নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনী সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু সেই জীবনীতে উল্লেখিত জায়গা সমুহ এবং তার ব্যাবহরিত অনেক জিনিস যেমন তার তরবারি, জুতা, পাগরী আমরা অনেকেই দেখিনাই। সেই সকল জায়গা এবং বস্তু সকলকে দেখাবার একটি ছোট চেস্টা করেছি মাত্র।
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর তরবারি মোবারক
চার খলিফার তরবারি
ছবিটিতে চারজন খলিফার তরবারি রাখা আছে, একেবারে উপরের টি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর তার পরের টি হযরত ওমর (রাঃ) এর পরের টি হযরত ওসমান (রাঃ) এর এবং সব শেষের টি হযরত ওমর (রাঃ) এর তরবারি।
যে বাড়ীতে নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্ম গ্রহন করে ছিলেন বলে মনে করা হয়
হযরত হালিমা (রাঃ)এর বাড়ী
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এই বাড়ী টিতে তার সৈশবের অনেক গুল দিন কাটিয়ে ছিলেন, আর বাড়ী টি থেকে দুরে যে মাঠ দেখা যাচ্ছে সেখানে
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মেষ চড়াতেন।
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জুতা মোবারক
এবার চলুন বিদায় হজের ভাষনে নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কি বলে ছিলেন জেনে নেই,
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দশম হিজরি/৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যে হজ পালন করেন, ইসলামের ইতিহাসে তা ‘হুজ্জাতুল বিদা’ বা ‘বিদায় হজ’ নামে খ্যাত। প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার মতান্তরে এক লাখ ২৬ হাজার মুসলিম নরনারী তাঁর সফরসঙ্গী হয়ে হজ করতে মক্কা মোকাররমা গমন করেন। ৮ জিলহজ সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে নবী করিম (সা.) মিনায় চলে গেলেন। তারপর ৯ জিলহজ শুক্রবারের দিন ভোরে নামাজ পড়ে মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হলেন। লাখো কণ্ঠের গগনবিদারী ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে দুই পাশের পর্বতমালা কেঁপে উঠল। ওই দিনটি ছিল ইসলামের গৌরবময় ও সুউচ্চ মর্যাদা বিকাশের দিন
এর ফলে প্রাক-ইসলামি অন্ধকার যুগের যাবতীয় কুসংস্কার ও অহেতুক কাজকর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেন, যার সারকথা হলো, ‘হে আমার উম্মতগণ! আজ যে কথা তোমাদের বলব, মনোযোগ দিয়ে শোনো। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের সঙ্গে একত্রে হজ করার সুযোগ আমার আর ঘটবে না। ওহে মুসলমান! অন্ধকার যুগের সব ধ্যান-ধারণাকে ভুলে যাও, নতুন আলোয় পথ চলতে শেখো। জেনে রাখো! আজ থেকে অতীতের সব মিথ্যা সংস্কার, অনাচার, পাপাচার ও কুপ্রথা বাতিল হয়ে গেল।’
তারপর তিনি সর্বজনীন মানবাধিকারের কনথা ঘোষণা করে বললে, ‘মনে রেখো! প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই এবং সব মুসলমান ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ। কেউ কারও চেয়ে ছোট নও, কারও চেয়ে বড় নও। আল্লাহর চোখে সবাই সমান। নারীজাতির কথা ভুলে যেয়ো না। নারীর ওপর পুরুষের যেরূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও সেরূপ অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার কোরো না। মনে রেখো, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের গ্রহণ করেছ। সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি কোরো না। এ বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের ধন-প্রাণ পবিত্র বলে জানবে। যেমন পবিত্র আজকের এদিন—ঠিক তেমনই পবিত্র তোমাদের পরস্পরের জীবন ও ধনসম্পদ। হে মুসলমানগণ! হুঁশিয়ার! নেতার আদেশ কখনো লঙ্ঘন কোরো না। যদি কোনো কর্তিত নাশা কাফ্রি ক্রীতদাসকেও তোমাদের আমির করে দেওয়া হয় এবং সে যদি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালনা করে, তবে অবনত মস্তকে তার আদেশ মেনে চলবে। দাস-দাসীদের প্রতি সদা সদ্ব্যবহার কোরো। তাদের ওপর কোনো অত্যাচার কোরো না।’
