
---আচ্ছা,মানুষ কাকে বলে?
---ওমা! কি যে এক একটা প্রশ্ন করনা তুমি? আমরাই-তো মানুষ।
---তুমি ঠিক জানো আমরা মানুষ?
---বড় অবাক হচ্ছি কিন্তু তোমার ন্যাকা-ন্যাকা কথা শুনে। কি শুরু করলে মানুষ নিয়ে?
---না,প্লীজ বিরক্ত হয়না লক্ষীটি! আজ তোমাকে বলতেই হবে মানুষ কারা? আমার যে বড্ড বেশি জানতে ইচ্ছা করছে!
---উমম! আচ্ছা যাও বলব। কিন্তু বললে আমাকে কি দিবে বল?
---আমি নিজেই তো তোমার!
---তাতো জানি। কিন্তু মানুষের সংজ্ঞা বলতে পারলে কিন্তু আজ আমি বিশেষ কিছু চাইব তোমার কাছে!
---যাহ! সুযোগ সন্ধানী কোথাকার! আচ্ছা তুমি আগে বলবে তো মানুষ কাকে বলে?
---যার একটা মাথা আছে,দুইটা চোখ আছে,দুইটা হাত আছে,পা আছে,কান আছে—যে সব কিছু বুঝতে পারে—সেই তো মানুষ!
---সেই কি মানুষ?!!!
---হ্যাঁ! আমি তুমি আমরা সবাই মানুষ! এখন বল আমি যা চাইব আমায় দিবে?
---দাঁড়াও না। মানুষের সংজ্ঞা এখনো পরিষ্কার না আমার কাছে।
---তুমি মানুষ নিয়ে এত ঢং করলে আমি চলে যাব কিন্তু!
---আচ্ছা শোন! একটু দাঁড়াও প্লীজ। যারা ফেলানীকে কাঁটাতারের বেড়ায় পিষে হত্যা করল তাদের ও দুইটা হাত,দুইটা চোখ,দুইটা পা,দুইটা কান ছিল,তাইনা?
--- হ্যাঁ!
---তোমার কথা অনুযায়ী তো তারাও মানুষ। যে মানুষ একজন আরেকজনকে মেরে ফেলে সে কেমন মানুষ বলতে পারো তুমি?
---আমি জানিনা।
---আচ্ছা তোমার মনে আছে হেনার কথা?
---কোন হেনা?
---ঐ যে যার চাচাতো ভাই তাকে ধর্ষণ করেছিল? তারপর ধর্ষিত হওয়ার অপরাধে হেনাকেই দোররা মারে ফতোয়াবাজরা। হেনা মারা যায়। হেনা মারা যাওয়ার ঠিক আগে নিশ্চয়ই কোন মানুষের চোখ দেখেনি—পশুর চোখ দেখেছিল! তাইনা?
---এসব কথা রাখনা প্লীজ।
---আমাকে বলতে দাও। থামিওনা। আমার না মাঝে মাঝে হামীমকে স্বপ্নে দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। হামীম কে মনে পড়ে তোমার? ঐ যে মায়াবী মুখের পিচ্চি ছেলেটা। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়ত। কি ফুটফুটে ছিল দেখতে! মনে পড়ে?
---হ্যাঁ। পেপারে এসেছিল। বাস চাপায় মারা গিয়েছিল না ছেলেটা।
---কি সহজেই তুমি বললে বাস চাপায় মারা গিয়েছিল। আমাকে বলতো ওই ফুটফুটে শিশুটার কচি নরম তুলতুলে দেহটার উপর যে বাস চালিয়ে দিল সেও তো মানুষ ছিল? বল ছিলনা?
---হয়তো ছিল।
---তারপর বিডিআর বিদ্রোহে কত সেনা কর্মকর্তাকে খুন করে রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া হল। কতগুলো তাজা প্রাণ নিমিষে ঝরে গেল। যে নিষ্ঠুর মানুষ গুলো এই জঘন্য কাজটা করল তাদেরও আমরা মানুষ বলি। তাইনা? কারন তাদেরও হাত,মুখ,চোখ,নাক আছে।
---এরকম উদাহরন তুমি কত দিবে বল? রোজ-ই তো হচ্ছে এসব। এমনকি শিশু সামিউলকে খুন করতে তো তার মা-ই সাহায্য করল। তার চেয়ে চল আমরা আজকের বিকালটা সুন্দর করে,অন্য কোন গল্প করে কাটাই।
---হ্যাঁ তাই তো! গল্প করেই তো কাটাতে হবে। এই মন খারাপ করা ঘটনাগুলো ভুলে গিয়ে আমরা গল্প করব,গান করব,হাসব—তুমি আলতো করে আমার দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে দিবে। আমরা সব ভুলে নিজেদের নিয়ে মত্ত হয়ে যাব! কারন আমরা মানুষ যে! আমরা মানুষ দেখেই তোমার কথা মত আমাদের মাথা আছে,মাথায় বুদ্ধি আছে,দুইটা কান আছে,চোখ আছে,হাত আছে,পা আছে—কিন্তু আমাদের একটা জিনিস নাই।
---কোন জিনিসটা আবার নাই?
---আমাদের মনুষত্ব্য নাই প্রিয়তম! নেই কেন জানো?
---কেন নেই?
---কারন—আমরা মানুষ যে!