মার্কিন লেখিকা কারমেন ডিসোসা’র কথাটা দিয়ে ভূমিকার কথাটা সারি: “Publishing a book is like being pregnant. By the end, you're just ready to get that baby out!” সমস্যা হলো বেবি আউট হওয়ার জন্য রেডি থাকলেও পাবলিশার পাওয়ার যন্ত্রণার কথা বার্নাড শ’র উদ্বৃতিতে বলি, এ বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক ইংরেজ প্রকাশকের দুয়ারেই আমি প্রথম বইটি প্রকাশ করার জন্য ধর্না দিয়েছি!! বুঝুন অবস্থা। কি জানি, অমন কষ্ট করার মানসিকতার জন্যই তিনি বার্নাড শ, যার প্রথম বই প্রকাশ হবার ১৫ বছর পর অবস্থা এমন গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পাণ্ডুলিপির উপরে তার নামটি থাকলেই হতো, প্রকাশকরা সে জিনিস ছাপার জন্য লাইন ধরে যেতো, এ কথাও বার্নাড শ নিজেই বলেছেন।
এবারে মূল প্রস্তাবনা: প্রবাস প্রকাশনীতে আমার তিনজন প্রিয় কবি আছেন, তাদেরই একজন একদিন ফোন দিয়ে বললেন, সাগর, তোমার গল্প আমরা দেখেছি পত্রিকায় , তোমার কি কোন পাণ্ডুলিপি রেডি আছে? থাকলে পাঠিয়ে দাও, আমরা বিবেচনা করতে চাই। পাণ্ডুলিপি ছিল না, কিন্তু এক দণ্ডে বলে ফেললাম, জ্বি, আছে, রেডি আছে। উত্তেজনায় আরো কি কি সব যেন বলে ফেলছিলাম, মনে নেই। শুধু মনে আছে, ফোন রেখে আমি প্রায় স্তম্ভিত হয়ে বসেছিলাম। কতক্ষণ মনে নেই, এক সময় খেয়াল করলাম, চোখে গরম লাগছে। হাত দিয়ে বুঝলাম, আমি কাঁদছি। অজান্তেই আমার চোখে জল গড়াচ্ছে। আমি তখন একটা লাল বাসের দোতলায়, পাশে বসা সহযাত্রী আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। আমি চোখ ভরা জল নিয়েই অপরিচিত সেই স্ট্রেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, সাম বডি ওয়ান্টস টু সি মাই মেনাসস্ক্রিপ্ট। হা হা হা। ভদ্রলোক আফ্রিকান ছিলেন, ঝকঝকা দাঁত দেখিয়ে হাসলেন, বললেন, সো হোয়াই ইউ আর ক্রাইয়িং দেন?
মানুষ হিসেবে আবেগী হলেও সেটাকে লুকিয়ে রাখতে শিখেছি আমি। কিন্তু কেন এমন ছিচঁকাদুনে আবেগী হয়ে উঠলাম একটা ফোনে, সে কথার উত্তর এক বাক্যে কিংবা এক পোষ্টে দেওয়া আমার জন্য সহজ হবে না। শুধু এটুকু বললে কি বোঝা যাবে যে, এমন একটা প্রস্তাবের জন্য আমি বহুদিন ধরে একদিন একদিন করে, একরাত একরাত করে অপেক্ষা করে ছিলাম? এবং তার সংগে আছে আরো বেশ কিছু ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক বিষয়, কিন্তু সে কথায় কাজ নেই আর।
যাই হোক, এইসব কথা সরিয়ে রেখে বলি: পাণ্ডুলিপি উনারা পছন্দ করেছেন, আর তার প্রেক্ষিতেই আমি আমার প্রথম বইটি আপনাদের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পাচ্ছি। উনাদের এই বদ্যনতার কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো - এর চেয়ে আর কি ভাবে কৃতজ্ঞতা জানানো যায়, কে জানে। এই যে কোটি কোটি বই লেখা হয়েছে বিশ্ব জুড়ে, প্রতিদিন হচ্ছে, তবু নিজের একটা বই – ব্যাপারটার মধ্যে কেমন একটা অলৌকিক ব্যাপার-স্যাপার আছে, কিংবা আমার প্রথম বই বলেই হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে আমার। আপনারা যাদের একাধিক বই আছে, তারাই হয়তো খানিকটা আবেগ মুক্ত হয়ে বিষয়টা বলতে পারবেন।
প্রচ্ছদের ছবি:
এবং তথ্য:
বইয়ের শিরোনাম: খড়িমাটির দাগ
ধরন: গল্প (ছোট কিংবা বড় গল্প)
প্রকাশক: প্রবাস প্রকাশনী
প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা, ২০১৫
সাইজ: আট ফর্মা
বইয়ে লেখা দাম: ১৫০ টাকা
প্রচ্ছদ: নির্ঝর নৈশঃব্দ্য
প্রাপ্তিস্থান: বাংলা একাডেমীর বয়রাতলার লিটরম্যাগ চত্বরের উতঙ্কের স্টলে
ভূমিকা লিখেছেন: গল্পকার আকমল হোসেন নিপু।
মেলার প্রথম দিন থেকেই পাওয়া যাবে বইটি।
অন রাইটিং বইয়ে স্টিফেন কিংয়ের শেষ বাক্যটি লেখালেখি বিষয়ে প্রিয় বাক্য: “Writing isn't about making money, getting famous, getting dates, getting laid, or making friends. In the end, it's about enriching the lives of those who will read your work, and enriching your own life, as well. It's about getting up, getting well, and getting over. Getting happy, okay? Getting happy.”
“গেটিং হ্যাপী” হওয়ার জন্য আমার কাছে লেখালেখি ভিন্ন কোন উপায় কখনো জানা ছিল না, এখনো নেই। আমার এই সুখরাজ্যে কিংবা আনন্দ রাজ্যে, প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, আপনাদের নিমন্ত্রণ।
এবং এ মেলায় সামহোয়ার ইন ব্লগের যত সহ-ব্লগারের বই বেরুচ্ছে, তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