপার। কাজের মেয়েটি হারূন খানকে ড্রইংরূমে বসতে দিল। কিছুক্ষন পরে বড় সাহেব ড্রইংরূমে ঢুকামাত্র হারূন খান লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে দাড়ালেন। স্যারকে দেখে এয়ারকন্ডিসনের হিমেল হাওয়াতেও তিনি কুল কুল করে ঘামতে লাগলেন। স্যারকে যেভাবেই হোক কনভিন্স করতে হবে যেন বদলিটা না হয়!

--স্যার আসসালামু ওয়ালাইকুম। ভাল আছেন?
--ওয়াইকুমআসসালাম। হারূন মিয়া,এত বদনাম রটল কেন তোমারে নিয়া?
--স্যার আমি কিছু করিনাই বিশ্বাস করেন। মানুষের শত্রুর তো অভাব নাই। কে কখন কি রটায়...
--থাম থাম। তোমার জায়গাতে আমি ও ছিলাম একদিন। তা মিয়া ঘুষ খাও ভাল,লুকায়-চুরায় খাইতে পারনা?
--স্যার বেশি তো খাইনা। তারপর্‌ও লোকজন কথা রটায়। স্যার এ যাত্রায় যদি বদলিটা ঠেকানো যায় স্যার। আপনি আমার মা-বাপ স্যার। একটু দেখেন প্লীজ। বঊটা বার মাস অসুস্থ থাকে। একা রেখে ঢাকার বাইরে যাই কিভাবে?
--ঘুষ খাওয়ার সময় এগুলা তো ভাবনাই। আচ্ছা দেখি কি করতে পারি। তোমাকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখি মিয়া বুঝলা। এই জন্য তোমার ব্যাপারটা দেখব। তা আমার জন্য কিছু আনছ নাকি? তোমার ম্যাডামের জ্বালায় তো সব বাদ দিয়া দিসি।

এই মুহূর্তটার জন্য-ই অপেক্ষা করছিলেন হারূন খান। খুব দ্রুত প্যান্টের পকেট থেকে বেনসনের চকচকে প্যাকেট দুইটা বের করে বড় সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দেন তিনি। বড় সাহেবের লোভী চকচকে চোখ দেখে হারূন আনন্দিত হন। তাঁর একবারও মনে পড়েনা সেই গরীব রিকশাওয়ালাটার কথা,যার কাছ থেকে রাস্তায় বিড়ি খাওয়ার অপরাধে তিনি দুইদিন আগে ৫০ টাকা নিয়ে নিয়েছিলেন। মনে পড়বেই বা কেন? ওরা তো ছোটলোক,ছোটলোকদের বিড়ি-সিগারেট খাওয়া মানায় নাকি?

----------------------------------------------------------------------------------

সংবিধিবদ্ধ সত্‌র্কীকরণঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বাংলাদেশে প্রথম ধূমপানের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির সফল উদ্যেগ নেন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডঃ নুরুল ইসলাম এবং গড়ে তোলেন আধূনিক (আমরা ধূমপান নিবারণ করি) নামক জাতীয় প্রতিষ্ঠান। নিয়মিত ধূমপানে মানুষ ক্যান্সার,হৃদরোগ,প্যারালাইসিস,পচন রোগে বা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই অবশ্যই ধূমপায়ীদের ধূমপান বর্জন করতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন করার প্রয়োজন এবং তারপর অবশ্যই দেখা দরকার সেই আইনের সঠিক প্রয়োগ সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষের মাঝে সমানভাবে হচ্ছে কিনা!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৫
১০৩টি মন্তব্য ১০১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×