অতঃপর রাসুলে করিম (সা.) দাস-দাসী ও শ্রমিকের অধিকার ঘোষণা করে বললেনয
‘হে লোকগণ! তোমাদের গোলাম; যা তোমরা নিজেরা ভক্ষণ করবে, তা তাদেরও খেতে দেবে। যা তোমরা পরিধান করবে, তা তাদেরও পরিধান করাবে। ভুলে যেয়ো না, তারাও তোমাদের মতো মানুষ। সাবধান! পৌত্তলিকতার পাপ যেন তোমাদের স্পর্শ না করে। শিরক কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা কথা বোলো না, ব্যভিচার কোরো না। সব ধরনের মলিনতা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে পবিত্রভাবে জীবন যাপন কোরো, চিরদিন সত্যাশ্রয়ী হয়ো।’
নবী করিম (সা.) নারীজাতির অধিকার ও মর্যাদা ঘোষণা করে বললেন, ‘তোমরা নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করো। অবশ্যই তাদের হক বা অধিকার তোমাদের ওপর আছে এবং তোমাদের হকও তাদের ওপর আছে।’ আরবের জানমালের কোনো মূল্য ছিল না। তারা যাকে ইচ্ছা তাকে হত্যা করত এবং মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক ধনসম্পদ ছিনিয়ে নিত। তাই বিশ্বমানবতার শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানকারী রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা দুনিয়ার সামনে সন্ধি, স্বস্তি ও নিরাপত্তার আশ্বাস প্রদান করলেন।’
নবী করিম (সা.) নেতার অনুসরণের তাগিদ দিয়ে বললেন, ‘হে আমার উম্মতগণ! আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, তা যদি তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। সেই গচ্ছিত সম্পদ হচ্ছে আল্লাহর কিতাব বা আল কোরআন ও আল হাদিস বা আমার সুন্নাহ।’
এরপর রাসুলে করিম (সা.) কতিপয় বিধান জারি করলেন। হুকুম করা হলো, আল্লাহ সব হকদারকে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য প্রদান করেছেন; সুতরাং এখন কোনো উত্তরাধিকারীর জন্য অসিয়ত করার দরকার নেই। জেনে রেখো! ছেলে ওই ব্যক্তির বলেই সাব্যস্ত হবে, যার শয্যায় সে জন্মলাভ করেছে। আর ব্যভিচারের শাস্তি হলো প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা এবং তার হিসাব আল্লাহই গ্রহণ করবেন। আর যে ছেলে নিজের পিতার বদলে অন্য কারও ঔরসে জন্ম নিয়েছে বলে দাবি করে এবং গোলাম স্বীয় মনিব ছাড়া অন্য কারও মালিকানায় নিজেকে সংযুক্ত করে, তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত অবধারিত। ধার করা বস্তু অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। উপহারের বদলে উপহার প্রদান করতে হবে এবং কোনো বস্তুর জিম্মাদার হলে এর পরিপূরণ অবশ্যই তাকে করতে হবে।
এতটুকু বলার পর তিনি জনসমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি?’ সবাই সমস্বরে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ, আপনি দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।’ অতঃপর জনসমুদ্রকে লক্ষ করে বললেন, ‘যারা এখন এখানে উপস্থিত আছ, তারা এ ভাষণ অন্যদের কাছে পৌঁছে দেবে, যারা এখানে উপস্থিত নেই।’ খুতবার শেষ পর্যায়ে তিনি সব মুসলমানকে লক্ষ করে বললেন, ‘বিদায়, বিদায়!’
লেখকঃ মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
(সংগৃহীত
আমার পুর্বের আরো কিছু পোষ্টঃ
কোরআনের চ্যালেন্জ (ক্ষমতা থাকলে ভুল প্রমান করুন)
কাবা ঘর এবং তার স্বচিত্র ইতিহাস।
কয়েকটি ইসলামিক নিদর্শন(নাস্তিকদের প্রবেশ নিষেধ) ১৬৩৭ বার পঠিত
কয়েকটি ইসলামিক নিদর্শন(নাস্তিকদের প্রবেশ নিষেধ) ২য় পত্র ৭৪৩ বার পঠিত
কয়েকটি ইসলামিক নিদর্শন(নাস্তিকদের প্রবেশ নিষেধ)৩য় পত্র ৯৮৩ বার পঠিত